يا ايها النبى انا ارسلنك شاهدا ومبشرا ونذيرا وداعيا الى الله باذنه وسراجا منيرا.
অনুবাদ: ‘হে গায়েবের সংবাদদাতা নবী! নিঃসন্দেহে আমি আপনাকে! প্রেরণ করেছি হাজির নাজির (উপস্থিত’ ‘পর্যবেণকারী) করে, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর প্রতি তাঁর নির্দেশে আহ্বানকারী আর আলোকোজ্জ্বলকারী সূর্যরূপে।’ (সূরায়ে আহযাব- আয়াত- ৪৫)
উক্ত আয়াতে কারীমায় আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর হাবীব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাঁচটি সুন্দর গুণাবলী উল্লেখ করেছেন। যথা-
(১) شاهد (শাহিদ) তথা- হাজির ও নাজির এবং সাক্ষী।
(২) مبشر (মুবাশ্বির) মু’মিনগণকে বেহেশতের সুসংবাদদাতা।
(৩) نذير (নাযীর) কাফেরদেরকে দোযখের ভীতিপ্রদর্শনকারী।
(৪) داعيا الى الله (দা’য়িয়ান ইলাল্লাহ) আল্লাহপাকের অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী।
(৫) سراجا منيرا (সিরাজাম মুনীরা) হেদায়তের উজ্জ্বল সূর্যরূপে।
অত্র আয়াতে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাঁচটি গুণাবলীর মধ্যে একটি অন্যতম গুণ হল শাহিদ। এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ নিম্নে প্রদত্ত হল।
شاهد শব্দের ব্যাখ্যা
কোরআন মজিদের শব্দব্যাখ্যা লেখক সর্বজনমান্য বুজুর্গ আল্লামা ইস্পাহানী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘আল মুফরাদাত ফি গারিবীল কোরআন’ নামক কিতাবের ২৬৭ পৃষ্ঠায় شاهد (শাহিদ) শব্দের অর্থ লিখেছেন নিম্নোক্তভাবে-
شهد : الشهود والشهادة الحضور مع المشاهدة اما با لبصر او باالبصيرة
অর্থাৎ شهود (শুহুদ) ও شهادة (শাহাদাত) এর অর্থ হচ্ছে ঘটনাস্থলে প্রত্যভাবে দেখার সাথে হাজির বা উপস্থিত থাকা। এ দেখা চর্মচু দ্বারাও হতে পারে বা অন্তর চোখ দ্বারাও হতে পারে।
অনুরূপভাবে হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফেকাহগ্রন্থ ‘বাহরুর রায়েক’ নামক কিতাবের ৭ম খণ্ড ৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে-
ان الشهادة اسم من المشاهدة وهى الاطلاع على الشئ عيانا فشترط فى الاداء ما ينبئ عن المشاهدة-
অর্থাৎ ‘শাহাদত’ শব্দটি ‘মুশাহাদাহ’ হতে গঠিত। আর মুশাহাদা হল, কোন বস্তুকে চাুস দেখে এ বিষয়ে অবগতি অর্জন করা । এজন্য সাক্ষ্য প্রদানে স্বচে দর্শন করা যুক্ত করা হয়েছে।
আলমনজিদ নামক অভিধানের ৪০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
والشهيد الذى لايغيب شئ من علمه الشاهد الذى يخبر بما شهده
অর্থাৎ الشهيد (শাহীদ) ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যার ইলিম বা জ্ঞান থেকে কোন কিছুই গায়েব বা অজানা থাকে না এবং الشاهد (শাহিদ) ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যিনি চাুস দেখে সংবাদ প্রদান করে থাকেন।
অনুরূপ বাংলা একাডেমী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত ‘আরবি-বাংলা’ অভিধান ১৪৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে- شاهد (শাহিদ) পরিদর্শন করিয়াছে। يشاهد দেখিয়াছে।
এভাবে ‘লুগাতে সূরাহ’ ১৩৫ পৃষ্ঠা, মিসবাহুল মুনীর ১ম জিলদের ১৪০ পৃষ্ঠা। আল কামুসূল মুহিত, ৩৭২ পৃষ্ঠা, মিসবাহুল লোগাত, ৪৫০ পৃষ্ঠা, ফিরোজুল লুগাত ৬৭ পৃষ্ঠা, মিফতাহুল লুগাত ৩৯৮ পৃষ্ঠা ও লুগাতে কেশওয়ারী ৪১০ পৃষ্ঠা, ‘শাহীদ’ শব্দের অর্থ হাজির ও নাজির লেখা রয়েছে।
انا ارسلنك شاهدا উক্ত আয়াতে কারীমার তাফসির বা ব্যাখ্যায় তাফসিরে আবুস সউদ ৪র্থ খণ্ড ১০৭/১০৮ পৃষ্ঠা, তাফসিরে রুহুল মায়ানী ২২ পারা ৪৫ পৃষ্ঠা, ও তাফসিরে জুমাল ৩য় খণ্ড ৪৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
(انا ارسلنك شاهدا) على من بعثت اليهم تراقب احوالهم وتشاهد اعمالهم وتتحمل منهم الشهادة بما صدر عنهم من التصديق والتكذيب وسائر ماهم عليه من الهدى والضلال وتؤديها يوم القيامة اداء مقبولا فيمالهم وماعليهم-
অর্থাৎ যাদের প্রতি আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে, তাদের সকলের জন্য আমি আপনাকে ‘শাহিদ’ তথা হাজির ও নাজির করে পাঠিয়েছি। আপনি তাদের অবস্থাদি পর্যবেণ করতে থাকবেন, তাদের আমলসমূহ ও প্রত্য করবেন এবং তাদের প্রত্যদর্শী সাী বহন করবেন, এভাবে যে, তাদের মধ্যে কারা সত্যবাদী ঈমানের উপর অটল আছে, কারা ঈমান হারা হয়ে মিথ্যার মধ্যে রয়েছে, কারা সঠিক হেদায়তের উপর বিদ্যমান এবং কারা গোমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে। কিয়ামতের দিনে আপনার এ সকল সাক্ষী ঈমানদারদের পে এবং কাফেরদের বিপে আল্লাহর দরবারে মকবুল হবে।
উপরে বর্ণিত তাফসিরে আবুস সউদ, তাফসিরে রুহুল মায়ানী ও তাফসিরে জুমালের এবারত দ্বারা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হল যে, হুজুর পুরনুর হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন প্রত্যদর্শী সাক্ষী তথা হাজির ও নাজির।
রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রত্যদর্শী সাী তথা হাজির ও নাজির সংক্রান্ত বিষয়কে জোড়দার করার জন্য প্রখ্যাত তাফসিরকারক আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলুছী বাগদাদী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘রুহুল মায়ানী’ নামক তাফসির গ্রন্থে মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক রচিত নিম্নলিখিত কবিতাটি সংকলন করেছেন-
قال مولانا جلال الدين الرومى قدس سره العزيز فى مثنوى:
در نظر بودش مقامات العباد
زان سبب نا مش خدا شاہد نہاد
অর্থাৎ মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী রাদিয়াল্লাহু আনহু মসনবী শরীফে বলেন, মাকামাতুল এবাদ তথা বান্দাগণ যেখানে অবস্থান করে, সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নজর বা দৃষ্টি রয়েছে। এজন্যই আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর বাণীতে তাঁর হাবিবের নাম মোবারক ‘শাহিদ’ বলে নামকরণ করেছেন। (তাফসিরে রুহুল মায়ানী ৮ম খণ্ড ৪৫ পৃষ্ঠা ২২ নং পারা)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ প্রদত্ত মতাবলে হাজির ও নাজির।
উল্লেখ্য যে, ইসলামী পরিভাষায় যিনি খোদাপ্রদত্ত কুদরতী শক্তির অধিকারী হয়ে একই স্থানে অবস্থান করতঃ সমগ্র জগতকে হাতের তালুর ন্যায় প্রত্য করেন, নিকট ও দূরবর্তী আওয়াজ সমভাবে শুনেন, যেখানে ইচ্ছা মতা প্রয়োগ করেন- তাকেই ও হাজির নাজির বলে। (জা আল হক্ব)
