NOTICE:- ------------------ ----------------- ---------------------------

40. হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য কেউ সরাসরি মাটি থেকে তৈরী নয়

হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য কেউ সরাসরি মাটি থেকে তৈরী নয়

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ-এর কোথাও একথা উল্লেখ করেননি যে, “সমস্ত মানুষ মাটির তৈরী” বরং বলা হয়েছে- “মানুষ মাটির তৈরী।” আর পবিত্র কুরআন শরীফ-এর যেসব আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে যে, বাশার, ইনসান বা মানুষ মাটির তৈরী সেসব আয়াত শরীফ দ্বারা মূলত হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার কথাই বলা হয়েছে। উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহের ব্যাখ্যায় অনুসরণীয় মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এ মতই পেশ করেছেন। নিম্নে উল্লিখিত আয়াত শরীফসমূহ ও তার ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো-
(১)
اِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِندَ اللّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثِمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ
অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার দৃষ্টান্ত হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনারই ন্যায়, তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর বলেছেন, হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন।” (সূরা আলে ইমরান : ৫৯)
বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার নির্ভরযোগ্য ও প্রখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ২য় খণ্ডের ১০২ পৃষ্ঠায় লিখেন,
قوله تعالى (اِنَّ مَثَلَ عِيسَى …………..) دليل على صحة القياس – والتشبيه واقع على ان عيس خلق من غيراب كادم لا على انه خلق من تراب ……………… فان ادم خلق من تراب ولم يخلق عيس من تراب فكان بينهما انها خلقهما من غيرأب ………….
অর্থ : “উক্ত আয়াত শরীফখানা ক্বিয়াস সহীহ্ হওয়ার দলীল। আর উক্ত আয়াত শরীফে যে তাশবীহ বা সাদৃশ্যতা বর্ণনা করা হয়েছে তা এই যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার মতই পিতা ছাড়া তৈরী হয়েছেন। একথা বুঝানো হয় নাই যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার মতই মাটির তৈরী। ……… হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি মাটির তৈরী আর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি মাটির তৈরী নন এদিক থেকে উভয়ের মাঝে যদিও পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু পিতা ছাড়া তৈরী হওয়ার দিক থেকে উভয়ের মধ্যেই সাদৃশ্যতা বা মিল রয়েছে। ………..”
ইমামুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে কবীর”-এর ৮ম খণ্ডের ৭৯-৮১ পৃষ্ঠায় লিখেন,
قوله تعالى (اِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِندَ اللّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ) ……………………… اذا جاز ان يخلق الله تعالى ادم من التراب فلم لايجوز ان يخلق عيس من دم مريم؟ (مَثَلَ عِيسَى عِندَ اللّهِ كَمَثَلِ آدَمَ) اى صفته كصفة ادم ……………… (خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ) ………………………. الضمير فى قوله خلقه راجع الى ادم.
অর্থ : “(নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টির ন্যায়। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।) ….. হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি করতে পারেন তবে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে কেন হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালাম উনার রক্ত থেকে সৃষ্টি করতে পারবেন না? ….. (হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার মেছাল মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ন্যায়) অর্থাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার ছিফত হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ছিফতের ন্যায়। …… (উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে) …. উক্ত আয়াত শরীফ-এ যে সর্বনাম রয়েছে তা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দিকে রুজু হয়েছে বা ফিরেছে। অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে নয়।”
শায়খুল মুফাসসিরীন, ফক্বীহুল উম্মত আল্লামা ছানাউল্লাহ পানীপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মশহুর তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারী”-এর ২য় খণ্ডের ৫৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(اِنَّ مَثَلَ عِيسَى) يعنى شانه الغريب عند الله كمثل ادم كشانه ثم فسره وبين وجه التشبيه – فقال خلقه اى صور قالبه يعنى ادم من تراب.
