পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
প্রখ্যাত আলেমগণের দৃষ্টিতে শেয়ার করা হচ্ছে
১২. ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রথম মোহাদ্দিস হযরত শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি বলেন-
“যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রাত্রকে ঈদ হিসেবে পালন করে, তার উপর আল্লাহ তায়ালা রহমত নাযিল করেন। আর যার মনে হিংসা এবং [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুশমনির] রোগ রয়েছে, তার ঐ (নবী বিদ্বেষী) রোগ আরও শক্ত আকার ধারণ করে”।
[মা সাবাতা বিসসুন্নাহ (উর্দু) পৃষ্ঠা নং-৮৬]
এখন যারা মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করাকে শিরক, হারাম ও বিদয়াত ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে থাকেন তাদেরকে উপরোক্ত মুহাদ্দীসের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য নসিহত করা গেল। তাদের থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের ঈমানকে পরিশুদ্ধ করুন। তাদের ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রে অবদান না থাকলে, আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান আলেমগণ হাদীস কি শাস্ত্র তাও চিনতেন না।
১৩. আল্লামা ইমাম শিহাব উদ্দিন আহমদ কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি “মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া” নামক কিতাবে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুগ্ধপান শীর্ষক অধ্যায়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন-
“আবু লাহাবের আযাদকৃত দাসী সুয়াইবাহ তাকে (হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুধ পান করিয়েছেন। যাকে আবু লাহাব তখনই আযাদ করেছিলো তখন তিনি তাকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদত শরীফের শুভ সংবাদ শুনিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, একদা আবু লাহাবকে তার মৃত্যুর পর স্বপ্নে দেখা গিয়েছিলো। (হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এক বছর পর স্বপ্ন দেখেছিলেন) তখন তাকে বলা হলো “তোমার কি অবস্থা?” সে বলল, দোজখেই আছি। তবে প্রতি সোমবার রাতে আমার শাস্তি কিছুটা শিথিল করা হয়; আর আমি আমার এ আঙ্গুল দুটির মধ্যখানে চুষে পানি পানের সুযোগ পাই। আর তখন সে তার আঙ্গুলের মাথা দিয়ে ইশারা করলো। আর বলল, আমার শাস্তির শিথিলতা এ জন্য যে, সুয়াইবা যখন আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদতের সুসংবাদ দিয়েছিলো, তখন তাকে আমি আযাদ করে দিয়েছিলাম এবং সে হুযুরকে দুগ্ধপান করিয়েছে”।
তিনি আরো বলেন-
“এতদভিত্তিতে, আল্লামা মোহাদ্দিস ইবনে জাযরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন ঐ আবু লাহাব কাফির, যার তিরস্কারে কোরআনের সূরা নাযিল হয়েছে। মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ আনন্দ প্রকাশের কারণে জাহান্নামে পুরস্কৃত হয়েছে। এখন উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঐ একত্ববাদী মুসলমানের কি অবস্থা? যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদতে খুশি হয় এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভালবাসায় তার সাধ্যনুযায়ী খরচ করে। তিনি জবাবে বলেন- আমার জীবনের শপথ! নিশ্চয়ই পরম করুণাময় আল্লাহ তাকে আপন ব্যাপক করুণায় নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন”।
[শরহে জুরকানী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৫৮-২৬২]
১৪. আবু লাহাবের উক্ত ঘটনা সর্বশ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থ পবিত্র বোখারী শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটি নিম্নরুপ:
