ইবনে তাইমিয়া এবং তাঁর ছাত্র ইবনে কাসিরের মাজার, সিরিয়ার দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। মাজার মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলার হাদিস সঠিক হলে তাদের গুরুদের মাজার গুলো এভাবে স্বযত্নে রেখেছে কেন? কবর ভাঙার হাদিসটি মুনাফিকরা ভুলভাবে উপস্থাপন করে। প্রকৃতপক্ষে রাসুল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবের মুশরিকদের কবর গুলো ভাংতে হযতর আলি (রা) কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কোন সাহাবীর কবর নয়। তাদের হাদিস যদি মুসলমানসহ সবার কবর ভাঙ্গার ব্যাপারে হত তাহলে হযরত আলী (রা) এর খেলাফতের পর থেকে কোন কবর উঁচু হতোনা আর তাদের ভাঙার জন্য আজ কোন কবরই অবশিষ্ট থাকত না। এটা একটা অতি সরল্ল অংকের মত সোজা।
মাজার জিয়ারত জায়েজ এবং সুন্নাতে রাসুল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। দেখুন প্রমাণ>
ইব্রাহিম বিন মুহাম্মদ (রা) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বছরের প্রারম্ভে ওহুদ যুদ্ধে শহীদদের সমাধি জেয়ারতে যেতেন এবং বলতেন: السلام عليکم بما صبرتم فنعم عقبي الدار.
আপনাদের উপর সালাম! আপনারা আপনাদের ধৈর্যের ফলস্বরূপ আখেরাতে কি চমৎকার জায়গাই না পেয়েছেন।
আবু বকর, উমর এবং ওসমান (রা) একই ভাবে জেয়ারতে যেতেন।
সুত্র: -
১. মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৩:৫৭৩
২. আইনি, উমদাদুল কারী, ৮:৭০
৩. তাবরী, জামি আল কুরআন, ১৩:১৪২
৪. ইমাম সুউতি, দারুল ময়ানসুর, ৪:৬৪১
৫. তাফসীর ইবনে ই কাসীর।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: "তোমরা ক্কবর জিয়ারত কর কারণ এই অভ্যাস পরকালের কথা মনে করিয়ে দেয়। (এ হাদিসে নির্দেশ দেয়া হয়েছে)
সুত্র:
১. মুসলিম ১:৬৭১ .. ৯৭৬
২. হাকীম আল মুস্তাদরাক: ১:৫৩১ .. ১৩৯০
পবিত্র মহানবী (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) 'র রওজা জিয়ারতের ফজিলত: -
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: যে আমার রওজা জিয়ারত করবে, কিয়ামতের দিনে তাঁর জন্যে আমার শাফায়াত অবধারিত।
সুত্র:
১. দারুল কুতনী, আল সুনান ২: ২৭৮)
২. বায়হাকি, শোহবুল ঈমান ৩: ৪৯০, এবং ৪১৫৯ এবং ৪১৬০)
৩. হাকীম তিরমিজি, নাওয়াদিরুল উসুল ২: ৬৭)
কখন থেকে কবর জিয়ারতের উপর নিষেধাজ্ঞা আসে?
ইবনে তাইমিয়াই সর্ব প্রথম আনুমানিক সাড়ে ৬ শ হিজরীতে তিন মসজিদ ব্যতিরেকে অন্য মসজিদের জন্যে সফর করাকে হারাম বলে মত দেন।
কখন থেকে মাজার ভাঙার সংস্কৃতি শুরু হল?
ইবনে আব্দুল ওহাব আনুমানিক ১৭৪০ সাল থেকে ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করতে থাকেন যে মাজার জিয়ারত করা মাজার পুজার শামিল, তাই মাজার জিয়ারত ও এর জন্য সফর উভই হারাম। তাঁর এ ভয়ংকর মতবাদ দেখে তার পিতা তাঁকে তা থেকে বিরত থাকতে বলেন। ১৭৪৫ সালে তার পিতার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তার এ ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারে বিরত থাকেন। কিন্তু তার পিতার ইন্তেকালের পরপরই আবার শুরু হয় তার এ প্রচারনা। তারই আপন ভাই তাঁকে এ ব্যাপারে পিতার নির্দেশের কথা স্মরণ করেও কোন ফল হয় নি। ভায়ের বাধার কারণে পরবর্তিতে সে তার নিজের ভাইকে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, তারা আরবে অবস্থিত মাজার গুলো ধ্বংস করতে থাকে। উনবিংশ শতাব্দির শুরুতে এই ওহাবিরা মক্কা-মদিনা আক্রমণ করে সব কবর ধ্বংস করে ফেলে। কেবল মাত্র মসজিদে নববীতে অবস্থিত রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর দুই সঙ্গী হযরত আবু বকর (রা) ও হযরত ওমর (রা) এর রওজা গুলো রক্ষা পায়। তারা বারবার ওগুলো ভাংতে উদ্যোগ নিলেও মুসলিম বিশ্বে বিশেষ করে মিশর ও তুরুস্কের প্রবল বাধা ও হুমকির মুখে তা থেকে বিরত থাকে।
এভাবে মাজার ভাঙার সংস্কৃতি তাদের মাধ্যমে ভিবিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে, যা লিবিয়া ও সিরিয়াতে আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। বাংলাদেশেও তাদের দোসররা হযরত শাহ জালাল (রা) সহ ভিবিন্ন স্থানে বোমা হামলা করেছিলো। এরা তালেবানি আর আল-কায়েদার উত্তরসূরি। সন্ত্রাসির মাধ্যমে তারা ইসলামের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা বুঝে না যে স্বয়ং নবী করীম (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাজার জিয়ারতের জন্যে অসিয়ত করে গেছেন। তারা যুক্তি দেখায় নবীজি ইন্তেকালের পুর্ব মুহুর্তে মাজার পুজারিদেরকে ভর্তসনা করে গেছেন। নবীজি ইহুদি-খৃস্টান্দেরকে লানত দিয়ে গেছেন যারা নবীদের মাজারকে মসজিদ বা সেজদার জায়গা বানিয়েছিল। মাজার জিয়ারত কে নিষেধ করেন নি। ওহাবী আর তাদের দোসররা মুনাফিক। মানুষকে হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা করে বিভ্রান্ত করছে। আল্লাহ তাদের ভ্রান্ত আকিদা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুণ। আমিন।
a.u.n