NOTICE:- ------------------ ----------------- ---------------------------

জুম্মার নামাজের ফজিলত


আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই। আজ আপনাদের সামনে জুম্মার ফজিলত সম্পর্কে কিছু হাদিস তুলে ধরলাম ।ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাচ্ছি ।চলুন হাদীস গুলো এক পলক দেখে আসি। জুমু’আর দিনের মর্যাদা: হযরত আবু লুবাবা ইবনে আবদুল মুনযির (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, জুমু’আর দিন সকল দিনের সরদার। আল্লাহর নিকট সকল দিনের চেয়ে মর্যাদাবান। কোরবানীর দিন ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়ে বেশী মর্যাদাবান। আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমরা শেষে এসেছি কিন্তু কেয়ামতের দিন সকলের আগে থাকবো। যদিও অন্য সকল জাতিগুলো (ইহুদী ও খৃষ্টান) কে গ্রন্থ দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আমাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অত:পর জেনে রাখো এই (জুমার) দিনটি আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পিছনে আছে। ইহুদীরা জুমার পরের দিন (শনিবার) উদযাপন করে আর খৃষ্টানেরা তার পরের দিন (রবিবার) উদযাপন করে। (বর্ণনায়: বুখারী ও মুসলিম) আসুন আমরা জুম্মার দিনে আগে ভাগে মসজিদে যাই, আমি আপনি যদি একটু আগে ভাগে মসজিদে যাই তবে এর জন্য অনেক ফজিলত রয়েছে। হাদিসে আছে জুম্মার দিনে আগে ভাগে মসজিদে গেলে দান-খয়রাত বা পশু কুরবানী করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি জু’আর দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানী করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানী করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানী করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।” (বুখারীঃ ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০) যে ব্যাক্তি আদব রক্ষা করে জুম’আর সালাত আদায় করে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সমান সওয়াব লিখা হয়। আউস বিন আউস আস সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “জুমা’আর দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, পূর্বাহ্ণে মসজিদে আগমন করে এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কোন কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।” (মুসনাদে আহমাদঃ ৬৯৫৪, ১৬২১৮) আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন আমরা যখন মসজিদে যাই তখন সেখানে তিন ধরনের মানুষ দেখতে পাই, যা হুজুর (সা:) এর নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জুম’আর সালাতে তিন ধরনের লোক হাজির হয়। (ক) এক ধরনের লোক আছে যারা মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করে, তারা বিনিময়ে তামাশা ছাড়া কিছুই পাবে না। (খ) দ্বিতীয় আরেক ধরনের লোক আছে যারা জুম’আয় হাজির হয় সেখানে দু’আ মুনাজাত করে, ফলে আল্লাহ যাকে চান তাকে কিছু দেন আর যাকে ইচ্ছা দেন না। (গ) তৃতীয় প্রকার লোক হল যারা জুম’আয় হাজির হয়, চুপচাপ থাকে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কারও ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে আগায় না, কাউকে কষ্ট দেয় না, তার দুই জুম’আর মধ্যবর্তী ৭ দিন সহ আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ খাতা আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন।” (আবু দাউদঃ ১১১৩) যে সকল মসলমান জুম’আর নামাজ অত্যন্ত আদবের প্রতি লক্ষ্য রেখে আদায় করে, সেই সকল আদায়কারীদের জন্য দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময় গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “পাঁচ বেলা সালাত আদায়, এক জুম’আ থেকে পরবর্তী জুম’আ, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া সকল (সগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবীরা গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।” (মুসলিমঃ ২৩৩) জুমু’আর দিনে কিছু করণীয় কাজ নিচে দেয়া হলো: ১, ফজরের আগে গোসল করা। ২, ফজরের ফরজ নামাজ়ে সূরা সাজদা [সিজদা] ও সূরা দাহর/ইনসান তিলাওয়াত করা। ৩, উত্তম পোষাক পরিধান করা। ৪, সুগন্ধি লাগানো। ৫, প্রথম ওয়াক্তে মসজিদে যাওয়া। ৬, সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা। ৭, মসজিদে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাকা’আত সুন্নত আদায় করা। ৮, ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা। ৯, মনযোগ দিয়ে খুৎবাহ শোনা। খুৎবাহ চলাকালীন সময়ে কোন ধরনের কোন কথা না বলা; এমনকি কাউকে কথা বলতে দেখলে তাকে কথা বলতে বারণ করাও কথা বলার শামিল। ১০, দুই খুৎবাহর মাঝের সময়ে দু’আ করা। ১১, অন্য সময়ে দু’আ করা। কারণ এদিন দু’আ কবুল হয়। ১৩, রসূলের উপর সারাদিন বেশী বেশী দরূদ পাঠানো। জুমু’আর দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য: ১, এই দিনে আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। ২, এই দিনে আল্লাহ্ তা’আলা আদম (আ:)-কে দুনিয়াতে নামিয়ে দিয়েছেন। ৩, এই দিনে আদম (আ:) মৃত্যুবরণ করেছেন। ৪, এই দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়ে হারাম ছাড়া যে কোন জিনিস প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা প্রদান করেন। ৫, এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে। তাই আসমান, যমীন ও আল্লাহর সকল নৈকট্যশীল ফেরেশতা জুমু’আর দিনকে ভয় করে। (ইবনে মাজাহ্, মুসনাদে আহমদ) যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন তাকবিরে উলার সাথে (নামাজ শুরুর তাকবিরের সাথে) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করল তার জন্য দু\'টি নাজাত লিপিবদ্ধ করা হল, ১. জাহান্নাম হতে ও ২. মুনাফিক্বী হতে (বুখারী ও মুসলিম মিশকাত ২১৭পৃষ্ঠা)। এবং \'যে ব্যক্তি জামায়াতের সাথে ইশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে (ইবাদত) করল। আর যে ফজরের নামাজ জামায়াতসহ আদায় করল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে (ইবাদত) নামাজ পড়ল\" (মুসলিম)। তিনি আরো বলেন, \"যদি লোকে ইশা ও ফজরের নামাজের ফজীলত জানত, তাহলে তাদেরকে হামাগুঁড়ি দিয়ে আসতে হলেও তারা অবশ্যই ঐ নামাজদ্বয়ে আসত (বুখারী, মুসলিম)। প্রসিদ্ধ তাবেঈ সাঈদ বিন মুসাইয়্যিব (রহ.) ও কা\'ব আল আহবার (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম! নিন্মোক্ত আয়াত তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা নামাজ পড়তে জামায়াতে আসেনা।\' মহান আল্লাহ বলেন, (স্মরণ কর বিচার দিনের কথা) সেদিন পায়ের নলা উন্মোচন করা হবে এবং ওদেরকে সিজদা করার জন্য আহবান করা হবে কিন্তু ওরা তা করতে সক্ষম হবে না, হীনতাগ্রস্থ হয়ে ওরা ওদের দৃষ্টি অবনত করবে, অথচ ওরা যখন নিরাপদ ছিল, তখন ওদের আহবান করা হয়েছিল সিজদা করতে (আল-কুরআন ৬৮/৪২-৪৩)। নামাজের পূর্ণ ফজিলত ও বরকত হাসিল হয় যদি জামায়াতের সাথে আদায় করা হয়। কেননা জামায়াতে নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। বস্তুত নামাজের স্বভাব ও প্রকৃত দাবী হল জামায়াতের মাধ্যমেই তার স্বকীয় মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে পারা। এজন্যই রসূলুল্লাহ (স.) এবং সাহাবাগণ জামায়াতের এতো বেশি যতœবান