সহীহ বোখারীশরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম কাসতালানী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘মাওয়াহিবে লাদুনিয়া’ নামক কিতাবের ২য় জিলদের ১৯২ পৃষ্ঠায় ‘তিবরানীশরীফ’ থেকে একখানা হাদীসশরীফ রেওয়ায়েত করেছেন-
اخرج الطبرانى عن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها والى ما هو كائن فيها الى يوم القيامة كانما انظر الى كفى هذه-
অর্থাৎ ‘হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা আমার জন্য সারা বিশ্বজগতকে উঠিয়ে রাখছেন, (জাহির করেছেন) সুতরাং আমি সারা বিশ্বজগতকে দেখছি এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু এ জগতে হবে দেখতে থাকব। যেমন হাতের তালুকে দেখছি। আল্লামা জারকানী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর লিখিত ‘জারকানীশরীফ’ নামক কিতাবের ৭ম জিলদের ২০৫ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীসশরীফের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-
اى اظهر وكشف لى الدنيا بحيث بجميع ما فيها فانا انظر اليها (الخ) اشارة على انه نظر حقيقى دفع انه اريد بالنظر العلم ولايراد انه اخبار عن مشاهدة-
ভাবার্থ ‘আল্লাহপাক আমার সামনে সারা দুনিয়াকে উঠিয়ে রাখছেন অর্থাৎ সারা দুনিয়াকে আমার জন্য জাহির ও কশ্ফ করে খুলে দিয়েছেন এভাবে যে, আমার আয়াত্বাদীনে সারা দুনিয়ার বস্তুকে করে দিয়েছেন। সুতরাং আমি সারা বিশ্বজগতকে দেখছি এবং কিয়ামত পর্যন্ত দেখতে থাকব। (আল্লামা জারকানী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন) রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোদাপ্রদত্ত মতা বলে নিজ চোখ মোবারক দ্বারা হাকিকী নজরে দেখছেন, এখানে নজরে ইলিমও মুরাদ লওয়া যাবে না এবং তা দেখার সংবাদও মুরাদ লওয়া হবে না। (এ মর্মে আরো হাদীসশরীফ রয়েছে)।
এই দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হল যে, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, মুহাদ্দিসীন, মুফাসসিরীন এমনকি সমস্ত আউলিয়া কেরামের আকিদা হল আল্লাহর হাবীব হাজির ও নাজির।
শায়খুল মুহাদ্দিসীন আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘তাহসিলুল বারাকাত’ উর্দু তরজমা ‘তাকমীলুল হাসানাত’ কিতাবে সহীহ হাদীসের আলোকে দীর্ঘ আলোচনা করে বলেন-
انحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کی ذات بابرکات اپنی حقیقت کے اعتبارسے سارے موجودات اور کائنات میں حاضر وشاہد موجود و ناظر ہے-
অর্থাৎ ‘হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জাতে বাবরকাত তাঁর হাকিকতের দৃষ্টিতে সমস্ত সৃষ্টিজগতে হাজির ও শাহিদ, মওজুদ ও নাজির রয়েছেন।’
অনুরূপ শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘আখবারুল আখইয়ার’ নামক কিতাবে লিখিত হাশিয়া বা পাদটীকায় উল্লেখ করেন-
وبچندیں اختلاف وکثرت مذاہب کہ در علماء امت است یک کس رادریں مسئلہ خلاف نیست کہ انحضرت صلی اللہ علیہ وسلم بحقیقت حیات بے شائبہ مجازوتوہم تاویل وائم وباقیست وبراعمال امت حاضر وناظراست
অর্থাৎ ‘উম্মতে মুহাম্মদীর ওলামাদের মধ্যে এই মতপার্থক্য মাজহাবের আধিক্য সত্ত্বেও এই মাসআলায় কারো দ্বিমত নেই যে, হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূপকের অবকাশ ও কুটিল ব্যাখ্যার ধারণা ব্যতিরেকে প্রকৃত জীবনে জীবিত, স্থায়ী ও বিরাজমান এবং উম্মতের আমলসমূহের প্রতি হাজির ও নাজির। (জিকরে জামিল দ্র:)
মাদারিজুন নবুয়ত কিতাবের ৭৮৬/৭৮৭ পৃষ্ঠায় শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বলেন-
ذکر کن اور او درود بفرست بروے صلی اللہ علیہ وسلم وباش در حال ذکر گو یاحاضرست پیش تودر حالت حیات ومی بینی تو اور امتادب باجلال وتعظیم وہمت وحیاء بدانکہ وے صلی اللہ علیہ وسلم میں بیند ومیں شنود کلام ترا-
অর্থাৎ ‘হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্মরণ করুন, তাঁর প্রতি দরূদশরীফ পেশ করুন। আল্লাহর হাবীবের জিকির করার সময় এমনভাবে অবস্থান করুন, তিনি আপনার সামনে জীবিতাবস্থায় হাজির আছেন, আর আপনি যেন তাঁকে দেখছেন।
আদব, মর্যাদা ও শ্রদ্ধা অুক্ষুন্ন রেখে ভীত ও লজ্জিত থাকুন এবং এ ধারণা পোষণ করবেন যে, হুজুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাতে দেখেন। আপনার কথাবার্তা শুনেন।’
নবম শতকের মুজাদ্দিদ আল্লামা ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর লিখিত ‘আল হাবী লিল ফাতাওয়া’ নামক কিতাবের ২য় জিলদের ১৫৩ পৃষ্ঠা, ‘আম্বাউল আযকিয়া ফি হায়াতিল আম্বিয়া’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেন-
النظر فى اعمال امته والاستغفارلهم من السيئات والدعاء بكشف البلاء عنهم والتردد فى اقطار الارض لحلول البركة فيها وحضور جنازة من مات من صالح امته فان هذه الامور من جملة اشغاله فى البرزخ كما وردت بذلك الاحاديث والاثار-
অর্থাৎ ‘হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দুনিয়াতে পাঁচটি কাজ রয়েছে।
১। উম্মতের আমলের প্রতি নজর বা দৃষ্টি মোবারক রয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর হাবীব উম্মতের আমলসমূহ দেখছেন।
২। উম্মতের জন্য আল্লাহর হাবীব ইস্তেগফার করেন অর্থাৎ আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে উম্মতের গুনাহ মাফের জন্য সুপারিশ করছেন।
৩। উম্মত যেন গোনাহের কারণে বালা মুসিবতে পতিত না হয় সেজন্য আল্লাহর হাবীব আল্লাহপাকের শাহানশাহী দরবারে দোয়া করছেন।
৪। আল্লাহর হাবীব পৃথিবীর সর্বত্র পরিভ্রমণ করে সর্বত্র (শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, এলাকা, আতরাফ সব জায়গায় নিজ হাত মোবারক দ্বারা খায়র ও বরকত প্রদান করে থাকেন।
৫। নিজ উম্মতের নেকবান্দার ওফাত হলে আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযাতে অংশগ্রহণ করে আল্লাহপাকের শাহানশাহী দরবারে এ জানাযাকে কবুল ও মঞ্জুর করিয়ে নিন।
এগুলোই হচ্ছে আমলে বরযখে অর্থাৎ রওজা মোবারকে অবস্থান করে আল্লাহর হাবীব এ সকল কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। হাদীস ও আসার থেকে এ সব কাজের পূর্ণ সমর্থন বিদ্যমান রয়েছে।’
জনৈক বিভ্রান্তকারীর স্বরূপ উম্মোচন
