NOTICE:- ------------------ ----------------- ---------------------------

মক্কা মদীনার পুন্যময় স্থান গুলো


Photo: ≈মক্কা মদীনার পুন্যময় স্থান গুলো≈

১। রাহমাতুল্লীল আলামীনের পবিত্র জন্মস্থান (ছওকুল্লাইল)।
২। হযরত খাদিজা (রা.)-এর ঘর।
৩। দারুল আরকাম বিন আবিল আরকাম।
৪। হযরত আলীর জন্মস্থান।
৫। জান্নাতুল মুয়াল্লাহ্ (কবরস্থান)।
৬। ওয়াদিয়ে ছারফ্ হযরত উম্মুল মুমেনীন মায়মুনা (রা.)-এর বিয়ে ও কবর।

৭। জাবালে নূর-এর গারে হেরা গুহা (কুরআন শরীফ নাযিলের পাহাড়)। ৮। জাবালে ছওর (হজরত রাসূলে করীম (স.) হিযরতের সময় যে পাহাড়ে ৩ দিন আত্মগোপন করেছিলেন।)
৯। মিনা (হযরত ইসমাইল আলাইহিচ্ছালামের কুরবানীর জায়গা)। ১০। মুযদালিফাহ্— (হযরত আদম ও হাওয়া (আ.)-দ্বয়ের পৃথিবীর প্রথম বাসর রাত বা ঘুমের জায়গা)।
১১। আরাফাহ—হজের ময়দান, যেখানে হযরত আদম ও হাওয়া (আ.)-এর পৃথিবীর প্রথম পরিচয় হয়েছিল।
১২। ওয়াদিয়ে মুহাসসার—বাদশাহ্ আবরাহার ধ্বংসস্থল।
১৩। ওয়াদীয়ে মুহাস্সাব—মিনা থেকে হরম শরীফে ফেরার পথে হুজুর (স.) এই জায়গায় অবতরণ করেন এবং মাগরিবের নামায আদায় করেন। এখানে একটি সুন্দর মসজিদ আছে।
১৪। হুদায়বিয়া—বর্তমান নাম (ছুমাইসীয়া, মক্কা থেকে ২১ কি.মি. দূর)।
১৫। ওয়াদিয়ে ফাতেমা—মক্কা বিজয়ের সময় মুসলিম বাহিনীর অবতরণস্থল।
১৬। হুনাইন— মক্কা বিজয়ের পর এখানে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ হয়, আল্লাহ ফেরেশতা দিয়ে এই যুদ্ধে মুসলমানদেরকে সাহায্য করেন।
১৭। জেরানা, বড় ওমরার জায়গা রাসূলুল্লাহ (দরুদ) হুনাইন যুদ্ধের পর এখান থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধেন, এটাই শ্রেষ্ঠ মিকাত। এখানে একটি মসজিদ আছে, যাকে মসজিদে রাসূল (দরুদ) বলা হয়।
১৮। নাখলা—মক্কা থেকে ৪৫ কি.মি. দূরে মক্কা ও তায়েফের মাঝামাঝি এই উপত্যকা। এখানে খেজুর বাগান ছিল, এই অঞ্চলের নাম ‘নাখলা’। এই জায়গাটি মিষ্টি পানির জন্য প্রসিদ্ধ। আল্লাহর নবীর জবানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত শুনে জ্বীন জাতির ইসলাম গ্রহণ করার ঘটনা এখানেই ঘটে বলে জায়গাটি ঐতিহাসিক।

মক্কা শরীফের ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ মসজিদ
:১। মসজিদে আবুবকর (রা.) এখানে হযরত আবুবকর (রা.)-এর বাড়ি ছিল।
২। মসজিদে খালেদ বিনওয়ালিদ।
৩। মসজিদে জ্বীন।
৪। মসজিদে বাইআহ্।
৫। মসজিদে খায়েফ।
৬। মসজিদে নামেরা।
৭। মসজিদ তাইঈম।

মক্কার ঐতিহাসিক পাহাড়সমূহ :
১। জবলে নূর। ২। জাবালে সওর। ৩। জাবালে আবু কোবাইস। ৪। জাবালে রহমত।