হতেন যেন জামায়াত নামাজের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমনকি মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরবস্থায়ও তিনি দুইজনের কাঁধে ভর করে জামায়াতে হাজির হয়েছিলেন। আর সালফে সালেহীনগণ ইমামের সাথে প্রথম তাকবীর না পেলে ৩ দিন ও জামায়াত ছুটে গেলে ৭ দিন দুঃখ প্রকাশ করতেন (মির\'আত-৪/১০২)। জামায়াত ত্যাগ করার কারো অনুমতি থাকলে রণাঙ্গনে শত্রুর সম্মুখে ব্যুহবিন্যাসে দন্ডায়মান যুদ্ধাদেরকে সে অনুমতি দেওয়া হত। অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) নবী (স.)-এর কাছে ফরজ নামাজ বাড়িতে পড়ার অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, তুমি জামায়াতে উপস্থিত হবে, তোমার জন্য আমি কোন অনুমতি পাচ্ছিনা। পরনির্ভরশীল অন্ধের জন্য এই নির্দেশ হলে সুস্থ-সমর্থ চক্ষুষ্মান; যার কোন ওযর-অন্তরায় নেই তার জন্য কি নির্দেশ হতে পারে? মসজিদের সাথে অন্তরের সম্পর্ক স্থাপনকারীগণকে (জামা\'আতে নামাজ আদায়কারীকে) আল্লাহর (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেয়া হবে। আসর ও ফজরের সালাত যথারীতি জামা\'আতের সাথে আদায়কারী জান্নাতী হবেন (মুসলিম)। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ জামায়াতের প্রথম কাতারের লোকদের ওপর বিশেষ রহমত নাজিল করে থাকেন। কথাটি তিনি ৩বার বললেন। অতঃপর বলেন, দ্বিতীয় কাতারের ওপরেও (আহমাদ,দারেমী ও সহীহুল জামে)। আমলের ক্ষেত্রে ফরজ ও সুন্নত নামাজকে একাকার করে রাখার কারণেই যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন জোহরের নামাজের জন্য মসজিদে প্রবেশ করলে ফরজ পূর্ব ৪রাকাআত+ফরজ ৪রাকাআত+ফরজ বাদ ২রাকাআত=এই মোট ১০রাকাআত নামাজ না পড়ে মসজিদ থেকে বের হতে পারবে না। অথচ শুধু ৪রাকাআত জামায়াতে ফরজ পড়ে বের হয়ে গেলেই সে নামাজ পরিত্যাগকারীর যাবতীয় শাস্তি, কুপরিণতি ও ক্ষতি থেকে মুক্ত হয়ে যেত। একা নামাজ পড়ার চেয়ে পাঞ্জেগানা ওয়াক্তিয়া মসজিদে জামায়াতে নামাজ পড়লে ২৫ থেকে ২৭ গুণ সওয়াব হয়। দু\'জনের নামাজ একাকীর চাইতে উত্তম। এভাবে জামায়াত যত বড় হয়, নেকী তত বেশী হয়। মদিনার মসজিদে নববীতে পড়লে একহাজার গুণ এবং কা\'বা গৃহে পড়লে একলক্ষ গুণ সওয়াব বেশী হয় (বুখারী,মুসলিম মিশকাত ৭২পৃষ্ঠা)। \"যে ব্যক্তি কোন ফরজ নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে স্বগৃহ থেকে ওযু করে জামায়াতের জন্য (মসজিদের দিকে) বের হয় সেই ব্যক্তি ইহরাম বাঁধা হাজীর ন্যায় সওয়াবের অধিকারী হবেন (আবূদাউদ)। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, \'যে ব্যক্তি কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর সাথে মুসলিম হয়ে সাক্ষাতের ইরাদা রাখে তার উচিত সুন্দরভাবে পবিত্রতা অর্জন (অযু) করে স্রেফ নামাজের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়া, তাহলে তার প্রতি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে, একটি করে মর্যাদার স্তর উন্নীত ও তার পাপ মোচন করা হবে। আমরা দেখেছি যে, বিদিত কপট (মুনাফিক) ছাড়া নামাজের জামায়াত থেকে কেউ পশ্চাতে থাকত না। রসূলুল্লাহ (স.) বলেন, মুনাফিদের ওপরে ফজর ও ইশার জামায়াতের চাইতে কঠিন কোন নামাজ নেই। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ) অথচ সে সময় মানুষকে দু\'টি লোকের কাঁধে ভর করে হাঁটিয়ে এনে কাতারে খাড়া করা হত (মুসলিম-৬৫৪)। তিনি বলেন, তোমরা সামনের কাঁতারের দিকে অগ্রসর হও। কেননা যারা সর্বদা পিছনে থাকবে, আল্লাহ তাদেরকে (স্বীয় রহমত থেকে) পিছনে রাখবেন (মুসলিম) অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নাম পর্যন্ত পিছিয়ে দেবেন (আবূদাউদ)।