হযরত ওরওয়া ইবনে যোবাইয়ের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সুয়াইবাহ আবু লাহাবের দাসী ছিলেন। আবু লাহাব হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদতের সুসংবাদে দেওয়ার কারণে (আনন্দিত হয়ে) সুয়াইবাহকে আযাদ করে দিয়েছিলো। অতঃপর সুয়াইবাহ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দুধ পান করিয়েছিলেন। এরপর যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করল, তকন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্টদের কেউ [হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমার অবস্থা কেমন?” আবু লাহাব তদুত্তরে বললো, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি, কেবল আমি যে (আল্লাহর হাবীবের জন্ম সংবাদ বা মীলাদ শরীফের খুশিতে) সুয়াইবাহকে (তর্জনী ও মধ্যমা দুটি আঙ্গুলের ইশারায়) আযাদ করেছিলাম, ঐ কারণে (প্রতি সোমবার আঙ্গুল দু’টির মধ্যে কিছু পানি জমে থাকে) আমি ওই পানি চুষে থাকি ও প্রতি সোমবার আযাবকে হাল্কা বোধ করে থাকি”।
[বুখারী শরীফ : ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং-৭৬৪]
বোখারী শরীফে উক্ত পৃষ্ঠায়ই শেষের দিকে এ হাদীসের পাদটিকায় বর্ণিত আছে :
“সুয়াইবাহ আবু লাহাবকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের সুসংবাদ দেওয়ার কারণে আবু লাহাব তাকে আযাদ করে দিয়েছিলো। অতঃপর এ আযাদ করাটা (পরকালে) আবু লাহাবের উপকারে এসেছে। এ কাজ তার উপকারে আসার অর্থ হলো- তার এ কর্ম হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতে অবশিষ্ট ছিল। অন্যান্য কাজের ন্যায় বিনষ্ট হয়ে যায়নি”।
১৫. আল্লামা কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি স্বীয় মাওয়াহিব গ্রন্থে আরো বলেন-
“প্রতিটি যুগে মুসলমানগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদত শরীফের মাসে মাহফিলের আয়োজন করে আসছেন। উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করেন, এর রাতগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সাদক্বাহ- খায়রাত করেন, আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন, পুন্যময় কাজ বেশি পরিমাণে করেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদত শরীফের আলোচনার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসেন। ফলে আল্লাহর অসংখ্য বরকত ও ব্যাপক অনুগ্রহ প্রকাশ পায়। এর বিশেষত্বের এটাও পরীক্ষিত যে, নিঃসন্দেহে গোটা বছরই তারা নিরাপদে থাকে এবং তাদের উদ্দেশ্য দ্রুত সফল হয়ে থাকে”। (ইমাম কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি দো’আ করে বলেন) অতএব, “ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ দয়া করুন, যে মীলাদুন্নবী মোবারক মাসের রাতগুলোকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করে- এ লক্ষ্যে যেন মুনাফিকদের অন্তরে অসহনীয় জ্বালা সৃষ্টি হয়”।
[শরহে জুলকানী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৬১-২৬৩]
১৬. ইমাম শামসুদ্দিন দিমিস্কি (রঃ) বলেনঃ
قد صح أن أبا لهب يخفف عنه عذاب النار في مثل يوم الاثنين لإعتاقه ثويبة سرورا بميلاد النبي صلى الله عليه وسلم ثم أنشد:
إذا كان هذا كافرا جاء ذمه * وتبت يداه في الجحيم مخلدا
أتى أنه في يوم الاثنين دائما * يخفف عنه للسرور بأحمدا
فما الظن بالعبد الذي طول عمره * بأحمد مسرورا ومات موحدا
Translation: It is proven that Abu Lahab's punishment of fire is reduced on every Monday because he rejoiced on brith of Prophet (salallaho alaihi wasalam) and freed the slave-woman Thawba (RA) When Abu Lahab, whose eternal abode is hell fire and regarding whom whole surah of Tabat Yada (i.e. Surah Lahab) was revealed, he gets Takhfif in his Adhaab every Monday then Imagine the situation of a (momin) who has spent his life in rejoicing over birth of Prophet (saw) and died as a Mawhid.