কাবা শরীফ ও মক্কা শরীফের রহস্যপূর্ণ জায়গাসমূহ :
১। আল্লাহর ঘরের ভেতরে, তবে সেখানে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করা সম্ভব নয় তাই হাতীমে (বাইতুল্লাহর পাশে গোলাকার দেয়াল ঘেরা কিছু উন্মুক্ত খালি জায়গা) নামায পড়ার সুযোগ আছে।
২। মুলতাজাম বা কা’বা ঘরের দরজা, ১৩৬৩ হিজরীতে বাদশা আব্দুল আজীজ আসেসৗদ একটি সুন্দর কাঠের দরজা লাগান, সেটি তৈরি করতে তিন বছর সময় লেগেছিল। বর্তমান দরজাটি বাদশা খালেদ লাগিয়েছেন। এতে ২৮৬ কি. গ্রা. খাঁটি স্বর্ণ লাগানো আছে, এতে আল্লাহর ও কুরআন শরীফের আয়াত— ‘কুল ইয়া ইবাদিয়াল্লাজিনা আছরাফু আলা আনফুছিহীম, লাতাকনাতুমির রাহমাতিল্লাহ্, ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা জামিয়া লেখা আছে। তাই এই আয়াত পড়ে এর উসিলা দিয়ে দোয়া করলে অবশ্যই দোয়া কবুল হয়।

৩। কাবা ঘরের পেছনের দেয়াল অর্থাত্ রোকনে ইয়ামানীর কাছে এখানো দোয়া কবুল ও নিষ্পাপ হওয়ার দলিল আছে। যেহেতু হুজুর (দরুদ) হিযরতের পর এখানে দাঁড়িয়েই ১৬ মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে নামায আদায় করেছেন এবং কেবলা পরিবর্তনের দোয়া করেছিলেন।
৪। হাতীম বা হিজরে ইসমাইল হিজরে ইসমাইলের অপর নাম হচ্ছে হাতীমে কা’বা। এই হাতীমে হযরত ইসমাইল (আ.) ও তাঁর মা হযরত হাজেরা (আ.)-এর কবর আছে বলে নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত ইসমাইল (আ.)-এর দোয়ার বরকতে এই বেহেশতি ঝরনা প্রবাহিত হচ্ছে। আল্লাহর ঘরের ভেতর নামায পড়ার ইচ্ছা করলে হাতীমে পড়ে নিলেই তা আদায় হয়ে যাবে।

৫। হাজরে আসওয়াদ, বাইতুল্লাহ শরীফের পূর্বকোণে ৩/৪ ফুট উঁচুতে দেয়ালের ভেতরে সংরক্ষণ করা সেই পাথর বেহেশতের সবচেয়ে মূল্যবান পাথর। রূহের জগতে এই পাথরের উপরে হাত রেখে হুজুর (দরুদ)-এর রূহ মুবারক আমরা আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহ আমাদের প্রভু এই প্রতিশ্রুতি পাঠ করিয়েছিলেন। হযরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আসার সময় আল্লাহ পাক সেই পাথর তার সাথে দিয়ে দেন, পরবর্তীতে তিনি সেটা জাবালে আবু কোবাইছে রাখেন তখন সে পাথর বরফের মত সাদা ও সূর্যের মত আলোকিত ছিল। নূহ (আ.)-এর বন্যার সময় আল্লাহ পাক পুনরায় আসমানে উঠিয়ে নেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর দ্বারা কা’বা ঘর তৈরির সময় আবার তা ফেরেশতার মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং ইব্রাহীম (আ.) সেই পাথরকে আল্লাহর ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে স্থাপন করেন। তাই এখান থেকেই তাওয়াফ শুরু হয়। হাদীস শরীফে আছে—হজরে আসওয়াদ প্রথম আবু কুবাইছ পাহাড়ে নাজিল হয়, সেখানে তা ৪০ বছর পর্যন্ত থাকে। তারপর তা হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর আগেই-ভিত্তির ওপর লাগানো হয়। অর্থাত্-মাকামে ইব্যাহীম ও হিজরাল আসওয়াদ এই পাথর দু’টিই বেহেশতের পাথর। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আগেই হাজরে আসওয়াদ নাজিল হয়েছে। বন্যার সময় এটিকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। তারপরই ইব্রাহীম (আ.) এর কাবা শরীফ নির্মাণের সময় জিব্রাইল (আ.) তা নিয়ে আসেন।