নবীগঞ্জ এলাকার জনৈক নজদী ওহাবীপন্থী লেখক, তাঁর ‘গায়েবের জ্ঞান ও রূহের অবস্থান’ নামক পুস্তকের ১৬ পৃষ্ঠায় ‘তাফসিরে রুহুল মায়ানী’ নামক কিতাবের একটি এবারত উল্লেখ করে এ বারতের মর্মকে বিকৃত করে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খোদাপ্রদত্ত ‘হাজির ও নাজির’ গুণকে অস্বীকার করার হীন চেষ্টা করেছেন। নিম্নে তার পেশকৃত ‘রুহুল মায়ানী’ কিতাবের এবারত ও তার সঠিক মর্ম উপস্থাপন করা হল এবং পাশাপাশি তার ভ্রান্ত ধারণার স্বরূপও উন্মোচন করা গেল।
আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলুছি রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘তাফসিরে রুহুল মায়ানী’ ২২ পারা ৮ম খণ্ড ৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
واما زعم ان التحمل على من بعده الى يوم القيامة لما انه صلى الله عليه وسلم حى بروحه وجسده يسير حيث شاء فى اقطار الارض والملكوت فمبنى ما علمت حاله ولعل فى هذين الخبرين ماياباه كما لايخفى على المتدبر-
অর্থাৎ এ এবারতের বিকৃত অর্থ ‘গায়েবের জ্ঞান ও রূহের অবস্থান’ নামক পুস্তকে নিম্নরূপ লেখা হয়েছে অর্থ ‘কিন্তু একটি ভিত্তিহীন কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের পর হতে কিয়ামত পর্যন্ত তিনি তাঁর পবিত্র রূহ ও দেহের সাথে জীবিত এবং দুনিয়া ও আল্লাহর মালাকুতের সর্বত্র বিচরণ করে থাকেন। এই কল্পনা ধারণার ভিত্তি উপরোল্লিখিত অবস্থাসমূহের উপরই প্রতিষ্ঠিত, যা আপনি (পাঠক) অবগত হয়েছেন। তবে আশা করা যাচ্ছে যে, উপরোক্ত রেওয়ায়েত তা অগ্রাহ্য করছে। জ্ঞানী ও বিচণ ব্যক্তিদের নিকট তা কখনও অপ্রকাশ্য নয়।’
তার এ বিকৃত অর্থকে প্রমাণ করার জন্য আল্লামা রাগেব ইস্পাহানী ‘মুফরাদাত’ গ্রন্থের আংশিক এবারত উপস্থাপন করে তার ভ্রান্ত দাবিকে জোরদার করার অপচেষ্টা করেছে।
‘মুফরাদাত’ গ্রন্থের এবারত নিম্নরূপ-
زعم: الزعم حكاية قول يكون مظنة للكذب ولهذا جاء فى القران فى كل موضع ذم القائلون به نحو (زعم الذين كفروا)
অর্থাৎ زعم (যায়াম) এমন কাল্পনিক কাহিনী বা ধ্যান ধারণা যার কোন বাস্তবতা নেই, এমন অর্থ প্রদান করার নিমিত্তে কোরআনশরীফের বিভিন্ন স্থানে زعم (যায়াম) শব্দ এসেছে। যেমন- زعم الذين كفروا الاية (কাফেরগণ মিথ্যা ধারণা করে)।
আল্লামা রাগেব ইস্পাহানীর তদীয় ‘আল মুফরাদাত’ গ্রন্থে زعم (যায়াম) শব্দের যে বিশ্লেষণ করেছেন তা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত زعم শব্দসম্পর্কিত। যে কোন আরবি এবারতে বর্ণিত زعم শব্দের সাথে এর সম্পর্ক নেই। আল্লামা আলুছী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ‘তাফসিরে রুহুল মায়ানী’ তে বর্ণিত زعم (যায়াম) শব্দ ও কোরআনের আয়াতে বর্ণিত زعم শব্দের এক অর্থ হতে পারে না। নজদীপন্থী লেখক আল্লামা আলুছী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর লিখিত زعم শব্দ ও আল্লামা ইস্পাহানীর কোরআনের শব্দের বিশ্লেষণে زعم (যায়াম) শব্দের অর্থকে একাকার করে দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
যদি আল্লামা আলুছী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উক্তি زعم (যায়াম) শব্দ দ্বারা বাতিল আকিদা বুঝানোর উদ্দেশ্য হতো, তাহলে তদীয় ‘তাফসিরে রহুল মায়ানী’ কিতাবে ‘খাতামুন্নাবীঈন, আয়াতের ব্যাখ্যায় নিম্নলিখিত বর্ণনা দিতেন না। ‘খাতামুন্নাবীঈন’ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আলূছী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা নিম্নে প্রদত্ত হল-
واستحسنه الجلال السيوطى وقال: بعد نقل احاديث واثار مانصح فحصل من مجموع هذا الكلام النقول والاحاديث ان النبى صلى الله عليه وسلم حى بجسده وروحه وانه يتصرف ويسير حيث شاء فى اقطار الارض وفى الملكوت وهو بهيئته التى كان عليها قبل وفاته لم يتبدل منه شئ وانه مغيب عن الابصار كما غيبت الملائكة مع كونهم احياء باجسادهم فاذا اراد الله تعالى رفع الحجاب عمن اراد اكرامه برؤيته راه على هيئته التى هو عليه الصلاة والسلام عليها لامانع من ذلك ولاداعى الى التخصيص برؤية المثال وذهب ورحمه الله تعالى الى نحو هذا فى سائر الانبياء عليهم السلام فقال انهم احياء ردت اليهم ارواحهم بعد ما قبضوا واذن لهم فى الخروج من قبورهم والتصرف فى الملكوت العلوى والسفلى-
অর্থাৎ ‘নবম শতকের মুজাদ্দিদ আল্লামা জালালউদ্দিন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি অনেক হাদীস এবং আসার দলিলরূপে সংকলন করে অতি সুন্দরভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। যার সারমর্ম হল এই যে নিশ্চয় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বশরীরে ও স্বপ্রাণে জীবিত রয়েছেন। তিনি যেখানে ইচ্ছা ভ্রমণ করেন, পৃথিবীর ও ফেরেশতা জগতের প্রতিটি কোণায় কোণায় মতা প্রয়োগ করেন। তিনি হুবহু সেরূপই রয়েছেন, যেরূপ ওফাতশরীফের পূর্বে ছিলেন। এতে কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে আমাদের দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য করে দেওয়া হয়েছে। যেমন- ফেরেশতাগণ জীবিত হওয়া সত্বেও আমাদের দৃষ্টি থেকে তাদেরকে অদৃশ্য করে দেয়া হয়েছে। যখন আল্লাহ তা’য়ালা কাউকে নবীজীর দিদার বা দর্শন দ্বারা সম্মানিত করতে চান, তখন তার থেকে পর্দা তুলে নেন এবং সে তাঁকে (নবীজীকে) ঐ রূপেই দর্শন করেন যেরূপ তিনি রয়েছেন। এ বিষয়ে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই এবং সুরতে মিসাল (সদৃশ্য আকৃতি) দর্শন দ্বারা বিশেষিত করার ও কোন প্রয়োজন নেই।
আল্লামা ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ূতী রাদিয়াল্লাহু আনহু সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম সম্বন্ধে এ মত পোষণ করেন। তারপর তিনি বলেন- সমস্ত নবীগণ স্বশরীরে জীবিত রয়েছেন। নবীগণের ওফাতশরীফের পর (দেহ মোবারক হতে রূহ মোবারক পৃথক হওয়ার পর) তাঁদের রূহ মোবারককে পূণরায় (অল্পণের মধ্যে) তাঁদের দেহ মোবারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। (পূর্বে যেরূপ ছিলেন স্বশরীরে জিন্দা, এখনও আছেন স্বশরীরে জিন্দা) সকল নবীগণকে তাঁদের রওজাশরীফ হতে স্বশরীরে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। আসমান ও জমিনের সর্বত্র পরিভ্রমণ করার মতাও প্রদান করা হয়েছে। (তাফসিরে রুহুল মায়ানী ৮ম খণ্ড ৩৬ পৃষ্ঠা ও আল হাবী লিল ফাতাওয়া ২য় জিলদ ২৬৬ পৃষ্ঠা দ্র.)
