NOTICE:- ------------------ ----------------- ---------------------------

পবিত্র মাযহাব উনার অনুসরনের জন্য কুরআন শরীফ হতে দলীল-


‘আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ উনার আলোচনা ও বিধান
التقليد الشرعى

আত-তাক্বলীদুশ্ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ:
পবিত্র কুরআন মাজীদ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমাউল উম্মাহ ও ছহীহ ক্বিয়াস উনাদের দলীল-আদিল্লাহ মোতাবেক ইসলামী শরীয়াত উনার যাবতীয় হুকুম-আহকাম মেনে চলার জন্য কারো অনুসরণ করাকে ‘আত-তাকলীদুশ শারয়ী তথা শরীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’ বলে। উনাকে ‘তাকলীদুল ইসলাম’, ‘তাকলীদুদ্ দীন’ ও ‘তাকলীদুদ্ দালায়িলিল আরবায়াহ’ অর্থাৎ দীন ইসলাম উনার চারখানা দলীল উনাদের অনুসরণও বলা হয়ে থাকে।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে এবং উলিল্ আমর তথা হযরত ইমাম মুজতাহিদ-আউলিয়া কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে অনুসরণ করাই ‘আত-তাকলীদুশ্ শারয়ী তথা শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’।
সম্মানিত শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ করা ফরযে আইন। আর শারীয়াত বহির্ভুত অনুসরণ করা হারাম ও নাজায়িয। কারণ, শারীয়াত সম্মত অনুসরণ করতে নির্দেশ করা হয়েছে। শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ করা যে ফরয-ওয়াজিব এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মাজীদ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে যথেষ্ট আলোচনা উল্লেখ আছে। মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اهدنا الصراط الـمستقيم صراط الذين انعمت عليهم. (سورة الفاتحة رقم الاية ۶-۵ )
অর্থ: “আয় মহান আল্লাহ তায়ালা! আপনি আমাদেরকে সঠিক পথ দান করুন। এমন পথ যে পথের পথিক উনাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন।” (পবিত্র সূরাতুল ফাতিহাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫-৬)
انعم الله عليهم من النبيين والصديقين والشهداء والصالـحين. (سورة النساء رقم الاية ۶۹)
অর্থ: মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি নিয়ামত হাদিয়া করেছেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদেরকে, হযরত ছিদ্দীক্বীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে, হযরত শুহাদা রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে ও হযরত ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে। (পবিত্র সূরাতুন নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৯)
পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে চার শ্রেণী উনাদের মত-পথ তালাশ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত: উক্ত চার শ্রেণী দুই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। যথা: ১. হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদের পথ, ২. ছিদ্দীক্বীন, শুহাদা ও ছালিহীন উনারা উম্মত উনাদের তবক্বা।
আর দ্বিতীয় তবক্বার উনারা হলেন- ইমাম, মুজতাহিদ, ফক্বীহ, উলামায়ে কিরাম, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম প্রমুখ।
অতএব উনাদেরকে অনুসরণ করাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা সম্মানিত শারীয়াত উনার অনুসরণ’।
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
واذ قيل لـهم امنوا كما امن الناس.
অর্থ: যখন তাদেরকে বলা হয় তোমরা ঈমান আনো, যেরকম অন্যান্য ব্যক্তিগণ ঈমান এনেছেন। (পবিত্র সূরাতুল বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)
এখানে আন-নাস বা ব্যক্তি বলতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ উনাদের অনুসরণে উনাদের মতো ঈমান গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। ইহাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা সম্মানিত শারীয়াত উনার অনুসরণ’।
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الذين امنوا اطيعوا الله و اطيعوا الرسول و اولى الامر منكم فان تنازعتم فى شىء فردوه الى الله و الرسول ان كنتم تؤمنون بالله و اليوم الاخر ذلك خير و احسن تاويلا. (سورة النساء شريف ۵۹ الاية شريف)
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার আনুগত্য করো, সাইয়্যিদুনা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরন-অনুকরণ করো এবং তোমাদের মধ্যে যাঁরা উলিল আমর অর্থাৎ যিনি বা যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পরিপূর্ণ অনুগত এবং অনুসরণ ও অনুকরণকারী উনাদের অনুসরণ করো। তোমাদের মধ্যে যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ হয়, তাহলে উক্ত বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করো। অর্থাৎ যে উলিল আমর উনার পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দলীল বেশী সে উলিল আমর উনাকে ইত্বায়াত করতে হবে। যদি তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাকো। এটাই কল্যাণকর ও পরিনতির দিক দিয়ে উত্তম। (পবিত্র সূরাতুন্ নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে و اولى الامر منكم অর্থাৎ আদেশদাতা উনাদেরকে অনুসরণ করার দ্বারা ইমাম, মুজতাহিদ, ওলীআল্লাহ, ফক্বীহ, মুফতী ও উলামা কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহহিম উনাদেরকে ইত্তিবা তথা অনুসরণ করতে নির্দেশ করা হয়েছে। আর ইহাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’। সুবহানাল্লাহ।