মক্কা-মদীনার দর্শনীয় স্থানসমূহ
যতবড় কঠিন হূদয়ের অধিকারী মানুষ হোন না কেন, আল্লাহর অসংখ্য নবী ও রসূলের স্মৃতিবিজড়িত দর্শনীয় স্থানগুলিতে গেলে মন মানসিকতার আমূল পরিবর্তন সূচিত হয়। প্রায় প্রত্যেকেই বলে থাকেন, যখন স্বচক্ষে কাবা শরীফ দেখলাম। কাবায় প্রবেশ করলাম। নামাজ পড়লাম। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম। তখন থেকেই মনের মাঝে অহর্নিশ আল্লাহ প্রেম, রসূল প্রেমের ঝড় বইতে শুরু করলো। কোথায় পরিবার-পরিজন, কোথায় ব্যবসা বাণিজ্য, কোথায় বন্ধু-বান্ধব, দুনিয়ার কোনো কিছুই মনে থাকে না, ভালো লাগে না, হূদয়ে এসে ভিড় জমেনা। হূদয় কন্দরে, রন্ধ্রে-রন্ধ্রে, তন্ত্রীতে-তন্ত্রীতে, রক্তের প্রবাহে কেবল আল্লাহর মহব্বতের বেহেশতি আবহ প্রবাহিত হয়ে যায়। ঢেউ খেলে যায় রসূল প্রেমের উত্তাল তরঙ্গমালা। মুখে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত ও গুঞ্জরিত হয় আল্লাহর জপমালা। কাবা শরীফ, মাকামে ইব্রাহিম, কাবার হাতিম, হিজরে আসওয়াদ, জমজম কূপ জাবালে আবু কুবাইস, জাবালে নূর, জাবালে সওর, হযরত আবু বকর (রা.) এর বাড়ী, রসূলের জন্মস্থান, খাদিজা (রা.)-এর বাড়ী, জান্নাতুল মুয়াল্লা, ওয়াদিয়ে মুহাসসার, দারুল আরকাম, আরাফা ময়দান, মুজদালেফার প্রান্তর, মিনার ঐতিহাসিক প্রান্তর, তায়েফ ও সাফা-মারওয়া পাহাড় এ সমস্ত স্থানে যাওয়া ও দেখার পর প্রত্যেক হাজীর মন কেঁদে ওঠে, চোখ অশ্রুসিক্ত না হয়ে পারে না।

আর মদীনা শরীফ যাওয়ার পর রসূলের রওজার কাছে গিয়ে হজ্ব পালনকারীগণ কেঁদে জারে জার হয়ে যান। কেননা এটা সেই স্থান যেখানে শায়িত রয়েছেন, আমাদের শাফায়াতের কাণ্ডারি যার সুপারিশ ছাড়া মুক্তির কোনো উপায় নাই। যিনি উম্মত হিসেবে আমাদের না চিনলে নিষ্কৃতির কোনো রাস্তা নেই। যিনি হাশরের ময়দানে অগণিত মানুষের মধ্য হতে তাঁর উম্মতদের বাছাই করবেন ও নিজ হাতে হাউজে কাওছারের পানি পান করাবেন এবং সঙ্গে করে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। যেখানে রসূল (দরুদ) এর রওজা হয়েছে ঐ স্থানে তাঁর সঙ্গে তাঁর দুইসহচর হয়রত আবু বকর ও হযরত ওমর (রা.) রয়েছেন তাদের কথাও স্মরণে আসে। কারণ ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে হযরত আবু বকরের অবদান অনস্বীকার্য। বাল্যকাল থেকে রসূল (দরুদ) এর ইন্তেকাল পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে বিপদে আপদে যুদ্ধে সন্ধিতে সকল সময়, সকল স্থানে ছায়ার মত সাথে সাথে থেকেছেন। রসূল (দরুদ) বলেছেন, আবু বকর আমার বাল্যকালের সাথী, হিজরতের সাথী জান্নাতেরও সাথী। আরো বলেছেন, দুনিয়ার সব মানুষের ঈমান যদি এক পাল্লায় দেয়া হয়, আর আবু বকরের ঈমান যদি আর এক পাল্লায় দেয়া হয় তাহলে আবুবকরের ঈমানের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। আর ওমর (রা.) ছিলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব জাহেলিয়াতের যুগের মানুষেরা যার ভয়ে সর্বদা প্রকম্পিত ছিল। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন প্রকাশ্য দিবালোকে ফিরে আসে ইসলাম। রসূল (দরুদ) তাঁর জীবদ্দশায় বলে গেছেন, লা নাবিয়্যা মিম বাআদি, লাকানা ওমার, আমার পরে কোনো নবী নেই, যদি আল্লাহ কারো নবী বানাতেন তাহলে অবশ্যই ওমরকে আল্লাহ নবী বানিয়ে দিতেন। আর একজনের জায়গা খালি রয়েছে, যেখানে হযরত ঈসা (আ.) কে দাফন করা হবে। রসূল (দরুদ) এর রওজা ও মিম্বর এর মাঝে একটি জায়গা রয়েছে। যার নাম রিয়াজুল জান্নাহ। অর্থাত্ বেহেশতের টুকরা। সেখানে নামাজ পড়া অনেক সৌভাগ্যের বিষয়।