[Mawrid as Sadi Fi Mawlid al Hadi by Imam al-Dimishqi and Imam Suyuti in Hassan al Maqsad fi Amal al Mawlid, Page No. 66]
স্ক্যান কপিঃ http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=49
১৭. বিরোধীবাদীরা বলে থাকে এটি মহানবী (সাঃ) এর ওফাত দিবস। তাই এটি পালন করা উচিত নয়। এর জবাবও ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ দিয়ে গেছেন খুব সুন্দরভাবে।
أن ولادته صلى الله عليه وسلم أعظم النعم علينا ووفاته أعظم المصائب لنا والشريعة حثت على إظهار شكر النعم والصبر والسلوان والكتم عند المصائب وقد أمر الشرع بالعقيقة عند الولادة وهي إظهار شكر وفرح بالمولود و لم يأمر عند الموت بذبح ولا غيره بل نهى عن النياحة وإظهار الجزع فدلت قواعد الشريعة على أنه يحسن في هذا الشهر إظهار الفرح بولادته صلى الله عليه وسلم دون إظهار الحزن فيه بوفاته
Translation: The birth of Prophet (salallaho alaihi wasalam) is a great blessing for us and his death is very saddening for us too, however Shariah has ordered us to rejoice and thank Allah on blessings, whereas on calamity it has taught us to have patience while hiding it, this is why Shariah has told us to do Aqiqa on birth which is a form of being happy and thankful to Allah for giving us birth, but on death there is no concept of sacrificing an animal and even lamenting is forbidden. Hence in light of rulings prescribed by shariah one should rejoice in Rabi ul Awwal on birth of our beloved Prophet (salallaho alaihi wasalam).
[Husn al-Maqsad fi Amal al-Mawlid Page No. 54-55]
স্ক্যান কপিঃ http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=60
১৮. হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি তার রচিত “আদ দুররুস সামীন ফী মুবাশশারাতিন নবীয়্যিল আমীন” কিতাবের ৯ম পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ
“আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান আমাকে অবহিত করে বলেন, আমি প্রতি বছরই নবীকুল সর্দার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ উপলক্ষ্যে বিরাট খাবার আয়োজন করে আসছিলাম। অতঃপর এক বছর খাবারের আয়োজন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং অল্প ভাজ্যকৃত চনা ব্যতীত আর কিছুই আমি জোগাড় করতে পারিনি। কাজেই সেগুলো উপস্থিত লোকদের মাঝে বন্টন করে দিলাম। অতঃপর আমি স্বপ্নে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাক্ষাত লাভ করে ধন্য হলাম। দেখলাম, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে ঐ চনাগুলো মওজুদ আছে। তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত আনন্দিত ও হাস্যোজ্জল”।
[তথ্যসূত্রঃ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন, পৃষ্ঠা নং-৮১, ফতুয়ায়ে রশীদিয়া, পৃষ্ঠা নং- ১৩৭, হাকিকতে মীলাদ, পৃষ্ঠা নং-২৮]
১৯. “ফয়ূযুল হারামাইন” কিতাবে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি আরো বলেনঃ
“আমি এর পূর্বে মক্কা মু’আযযামায় বেলাদত শরীফের বরকতময় ঘরে উপস্থিত ছিলাম। আর সেখানে লোকজন সমবেত হয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর একত্রে দরুদ শরীফ পাঠা করছিলেন। তার (হুযুরের) শুভাগমনের সময় সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী ও তার নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে সংঘটিত ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করলাম। আমি বলতে পারিনি যে, এ নূরগুলো চর্মচক্ষে দেখেছিলাম এবং এটাও বলতে পারি না যে, এগুলো কেবল মাত্র অন্তর চক্ষুতে দেখেছিলাম। এ দুটোর মধ্যে প্রকৃত ব্যাপার কি ছিল, তা আল্লাহ পাকই ভাল জানেন। অতঃপর আমি গভীরভাবে চিন্তা করলাম এবং উপলব্ধি করতে পারলাম যে, এই নূর বা জ্যোতি ঐ সব ফিরিশতার, যারা এ ধরণের মজলিস ও উল্লেখযোগ্য (ধর্মীয়) স্থানসমূহে (জ্যোতি বিকিরণের জন্য) নিয়োজিত থাকেন। আমার অভিমত হল সেখানে ফিরিশতাদের নূর ও রহমতের নূরের সংমিশ্রণ ঘটেছে”।