উক্ত এবারত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর আকিদা হচ্ছে, আল্লাহর হাবীব সশরীরে জীবিত, তিনি যেখানে ইচ্ছা ভ্রমণ করেন, পৃথিবী ও ফেরেশতাজগতের প্রতিটি কোণায় কোণায় তসররূফ বা মতা প্রয়োগ করেন এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুবহু সেরূপই রয়েছেন, যেরূপ ওফাতশরীফের পূর্বে ছিলেন। এতে কোন পরিবর্তন সাধিত হয়নি।
আল্লামা আলুছী রাদিয়াল্লাহু আনহু আকিদাসংক্রান্ত উপরোক্ত বর্ণনাকে-واستحسنه الجلال السيوطى (সুয়ূতী রাদিয়াল্লাহু অতি চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন) বলে ইমাম সুয়ুতীর আকিদার সাথে পূর্ণ সমর্থন ও একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।
এতে এ কথাও প্রমাণিত হল পূর্বে তাঁর বর্ণিত زعم (যায়াম) শব্দ দ্বারা আল্লামা আলুছী রাদিয়াল্লাহু আনহু বাতিল বা ভিত্তিহীন আকিদা মুরাদ নেননি।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখার জন্য বা পর্যবেন করার জন্য কোথায়ও যাওয়ার প্রয়োজন নেই বরং একই স্থানে অবস্থান করেই সারা দুনিয়াতে হাজির ও নাজির রয়েছেন। এ মতা আল্লাহপাক তাঁর হাবীবকে দান করেছেন। ভ্রমণ করা আল্লাহর হাবীবের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
সুধী পাঠকবৃন্দ! আমরা এতণ যা কিছু আলোচনা করেছি, তাহল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ গুণ شاهد (শাহিদ) তথা হাজির ও নাজির বা প্রত্যদর্শী সাী সম্পর্কে। একদিকে আল্লাহর হাবীবের গুণ যেমন شاهد (শাহিদ) অপরদিকে আরেকটি গুণ হচ্ছে شهيد (শাহীদ)।
আল্লাহপাক নিজেই এরশাদ করেছেন-
وكذلك جعلناكم امة وسطالتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدا-
অর্থ: এভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী (শ্রেষ্ঠ) উম্মতরুপে প্রতিষ্ঠিত করেছি, যাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাী হও এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হবে তোমাদের জন্য (সাফায়ী) সাী বা রক। (সূরা বাকারা)
উক্ত আয়াতে কারীমায় মু’মিন উম্মতগণকে شهداء (শুহাদা) এবং রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে شهيد (শাহীদ) গুণে গুণান্বিত করা হয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, কিয়ামতের দিবসে অন্যান্য নবীগণের বেঈমান উম্মতেরা আল্লাহ তা’য়ালার সুমহান দরবারে আরজ করবে যে, হে আল্লাহ আপনার কোন পয়গাম্বর আমাদের কাছেই আসেননি এবং কেহ আপনার হুকুম আহকামও আমাদের নিকট পৌঁছায়নি। তখন এ সকল নবীগণ আরজ করবেন, হে আল্লাহ এরা মিথ্যাবাদী। আমরা আপনার সমস্ত বিধান তাদেরকে শুনিয়েছি, জানিয়েছি। এতদ্বসত্বেও তারা ঈমান গ্রহণ করেনি। নবীগণকে হুকুম করা হবে, আপনারা আপনাদের দাবির স্বপে সাী আনয়ন করুন। নবীগণ আলাইহিমুস সালাম তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতগণকেই নিজেদের সাী হিসেবে পেশ করবেন। আর উম্মতে মোহাম্মদীগণ তখন সাী প্রদান করে বলবেন, আল্লাহ আপনার এ সকল নবীগণ আপন দাবিতে সত্য।
বরং এ সকল কাফিররাই মিথ্যাবাদী। বাস্তবিকই নবীগণ দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন। এ কথার উপর কাফিররা অভিযোগ এনে বলবে, তোমরাতো আমাদের সময়ে ছিলে না। হাজার হাজার বছর পর সৃষ্টি হয়ে না দেখে না শোনে কিভাবে সাী দিচ্ছ।
ঈমানদার উম্মতে মোহাম্মদীরা আরজ করবেন, আমরা আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই শুনেছি, যিনি আল্লাহ প্রদত্ত মতা বলে সকল অবস্থা দেখেছেন, এমতাবস্থায় উম্মতে মোহাম্মদীর দাবির সত্যতা প্রমাণের জন্য আল্লাহর হাবীব তাশরিফ আনবেন এবং বলবেন, হে আল্লাহ নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে বলেছি যে, অতীত নবীগণ স্ব-স্ব কউমের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ সাীর ভিত্তিতে নবীগণের পে আহকামূল হাকিমীন রায় প্রদান করবেন। কেন না আল্লাহর হাবীব পূর্বাপর সমস্ত ঘটনাবলী দেখেছেন, নতুবা প্রথমেতো শোনা সাী উম্মতগণই দিয়েছিল, এখন প্রয়োজন হয়েছিল এমন সাী যিনি সব কিছু অবলোকন করেছেন।
প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইসমাইল হাক্বী বরসয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু (যার ওফাত ১১৩৭ হিজরি) তদীয় ‘তাফসিরে রুহুল বয়ান’ নামক কিতাবের ১ম খণ্ড ২৪৮ পৃষ্ঠায় উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-
هذا مبنى على تضمين الشهيد معنى الرقيب والمطلع فعدى تعديته والوجه اعتبار تضمين الشهيد الاشرة الى ان التعديل والتزكية انما يكون عن خبرة ومراقبة بحال الشاهد … ومعنى شهادة الرسول عليهم اطلاعه على رتبة كل متدين بدينه وحقيقته التى هو عليها من دينه وحجابه الذى هوبه محجوب عن كمال دينه فهو يعرف ذنوبهم وحقيقة ايمانهم واعمالهم وحسناتهم وسياتهم واخلاصهم ونفاقهم وغير ذلك بنور الحق وامته يعرفون ذلك من سائر الامم بنوره عليه الصلاة والسلام- ملخصا
অর্থাৎ ‘এটা এ কারণেই যে, আয়াতে উল্লেখিত شهيد (শাহীদ) শব্দটি পর্যবেণকারী ও অবগত হওয়া কথাটিরও অন্তর্ভুক্ত করে এবং এ অর্থ দ্বারা একথারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কোন ব্যক্তির ভাল ও মন্দের সাক্ষী উক্ত ব্যক্তির যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে সম্যকরূপে ওয়াকিফহাল হন’।
… হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কিয়ামতের দিন মুসলমানদের) সাক্ষী দেওয়ার অর্থ এই যে, তিনি (আল্লাহর হাবীব) প্রত্যেক ধর্মপরায়ণ ব্যক্তির ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে অবগত। তার ঈমানের হাকিকত কী এবং তাঁর দ্বীনের উন্নতির পথে অন্তরায় কী, সব কিছুই তিনি জানেন।’
সুতরাং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের (উম্মতের) পাপরাশি ও ঈমানের স্তরসমূহ ভাল-মন্দ আমল বা কার্যাবলী এবং কার নিয়ত শুদ্ধ কে মুনাফিক খোদাপ্রদত্ত নূরের সাহায্যে অবগত আছেন এবং আল্লাহর হাবীবের উম্মতরাও তাঁর নূরের সাহায্যে ঐ সমস্ত বিষয়াদী সম্পর্কে অবগত হতে পারেন।
অনুরূপ উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শামসুল উলামা আল্লামা শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর স্বরচিত ‘তাফসিরে আজিজী’ নামক কিতাবে ويكون الرسول عليكم شهيدا আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন-
یعنی وباشد رسول شمابرشما گواہ زیر اکہ مطلع است بہ نور نبوت بہ رتبہ ہرمتدین بدین خودکہ کرام درجہ ازدین من رسیدہ وحقیقت ایمان اوچیست وحجابی کہ بدان ازترقی محجوب مائدہ است کدام است پس اومیشناسد گناہان شمارا درجات ایمان شمارا واعمال نیک وبدشمارا واخلاص ونفاق شمارا ولھذا شہادت اودر دنیا بحکم شرع در حق امت مقبول وواجب العمل است-
অর্থাৎ ‘রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের সাী হবেন, এজন্য যে তিনি স্বীয় নবুয়তের আলোকে প্রত্যেক দ্বীনদার বা ধর্মপরায়ণ ব্যক্তির ধর্মের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন। কোন ব্যক্তি ধর্মের কোন স্তরে পৌঁছেছেন, তার, ঈমানের হাকিকত কী এবং পারলৌকিক উন্নতির সাথে অন্তরায় কী সব কিছুই তিনি জানেন।