মসজিদে নববীতে ৮ দিনে মোট ৪০ ওয়াক্ত নামাজ পড়া বিশেষ মর্যাদার। কেননা মসজিদে নববীতে এক রাকাআত নামাজ পড়া ৫০ হাজার রাকাআত নামাজ পড়ার সমান। মসজীদে নববীর পার্শ্বেই রয়েছে জান্নাতুল বাকী কবরস্থান। যেখানে রসূল (দরুদ) এর হাজার হাজার সাহাবীর কবর রয়েছে। তাছাড়া সেখানে রসূল (দরুদ) এর প্রিয় কন্যা ফাতিমা (রা.), হযরত হাসান (রা.), জয়নুল আবেদীন, হযরত আয়শা (রা.)সহ সকল উম্মুল মুমেনীনগণ (কেবলমাত্র খাদিজা (রা.) ছাড়া) হযরত আবু হরায়রা (রা.), হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রা.), আবু আইয়ুব আনসারী (রা.)সহ প্রায় ৩০ হাজার সাহাবীর কবর এখানে রয়েছে। রসূল (দরুদ) তাঁর ইন্তেকালের আগে এই জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে বিদায়ী ছালাম জানিয়ে বলেছিলেন, আসসালামু আলাইকুম ইয়া দারু কউমি মু’মিনীন। তার পর মসজিদে কেবলাতাইন বা দুই কেবলার মসজিদ। রসূল (দরুদ) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পর ১৭ মাস ধরে মসজিদে আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ পড়েন। সেই সময় প্রায় প্রায় তিনি আকাশের দিকে তাকাতেন এই আশা নিয়ে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যদি হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত কাবাঘরকে কেবলা নির্ধারণ করে দিতেন তাহলে খুবই ভালো হতো। আল্লাহ পাক রসূল (দরুদ) এর মনের আকুতি বোঝেন, তাঁর চোখের ভাষা উপলব্ধি করেন। অবশেষে একদিন আসরের নামাজে দুই রাকায়াত পড়ার শেষে আয়াত নাজিল করে মসজিদে হারামকে কাবা হিসেবে পুনরায় ফিরিয়ে দেন। যে আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ফাওয়াল্লি অজহাকা শাতরল মসজিদিল হারাম’ অর্থাত্ হে নবী (দরুদ), আপনি আপনার চেহারা এখুনি মসজিদে হারামের দিকে ফেরান তখন বাকী দুই রাকাআত মসজিদে হারামের দিকে ফিরেই পড়েন। এটাও দর্শনীয় একটি স্থান।

তারপর মসজিদে জুমআ। রসূল (দরুদ) হিজরতের পর মদীনায় আসার সময় এই স্থানে জুমআ ফরজ হয়। মক্কার ১৩ বছরের নবুয়াতি জীবনে এই জুমআ ফরজ ছিল না। যখন ফরজ ঘোষণা হলো রসূল (দরুদ) সেখানেই জুমআ পড়লেন। এই স্থানে সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। তারপর মসজিদে কুব্বা যা ইসলামের ইতিহাসে নির্মিত প্রথম মসজিদ। আল্লাহ কুরআনে বলেন, ইন্না আওয়ালু উসসিসা আলাত তাকওয়া হুয়া মসজিদু কুব্বা। অর্থাত্ তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রথম নির্মিত মসজিদই হলো কুব্বা। রসূল (দরুদ) যখন হিজরতে বের হয়েছিলেন। এই কুব্বার মানুষেরাই তাকে প্রথম স্বাগত জানিয়েছিলেন। তারা প্রতিদিন একটি উঁচু টিলার ওপর বসে মরুভূমির দিকে তাকিয়ে থাকতেন। আর রাত হলে ঘরে ফিরতেন। একদিন তারা ঘরে ফেরার পর দুর থেকে রসূলের হিজরতের কাফেলা দেখে একজন ইহুদী কুব্বার লোকদের বলেছিলেন, হে কুব্বাবাসি, তোমরা প্রতিদিন যার জন্য অধীর আগ্রহে মরুপানে অপলক দৃষ্টি দিয়ে অপেক্ষা করো, তিনি আসছেন।

ঐ দেখো, তাঁর কাফেলা দেখা যায়। তখন কুববায় জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁরা আল্লাহর প্রিয় নবী, প্রিয় রসূল (দরুদ) কে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। নবীজী (দরুদ) সেখানে তিনদিন অবস্থান করেছিলেন। সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এটা অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। তারপর বদরের প্রান্তরটি সময় থাকলে যাওয়া উচিত্। যেখানে ইসলামের প্রথম ভাগ্য নির্ধারণী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়ালা সেখানে এক হাজার ফেরেশতা সৈনিক দিয়ে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করেন। এরপর ওহুদের প্রান্তরে গিয়ে সেই ঘটনার উপলব্ধি করা। যেখানে রসূল (দরুদ) এর রক্ত ঝরেছে। দাঁত মোবারক শহীদ হয়েছে। চাচা আমীর হামজা শহীদ হয়েছেন। ৭০ জন সাহাবী শহীদ হয়েছেন। এসব স্থানগুলি দর্শন করে আসতে পারলে যতদিন বেঁচে থাকবেন, শয়তান ধোকা দিয়ে সহজেই বিপথগামী করতে পারবে না। আল্লাহ সকল হজ্বযাত্রীকে এসমস্ত দর্শনীয় স্থানগুলি দেখে আসার তাওফীক দান করুন, আমীন।
a.u.n
১। রাহমাতুল্লীল আলামীনের পবিত্র জন্মস্থান (ছওকুল্লাইল)।
২। হযরত খাদিজা (রা.)-এর ঘর।
৩। দারুল আরকাম বিন আবিল আরকাম।
৪। হযরত আলীর জন্মস্থান।
৫। জান্নাতুল মুয়াল্লাহ্ (কবরস্থান)।
৬। ওয়াদিয়ে ছারফ্ হযরত উম্মুল মুমেনীন মায়মুনা (রা.)-এর বিয়ে ও কবর।

