NOTICE:- ------------------ ----------------- ---------------------------

"জুম'আর নামাজের ফজিলত ও এ দিনের মর্তবা"

আল্লাহর গোলাম আমি's photo.
-
৭ দিনে এক সপ্তাহ। এ সাত দিনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও ফজিলতপূর্ণ দিন হল শুক্রবার। দয়াময় রবের নিকট হতে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি নেয়ামত দান করা হয়েছে এ দিনেই। আদি মানব হযরত আদম (আ) কে আল্লাহ তা'য়ালা এ দিনেই সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাহাত্মের কারণে শুক্রবার অতীব ফজিলতপূর্ণ ছিল।
মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া ইবাদতের মধ্যে নামাজ আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। কুরআন ও হাদীসে অন্য কোন ইবাদতের জন্য এতো তাকীদ আসেনি, নামাজের জন্য যত তাকীদ এসেছে।
জামায়াতে নামাজ আদায় ইহ-পারলৌকিক নেয়ামত হাসিল হয়।
জামায়াতে অধিক লোকের সমাগমের কারণে সওয়ার অনেক বেশি হয়। আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন ইচ্ছাপোষন করলেন তার প্রিয় বান্দারা সপ্তাহে অন্ততঃ একবার বহুসংখ্যক লোক একত্রিত হয়ে বিনিষ্ট হৃদয়ে ইবাদত করুক। তাই তিনি তার প্রিয় বন্ধু রাসূল (সা:) এর উম্মতগনকে নেয়ামত দান করলেন। সত্যিই উম্মতে মুহাম্মদী সৌভাগ্যবান। মহান আল্লাহর মনঃপুত সর্বশ্রেষ্ঠ দিন আমাদেরকে দিলেন। সর্বশ্রেষ্ঠ দিন শুক্রবার. আর সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত জুম'আর নামাজ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য নির্ধারণ করলেন।
রাসূল (সা:) এর হাদীস থেকে জানা যায়, সপ্তাহের দিন গুলোর মধ্যে জুম'আর দিন সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। এ দিন হযরত আদম (আ) কে সৃজন করা হয় এবং এদিনই তাকে বেহেশতে স্থান দেয়া হয়, আবার এদিনেই তাকে বেহেশত থেকে বের করে দুনিয়ায় পাঠানো হয় এবং এদিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। এদিন অধিক ফজিলতের দিন। এ দিনে তোমরা অধিক পরিমাণে দুরূদ পাঠ কর্। তোমরা যখন দুরূদ পড়বে তৎক্ষণাৎ তা আমার সামনে পেশ করা হবে। আমি তৎক্ষণাৎ এর প্রতিউত্তর ও দোয়া দিব।