সুতরাং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের পাপরাশি, তোমাদের ঈমানের স্তর, তোমাদের নেক ও বদ, ভাল-মন্দ কার্যাবলী এবং তোমাদের এখলাস বা বিশুদ্ধ নিয়ত ও তোমাদের নেফাক বা কপটতা সম্পর্কে অবগত আছেন। এজন্যইতো পৃথিবীতে উম্মতের পে বা বিপে তাঁর স্যা শরিয়তের বিধান মতে মকবুল বা গ্রহণীয় এবং অবশ্যই পালনীয়।
উপরিলিখিত দু’খানা প্রামাণ্য তাফসিরের এবারত দ্বারা প্রতীয়মান হল যে, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পূর্বাপর সমস্ত উম্মতের সার্বিক অবস্থা এবং তাদের কর্ম তৎপরতা সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।
রাব্বুল আলামীনের মহান দরবারে তিনি দু’টি সাী প্রদান করবেন।
প্রথমত রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতগণ পূর্ববর্তী নবীগণের পে যে স্যা প্রদান করছেন, তা সঠিক।
দ্বিতীয় নবীগণ তাঁদের স্ব-স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে আদায় করেছেন কিন্তু তাদের বেঈমান উম্মতরা তাদের দাওয়াত গ্রহণ করেনি বরং প্রত্যাখ্যান করেছে।
উল্লেখ যে, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পূর্বাপর উম্মতগণের সমস্ত ঘটনাবলী প্রত্য করেছেন, এজন্য তাঁর স্যা হবে চূড়ান্ত স্যা। কেন না রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ববর্তী সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের সমস্ত ঘটনাবলীর সময়ে রূহানীভাবে হাজির ও নাজির ছিলেন। এ সম্পর্কে আল্লামা আরেফ বিল্লাহ শেখ আহমদ সাভী মালেকী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘তাফসিরে সাভী’ নামক কিতাবের ৩য় খণ্ড ২১৯ পৃষ্ঠায় وماكنت بجانب الطور আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-
وهذا بالنظر الى العالم الجسمانى لاقامة الحجة على الخصم واما بالنظر الى العالم الروحانى فهو حاضر رسالة كل رسول وماوقع له من لدن ادم الى ان ظهر بجسمه الشريف-
অর্থাৎ ‘এখানে বলা হয়েছে যে, আপনি (আল্লাহর হাবীব) হযরত মুসা আলাইহিস সালামের সে ঘটনাস্থলে ছিলেন না, তা শারীরিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়েছে। অর্থাৎ সেখানে স্বশরীরে হাজির ছিলেন না, বরং রূহানীভাবে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রাসূলের রিসালত এমনকি হযরত আদম আলাইহিস সালামের আদি সৃষ্টি থেকে শুরু করে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বশরীরে দুনিয়াতে আবির্ভূত হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি অনুষ্ঠিত সমস্ত বিষয়ে রূহানীতে হাজির ছিলেন।
অনুরূপ আল্লামা ইসমাইল হাক্বী বরসয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘তাফসিরে রুহুল বয়ান’ নামক কিতাবের ৯ম খণ্ড ১৮ পৃষ্ঠায় সূরা ফাত্হ এর انا ارسلنك شاهدا আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-
ولذا ارسله تعالى شاهدا فانه لما كان اول مخلوق خلقه الله كان شاهدا بوحدانية الحق وربوبيته وشاهدا بما اخرج من العدم الى الوجود من الارواح والنفوس والاجرام والاركان والاجسام والاجساد والمعادن والنبات والحيوان والملك والجن والشيطان والانسان وغير ذلك لئلا يشد عنه ما يمكن للمخلوق واسرار افعاله-
وعجائب صنعه وغرائب قدرته بحيث لايشاركه فيه غيره ولهذا قال عليه السلام علمت ماكان وما سيكون لانه شاهد الكل-
অর্থাৎ ‘এজন্য আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর হাবীবকে شاهد (শাহীদ) তথা প্রত্য সাী বা হাজির ও নাজির গুণে গুণান্বিত করে প্রেরণ করেছেন। কেন না তিনি আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টি। তাঁকে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর ওয়াহদানিয়াত বা একত্বের ও রবুবিয়ত বা প্রভুত্বের প্রত্যদর্শী সাী বানিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি খোদাপ্রদত্ত মতা বলে অবলোকন করেছেন ঐ সকল বস্তু, যেগুলো অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বে এসেছে। যেমন- মানবাত্মা, জীবাত্মা, পাপী, পুণ্যবান, শারীরিক কাঠামো, দেহ, খানিজ পদার্থ, বৃরাজি, পশু-পাখি, ফেরেশতা, জিন, শয়তান, মানবজাতি ইত্যাদি সবগুলো অবলোকন করেছেন। যেন আল্লাহ তা’য়ালার যেসব গুপ্তভেদ ও বিস্ময়কর ব্যাপারগুলো, যেগুলোর রহস্য উম্মোচন করা অন্য কোন সৃষ্টির পে সম্ভবপর নয় তা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে রহস্যাবৃত ও অপ্রকাশ্য থাকার কোন অবকাশ থাকে না। অর্থাৎ তিনি সব কিছুই দেখেছেন। এজন্যই আল্লাহর হাবীব এরশাদ করেছেন علمت ما كان وما سيكون অর্থাৎ যা কিছু হয়েছে এবং যা কিছু হবে, সব কিছু সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি।
কেন না তিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব কিছু অবলোকনকারী। অর্থাৎ হাজির ও নাজির। মোদ্দাকথা হল এই যে, আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আল্লাহ প্রদত্ত অসংখ্য অগণিত গুণাবলী রয়েছে তন্মধ্যে দু’টি গুণবাচক নাম মোবারক যথাক্রমেشاهد (শাহিদ) প্রত্যদর্শী সাী বা হাজির ও নাজির এবং আরেকটি গুণ হচ্ছেشهيد (শাহীদ) রণাবেণকারী যাকে আল্লাহ ‘মা কানা ওমা ইয়াকুনু’ এর ইলিম দান করেছেন, এবং সব কিছু অবলোকন করার মতা দান করে অবলোকন করিয়েছেন। তবু আল্লাহ তাঁর ঈমানদার উম্মতগণকে شهدا (শুহাদা) বা একিনী সাী প্রদান করার মতা দান করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানা আবশ্যক যে, মহান আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’য়ালারও একটি গুণবাচক নাম রয়েছে شهيد (শাহীদ)। দেখুন আল্লাহ شهيد (শাহীদ), নবী شهيد (শাহীদ) এবং উম্মতগণও شهيد (শাহীদ) এর বহুবচন شهداء (শুহাদা), তাই বলে কি সবগুলোর ভাবার্থ এক হবে? কষ্মিনকালেও নয়।
১। আল্লাহ তা’য়ালা شهيد (শাহীদ) এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালা সব কিছু নিজস্ব মতা বলে দেখেন, শুনেন, এতে ইন্দ্রিয় বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কোন প্রয়োজন হয় না। যেহেতু আল্লাহ হচ্ছেন নিরাকার ও সমদ বা কোন কিছুর মুখাপেী নন। আল্লাহ ওয়াজিবুল ওয়াজুদ, মমকিনুল ওয়াজুদ নন। তিনি সব সময় ছিলেন ও সব সময় থাকবেন। যার আরম্ভও নেই শেষও নেই। যিনি নিজস্ব মতায় মতাবান।
২। আল্লাহ شهيد (শাহীদ) অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ইলিম ও কুদরত সর্বত্র বিরাজমান। যেমন কালামেপাকে এরশাদ হচ্ছে وهو بكل شئ شهيد অপর আয়াতে এরশাদ হচ্ছে بكل شئ محيط মুফাসসিরীনে কেরামগণ এ আয়াতের তাফসির করেছেন علما و قدرة (ইলমান ওয়া কুদরাতান) অর্থাৎ আল্লাহপাকের ইলিম ও কুদরত সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। এ হল আল্লাহর شهيد (শাহীদ) গুণের ভাবার্থ। এ পর্যায়ে আল্লাহ তা’য়ালাকে মজাজী বা রূপক অর্থে হাজির ও নাজির বলা যেতে পারে। হাকিকী অর্থে নয়। যেমন শাহ ওলি উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘আল কাউলুল জামিল’ কিতাবে লিখেছেন-
الله حاضرى الله ناظرى الله معى.
