মোরাকাবা অর্থ ধ্যান, গভীর চিন্তা। সূফী বা সাধু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত বিশেষ এক তন্ময়তা বা সমাহিত অবস্থা। সব ধর্মের নিগুঢ় ব্যবস্থাপত্র হচ্ছে মোরাকাবা। হযরত রাসূল (সা.) ১৫ বছর হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যান বা মোরাকাবা করেছেন। মক্কার অদূরে পর্বতটি অবস্থিত। ভূমি হতে হেরা গুহায় ওঠতে ও ফিরে আসতে সময় লাগে ৫ ঘণ্টা। অনেক কষ্ট হেঁটে এত দূর ওঠা। তবুও নবীজি নিয়মিত ঐ গুহায় গিয়ে যে আমলটি করেছেন তা হলো মোরাকাবা। কারণ তখনও আল্লাহর পক্ষ থেকে নামাজ আসেনি। আল্লাহর পক্ষ থেকে নামাজ এসেছে নবুয়ত প্রাপ্তির ১২তম বছরে। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হলে আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জন শর্ত। তাইতো নবীজি (সা.) ১৫ বছর হেরা পর্বতে যে ধ্যান সাধনা করে হৃদয়ের কপাট খুলেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রথম ওহী লাভ করেছেন, সেই মোরাকাবার শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ তিনি সাহাবাদের দিয়েছেন ১২ বছর। প্রথমে সাহাবাদের মোরাকাবার শিক্ষা দিয়ে অন্তর আলোকিত করার কৌশল শিখিয়েছেন। সে আলোকিত অন্তর দ্বারা সাহাবাগণ আল্লাহপাকের সত্তাকে অবলোকন করেছেন। হযরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘আমি এমন মাওলার এবাদত করি না, যাকে আমি দেখি না।’ হযরত ওমর (রা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর নূরের দ্বারা আমার অন্তকরণ আল্লাহর দর্শন লাভ করেছে’। (ছিররুল আসরার)
নবীজি মদিনায় হিজরতের পর নিজ গৃহের বারান্দায় সাহাবাদের জন্য ধ্যান বা মোরাকাবার ব্যবস্থা করেছেন। সাহাবাদের এ সম্প্রদায়কে ‘আসহাবে সুফ্ফা’ বলা হতো। এদেরকে সূফী নামেও অবহিত করা হয়। বর্তমানেও নবীজির রওজার উত্তর পাশে বেশ খানিক জায়গা পাকা করে উঁচু করে রাখা হয়েছে। আর রওজার দেয়ালটাকে কিতাব রাখার লাইব্রেরির মতো করা আছে। এখানে বসে হজ ও ওমরায় আসা নবীর আশেকরা কোরান পড়ে, নফল নামাজ পড়ে, ধ্যান ও মোরাকাবা করে এবং দরূদ ও মিলাদ শরীফ পড়ে। কাশফধারী সাধকগণ আসহাবে সুফ্ফার মেঝেতে বসে মোরাকাবায় নবীর দিদার লাভ করে ধন্য হয়ে থাকেন। মোরাকাবার শিক্ষার বিষয়টি শরীয়তের চর্চার মধ্যে কম দেখা যায়। এ শিক্ষা কেবল খাঁটি পীর বা আউলিয়ায়ে কেরামের মজলিসে প্রচলিত আছে। নবীজি (সা.) সাহাবাদের চারটি বিদ্যা শিক্ষা দিতেন। ১. শরীয়ত, ২. তরীকত, ৩. হাকীকত ও ৪. মারেফত। মারেফত বা তাসাওফ চর্চার মধ্যে মোরাকাবার গুরুত্ব অপরিসীম। তরীকতে মোরাকাবা ছাড়া সাধনার স্তর অতিক্রম করার কোন বিধান নেই। মোরাকাবার মাধ্যমে ফায়েজ হৃদয়ে ধারণ করতে হয়। মোরাকাবা করলে হৃদয়ের কালিমা বিদূরিত হয়ে হৃদয় আলোকিত হয়। তরীকতপন্থী বা তাসাওফপন্থী