অর্থ : “নিঃসন্দেহে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার শান মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার শানের ন্যায়। অতঃপর তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ও সাদৃশ্যতার কারণ বর্ণনা করেছেন। সুতরাং বলেন, মহান আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ছূরত সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।”
সূরা আলে ইমরান-এর উক্ত আয়াত শরীফ ও তাফসীর দ্বারা এটাই ছাবিত হলো যে, শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্য কাউকে নয়। যদি হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ছাড়া অন্য কেউ মাটির সৃষ্টি হতো তবে উক্ত আয়াত শরীফে “হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ন্যায়” একথা বলার পর “خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ” “আমি উনাকে (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে) সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে” বলতেননা। বলতেন- “আমি উনাদের উভয়কে সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে।” সুতরাং এখানে সর্বনাম একবচন এনে এটাই বুঝিয়েছেন যে, শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনিই মাটির সৃষ্টি অন্য কোন মানুষ নয়।
একইভাবে হাদীছ শরীফ-এ “তোমরা সকলেই হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তান” বলার পরে আবার “আর আদম আলাইহিস সালাম তিনি মাটি হতে সৃষ্ট” বলার উদ্দেশ্য একই। অর্থাৎ শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনিই মাটির সৃষ্টি অন্য কোন মানুষ নয়।
(২)
قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ اَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّاكَ رَجُلًا
অর্থ : “তার সঙ্গী তাকে কথা প্রসঙ্গে বললো : তুমি উনাকে অস্বীকার করছো যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে অতঃপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানবাকৃতিতে।” (সূরা কাহাফ : ৩৭)
মুহিয়্যুস্ সুন্নাহ্ আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার প্রখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খাযিন”-এর ৩য় খণ্ডের ১৯৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ) اى خلق اصلك من تراب لان خلق اصله سبب فى خلقه
অর্থ : “(তোমাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ তোমার আছল (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। কেননা উনার আছলের সৃষ্টি উনার সৃষ্টির কারণ।”
তাজুল মুফাসসিরীন আল্লামা আবুল ফজল শিহাবুদ্দীন সাইয়্যিদ মাহমুদ আলুসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ৮ম খণ্ডের ২৭৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ) اى فى ضمن خلق اصلك منه وهو ادم عليه السلام
অর্থ : “(তিনি তোমাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ তোমার আছল উনাকে আর তিনি হলেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
প্রখ্যাত মুফাসসির ফক্বীহুল আছর, আল্লামা ছানাউল্লাহ্ পানীপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার প্রসিদ্ধ তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারী”- এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ) لانه اصل ماد نك اومادة اصلك ادم عليه السلام
অর্থ : “(তিনি তোমাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) কেননা তোমার মাদ্দার আছল অথবা তোমার আছলের মাদ্দাহ্ হলেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি।”
শাইখুল মুফাসসিরীন আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মশহুর তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ২য় খণ্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ) اى اخاه المسلم (وَهُوَ يُحَاوِرُهُ) اى يكلمه ويعظه فى الله تعالى (اَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ) يعنى ادم عليه السلام
অর্থ : “(তাকে তার সাথী বলেন) অর্থাৎ তার মুসলমান ভাই বলেন। তিনি তার সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে নছীহত করছিলেন। যিনি তোমাকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
তাজুল মুফাসসিরীন আল্লামা ইমাম ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে রুহুল বয়ান”-এর ৫ম খণ্ডের ২৪৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(بِالَّذِي خَلَقَكَ) اى فى ضمن خلق اصلك ادم عليه السلام (مِن تُرَابٍ)
অর্থ : “(যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ তোমার আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
সূরা কাহাফ-এর উক্ত আয়াত শরীফ ও তাফসীর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই মূলত মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাই মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত “خَلَقَكَ” “তোমাকে সৃষ্টি করেছেন” এ বাক্যের অর্থ করেছেন- “হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে” যেহেতু শুধুমাত্র আদম আলাইহিস সালাম তিনিই মাটির সৃষ্টি।
(৩)
فَاِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِن مُّضْغَةٍ مُّخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ لِّنُبَيِّنَ لَكُمْ