[ফয়ূযুল হারামাইন (আরবী-উর্দু), পৃষ্ঠা নং- ৮০-৮১]
প্রখ্যাত আলেমগণের দৃষ্টিতে শেয়ার করা হচ্ছে
১২. ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বপ্রথম মোহাদ্দিস হযরত শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি বলেন-
“যে ব্যক্তি মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রাত্রকে ঈদ হিসেবে পালন করে, তার উপর আল্লাহ তায়ালা রহমত নাযিল করেন। আর যার মনে হিংসা এবং [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুশমনির] রোগ রয়েছে, তার ঐ (নবী বিদ্বেষী) রোগ আরও শক্ত আকার ধারণ করে”।
[মা সাবাতা বিসসুন্নাহ (উর্দু) পৃষ্ঠা নং-৮৬]
এখন যারা মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করাকে শিরক, হারাম ও বিদয়াত ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে থাকেন তাদেরকে উপরোক্ত মুহাদ্দীসের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য নসিহত করা গেল। তাদের থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের ঈমানকে পরিশুদ্ধ করুন। তাদের ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রে অবদান না থাকলে, আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান আলেমগণ হাদীস কি শাস্ত্র তাও চিনতেন না।
১৩. আল্লামা ইমাম শিহাব উদ্দিন আহমদ কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি “মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া” নামক কিতাবে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুগ্ধপান শীর্ষক অধ্যায়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন-
“আবু লাহাবের আযাদকৃত দাসী সুয়াইবাহ তাকে (হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুধ পান করিয়েছেন। যাকে আবু লাহাব তখনই আযাদ করেছিলো তখন তিনি তাকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদত শরীফের শুভ সংবাদ শুনিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, একদা আবু লাহাবকে তার মৃত্যুর পর স্বপ্নে দেখা গিয়েছিলো। (হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এক বছর পর স্বপ্ন দেখেছিলেন) তখন তাকে বলা হলো “তোমার কি অবস্থা?” সে বলল, দোজখেই আছি। তবে প্রতি সোমবার রাতে আমার শাস্তি কিছুটা শিথিল করা হয়; আর আমি আমার এ আঙ্গুল দুটির মধ্যখানে চুষে পানি পানের সুযোগ পাই। আর তখন সে তার আঙ্গুলের মাথা দিয়ে ইশারা করলো। আর বলল, আমার শাস্তির শিথিলতা এ জন্য যে, সুয়াইবা যখন আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদতের সুসংবাদ দিয়েছিলো, তখন তাকে আমি আযাদ করে দিয়েছিলাম এবং সে হুযুরকে দুগ্ধপান করিয়েছে”।
তিনি আরো বলেন-
“এতদভিত্তিতে, আল্লামা মোহাদ্দিস ইবনে জাযরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন ঐ আবু লাহাব কাফির, যার তিরস্কারে কোরআনের সূরা নাযিল হয়েছে। মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এ আনন্দ প্রকাশের কারণে জাহান্নামে পুরস্কৃত হয়েছে। এখন উম্মতে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঐ একত্ববাদী মুসলমানের কি অবস্থা? যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদতে খুশি হয় এবং হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভালবাসায় তার সাধ্যনুযায়ী খরচ করে। তিনি জবাবে বলেন- আমার জীবনের শপথ! নিশ্চয়ই পরম করুণাময় আল্লাহ তাকে আপন ব্যাপক করুণায় নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন”।
[শরহে জুরকানী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৫৮-২৬২]
১৪. আবু লাহাবের উক্ত ঘটনা সর্বশ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থ পবিত্র বোখারী শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটি নিম্নরুপ:
হযরত ওরওয়া ইবনে যোবাইয়ের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সুয়াইবাহ আবু লাহাবের দাসী ছিলেন। আবু লাহাব হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদতের সুসংবাদে দেওয়ার কারণে (আনন্দিত হয়ে) সুয়াইবাহকে আযাদ করে দিয়েছিলো। অতঃপর সুয়াইবাহ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দুধ পান করিয়েছিলেন। এরপর যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করল, তকন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্টদের কেউ [হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমার অবস্থা কেমন?” আবু লাহাব তদুত্তরে বললো, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি, কেবল আমি যে (আল্লাহর হাবীবের জন্ম সংবাদ বা মীলাদ শরীফের খুশিতে) সুয়াইবাহকে (তর্জনী ও মধ্যমা দুটি আঙ্গুলের ইশারায়) আযাদ করেছিলাম, ঐ কারণে (প্রতি সোমবার আঙ্গুল দু’টির মধ্যে কিছু পানি জমে থাকে) আমি ওই পানি চুষে থাকি ও প্রতি সোমবার আযাবকে হাল্কা বোধ করে থাকি”।
[বুখারী শরীফ : ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং-৭৬৪]
বোখারী শরীফে উক্ত পৃষ্ঠায়ই শেষের দিকে এ হাদীসের পাদটিকায় বর্ণিত আছে :
“সুয়াইবাহ আবু লাহাবকে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের সুসংবাদ দেওয়ার কারণে আবু লাহাব তাকে আযাদ করে দিয়েছিলো। অতঃপর এ আযাদ করাটা (পরকালে) আবু লাহাবের উপকারে এসেছে। এ কাজ তার উপকারে আসার অর্থ হলো- তার এ কর্ম হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতে অবশিষ্ট ছিল। অন্যান্য কাজের ন্যায় বিনষ্ট হয়ে যায়নি”।
১৫. আল্লামা কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি স্বীয় মাওয়াহিব গ্রন্থে আরো বলেন-
“প্রতিটি যুগে মুসলমানগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদত শরীফের মাসে মাহফিলের আয়োজন করে আসছেন। উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করেন, এর রাতগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সাদক্বাহ- খায়রাত করেন, আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন, পুন্যময় কাজ বেশি পরিমাণে করেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেলাদত শরীফের আলোচনার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আসেন। ফলে আল্লাহর অসংখ্য বরকত ও ব্যাপক অনুগ্রহ প্রকাশ পায়। এর বিশেষত্বের এটাও পরীক্ষিত যে, নিঃসন্দেহে গোটা বছরই তারা নিরাপদে থাকে এবং তাদের উদ্দেশ্য দ্রুত সফল হয়ে থাকে”। (ইমাম কুস্তোলানী রহমাতুল্লাহে আলাইহি দো’আ করে বলেন) অতএব, “ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ দয়া করুন, যে মীলাদুন্নবী মোবারক মাসের রাতগুলোকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করে- এ লক্ষ্যে যেন মুনাফিকদের অন্তরে অসহনীয় জ্বালা সৃষ্টি হয়”।
[শরহে জুলকানী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ২৬১-২৬৩]
১৬. ইমাম শামসুদ্দিন দিমিস্কি (রঃ) বলেনঃ
قد صح أن أبا لهب يخفف عنه عذاب النار في مثل يوم الاثنين لإعتاقه ثويبة سرورا بميلاد النبي صلى الله عليه وسلم ثم أنشد:
إذا كان هذا كافرا جاء ذمه * وتبت يداه في الجحيم مخلدا
أتى أنه في يوم الاثنين دائما * يخفف عنه للسرور بأحمدا
فما الظن بالعبد الذي طول عمره * بأحمد مسرورا ومات موحدا
Translation: It is proven that Abu Lahab's punishment of fire is reduced on every Monday because he rejoiced on brith of Prophet (salallaho alaihi wasalam) and freed the slave-woman Thawba (RA) When Abu Lahab, whose eternal abode is hell fire and regarding whom whole surah of Tabat Yada (i.e. Surah Lahab) was revealed, he gets Takhfif in his Adhaab every Monday then Imagine the situation of a (momin) who has spent his life in rejoicing over birth of Prophet (saw) and died as a Mawhid.