৭। জাবালে নূর-এর গারে হেরা গুহা (কুরআন শরীফ নাযিলের পাহাড়)। ৮। জাবালে ছওর (হজরত রাসূলে করীম (স.) হিযরতের সময় যে পাহাড়ে ৩ দিন আত্মগোপন করেছিলেন।)
৯। মিনা (হযরত ইসমাইল আলাইহিচ্ছালামের কুরবানীর জায়গা)। ১০। মুযদালিফাহ্— (হযরত আদম ও হাওয়া (আ.)-দ্বয়ের পৃথিবীর প্রথম বাসর রাত বা ঘুমের জায়গা)।
১১। আরাফাহ—হজের ময়দান, যেখানে হযরত আদম ও হাওয়া (আ.)-এর পৃথিবীর প্রথম পরিচয় হয়েছিল।
১২। ওয়াদিয়ে মুহাসসার—বাদশাহ্ আবরাহার ধ্বংসস্থল।
১৩। ওয়াদীয়ে মুহাস্সাব—মিনা থেকে হরম শরীফে ফেরার পথে হুজুর (স.) এই জায়গায় অবতরণ করেন এবং মাগরিবের নামায আদায় করেন। এখানে একটি সুন্দর মসজিদ আছে।
১৪। হুদায়বিয়া—বর্তমান নাম (ছুমাইসীয়া, মক্কা থেকে ২১ কি.মি. দূর)।
১৫। ওয়াদিয়ে ফাতেমা—মক্কা বিজয়ের সময় মুসলিম বাহিনীর অবতরণস্থল।
১৬। হুনাইন— মক্কা বিজয়ের পর এখানে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ হয়, আল্লাহ ফেরেশতা দিয়ে এই যুদ্ধে মুসলমানদেরকে সাহায্য করেন।
১৭। জেরানা, বড় ওমরার জায়গা রাসূলুল্লাহ (দরুদ) হুনাইন যুদ্ধের পর এখান থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধেন, এটাই শ্রেষ্ঠ মিকাত। এখানে একটি মসজিদ আছে, যাকে মসজিদে রাসূল (দরুদ) বলা হয়।
১৮। নাখলা—মক্কা থেকে ৪৫ কি.মি. দূরে মক্কা ও তায়েফের মাঝামাঝি এই উপত্যকা। এখানে খেজুর বাগান ছিল, এই অঞ্চলের নাম ‘নাখলা’। এই জায়গাটি মিষ্টি পানির জন্য প্রসিদ্ধ। আল্লাহর নবীর জবানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত শুনে জ্বীন জাতির ইসলাম গ্রহণ করার ঘটনা এখানেই ঘটে বলে জায়গাটি ঐতিহাসিক।

মক্কা শরীফের ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ মসজিদ
:১। মসজিদে আবুবকর (রা.) এখানে হযরত আবুবকর (রা.)-এর বাড়ি ছিল।
২। মসজিদে খালেদ বিনওয়ালিদ।
৩। মসজিদে জ্বীন।
৪। মসজিদে বাইআহ্।
৫। মসজিদে খায়েফ।
৬। মসজিদে নামেরা।
৭। মসজিদ তাইঈম।

মক্কার ঐতিহাসিক পাহাড়সমূহ :
১। জবলে নূর। ২। জাবালে সওর। ৩। জাবালে আবু কোবাইস। ৪। জাবালে রহমত।

কাবা শরীফ ও মক্কা শরীফের রহস্যপূর্ণ জায়গাসমূহ :
১। আল্লাহর ঘরের ভেতরে, তবে সেখানে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করা সম্ভব নয় তাই হাতীমে (বাইতুল্লাহর পাশে গোলাকার দেয়াল ঘেরা কিছু উন্মুক্ত খালি জায়গা) নামায পড়ার সুযোগ আছে।
২। মুলতাজাম বা কা’বা ঘরের দরজা, ১৩৬৩ হিজরীতে বাদশা আব্দুল আজীজ আসেসৗদ একটি সুন্দর কাঠের দরজা লাগান, সেটি তৈরি করতে তিন বছর সময় লেগেছিল। বর্তমান দরজাটি বাদশা খালেদ লাগিয়েছেন। এতে ২৮৬ কি. গ্রা. খাঁটি স্বর্ণ লাগানো আছে, এতে আল্লাহর ও কুরআন শরীফের আয়াত— ‘কুল ইয়া ইবাদিয়াল্লাজিনা আছরাফু আলা আনফুছিহীম, লাতাকনাতুমির রাহমাতিল্লাহ্, ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা জামিয়া লেখা আছে। তাই এই আয়াত পড়ে এর উসিলা দিয়ে দোয়া করলে অবশ্যই দোয়া কবুল হয়।