অর্থ : “(হে লোক সকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিহান হও, তবে (ভেবে দেখ) আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে, সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে এরপর পূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট গোস্ত পিন্ড থেকে। তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে।” (সূরা হজ্জ : ৫)
ফক্বীহুল আছর, প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ২য় খণ্ডের ৩৮০ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(فَاِنَّا خَلَقْنَاكُم …………..) اى خلقنا اباكم الذى هو اصل البشر يعنى ادم عليه السلام (مِنْ تُرَابٍ) (ثُمَّ) خلقنا ذريبه (مِن نُّطْفَةٍ) وهو المنى
অর্থ : “(আর নিঃসন্দেহে আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা যিনি মানবজাতীর মূল অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর উনার সন্তানদেরকে “নুতফা” অর্থাৎ বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি।”
ইমামুল মুফাসসিরীন, আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(فَاِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن تُرَابٍ) يعنى ادم عليه السلام من تراب
অর্থ : “(নিঃসন্দেহে আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ আমি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”
আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৩য় খণ্ডের ২৮১ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(فَاِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن تُرَابٍ) يعنى اباكم ادم الذى هو اصل البشر (ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ) يعنى ذريته من المنى
অর্থ : “(আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। যিনি মানব জাতির মূল। (অতঃপর নুতফা থেকে) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদেরকে বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি।”
আল্লামা হুসাইন ইবনে মাসউদ আল ফাররা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “তাফসীরে বাগবী”-এর ৩য় খণ্ডের ২৮১ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(فَاِنَّا خَلَقْنَاكُم) اى اباكم (مِّن تُرَابٍ ثُمَّ) خلقتم (مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ) اى قطعة دم جامدة (ثُمَّ مِن مُّضْغَةٍ) اى لحمة صغيرة قدر مايمضع
অর্থ : “আমি তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের পিতা উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি নুতফা ও ছোট গোস্তপিন্ড থেকে।”
সূরা হজ্জ-এ বর্ণিত উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও তার ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই ছাবিত হলো যে, কুরআন শরীফে যে বলা হয়েছে “মানুষ মাটির সৃষ্টি” তা দ্বারা মূলত হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনিই মাটি থেকে সৃষ্টি। আদম সন্তানগণ মাটি থেকে সৃষ্টি নয়।
(৪)
اَنْ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ اِذَا أَنتُم بَشَرٌ تَنتَشِرُونَ
অর্থ : “উনার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছো।” (সূরা রূম :২০)
আল্লামা আবুল লাইছ সমরকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ৩য় খণ্ডের ৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(اَنْ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ …….) يعنى خلق ادم من تراب وانتم ولده – (ثُمَّ اِذَا أَنتُم) ذريته من بعده (بَشَرٌ تَنتَشِرُونَ) يعنى تبسطون
অর্থ : “(তিনি মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমরা হলে উনার সন্তান, উনার পরে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছো।”
আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৩য় খণ্ডের ৪৩১ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(اَنْ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) اى خلق اصلكم وهو ادم من تراب – (ثُمَّ اِذَا أَنتُم بَشَرٌ تَنتَشِرُونَ) اى تبسطون فى الارض
অর্থ : “(তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ তোমাদের ‘আছল’ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়েছ মানুষ হিসেবে।”
আল্লামা ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে বাগবী”-এর ৩য় খণ্ডের ৪৩১ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(اَنْ خَلَقَكُم) اى اباكم (مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَا أَنتُم بَشَرٌ) اى ادم وذريته (تَنتَشِرُونَ)
অর্থ : “তিনি তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের পিতা (হযরত আদম আলাইহিস সালাম) উনাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। অতঃপর তোমরা অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার সন্তান যমীনে ছড়িয়ে পড়েছে।”
আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে কুরতুবী”-এর খণ্ডের ১৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,
قوله تعالى (وَمِنْ آيَاتِهِ اَنْ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) اى من علامته رب بيته و وحدا نيته ان من تراب. اى خلق اباكم منه
অর্থ : “(মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার রুবুবিয়্যাত ও অহদানিয়্যাত-এর নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের পিতা (হযরত আদম আলাইহিস সালাম) উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
আল্লামা ছানাউল্লাহ্ পানীপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ২২৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,