আল্লাহ হাজির আল্লাহ নাজির আল্লাহ আমার সঙ্গে রয়েছেন।
আল্লাহ দেখতে চোখের প্রয়োজন নেই, শুনতে কানের প্রয়োজন নেই ইত্যাদি কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রয়োজন নেই। তা হল আল্লাহ তা’য়ালার মহান শান।
১। কেন না আল্লাহ তা’য়ালা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আকার, আকৃতি থেকে পুত:পবিত্র।
২। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহপাক এমন মু’জিযাপূর্ণ চোখ মোবারক দান করেছেন যার সাহায্যে তিনি একই স্থানে অবস্থান করে ডানে-বামে, সামনে-পিছনে, আলোতে-অন্ধকারে, ঘুমন্ত, জাগ্রত, ওফাতশরীফের পূর্বাপর সর্বাবস্থায় সারা দুনিয়ার সব কিছু দেখছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত দেখতে থাকবেন। এমনকি খোদাপ্রদত্ত মতা বলে একই মূহুর্তে আসমান-জমিনের সর্বত্র সর্বজায়গায় পরিভ্রমণ করে মতা প্রয়োগ করে থাকেন। এজন্যই রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাহাদত বা স্যা হচ্ছে প্রত্যদর্শী হিসেবে। এটাই হল আল্লাহর হাবীবের شاهد (শাহিদ) গুণের ভাবার্থ।
এমনিভাবে পূর্বেকার আম্বিয়ায়ে কেরামের সমস্ত ঘটনাবলীতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূহানীতে হাজির ছিলেন এবং সব ঘটনাবলী নবুয়তের আলো দ্বারা অবলোকন করেছেন। এজন্যই পূর্বেকার আম্বিয়ায়ে কেরামের পে স্বীয় ঈমানদার উম্মতের সাফায়ী সাী প্রদান করবেন। এক কথায় বিগত, আগত, সমস্ত ঘটনার েেত্র রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন প্রত্যদর্শী সাক্ষী। সেজন্য কালামেপাকে নূরনবী খাতামুন্নাবীয়ীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে شاهد (শাহিদ) ও شهيد (শাহীদ) উভয় গুণে গুণান্বিত করেছেন।
এখানে একটি সুক্ষ ব্যাপার লণীয়-
وفيه تنبيه نبيه انه صلى الله عليه وسلم حاضر وناظر فى ذلك العرض الاكبر-
অর্থাৎ ‘হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশাল হাশরের ময়দানে হাজির ও নাজির থাকবেন। দেখুন আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক লিখিত ‘মিরকাত শরহে মিশকাত’ ৫ম জিলদের ২৪৫ পৃষ্ঠা ও মিশকাতশরীফ ৪৮৫ পৃষ্ঠা হাশিয়া নং ৬ দ্র.।
৩। হাশরের ময়দানে পূর্বেকার নবীগণের বেঈমান উম্মতগণ তাদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাননি বলে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করলে, আল্লাহ তা’য়ালা নবীগণকে তাদের দাওয়াত পৌঁছানোর দাবির পক্ষে সাক্ষী পেশ করতে আদেশ করলে নবীগণ উম্মতে মুহাম্মদীকে সাক্ষী হিসেবে পেশ করবেন।
উম্মতে মোহাম্মদীগণ সম্মানিত নবীগণের পক্ষে সঠিকভাবে দাওয়াত পৌঁছানোর স্যা প্রদান করলে, আপত্তি উত্থাপন হবে, তোমাদেরকে এ বিষয়ে কে শিা দিয়েছেন। উত্তরে উম্মতে মোহাম্মদীগণ বলবেন আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ সংবাদ দিয়েছেন এবং আমরা তা একিন বা বিশ্বাস করে স্যা প্রদান করলাম যে, পূর্বেকার নবীগণ উম্মতের নিকট দ্বীনের দাওয়াত সঠিকভাবে পেীঁছিয়ে দিয়েছেন। (ফতহুলবারি শরহে বোখারী)।
উম্মতের এ সাক্ষী প্রত্যদর্শী সাী নয় বরং শোনা একিনী সাক্ষী। এ হল উম্মতে মুহাম্মদীর শাহীদ বা شهدا (শুহাদা) হওয়ার ভাবার্থ।
প্রসঙ্গক্রমে এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এমন কতগুলো সিফত বা গুণ রয়েছে, যা শব্দগতভাবে আল্লাহর শানে প্রযোজ্য, তেমনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানেও প্রযোজ্য। কিন্তু অর্থগত দিক দিয়ে তুলনাবিহীন পার্থক্য রয়েছে। যেমন كريم (কারীম) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার একখানা সিফত বা গুণ, তেমনি كريم (কারীম) আল্লাহ তা’য়ালারও সিফত বা গুণ রয়েছে। যেমন বলা হয় الله كريم (আল্লাহু কারীমুন) رسول كريم (রাসূলুন কারীমুন)। কিন্তু উভয় كريم (কারীম) শব্দদ্বয় এ অর্থগত দিক দিয়ে কষ্মিনকালেও এক হতে পারে না। كريم (কারীম) এর শাব্দিক অর্থ বকশিস করনেওয়ালা বা দাতা, যিনি দান করে থাকেন।
كريم (কারীম) যখন আল্লাহর সিফত বা গুণ হিসেবে প্রযোজ্য হবে, তখন তার অর্থ হবে, মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর অসীম, অফুরন্ত ধন-ভাণ্ডার হতে অনাদিকাল হতে অনন্তকাল পর্যন্ত সবকিছু পর্যাপ্ত পরিমাণে সৃষ্টির চাহিদানুযায়ী বকশিস বা প্রদান করে থাকেন।
অপরদিকে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’য়ালার দানকৃত নিয়ামতসমূহকে বন্টন করে থাকেন। যেমন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই এরশাদ করেছেন-انما انا قاسم والله يعطى অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা দাতা এবং আমি (রাসূল) বণ্টনকারী। এখানে আল্লাহ তা’য়ালা كريم (কারীম) হাকিকী বা প্রকৃত অর্থে এবং রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম كريم (কারীম) মজাজী বা রূপক অর্থে।
তদ্রুপ حاضر و ناضر (হাজির ও নাজির) শব্দদ্বয় আল্লাহ তা’য়ালার শানে প্রয়োগ হলে মজাজী বা রূপক অর্থে ধরে নিতে হবে। কেন না ‘হাজির ও নাজির’ এর প্রকৃত অর্থ চোখ দ্বারা দেখা, দেহ নিয়ে উপস্থিত থাকা। অথচ আল্লাহ দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে মুক্ত ও পবিত্র। সুতরাং আল্লাহর েেত্র হাজির ও নাজির শব্দদ্বয়ের হাকিকী বা প্রকৃত অর্থ নেওয়া মুতায়াজ্জর বা অসম্ভব।
কিন্তু রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে حاضر و ناضر (হাজির ও নাজির) শব্দদ্বয় হাকিকী বা প্রকৃত অর্থেই প্রয়োগ হবে।
খোলাসা বয়ান নিম্নরূপ-
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে হাকিকী বা প্রকৃত অর্থে হাজির ও নাজির বলা যাবে না। কেন না হাজির ও নাজির হওয়ার জন্য দেহ ও চোখের প্রয়োজন যা পূর্বেই দলিলভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে।
কালামেপাকে আল্লাহ তা’য়ালা নিজেই এরশাদ করেছেন- ليس كمثله شئ অর্থাৎ আল্লাহপাক কোন বস্তুর মিসাল বা তুল্য নন।
হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা ইমাম গাজ্জালী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘এহইয়ায়ে উলুমিদ্দিন’ নামক কিতাবের ১ম জিলদের ৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
وانه ليس بجسم مصور ولاجوهر محدود مفدر وانه لايماثل الاجسام لافى التقدير ولافى قبول الانقسام وانه ليس بجوهر ولاتحله الجوهر ولايعرض ولاتحله الاعراض بل لايماثل موجودا ولايماثله موجود ليس كمثله شئ ولاهو مثل شئ وانه لايحده المقدار ولاتحويه الاقطار ولاتحيط به الجهات ولاتكشفه الارضون ولاالسموات وانه مستو على العرش على الوجه الذى قاله الخ-
অর্থাৎ ‘আল্লাহ অশরীরি, নিরাকার, পরিমাণশূন্য, সাদৃশ্যহীন, তকদীরহীন, অবিভাজ্য, অণু-পরমাণুশূন্য, তাঁর দৈর্ঘ্য বা প্রস্থ নেই, কোন জিনিস দ্বারা তাঁর দৃষ্টান্ত দেওয়া যায় না, তিনি কোন জিনিসের তুল্য নন। তাঁর ন্যায় আর কিছুই নেই। তিনি কোন জিনিসের ন্যায় নন। তিনি পরিমাণের ভিতর সীমাবদ্ধ নন, কোন স্থানের ভিতর তিনি নিবদ্ধ নন, কোন দিক তাঁকে বেষ্টন করতে পারে না। আসমান ও জমিন তাঁকে লুকিয়ে রাখতে পারে না। তিনি পরিশ্রম, বিশ্রাম, স্থিতি, স্থান পরিবর্তন হতে মুক্ত।’
উপরে দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, আল্লাহ তা’য়ালা নিরাকার, অশরীরি, সেহেতু আল্লাহর সিফত বা গুণ হাকিকী বা প্রকৃত অর্থে হাজির ও নাজির হতে পারে না। কেন না হাকিকী অর্থে নাজির হতে হলে যেমন চোখের প্রয়োজন তেমনি হাকিকী অর্থে হাজির হতে হলে দেহের প্রয়োজন। আল্লাহ এ থেকে পূত:পবিত্র তাই আল্লাহ মজাজী বা রূপক অর্থে হাজির ও নাজির। হাকিকী অর্থে নয়।
অপরদিকে আল্লাহর হাবীব আল্লাহর সৃষ্টি, তাঁর যেমন শরীর মোবারক রয়েছে তেমনি চোখ মোবারকও রয়েছে। আল্লাহর প্রদত্ত মু’জিযাপূর্ণ চোখ মোবারক দ্বারা সারা দুনিয়া দেখেন, সর্বকালে খোদাপ্রদত্ত নবুয়তের দ্বারা সব কিছু অবলোকনকারী, তাই আল্লাহর হাবিবের খোদাপ্রদত্ত শক্তিতে হাজির ও নাজির গুণই হচ্ছে হাকিকী বা প্রকৃত অর্থে।
আল্লামা ইমাম গাজ্জালী রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন’ নামক কিতাবের ১ম জিলদের ৫৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
অর্থাৎ ‘আল্লাহপাক চোখ ব্যতীত দেখেন, কান ব্যতীত শুনেন, দিল ব্যতীত জ্ঞান রাখেন, হাত ব্যতিত ধরেন, যন্ত্র ব্যতিত সৃষ্টি করেন। তাঁর গুণ সৃষ্টির গুণের তুল্য নয়। সেরূপ তাঁর অস্তিত্ব, সৃষ্টির অস্তিত্বের তুল্য নন।’
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তা’য়ালা ‘মুহিত’ (সর্বত্র বিরাজমান) স্বশরীরে নয় বরং ইলিম ও কুদরত সর্বত্র হাজির রয়েছে। এ হিসেবে আল্লাহপাককে মজাজী বা রূপক অর্থে হাজির ও নাজির বলা হয়ে থাকে এবং হাকিকী বা প্রকৃত অর্থে আল্লাহর হাবীব হাজির ও নাজির।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ‘আল কাউলুল জামিল’ নামক কিতাবে বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওলিউল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু জিকির ও মোরাকাবার পদ্ধতি বয়ান করতে গিয়ে কী চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন-
فيتلفظ السالك الله حاضرى الله ناظرى الله معى او يتخيل فى الجنان ثم يتصرف حضوره تعالى ونظره معينه تصورا جيدا مستقيما مع تنزيهه عن الجهة والمكان حتى يستغرق فى هذا التصور-
অর্থাৎ ‘যারা বায়আতে রাসূলের মাধ্যমে তরিকতে দাখিল হয়েছেন, এ ধরণের সালেক ব্যক্তির মুখে উচ্চারণ করে বলবে, আল্লাহু হাজিরী (আল্লাহর ইলিম ও কুদরত আমার নিকট হাজির) আল্লাহু নাজিরী (আল্লাহ আমাকে নিজস্ব মতা বলে চোখ ব্যতিরেকে দেখছেন) আল্লাহু মায়ী (আল্লাহর কুদরত ও রহমত আমার সঙ্গে রয়েছে) অথবা উচ্চারণ ব্যতীত শুধুমাত্র এ ধরণের খেয়াল রাখতে হবে। তারপর একাগ্রচিত্তে এ খেয়াল রাখতে হবে যে, আল্লাহ হাজির ও আল্লাহ নাজির এবং আল্লাহতায়ালা আমার সঙ্গে আছেন। (সাথে সাথে শাহ ওলি উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু লিখেন)-
مع تنزيهة عن الجهة والمكان
حتى يستغرق فى هذا التصور
ভাবার্থ: ‘সালিক যখন আল্লাহু হাজিরী, আল্লাহু নাজিরী, আল্লাহু মায়ী এ জিকির করতে থাকবে, তখন সাথে সাথে এ আকিদা অবশ্যই রাখতে হবে যে, আল্লাহ তা’য়ালা দিক, স্থান অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালা উত্তর, দণি, পূর্ব, পশ্চিম, উপর, নীচ, মাকান বা স্থান কাল ইত্যাদি থেকে পূতঃপবিত্র এ ধারণা অন্তরে বদ্ধমূল রাখতে হবে।
এ আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হল যে, আল্লাহ তা’য়ালাকে হাজির ও নাজির বলা যাবে কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা যেহেতু অশরীরি নিরাকার ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে মুক্ত বিধায় আল্লাহ তা’য়ালা সশরীরে হাজির এবং চোখ দ্বারা নাজির বলা যাবে না। বরং আল্লাহ তা’য়ালার ইলিম ও কুদরত সর্বত্র হাজির ও নাজির রয়েছে এবং নিজ কুদরতে আল্লাহ তা’য়ালা চোখ ব্যতীত দেখছেন ঈমান রাখতে হবে।
পান্তরে আল্লাহর হাবীব খোদাপ্রদত্ত মতা বলে মু’জিযাপূর্ণ চোখ মোবারক দ্বারা দেখছেন, সৃষ্টির প্রথম থেকে নবুয়তের নূর দ্বারা দেখছেন এবং একই স্থানে অবস্থান করে সারা দুনিয়ায় মতা প্রয়োগ করছেন। এ হিসেবে আল্লাহর হাবীব সর্বকালের প্রত্যদর্শী সাী বা হাজির ও নাজির। আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর হাবীবকে এ মহান গুণে গুণান্বিত করেছেন। তা হল ঈমানী আকিদা।
ওহাবী দেওবন্দীদের অপব্যাখ্যার খণ্ডন
ওহাবী দেওবন্দীপন্থী লেখক নুরুল ইসলাম ওলিপুরী তার লিখিত ‘সুন্নি নামের অন্তরালে’ পুস্তিকায় কোরআন সুন্নাহর দ্বারা প্রমাণিত সমস্ত মুফাসসিরীন, মুহাদ্দিসীন ও আউলিয়ায়ে কেরাম কর্তৃক স্বীকৃত, আল্লাহর হাবীবের একখানা মহান গুণ খোদাপ্রদত্ত মতা বলে তিনি হাজির ও নাজির। এ মহান গুণকে কোরআনপাকে আল্লাহর হাবীবের শানে নাজিলকৃত شاهد (শাহিদ) শব্দের সঠিক অর্থকে বিকৃত করে এবং হাদীসশরীফের মর্মার্থকে অপব্যাখ্যা করে নিজের মনগড়া মতকে প্রাধান্য দিয়ে শিরিক সাব্যস্ত করে নিজে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সরলমনা মুসলমানগণকে পথভ্রষ্ট করার পায়তারা চালাচ্ছে।