৩। কাবা ঘরের পেছনের দেয়াল অর্থাত্ রোকনে ইয়ামানীর কাছে এখানো দোয়া কবুল ও নিষ্পাপ হওয়ার দলিল আছে। যেহেতু হুজুর (দরুদ) হিযরতের পর এখানে দাঁড়িয়েই ১৬ মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে নামায আদায় করেছেন এবং কেবলা পরিবর্তনের দোয়া করেছিলেন।
৪। হাতীম বা হিজরে ইসমাইল হিজরে ইসমাইলের অপর নাম হচ্ছে হাতীমে কা’বা। এই হাতীমে হযরত ইসমাইল (আ.) ও তাঁর মা হযরত হাজেরা (আ.)-এর কবর আছে বলে নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত ইসমাইল (আ.)-এর দোয়ার বরকতে এই বেহেশতি ঝরনা প্রবাহিত হচ্ছে। আল্লাহর ঘরের ভেতর নামায পড়ার ইচ্ছা করলে হাতীমে পড়ে নিলেই তা আদায় হয়ে যাবে।

৫। হাজরে আসওয়াদ, বাইতুল্লাহ শরীফের পূর্বকোণে ৩/৪ ফুট উঁচুতে দেয়ালের ভেতরে সংরক্ষণ করা সেই পাথর বেহেশতের সবচেয়ে মূল্যবান পাথর। রূহের জগতে এই পাথরের উপরে হাত রেখে হুজুর (দরুদ)-এর রূহ মুবারক আমরা আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহ আমাদের প্রভু এই প্রতিশ্রুতি পাঠ করিয়েছিলেন। হযরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আসার সময় আল্লাহ পাক সেই পাথর তার সাথে দিয়ে দেন, পরবর্তীতে তিনি সেটা জাবালে আবু কোবাইছে রাখেন তখন সে পাথর বরফের মত সাদা ও সূর্যের মত আলোকিত ছিল। নূহ (আ.)-এর বন্যার সময় আল্লাহ পাক পুনরায় আসমানে উঠিয়ে নেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর দ্বারা কা’বা ঘর তৈরির সময় আবার তা ফেরেশতার মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং ইব্রাহীম (আ.) সেই পাথরকে আল্লাহর ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে স্থাপন করেন। তাই এখান থেকেই তাওয়াফ শুরু হয়। হাদীস শরীফে আছে—হজরে আসওয়াদ প্রথম আবু কুবাইছ পাহাড়ে নাজিল হয়, সেখানে তা ৪০ বছর পর্যন্ত থাকে। তারপর তা হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর আগেই-ভিত্তির ওপর লাগানো হয়। অর্থাত্-মাকামে ইব্যাহীম ও হিজরাল আসওয়াদ এই পাথর দু’টিই বেহেশতের পাথর। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আগেই হাজরে আসওয়াদ নাজিল হয়েছে। বন্যার সময় এটিকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। তারপরই ইব্রাহীম (আ.) এর কাবা শরীফ নির্মাণের সময় জিব্রাইল (আ.) তা নিয়ে আসেন।