اَنْ خَلَقَكُم اى خلق اصلكم ادم مِنْ تُرَابٍ
অর্থ : “তিনি তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
সূরা রূম-এ বর্ণিত উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীর দ্বারাও সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, “মানুষ মাটির তৈরী” বলতে হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনিই উদ্দেশ্য, হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়।
(৫)
وَاللَّهُ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ جَعَلَكُمْ اَزْوَاجًا
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, তারপর করেছেন তোমাদেরকে যুগল।” (সূরা ফাতির : ১১)
আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ্ মুহম্মদ ইবনে আহ্মদ আনছারী কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩২ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَاللَّهُ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) قال سعيد عن قتادة قال- يعنى ادم عليه السلام والتقدير على هذا خلق اصلكم من تراب
অর্থ : “(মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) হযরত সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করে বলেন, অর্থাৎ (মহান আল্লাহ পাক তিনি) হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে (মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন)। আয়াত শরীফে اصل “আছল” শব্দ উহ্য রয়েছে।”
আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ৩য় খণ্ডের ৮২ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَاللَّهُ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) يعنى ادم عليه السلام وهو اصل الخلق (ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ) يعنى خلقكم من نطفة (ثُمَّ جَعَلَكُمْ اَزْوَاجًا) يعنى اصنافا ذكرا وانثى
অর্থ : “(মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনিই হলেন মানব সৃষ্টির মূল। অতঃপর তোমাদেরকে (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদেরকে) নুতফা থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তোমাদেরকে পুরুষ-মহিলায় বিভক্ত করেছেন।”
আল্লামা ছহিবে খাযিন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৩য় খণ্ডের ৪৯৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَاللَّهُ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) يعنى ادم عليه السلام (ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ) يعنى ذريته
অর্থ : (মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদেরকে নুতফা থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
আল্লামা বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি “তাফসীরে বাগবী”-এর ৩য় খণ্ডের ৪৯৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَاللَّهُ خَلَقَكُم) اى اباكم من تراب
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।
“তাফসীরে কাদেরী”-এর ২য় খণ্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(وَاللَّهُ خَلَقَكُم) اور اللہ نے پیدا کیا تم تم کویعنی تمھارے باپ ادم علیہ السلام کو (مِّن تُرَابٍ) مٹی سے-
অর্থ : “….. আর মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
সূরা ফাতির-এ উল্লিখিত উক্ত আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারাও বুঝা গেল যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনিই শুধুমাত্র মাটি থেকে সৃষ্টি আর উনার সন্তানগণ নুতফা থেকে কুদরতীভাবে সৃষ্টি হয়েছেন। তাই মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা “خَلَقَكُمْ” শব্দের ব্যাখ্যায় “اَبِاكُمْ” অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
(৬)
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلً
অর্থ : “ঐ মহান আল্লাহ পাক যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর নুতফা (বীর্য) থেকে, অতঃপর জমাট রক্ত থেকে, অতঃপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরূপে।” (সূরা মু’মিন : ৬৭)
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে রুহুল বয়ান”-এর ৮ম খণ্ডের ২০৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) المعنى خلق اصلكم حضرت ادم عليه السلام من تراب
অর্থ : “(ঐ মহান আল্লাহ পাক যিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) ….এ আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ হলো মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৪র্থ খণ্ডের ৭৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) يعنى اصلكم حضرت ادم عليه السلام
অর্থ : “(যিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ তোমাদের ‘আছল’ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
“তাফসীরে কাদেরী”-এর ২য় খণ্ডের ৩৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) وہ ھے جسے “خلقکم” پیدا کیا تمھارے دادا ادم کو من تراب “خاک سے”
অর্থ : “……… ঐ মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের দাদা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
সূরা মু’মিন-এর উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও উনার ব্যাখ্যা দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই শুধুমাত্র সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্য কাউকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়নি।