কিন্তু সে তার পুস্তিকায় আল্লাহর হাবীব হাজির ও নাজির নন মর্মে একখানা আয়াতও উপস্থাপন করতে সম হয়নি। ভবিষ্যতে সম হবে না নিশ্চিত। তবে সে বোখারীশরীফের একখানা হাদীসের এবারতের মর্মকে বিকৃত করে তার ভ্রান্ত দাবির পে নবীর সাীকে উম্মতের সাীর সাথে একাকার করে নবী যে, প্রত্যর্দর্শী সাী তা সুকৌশলে এড়িয়ে মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে বেড়াচ্ছে।
অপরদিকে তার বক্তব্য ‘তাফসিরে কুরতুবী’ নামক কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে আর একখানা মুরসাল হাদীসের প্রসঙ্গ টেনে উম্মতে মুহাম্মদীর গুণাবলী شهداء (শুহাদা) পূর্বেকার নবীগণের পে একিনী স্যাকে নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের شهيد (শাহীদ) প্রত্যদর্শী সাী হওয়ার সাথে সমতুল্য করার চেষ্টা করেছে, যা একজন সাধারণ ঈমানদারের কাছেও স্পষ্ট।
তার এ বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তিনি হাদীসশাস্ত্রে একেবারেই অজ্ঞ। কারণ মুরসাল হাদীস দ্বারা আকিদার ব্যাপারে তো দলিলরূপে গণ্য হওয়া দূরের কথা বরং আমলের ব্যাপারেও দলিল হতে পারে না।
আল্লামা শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু মিশকাতশরীফের মুকাদ্দমায় মুরসাল হাদীস সম্পর্কে উল্লেখ করেন-
حكم المرسل التوقف عند جمهور العلماء لانه لايدرى ان الساقط ثقة اولا لان التابعى قد روى عن التابعى وفى التابعين ثقات وغير ثقات-
অর্থাৎ ‘জমহুর উলামাদের মতে ‘হাদীসে মুরসাল’ এর হুকুম হল توقف (তাওয়াক্কুফ) তথা আমল থেকে বিরত থাকা।
তদুপরি এ মুরসাল হাদীসখানা কোরআনশরীফের আয়াতের মর্ম ও অন্যান্য সহীহ হাদীসের ভাবার্থের সাথে সাংঘর্ষিক এ েেত্র এ মুরসাল হাদীস আকিদাসংক্রান্ত ব্যাপারে হুজ্জত বা দলিল হতে পারে না।
শাহীদ শব্দের ভাবার্থকে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উম্মতে মুহাম্মদীর ক্ষেত্রে যে ভিন্নভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যা ইতোপূর্বে আমরা দলিলভিত্তিক সবিস্তার আলোচনা করেছি।
একটি সুক্ষ রহস্য সূরা বাকারার আয়াতে কারীমা-
لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدا.
অর্থাৎ ‘উম্মতে মুহাম্মদীগণ পূর্বেকার নবীগণ তাঁদের স্ব-স্ব উম্মতের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর সাক্ষী এবং আমাদের নবী হবেন, উম্মতের মুহাম্মদীর আদালত বা ন্যায়পরায়ণতার সাক্ষী।
এই আয়াতে কারীমার মধ্যে দু’টি জুমলা বা বাক্য রয়েছে-لتكونوا شهداء على الناس হচ্ছে প্রথম বাক্য, ويكون الرسول عليكم شهيدا হচ্ছে দ্বিতীয় জুমলা বা বাক্য। উভয় জুমলা বা বাক্যের মধ্যে و (ওয়াউ) রয়েছে, যাকে আরবিতে বলা হয় হরফে আত্ফ (অব্যয়)। হরফে আতফের পূর্বের বাক্যকে বলা হয় معطوف عليه (মা’তুফ আলাইহি) এবং পরের বাক্যকে বলা হয় معطوف (মা’তুফ)। আরবি গ্রামারের কায়দানুযায়ী উভয় মা’তুফ ও মা’তুফ আলাইহি একজাত হতে পারে না। এ হল ‘আতফুন জুমলা আলাল জুমলা’ অর্থাৎ প্রথম বাক্যের যে ভাবার্থ হবে দ্বিতীয় বাক্যে তার ব্যতিক্রম হবে। তাই বর্ণিত আয়াতে মা’তুফ ও মা’তুফ আলাইহির বাক্যাংশে শাহীদ ও শুহাদা শব্দের পাশাপাশি অবস্থানের কারণে অর্থাৎ উভয় শব্দ মা’তুফ ও মা’তুফ আলাইহি হওয়ায় তা ভিন্নার্থক হওয়া অবশ্যই জরুরি। এ ক্ষেত্রে উম্মতে মোহাম্মদীকে শুহাদা (যা শাহীদ শব্দের বহুবচন) ও রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাহীদ বলা হয়েছে যা আরবি গ্রামারের নিয়মানুযায়ী একটি অন্যটি থেকে আলাদা অর্থ প্রদান করবে।
আয়াতে বর্ণিত উম্মতে মোহাম্মদীকে শুহাদা বলা হয়েছে, একিনী বা শ্রুত সাক্ষী হিসেবে। আর হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাহীদ বলা হয়েছে আইনী বা প্রত্যদর্শী সাক্ষী হিসেবে।
এজন্য তাফসিরে রুহুল বয়ান প্রণেতা আল্লামা ইসমাইল হাক্বী বরুসয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাফসিরে আজিজী শরীফের প্রণেতা শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দিসে দেহলভী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভাবার্থই তাঁদের স্ব-স্ব তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইতোপূর্বে অত্র পুস্তকে মুফাসসিরীনে কেরামের তাফসিরের মূল এবারতসহ উল্লেখ করা হয়েছে। হয়ত আরবি গ্রামারের এ সূত্র সম্পর্কে ওলিপুরী সাহেব অনভিজ্ঞ নতুবা ইচ্ছাকৃতভাবে তিনি কোরআনের সঠিক ভাবার্থকে বিকৃত করেছেন। আর কোরআনের বিকৃত অর্থ করা প্রসঙ্গে আল্লাহর হাবীব এরশাদ করেছেন-
من قال فى القران برأيه فليتبواء مقعده من النار وفى رواية من قال القران بغير علم فليتبواء مقعده من النار (رواه الترمذى)
অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি নিজের মনগড়া মতে
কোরআনের তাফসির করবে সে যেন জাহান্নামে নিজের স্থান করে নেয়।’
পাকিস্তান নিবাসী ওহাবী দেওবন্দীপন্থী লেখক মৌলভী সরফরাজ খাঁন সবদর ‘রাহে সুন্নাত’ তাবরিদুর নাওয়াজির, এজালাতুল রাইব ইত্যাদি পুস্তক লিখেছে। এতে কোরআন সুন্নাহর অর্থ বিকৃত করে দুনিয়ার সমস্ত মুহাদ্দিসীন, মুফাসসিরীন, আউলিয়ায়ে কেরাম, মাজহাবের ইমামগণ, সাহাবায়ে কেরাম, তরিকতের মাশায়েখানে এজাম, এক কথায় দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানদের আকিদার পরিপন্থী ভ্রান্ত মতবাদগুলিকে মনগড়া যুক্তি দিয়ে বর্ণনা করেছে এবং উক্ত পুস্তকগুলিকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে বর্তমানে কিছু বাঙালী লেখক আল্লাহর হাবীবের প্রকৃত শান বিরোধী বক্তব্য স্ব-স্ব পুস্তকে ও বক্তৃতায় উল্লেখ করেছে। এতে সরলপ্রাণ ঈমানদারের ঈমান রা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এ সমস্ত বিভ্রান্তিমূলক লেখনির কুপ্রভাবথেকে ঈমানদার মু’মিনদের সচেতন করতে সবিস্তার লিখতে বাধ্য হয়েছি।