মক্কা-মদীনার দর্শনীয় স্থানসমূহ
যতবড় কঠিন হূদয়ের অধিকারী মানুষ হোন না কেন, আল্লাহর অসংখ্য নবী ও রসূলের স্মৃতিবিজড়িত দর্শনীয় স্থানগুলিতে গেলে মন মানসিকতার আমূল পরিবর্তন সূচিত হয়। প্রায় প্রত্যেকেই বলে থাকেন, যখন স্বচক্ষে কাবা শরীফ দেখলাম। কাবায় প্রবেশ করলাম। নামাজ পড়লাম। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম। তখন থেকেই মনের মাঝে অহর্নিশ আল্লাহ প্রেম, রসূল প্রেমের ঝড় বইতে শুরু করলো। কোথায় পরিবার-পরিজন, কোথায় ব্যবসা বাণিজ্য, কোথায় বন্ধু-বান্ধব, দুনিয়ার কোনো কিছুই মনে থাকে না, ভালো লাগে না, হূদয়ে এসে ভিড় জমেনা। হূদয় কন্দরে, রন্ধ্রে-রন্ধ্রে, তন্ত্রীতে-তন্ত্রীতে, রক্তের প্রবাহে কেবল আল্লাহর মহব্বতের বেহেশতি আবহ প্রবাহিত হয়ে যায়। ঢেউ খেলে যায় রসূল প্রেমের উত্তাল তরঙ্গমালা। মুখে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত ও গুঞ্জরিত হয় আল্লাহর জপমালা। কাবা শরীফ, মাকামে ইব্রাহিম, কাবার হাতিম, হিজরে আসওয়াদ, জমজম কূপ জাবালে আবু কুবাইস, জাবালে নূর, জাবালে সওর, হযরত আবু বকর (রা.) এর বাড়ী, রসূলের জন্মস্থান, খাদিজা (রা.)-এর বাড়ী, জান্নাতুল মুয়াল্লা, ওয়াদিয়ে মুহাসসার, দারুল আরকাম, আরাফা ময়দান, মুজদালেফার প্রান্তর, মিনার ঐতিহাসিক প্রান্তর, তায়েফ ও সাফা-মারওয়া পাহাড় এ সমস্ত স্থানে যাওয়া ও দেখার পর প্রত্যেক হাজীর মন কেঁদে ওঠে, চোখ অশ্রুসিক্ত না হয়ে পারে না।

আর মদীনা শরীফ যাওয়ার পর রসূলের রওজার কাছে গিয়ে হজ্ব পালনকারীগণ কেঁদে জারে জার হয়ে যান। কেননা এটা সেই স্থান যেখানে শায়িত রয়েছেন, আমাদের শাফায়াতের কাণ্ডারি যার সুপারিশ ছাড়া মুক্তির কোনো উপায় নাই। যিনি উম্মত হিসেবে আমাদের না চিনলে নিষ্কৃতির কোনো রাস্তা নেই। যিনি হাশরের ময়দানে অগণিত মানুষের মধ্য হতে তাঁর উম্মতদের বাছাই করবেন ও নিজ হাতে হাউজে কাওছারের পানি পান করাবেন এবং সঙ্গে করে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। যেখানে রসূল (দরুদ) এর রওজা হয়েছে ঐ স্থানে তাঁর সঙ্গে তাঁর দুইসহচর হয়রত আবু বকর ও হযরত ওমর (রা.) রয়েছেন তাদের কথাও স্মরণে আসে। কারণ ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে হযরত আবু বকরের অবদান অনস্বীকার্য। বাল্যকাল থেকে রসূল (দরুদ) এর ইন্তেকাল পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে বিপদে আপদে যুদ্ধে সন্ধিতে সকল সময়, সকল স্থানে ছায়ার মত সাথে সাথে থেকেছেন। রসূল (দরুদ) বলেছেন, আবু বকর আমার বাল্যকালের সাথী, হিজরতের সাথী জান্নাতেরও সাথী। আরো বলেছেন, দুনিয়ার সব মানুষের ঈমান যদি এক পাল্লায় দেয়া হয়, আর আবু বকরের ঈমান যদি আর এক পাল্লায় দেয়া হয় তাহলে আবুবকরের ঈমানের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। আর ওমর (রা.) ছিলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব জাহেলিয়াতের যুগের মানুষেরা যার ভয়ে সর্বদা প্রকম্পিত ছিল। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন প্রকাশ্য দিবালোকে ফিরে আসে ইসলাম। রসূল (দরুদ) তাঁর জীবদ্দশায় বলে গেছেন, লা নাবিয়্যা মিম বাআদি, লাকানা ওমার, আমার পরে কোনো নবী নেই, যদি আল্লাহ কারো নবী বানাতেন তাহলে অবশ্যই ওমরকে আল্লাহ নবী বানিয়ে দিতেন। আর একজনের জায়গা খালি রয়েছে, যেখানে হযরত ঈসা (আ.) কে দাফন করা হবে। রসূল (দরুদ) এর রওজা ও মিম্বর এর মাঝে একটি জায়গা রয়েছে। যার নাম রিয়াজুল জান্নাহ। অর্থাত্ বেহেশতের টুকরা। সেখানে নামাজ পড়া অনেক সৌভাগ্যের বিষয়।