(৭)
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن طِينٍ ثُمَّ قَضَى أَجَلاً وَأَجَلٌ مُّسمًّى عِندَهُ ثُمَّ أَنتُمْ تَمْتَرُونَ
অর্থ : “সেই মহান আল্লাহ পাক যিনি তোমাদেরকে মাটির থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর নির্দিষ্টকাল নির্ধারণ করেছেন। আর এক নির্দিষ্টকাল মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট রয়েছে, তথাপি তোমরা সন্দেহ কর।” (সূরা আনয়াম : ২)
আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ২য় খণ্ডের ৩য় পৃষ্ঠায় লিখেন,
(هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن طِينٍ) يعنى انه تعالى خلق حضرت ادم من طين وانما خاطب ذريته بذالك لانه اصلهم وهم من نسله
অর্থ : “…….. (মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর এ কারণেই উনার সন্তানদেরকে মাটির সৃষ্টি বলা হয়েছে, কেননা হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনিই হচ্ছেন তাদের আছল, আর তারা উনার ‘আছল’ থেকে সৃষ্টি হয়েছে।”
আল্লামা ছানাউল্লাহ পানিপথি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে মাযহারী”তে লিখেন,
(هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن طِينٍ) يعنى ابتدأ خلقكم منه حيث خلق منه اصلكم حضرت ادم عليه السلام او المعنى خلق اباكم ادم بحذف المضاف
অর্থ : “(মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টির সূচনা করেছেন তোমাদের আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করার মাধ্যমে। অথবা উক্ত আয়াত শরীফের অর্থ হলো তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখানে ‘মোজাফ’ উহ্য রয়েছে।”
সূরা আনয়াম-এর উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যাও প্রমাণ করে যে, আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য কোন মানুষই মাটির সৃষ্টি নয়।
(৮)
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن سُلَالَةٍ مِّن طِينٍ
অর্থ : “নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।” (সূরা মু’মিনুন : ১২)
আল্লামা আবুল লাইছ সমরকন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ২য় খণ্ডের ৪০৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن سُلَالَةٍ مِّن طِين) حضرت يعنى حضرت ادم عليه السلام قال الكبى ومقاتل
অর্থ : “(নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে (মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি)। ক্বালবী ও মাকাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের অভিমত এটাই।”
আল্লামা ক্বাজী ছানাউল্লাহ্ পানীপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩৬৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَلَقَدْ خَلَقْنَا) الجنس (الْإِنسَانَ) او حضرت ادم عليه السلام (سُلَالَةٍ مِّن طِينٍ)
অর্থ : “নিঃসন্দেহে আমি মানুষের জিন্স অথবা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।”
আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ্ মুহম্মদ ইবনে আহমদ আনছারী আল কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১০৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ) الانسان هنا ادم عليه الصلاة والسلام قاله قتادة وغيره
অর্থ : “(নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি) এখানে “اِنْسَانَ” ‘মানুষ’ দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং অন্যান্য মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এরূপই বলেছেন।”
আল্লামা ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে বাগবী”-এর ৩য় খণ্ডের ৩০১ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ) اى ادم عليه السلام
অর্থ : “(নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছি (মাটির সারাংশ থেকে)।”
সূরা মু’মিনুন-এর উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও তার ব্যাখ্যা এটাই প্রমাণ করে যে, সকল মানুষের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনিই সরাসরি মাটির সৃষ্টি। উনার সন্তানগণ মাটির সৃষ্টি নয়। যার কারণে মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত “اِنْسَانَ” শব্দ দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝিয়েছেন।
(৯)
الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِن طِينٍ
অর্থ : “যিনি উনার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।” (সূরা সিজদাহ্ : ৭)
আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ৩য় খণ্ডের ২৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِن طِينٍ) يعنى خلق ادم عليه السلام من طين من اديم الارض
অর্থ : “(তিনি কাদামাটি থেকে মানুষ সৃষ্টির সূচনা) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনের কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
আল্লামা ছানাউল্লাহ্ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৭ম খণ্ডের ২৬৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,
وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ يعنى حضرت ادم عليه السلام مِن طِينٍ
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি কাদামাটি দ্বারা মানুষ অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা শুরু করেন।”
আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৩য় খণ্ডের ৪৪৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِن طِينٍ) يعنى ادم عليه السلام
অর্থ : “তিনি কাদামাটি থেকে মানুষ। অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টির সূচনা করেন।”
আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৭ম খণ্ডের ৯০ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِن طِينٍ) يعنى حضرت ادم عليه السلام
অর্থ : “(তিনি কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেন) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করা শুরু করেন।”
আল্লামা ইমাম আবুল ফাররা আল বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে বাগবী”-এর ৩য় খণ্ডের ৪৪৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ) حضرت ادم عليه السلام (مِن طِينٍ)
অর্থ : “তিনি কাদামাটি দ্বারা মানুষ অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টির সূচনা করেন।”
আল্লামা আলুসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ১১তম খণ্ডের ১২৩ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ) اى حضرت ادم عليه السلام (مِن طِينٍ)
অর্থ : “(তিনি মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেন) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিসি সালাম উনাকে সৃষ্টি করা শুরু করেন কাদামাটি থেকে।”
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে রুহুল বয়ান”-এর ৭ম খণ্ডের ১১১ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ) ………………… هو حضرت ادم ابو البشر عليه السلام
অর্থ : “(তিনি কাদামাটি থেকে মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেন) ………………. (উক্ত মানুষ হলেন) সকলেরই পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম।”
সূরা সিজদা-এর উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও ব্যাখ্যা দ্বারাও দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।
(১০)
اِنَّا خَلَقْنَاهُم مِّن طِينٍ لَّازِبٍ
অর্থ : “নিঃসন্দেহে আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এঁটেল মাটি থেকে।” (সূরা সাফফাত : ১১)
আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ৩য় খণ্ডের ১১২ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(اِنَّا خَلَقْنَاهُم مِّن طِينٍ لَّازِبٍ) يعنى خلقنا حضرت ادم عليه السلام
অর্থ : “(নিঃসন্দেহে আমিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এঁটেল মাটি থেকে) অর্থাৎ আমি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছি এঁটেল মাটি থেকে।”
আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৪র্থ খণ্ডের ১৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(اِنَّا خَلَقْنَاهُم مِّن طِينٍ لَّازِبٍ) يعنى حضرت ادم عليه السلام من طين جديد
অর্থ : “নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহ পাকই তাদেরকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছি এঁটেল মাটি থেকে।”
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে রুহুল বয়ান”-এর ৭ম খণ্ডের ৪৫১ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(اِنَّا خَلَقْنَاهُمْ) اى خلقنا اصلهم هو حضرت ادم عليه السلام (مِنْ طِينٍ لَّازِبٍ)
অর্থ : “নিঃসন্দেহে আমি তাদের ‘আছল’ অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে এঁটেল মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”
(১১)
إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِن طِينٍ
অর্থ : “যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেস্তাগণকে বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করবো।” (সূরা ছোয়াদ : ৭১)
আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ৩য় খণ্ডের ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِن طِينٍ) يعنى حضرت ادم عليه السلام
অর্থ : “(নিশ্চয়ই আমি সৃষ্টি করবো মাটি থেকে বাশার) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে।”
আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৪র্থ খণ্ডের ৪৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِن طِينٍ) يعنى حضرت ادم عليه السلام
অর্থ : “নিশ্চয়ই আমি মাটি থেকে “বাশার” অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করবো।”
“তাফসীরে ক্বাদেরী”-এর ২য় খণ্ডের ৩২৩ পৃষ্ঠায় লিখেন,
” إِنِّي خَالِقٌ” میں پیدا کرنے والاهو ” بَشَرًا” بشر كو “مِن طِينٍ” مٹی سے
অর্থ : “নিশ্চয়ই আমি মাটি থেকে “বাশার” সৃষ্টি করবো। এখানে “বাশার” দ্বারা উদ্দেশ্যে হলো- হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি।”
(১২)
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ
অর্থ : “আমি মানুষকে পচা কাঁদা থেকে তৈরী শুকনো ঠন ঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি।” (সূরা হিজর : ২৬)
আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ২য় খণ্ডের ২১৮ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ) اى حضرت ادم عليه السلام
অর্থ : “নিঃসন্দেহে আমি ইনসান অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে ঠনঠনে শুকনো মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”
আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৩য় খণ্ডের ৯৪ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ) يعنى ادم عليه السلام فى قول جميع المفسرين ……. “مِن صَلْصَالٍ” يعنى من الطين اليابس.