ছাড়া মোরাকাবায় কোন ফায়দা নেই। কারণ মোরাকাবার নিয়ম হল প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে ও রাত্রির তৃতীয় অংশ রহমতের সময় জেগে বা অন্য যে কোন সময় একজন সাধক আপন মোর্শেদের শেখানো পথে নিজের জীবনের ভুল বেয়াদবি ক্ষমা চাওয়ার জন্য নবীজীর উসিলা করে মহান আল্লাহর নিকট হাজির হয়ে কাকুতি-মিনতি করে প্রার্থনা করা। অতঃপর আল্লাহরপাকের সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে রাসূল (সা.)-এর সিনাহ মোবারকের সাথে সম্পর্কস্থাপন করা। এতে আপন মোর্শেদের দিল মোবারক হতে বিভিন্ন ওয়াক্তের ফায়েজ নিজের দিলে এসে পড়ে দিলের সমস্ত খারাপ স্বভাব পুড়ে যায় ও দিল পবিত্র হয়। এভাবে অধিককাল মোরাকাবা করলে দিলের চোখ খুলে যায়। মোরাকাবার জন্য যে পদ্ধতি, উপাদান ও শিক্ষা প্রয়োজন তা যথাযথ না হলে ফল আশা করা যায় কিভাবে? তাই মোরাকাবা কেবল একজন তরীকতপন্থী সাধকের জন্যই প্রযোজ্য। মোরাকাবা বা আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন হওয়ার জন্য আল্লাহর বন্ধুর পরামর্শ, নির্দেশনা ও ফায়েজ হাসিল করা অবশ্য কর্তব্য। মোরাকাবা হল নফল ইবাদত। নফল ইবাদত হল আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তমপন্থা। তাই মোরাকাবা সাধকের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হযরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘এক ঘণ্টা সময় মোরাকাবা করলে হাজার বছর ইবাদত করার চেয়ে উত্তম।’ নবীজি অন্যত্র বলেছেন, ‘এক বছর সময় মোরাকাবা করা সত্তর বছরের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।’ মোরাকাবা অন্তরের কালিমাকে পরিষ্কার করে দেয়। যার হৃদয়ের কালিমা বিদূরিত হয়েছে, সে নামাজে আল্লাহর সাথে কথোপকথন করে। হৃদয়ের পর্দায় আল্লাহর নূর মোবারকের সাক্ষাৎ লাভ করে মোমেন বান্দা তৃপ্ত হয়ে থাকে। মোরাকাবা করার প্রথম শর্ত হল দু‘চোখ বন্ধ করে নেয়া। অতঃপর তরীকতের ওয়াজিফা মোতাবেক ধ্যানে নিমগ্ন হওয়া। জাহেরি দু’চোখ বন্ধ করে নামাজের মত বসে খেয়াল কালবে ডুবিয়ে মোরাকাবা করতে হয়। অবশ্য দাঁড়িয়ে বা শুয়েও মোরাকাবা করা যায়। মোরাকাবায় বসে প্রথমে খেয়ালে আপন মোর্শেদের শেখানো পথ আঁকড়ে ধরে নিজের ভুল বেয়াদবির জন্য মাফ চাইতে হবে। কাকুতি মিনতি করে নিজের দোষগুলো ক্ষমালাভের প্রার্থনা করতে হবে। এমন অবস্থায় মোর্শেদের দিলের সঙ্গে দিল মিশানোর চেষ্টা করতে হবে। এভাবে যখন দিলের মধ্যে শান্তি লাগবে কিংবা অন্তরের চোখে নূর দেখা যাবে এবং অন্তরে ফায়েজ ওয়ারেদ হবে, তখন ধ্যানে Soman Badsha
বিশ্বময় ইসলামের জাগরণ : মোরাকাবা নফল এবাদত....,