[Mawrid as Sadi Fi Mawlid al Hadi by Imam al-Dimishqi and Imam Suyuti in Hassan al Maqsad fi Amal al Mawlid, Page No. 66]
স্ক্যান কপিঃ http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=49
১৭. বিরোধীবাদীরা বলে থাকে এটি মহানবী (সাঃ) এর ওফাত দিবস। তাই এটি পালন করা উচিত নয়। এর জবাবও ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ দিয়ে গেছেন খুব সুন্দরভাবে।
أن ولادته صلى الله عليه وسلم أعظم النعم علينا ووفاته أعظم المصائب لنا والشريعة حثت على إظهار شكر النعم والصبر والسلوان والكتم عند المصائب وقد أمر الشرع بالعقيقة عند الولادة وهي إظهار شكر وفرح بالمولود و لم يأمر عند الموت بذبح ولا غيره بل نهى عن النياحة وإظهار الجزع فدلت قواعد الشريعة على أنه يحسن في هذا الشهر إظهار الفرح بولادته صلى الله عليه وسلم دون إظهار الحزن فيه بوفاته
Translation: The birth of Prophet (salallaho alaihi wasalam) is a great blessing for us and his death is very saddening for us too, however Shariah has ordered us to rejoice and thank Allah on blessings, whereas on calamity it has taught us to have patience while hiding it, this is why Shariah has told us to do Aqiqa on birth which is a form of being happy and thankful to Allah for giving us birth, but on death there is no concept of sacrificing an animal and even lamenting is forbidden. Hence in light of rulings prescribed by shariah one should rejoice in Rabi ul Awwal on birth of our beloved Prophet (salallaho alaihi wasalam).
[Husn al-Maqsad fi Amal al-Mawlid Page No. 54-55]
স্ক্যান কপিঃ http://www.ahlus-sunna.com/index.php?option=com_content&view=article&id=46&Itemid=29&limitstart=60
১৮. হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি তার রচিত “আদ দুররুস সামীন ফী মুবাশশারাতিন নবীয়্যিল আমীন” কিতাবের ৯ম পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ
“আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান আমাকে অবহিত করে বলেন, আমি প্রতি বছরই নবীকুল সর্দার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ উপলক্ষ্যে বিরাট খাবার আয়োজন করে আসছিলাম। অতঃপর এক বছর খাবারের আয়োজন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং অল্প ভাজ্যকৃত চনা ব্যতীত আর কিছুই আমি জোগাড় করতে পারিনি। কাজেই সেগুলো উপস্থিত লোকদের মাঝে বন্টন করে দিলাম। অতঃপর আমি স্বপ্নে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাক্ষাত লাভ করে ধন্য হলাম। দেখলাম, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে ঐ চনাগুলো মওজুদ আছে। তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত আনন্দিত ও হাস্যোজ্জল”।
[তথ্যসূত্রঃ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন, পৃষ্ঠা নং-৮১, ফতুয়ায়ে রশীদিয়া, পৃষ্ঠা নং- ১৩৭, হাকিকতে মীলাদ, পৃষ্ঠা নং-২৮]
১৯. “ফয়ূযুল হারামাইন” কিতাবে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী রহমাতুল্লাহে আলাইহি আরো বলেনঃ
“আমি এর পূর্বে মক্কা মু’আযযামায় বেলাদত শরীফের বরকতময় ঘরে উপস্থিত ছিলাম। আর সেখানে লোকজন সমবেত হয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর একত্রে দরুদ শরীফ পাঠা করছিলেন। তার (হুযুরের) শুভাগমনের সময় সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলী ও তার নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে সংঘটিত ঘটনাবলী আলোচনা করছিলেন। তারপর আমি সেখানে এক মিশ্র নূরের ঝলক প্রত্যক্ষ করলাম। আমি বলতে পারিনি যে, এ নূরগুলো চর্মচক্ষে দেখেছিলাম এবং এটাও বলতে পারি না যে, এগুলো কেবল মাত্র অন্তর চক্ষুতে দেখেছিলাম। এ দুটোর মধ্যে প্রকৃত ব্যাপার কি ছিল, তা আল্লাহ পাকই ভাল জানেন। অতঃপর আমি গভীরভাবে চিন্তা করলাম এবং উপলব্ধি করতে পারলাম যে, এই নূর বা জ্যোতি ঐ সব ফিরিশতার, যারা এ ধরণের মজলিস ও উল্লেখযোগ্য (ধর্মীয়) স্থানসমূহে (জ্যোতি বিকিরণের জন্য) নিয়োজিত থাকেন। আমার অভিমত হল সেখানে ফিরিশতাদের নূর ও রহমতের নূরের সংমিশ্রণ ঘটেছে”।
[ফয়ূযুল হারামাইন (আরবী-উর্দু), পৃষ্ঠা নং- ৮০-৮১]