অর্থ : “নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে ঠনঠনে শুকনো মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এটা সকল মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ক্বওল।”
আল্লামা ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে বাগবী”-এর ৩য় খণ্ডের ৯৪ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ) اى حضرت ادم عليه السلام (مِن صَلْصَالٍ) طين يابس
অর্থ : “নিঃসন্দেহে আমি ইনসানকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে শুকনো মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”
আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৫ম খণ্ডের ২১ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ) يعنى حضرت ادم عليه السلام (مِن صَلْصَالٍ) اى طين يابس عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه وغيره
অর্থ : “(নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছি শুকনো মাটি থেকে। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ও অন্যান্য মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকে এরূপ ব্যাখ্যাই বর্ণিত হয়েছে।”
“তাফসীরে ক্বাদেরী”-এর ১ম খণ্ডের ৫০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وَلَقَدْ خَلَقْنَا- اور ہے شبه كيا همنے الانسان انسان كو يعنى حضرت ادم عليه السلام كو “مِن صَلْصَالٍ” خشك مٹى سے
অর্থ : “নিঃসন্দেহে আমি ইনসানকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছি শুকনো মাটি থেকে।”
(১৩)
خَلَقَ الْإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ
অর্থ : “তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুকনো মাটি দ্বারা।” (সূরা আর রহমান : ১৪)
আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ৩য় খণ্ডের ৩০৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(خَلَقَ الْإِنسَانَ) يعنى حضرت ادم عليه السلام (مِن صَلْصَالٍ) يعنى الطين اليابس
অর্থ : “(তিনি ইনসান) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন (ছালছাল) অর্থাৎ শুকনো মাটি থেকে।”
আল্লামা ছানাউল্লাহ্ পানীপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৯ম খণ্ডের ১৪৮ পৃষ্ঠায় লিখেন,
“خَلَقَ الْإِنسَانَ” يعنى حضرت ادم عليه السلام “مِن صَلْصَالٍ” اى طين يابس
অর্থ : “তিনি ইনসানকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে “ছালছাল” অর্থাৎ শুকনো মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
(১৪)
مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى
অর্থ : “মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। তাতেই তোমাদেরকে ফিরাবো এবং তা থেকে পুনরায় উঠাবো।” (সূরা ত্ব-হা : ৫৫)
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে রুহুল বয়ান”-এর ৫ম খণ্ডের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(مِنْهَا) اى من الارض (خَلَقْنَاكُمْ) بواسطة اصلكم حضرت ادم عليه السلام والافمن عدا حضرت ادم و حضرت حواء عليهما السلام مخلوق من النطفة
অর্থ : “(তা থেকে) অর্থাৎ যমীন থেকে (তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) তোমাদের মূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করার মাধ্যমে। আর হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহিস সালাম উনারা ব্যতীত সকলেই ‘নুতফা’ থেকে সৃষ্ট।”
আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৩য় খণ্ডের ২৪০ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ) اى من الارض خلقنا حضرت ادم عليه السلام
অর্থ : “(তোমাদেরকে তা থেকে) অর্থাৎ যমীন থেকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছি।”
আল্লামা আবুল ফাররা আল বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে বাগবী”-এর ৩য় খণ্ডের ২৪০ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(مِنْهَا) من الارض (خَلَقْنَاكُمْ) اى اباكم ادم عليه السلام
অর্থ : (তা থেকে) অর্থাৎ যমীন থেকে (তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছি।”
আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ২য় খণ্ডের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ) يعنى ادم خلقناه من الارض (فِيهَا نُعِيدُكُمْ) اى بعد موتكم (وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ) يعنى نعيكم ونخر جكم من الارض (تَارَةً أُخْرَى)
অর্থ : (তা থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ আমি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। (সেখানেই প্রত্যাবর্তন করবে) মৃত্যুর পর (সেখান থেকে) তোমাদের পুনরায় উঠানো হবে, অর্থাৎ জীবিত করা হবে।”
আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২১০ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ) يعنى حضرت ادم عليه السلام لانه خلق من الارض قاله ابو اسحاق الزجاج وغيره
অর্থ : “(তা থেকে তোমাদেরকে) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। কেননা হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি মাটি থেকে সৃষ্ট।”
আল্লামা আলুসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ৯ম খণ্ডের ২০৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(مِنْهَا) اى من الارض (خَلَقْنَاكُمْ) اى فى ضمن خلق ابيكم حضرت ادم عليه السلام منها
অর্থ : “(তা থেকে) অর্থাৎ মাটি থেকে (তোমাদেরকে) অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করার মাধ্যমে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি।”
সূরা ত্ব-হা-এর উক্ত আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম সরাসরি মাটির তৈরী। আর কোন মানুষই মাটির তৈরী নয়।
উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, যারা বলে থাকে, “কুরআন শরীফের বহুস্থানে বলা হয়েছে সকল মানুষ মাটির তৈরী। তাই সকল মানুষ মাটির তৈরী” তাদের একথা সম্পূর্ণই ভুল। কারণ বিশ্বখ্যাত ও অনুসরণীয় মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সর্বসম্মত অভিমত হলো- “কুরআন শরীফের যেসব আয়াত শরীফ-এ ‘মানুষ’ মাটির তৈরী বলা হয়েছে” সেসব আয়াত শরীফ-এ উল্লিখিত “মানুষ” দ্বারা উদ্দেশ্যে হলো “হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি।” কারণ শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। বিশ্ববিখ্যাত “তাফসীরগ্রন্থ” সমূহের বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য কেউ সরাসরি মাটি থেকে তৈরী নয়, বরং মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতে তৈরী। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক উনার কুদরতে প্রত্যেকেই তার মা-এর রেহেম শরীফে কুদরতীভাবে তৈরী।
আর সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ذَلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ. الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِن طِينٍ. ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِن سُلَالَةٍ مِّن مَّاء مَّهِينٍ.