মোরাকাবা অর্থ ধ্যান, গভীর চিন্তা। সূফী বা সাধু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত বিশেষ এক তন্ময়তা বা সমাহিত অবস্থা। সব ধর্মের নিগুঢ় ব্যবস্থাপত্র হচ্ছে মোরাকাবা। হযরত রাসূল (সা.) ১৫ বছর হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যান বা মোরাকাবা করেছেন। মক্কার অদূরে পর্বতটি অবস্থিত। ভূমি হতে হেরা গুহায় ওঠতে ও ফিরে আসতে সময় লাগে ৫ ঘণ্টা। অনেক কষ্ট হেঁটে এত দূর ওঠা। তবুও নবীজি নিয়মিত ঐ গুহায় গিয়ে যে আমলটি করেছেন তা হলো মোরাকাবা। কারণ তখনও আল্লাহর পক্ষ থেকে নামাজ আসেনি। আল্লাহর পক্ষ থেকে নামাজ এসেছে নবুয়ত প্রাপ্তির ১২তম বছরে। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হলে আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জন শর্ত। তাইতো নবীজি (সা.) ১৫ বছর হেরা পর্বতে যে ধ্যান সাধনা করে হৃদয়ের কপাট খুলেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রথম ওহী লাভ করেছেন, সেই মোরাকাবার শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ তিনি সাহাবাদের দিয়েছেন ১২ বছর। প্রথমে সাহাবাদের মোরাকাবার শিক্ষা দিয়ে অন্তর আলোকিত করার কৌশল শিখিয়েছেন। সে আলোকিত অন্তর দ্বারা সাহাবাগণ আল্লাহপাকের সত্তাকে অবলোকন করেছেন। হযরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘আমি এমন মাওলার এবাদত করি না, যাকে আমি দেখি না।’ হযরত ওমর (রা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর নূরের দ্বারা আমার অন্তকরণ আল্লাহর দর্শন লাভ করেছে’। (ছিররুল আসরার)
নবীজি মদিনায় হিজরতের পর নিজ গৃহের বারান্দায় সাহাবাদের জন্য ধ্যান বা মোরাকাবার ব্যবস্থা করেছেন। সাহাবাদের এ সম্প্রদায়কে ‘আসহাবে সুফ্ফা’ বলা হতো। এদেরকে সূফী নামেও অবহিত করা হয়। বর্তমানেও নবীজির রওজার উত্তর পাশে বেশ খানিক জায়গা পাকা করে উঁচু করে রাখা হয়েছে। আর রওজার দেয়ালটাকে কিতাব রাখার লাইব্রেরির মতো করা আছে। এখানে বসে হজ ও ওমরায় আসা নবীর আশেকরা কোরান পড়ে, নফল নামাজ পড়ে, ধ্যান ও মোরাকাবা করে এবং দরূদ ও মিলাদ শরীফ পড়ে। কাশফধারী সাধকগণ আসহাবে সুফ্ফার মেঝেতে বসে মোরাকাবায় নবীর দিদার লাভ করে ধন্য হয়ে থাকেন। মোরাকাবার শিক্ষার বিষয়টি শরীয়তের চর্চার মধ্যে কম দেখা যায়। এ শিক্ষা কেবল খাঁটি পীর বা আউলিয়ায়ে কেরামের মজলিসে প্রচলিত আছে। নবীজি (সা.) সাহাবাদের চারটি বিদ্যা শিক্ষা দিতেন। ১. শরীয়ত, ২. তরীকত, ৩. হাকীকত ও ৪. মারেফত। মারেফত বা তাসাওফ চর্চার মধ্যে মোরাকাবার গুরুত্ব অপরিসীম। তরীকতে মোরাকাবা ছাড়া সাধনার স্তর অতিক্রম করার কোন বিধান নেই। মোরাকাবার মাধ্যমে ফায়েজ হৃদয়ে ধারণ করতে হয়। মোরাকাবা করলে হৃদয়ের কালিমা বিদূরিত হয়ে হৃদয় আলোকিত হয়। তরীকতপন্থী বা তাসাওফপন্থী ছাড়া মোরাকাবায় কোন ফায়দা নেই। কারণ মোরাকাবার নিয়ম হল প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে ও রাত্রির তৃতীয় অংশ রহমতের সময় জেগে বা অন্য যে কোন সময় একজন সাধক আপন মোর্শেদের শেখানো পথে নিজের জীবনের ভুল বেয়াদবি ক্ষমা চাওয়ার জন্য নবীজীর উসিলা করে মহান আল্লাহর নিকট হাজির হয়ে কাকুতি-মিনতি করে প্রার্থনা করা। অতঃপর আল্লাহরপাকের সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে রাসূল (সা.)