-
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক অপূর্ব নেয়ামত জুম'আর নামাজ। ইহা ফরজে আইন। এ নামাজ আদায়ে রয়েছে অভূতপূর্ব বরকত ও সওয়াব। অস্বীকারকারী কাফের বলে চিহ্নিত হবে।
আর বিনা ওজরে এ নামাজ না পড়লে সে ফাসেক বলে গণ্য হবে।
পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে-
ﻳﺎﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﻣﻨﻮﺍ ﺍﺫﺍ ﻧﻮﺩﻱ ﻟﻠﺼﻠﻮﺓ ﻣﻦ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﺎﺳﻌﻮ ﺍﻟﻲ ﺫﻛﺮﺍﻟﻠﻪ ﻭﺫﺭﻭﺍ ﺍﻟﺒﻴﻊ ﺫﻟﻜﻢ ﺧﻴﺮ ﻟﻜﻢ ﺍﻥ ﻛﻨﺘﻢ ﺗﻌﻠﻤﻮﻥ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! জুম'আর দিন যখন নামাজের জন্য আজান দেয়া হয় তখন তোমরা বেচাকেনা ত্যাগ করে আল্লাহর যিকিরের দিকে দৌড়ে চল। যদি তোমরা বুঝ তা হলে ইহাই তোমাদের জন্য উত্তম।
(সূরা জুম'আ, আয়াত- ৯)
-
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ যিকির অর্থ জুম'আর খোৎবা ও নামাজ বুঝানো হয়েছে।
দৌড়ে চলার অর্থ সময়ক্ষেপণ না করে অতিদ্রুত পার্থিব সকল কাজ ত্যাগ করে আল্লাহ স্বরনে ধাবিত হওয়া।
-
রাসূল (সা;) ইরশাদ করেন-
ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻓﺮﺽ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻓﻲ ﻳﻮﻣﻲ ﻫﺬﺍ ﻓﻲ ﻣﻘﺎﻣﻲ ﻫﺬﺍ
অর্থাৎ আল্লাহ তা'য়ালা তোমাদের উপর জুম'আ ফরজ করেছেন আমার এদিনে ও এ স্থানে।
-
অন্য রেওয়ায়াতে ইরশাদ করেছেন-
ﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺛﻼﺛﺎ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﻋﺬﺭ ﻃﺒﻊ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻲ ﻗﻠﺒﻪ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি বিনা ওজরে তিন বার জুম'আ তরক করে, আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন।
-
এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললঃ অমুক ব্যক্তি মারা গেছে। সে জুম'আ ও জামায়াতে উপস্থিত হত না। এখন তার অবস্থা কি হবে? তিনি বললেন সে দোযখী! লোকটি এক মাস পর্যন্ত তার কাছে এসে এ প্রশনই করল এবং তিনি উত্তর দিলেন যে, সে দোযখী।
-
হাদীসে আছে, রাসূল (সা:) বলেছেন, জুম'আর দিনে এমন একটি সময় আছে, সে সময়ে মু'মিন বান্দাহ আল্লাহর কাছে যে প্রার্থনা করবে তা কবুল হবে।
(বুখারী শরীফ)
- এ দোয়া কবুলের সময় কোনটি সে বিষয়ে মত পার্থক্য রয়েছে। হাদীসের বব্যাখ্যাকারী ইমাম সাহেবানদের মতে দু'টি সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
১. খোৎবার শুরু হতে নামাজের শেষ পর্যন্ত সময়টি।
২. দিনের শেষ ভাগে অর্থাৎ আসরের পর্।
-
হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি জুম'আর দিন গোসল করে পবিত্র হয়ে চুলে তৈল দিয়ে, খুশবু লাগিয়ে জুম'আর নামাজের জন্য যাবে এবং মসজিদে গিয়ে কাউকে তার জায়গা থেকে না উঠিয়ে যেখানে জায়গা পাবে সেখানে বসবে এবং যতটুকু সম্ভব নামাজ পড়বে। অতঃপর ইমাম যখন খোৎবা দিবে মনোযোগ দিয়ে শুনবে ঐ ব্যক্তির গত জুম'আ হতে এ জুম'আ পর্যন্ত যত (ছগীরা) গুনাহ হয়ছে সব ক্ষমা করা হবে।
(বুখারী শরীফ)
-
অপর হাদীসে আছে-
রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ঐ ব্যক্তি যদি খোৎবার সময়ে অনর্থক কোন কথা না বলে মনোযোগের সহিত খোৎবা তা হলে তার প্রতি কদমের বিনিময়ে পূর্ণ এক বছরের ইবাদতের সওয়াব পাবে।
(তিরমিজি শরীফ)
-
রাসূল (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুম'আর দিন মারা যায় আল্লাহ তাকে শহীদের সওয়াব দেন এবং কবরের শাস্তি থেকে নাজাত দেন।
-
উপরের আলোচনায় আমরা অনুধাবন করলাম যে, জুম'আর দিন সত্যিই এক অপূর্ব নেয়ামতের দিন। যা মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও রাসূল (সা:) এর হাদীস দ্বারা স্বীকৃত। কুরআন ও হাদীসে যেদিনের এমন মর্তবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেদিনকে অবশ্যই মুসলিম সমাজ অতীব আনন্দ ও সম্মানের সহিত পালন করবে বলে প্রত্যাশা করছি।
আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন আমাদেরকে উত্তম পথে অবিচল রাখুন - এটা দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর কাছে বিনীত প্রার্থনা।