মসজিদে নববীতে ৮ দিনে মোট ৪০ ওয়াক্ত নামাজ পড়া বিশেষ মর্যাদার। কেননা মসজিদে নববীতে এক রাকাআত নামাজ পড়া ৫০ হাজার রাকাআত নামাজ পড়ার সমান। মসজীদে নববীর পার্শ্বেই রয়েছে জান্নাতুল বাকী কবরস্থান। যেখানে রসূল (দরুদ) এর হাজার হাজার সাহাবীর কবর রয়েছে। তাছাড়া সেখানে রসূল (দরুদ) এর প্রিয় কন্যা ফাতিমা (রা.), হযরত হাসান (রা.), জয়নুল আবেদীন, হযরত আয়শা (রা.)সহ সকল উম্মুল মুমেনীনগণ (কেবলমাত্র খাদিজা (রা.) ছাড়া) হযরত আবু হরায়রা (রা.), হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রা.), আবু আইয়ুব আনসারী (রা.)সহ প্রায় ৩০ হাজার সাহাবীর কবর এখানে রয়েছে। রসূল (দরুদ) তাঁর ইন্তেকালের আগে এই জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে বিদায়ী ছালাম জানিয়ে বলেছিলেন, আসসালামু আলাইকুম ইয়া দারু কউমি মু’মিনীন। তার পর মসজিদে কেবলাতাইন বা দুই কেবলার মসজিদ। রসূল (দরুদ) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পর ১৭ মাস ধরে মসজিদে আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ পড়েন। সেই সময় প্রায় প্রায় তিনি আকাশের দিকে তাকাতেন এই আশা নিয়ে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যদি হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত কাবাঘরকে কেবলা নির্ধারণ করে দিতেন তাহলে খুবই ভালো হতো। আল্লাহ পাক রসূল (দরুদ) এর মনের আকুতি বোঝেন, তাঁর চোখের ভাষা উপলব্ধি করেন। অবশেষে একদিন আসরের নামাজে দুই রাকায়াত পড়ার শেষে আয়াত নাজিল করে মসজিদে হারামকে কাবা হিসেবে পুনরায় ফিরিয়ে দেন। যে আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ফাওয়াল্লি অজহাকা শাতরল মসজিদিল হারাম’ অর্থাত্ হে নবী (দরুদ), আপনি আপনার চেহারা এখুনি মসজিদে হারামের দিকে ফেরান তখন বাকী দুই রাকাআত মসজিদে হারামের দিকে ফিরেই পড়েন। এটাও দর্শনীয় একটি স্থান।

তারপর মসজিদে জুমআ। রসূল (দরুদ) হিজরতের পর মদীনায় আসার সময় এই স্থানে জুমআ ফরজ হয়। মক্কার ১৩ বছরের নবুয়াতি জীবনে এই জুমআ ফরজ ছিল না। যখন ফরজ ঘোষণা হলো রসূল (দরুদ) সেখানেই জুমআ পড়লেন। এই স্থানে সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। তারপর মসজিদে কুব্বা যা ইসলামের ইতিহাসে নির্মিত প্রথম মসজিদ। আল্লাহ কুরআনে বলেন, ইন্না আওয়ালু উসসিসা আলাত তাকওয়া হুয়া মসজিদু কুব্বা। অর্থাত্ তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রথম নির্মিত মসজিদই হলো কুব্বা। রসূল (দরুদ) যখন হিজরতে বের হয়েছিলেন। এই কুব্বার মানুষেরাই তাকে প্রথম স্বাগত জানিয়েছিলেন। তারা প্রতিদিন একটি উঁচু টিলার ওপর বসে মরুভূমির দিকে তাকিয়ে থাকতেন। আর রাত হলে ঘরে ফিরতেন। একদিন তারা ঘরে ফেরার পর দুর থেকে রসূলের হিজরতের কাফেলা দেখে একজন ইহুদী কুব্বার লোকদের বলেছিলেন, হে কুব্বাবাসি, তোমরা প্রতিদিন যার জন্য অধীর আগ্রহে মরুপানে অপলক দৃষ্টি দিয়ে অপেক্ষা করো, তিনি আসছেন।

ঐ দেখো, তাঁর কাফেলা দেখা যায়। তখন কুববায় জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁরা আল্লাহর প্রিয় নবী, প্রিয় রসূল (দরুদ) কে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। নবীজী (দরুদ) সেখানে তিনদিন অবস্থান করেছিলেন। সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এটা অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। তারপর বদরের প্রান্তরটি সময় থাকলে যাওয়া উচিত্। যেখানে ইসলামের প্রথম ভাগ্য নির্ধারণী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়ালা সেখানে এক হাজার ফেরেশতা সৈনিক দিয়ে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করেন। এরপর ওহুদের প্রান্তরে গিয়ে সেই ঘটনার উপলব্ধি করা। যেখানে রসূল (দরুদ) এর রক্ত ঝরেছে। দাঁত মোবারক শহীদ হয়েছে। চাচা আমীর হামজা শহীদ হয়েছেন। ৭০ জন সাহাবী শহীদ হয়েছেন। এসব স্থানগুলি দর্শন করে আসতে পারলে যতদিন বেঁচে থাকবেন, শয়তান ধোকা দিয়ে সহজেই বিপথগামী করতে পারবে না। আল্লাহ সকল হজ্বযাত্রীকে এসমস্ত দর্শনীয় স্থানগুলি দেখে আসার তাওফীক দান করুন, আমীন।