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
والسابقون الاولون من الـمهاجرين و الانصار و الذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم و رضوا عنه و اعدلـهم جنت تجرى تحتها الانـهر خالدين فيها ابدا ذلك الفوز العظيم. (سورة التوبة شريف ۱۰۰ الاية شريف)
অর্থাৎ: যাঁরা সর্বপ্রথম মুহাজিরীন (হিজরতকারী) ও আনছার (হিজরতকারী উনাদেরকে সাহায্যকারী) হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে অগ্রগামী এবং পরবর্তীতে উত্তমভাবে উনাদেরকে যাঁরা (ইমাম, মুজতাহিদ, উলামা-আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহিম) অনুসরণ করেছেন; মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর উনারাও উনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা উনাদের জন্য এমন জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত আছে, উনারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবেন। এটাই হলো মহান সফলতা। (সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ- ১০০)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন তিনি তিন শ্রেণীর মহান ব্যক্তিত্ব উনাদের প্রতি যে সন্তুষ্ট রয়েছেন সে বিষয়টি ঘোষনা করেছেন। উনারা হলেন: অগ্রগামী হযরত মুহাজিরীন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম, অগ্রগামী হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ও উলিল্ আমর তথা হযরত ইমাম, মুজতাহিদ, উলামা-আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহিম। সুবহানাল্লাহ।
মূলত: এ সুমহান মর্যাদা উনারা পেয়েছেন ছুহবাত ও ইত্তিবাহ তথা অনুসরণ-অনুকরণ উনাদের মাধ্যমে। আর ইহাই তো ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’। সুবহানাল্লাহ।
يايها الذين امنوا اتقوا الله و كونوا مع الصادقين. (سورة التوبة شريف ۱۱۹ الاية شريف)
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে ভয় করো এবং ছাদিক্বীন উনাদের সঙ্গী হয়ে যাও। (পবিত্র সূরাতুত্ তাওবাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
এখানে সঙ্গী হওয়ার অর্থ হলো- তোমরা উলিল আমর অর্থাৎ সত্যবাদী, ইমাম, মুজতাহিদ, উলামা কিরাম ও আওলিয়া কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবত অর্জন করো এবং উনাদেরকে অনুসরণ করো। আর ইহাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’। সুবহানাল্লাহ।
মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
الرحمن فاسئل به خبيرا. (سورة الفرقان شريف ۵۹ الاية شريف)
অর্থ: তিনিই রহমান। উনার সম্পর্কে যিনি অবগত, উনাকেই জিজ্ঞাসা করুন। (পবিত্র সূরাতুল ফুরক্বান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
এখানে যাঁকে বা যাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করতে বলা হয়েছে তিনি বা তাঁরা হলেন উম্মাতের মধ্যে: হক্কানী-রব্বানী উলামা কিরাম, আউলিয়া কিরাম, ইমাম, মুজতাহিদ, ফক্বীহ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। আর ইহাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’। সুবহানাল্লাহ।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে-
عن انَس بْنَ مَالِكٍ رضى الله عنه يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يَقُولُ : انَّ أُمَّتِى لاَ تَجْتَمِعُ عَلى ضَلاَلَةٍ، فَاذَا رَايْتُمُ اخْتِلاَفًا فَعَلَيْكُمْ بِالسَّوَادِ الاعْظَمِ. (سنن ابن ماجة كتاب الفتن باب السواد الاعظم الـمولف: حضرت الامام ابن ماجة ابو عبد الله محمد بن يزيد القزوينى رحمة الله عليه المتوفى : ۲۷۳ هجرى. مسند احمد بن حنبل رحمة الله عليه. مشكوة الـمصابيح)
অর্থ: ছাহাবী হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন: নিশ্চয়ই আমার প্রকৃত উম্মত উনারা গুমরাহীর উপর একমত হবেন না। যখন তোমরা উনাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখতে পাবে, তখন তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হলো বড় দল অর্থাৎ আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ উনাদের অনুসরণ করা।
দলীল-
√ সুনানে ইবনু মাজাহ কিতাবুল ফিতান বাবুস্ সাওয়াদিল আ’যম লেখক: হযরত ইমাম ইবনু মাজাহ আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ ক্বাযবীনী হাম্বালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওফাত মুবারক: ২৭৩ হিজরী,
√ মুসনাদ আহমাদ বিন হাম্বাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি,
√ মিশকাতুল মাছাবীহ)
এখানে ‘আস-সাওয়াদুল আ’যম তথা বড় দল’ বলতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ উনার অনুসারীদেরকে বুঝানো হয়েছে। এই দলটিই মূলত: হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বালী মাযহাব উনার হক্কানী-রব্বানী ইমাম, মুজতাহিদ ও উলামা কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উনাদেরকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। আর ইহাই ‘আত-তাক্বলীদুশ শারয়ী তথা শারীয়াত সমর্থিত অনুসরণ’। সুবহানাল্লাহ।