-এর সিনাহ মোবারকের সাথে সম্পর্কস্থাপন করা। এতে আপন মোর্শেদের দিল মোবারক হতে বিভিন্ন ওয়াক্তের ফায়েজ নিজের দিলে এসে পড়ে দিলের সমস্ত খারাপ স্বভাব পুড়ে যায় ও দিল পবিত্র হয়। এভাবে অধিককাল মোরাকাবা করলে দিলের চোখ খুলে যায়। মোরাকাবার জন্য যে পদ্ধতি, উপাদান ও শিক্ষা প্রয়োজন তা যথাযথ না হলে ফল আশা করা যায় কিভাবে? তাই মোরাকাবা কেবল একজন তরীকতপন্থী সাধকের জন্যই প্রযোজ্য। মোরাকাবা বা আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন হওয়ার জন্য আল্লাহর বন্ধুর পরামর্শ, নির্দেশনা ও ফায়েজ হাসিল করা অবশ্য কর্তব্য। মোরাকাবা হল নফল ইবাদত। নফল ইবাদত হল আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তমপন্থা। তাই মোরাকাবা সাধকের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হযরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘এক ঘণ্টা সময় মোরাকাবা করলে হাজার বছর ইবাদত করার চেয়ে উত্তম।’ নবীজি অন্যত্র বলেছেন, ‘এক বছর সময় মোরাকাবা করা সত্তর বছরের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।’ মোরাকাবা অন্তরের কালিমাকে পরিষ্কার করে দেয়। যার হৃদয়ের কালিমা বিদূরিত হয়েছে, সে নামাজে আল্লাহর সাথে কথোপকথন করে। হৃদয়ের পর্দায় আল্লাহর নূর মোবারকের সাক্ষাৎ লাভ করে মোমেন বান্দা তৃপ্ত হয়ে থাকে। মোরাকাবা করার প্রথম শর্ত হল দু‘চোখ বন্ধ করে নেয়া। অতঃপর তরীকতের ওয়াজিফা মোতাবেক ধ্যানে নিমগ্ন হওয়া। জাহেরি দু’চোখ বন্ধ করে নামাজের মত বসে খেয়াল কালবে ডুবিয়ে মোরাকাবা করতে হয়। অবশ্য দাঁড়িয়ে বা শুয়েও মোরাকাবা করা যায়। মোরাকাবায় বসে প্রথমে খেয়ালে আপন মোর্শেদের শেখানো পথ আঁকড়ে ধরে নিজের ভুল বেয়াদবির জন্য মাফ চাইতে হবে। কাকুতি মিনতি করে নিজের দোষগুলো ক্ষমালাভের প্রার্থনা করতে হবে। এমন অবস্থায় মোর্শেদের দিলের সঙ্গে দিল মিশানোর চেষ্টা করতে হবে। এভাবে যখন দিলের মধ্যে শান্তি লাগবে কিংবা অন্তরের চোখে নূর দেখা যাবে এবং অন্তরে ফায়েজ ওয়ারেদ হবে, তখন ধ্যানে ধ্যানে খেয়ালে খেয়ালে চলে যেতে হবে সোনার মদিনায়। নবীজি (সা.)-এর নূরানি জাসালি শামিয়ানার নিচে আশ্রয়গ্রহণ করে। কাকুতি-মিনতি করে বলতে হবে, ওগো দয়াল দরদী নবীজি! গুনাহ করতে কর খেয়ালে খেয়ালে চলে যেতে হবে সোনার মদিনায়। নবীজি (সা.)-এর নূরানি জাসালি শামিয়ানার নিচে আশ্রয়গ্রহণ করে। কাকুতি-মিনতি করে বলতে হবে, ওগো দয়াল দরদী নবীজি! গুনাহ করতে কর