অর্থ : “তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু যিনি উনার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর তিনি (মহান আল্লাহ পাক) উনার বংশধর সৃষ্টি করেন সম্মানিত পানির নির্যাস থেকে।” (সূরা সাজদা : ৬, ৭, ৮)
هُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاء بَشَرًا فَجَعَلَهُ نَسَبًا وَصِهْرًا وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا.
অর্থ : “তিনি পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। আপনার পালনকর্তা তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।” (সূরা ফুরক্বান : ৫৪)
أَلَمْ نَخْلُقكُّم مِّن مَّاء مَّهِينٍ.
অর্থ : “আমি কি তোমাদেরকে সম্মানিত পানি হতে সৃষ্টি করিনি।” (সূরা মুরসালাত : ২০)
فَلْيَنظُرِ الْإِنسَانُ مِمَّ خُلِقَ. خُلِقَ مِن مَّاء دَافِقٍ.
অর্থ : “অতএব, মানুষের দেখা উচিত, সে কি বস্তু হতে সৃষ্টি হয়েছে। সে সৃষ্টি হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে।” (সূরা ত্বারিক্ব : ৫, ৬)
هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاء.
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করে থাকেন মায়ের রেহেম শরীফে যেভাবে ইচ্ছা।” (সূরা আলে ইমরান : ৬)
অতএব প্রমাণিত হলো যে, সমস্ত মানুষ কুদরতীভাবে মা-এর রেহেম শরীফে সৃষ্টি হয়ে থাকেন। কেউই সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি হননা। যারা বলে, ‘সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি হয়’ তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর খিলাফ যা তাফসীর বির রায় হওয়ার কারণে সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
কোন মুসলমান কুফরী করলে সে কাফির ও মুরতাদ হয়ে যায়। শরীয়তে মুরতাদের হুকুম ও ফায়সালা হচ্ছে, “মুরতাদের স্ত্রী তালাক হয় যদি সে বিবাহিত হয়ে থাকে, হজ্জ বাতিল হয় যদি সে হজ্জ করে থাকে; এবং সে কাফির হয়। অর্থাৎ তার সমস্ত নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায়, তওবা না করা পর্যন্ত সে ঈমানদার হবেনা। বিবাহ না দোহরালে স্ত্রীর সাথে সংসার করা যাবেনা। যদি সংসার করে তবে যিনাকারীর গুনাহ্ হবে। সন্তান হলে তা হালাল হবেনা। যদি হজ্জের সামর্থ থাকে তবে পুনরায় তাকে হজ্জ করতে হবে, যদিও সে পূর্বে হজ্জ করে থাকে। তা না করলে কবীরা গুনাহ্ হবে। তার ওয়ারিশসত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য। যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
কেননা হাদীছ শরীফে রয়েছে, “তিন কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া জায়িয। যথা-
(ক) ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে।
(খ) ঐ যিনাকার বা যিনাকারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা।
(গ) যে অন্যায়ভাবে কাউকে কতল করে।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মুসনদে শাফিয়ী, মুসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরিকে হাকিম)
উল্লেখ্য, মুরতাদ মারা যাবার পর যারা এদের জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সমস্ত মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।