বা এতে কী বলা রয়েছে?
আমরা কিন্তু জানি না। তারচেয়ে বড় কথা আমরা জানি না লালন আসলে কে?
লালন ছিলেন বাউল সম্প্রদায়ের গুরু।
আমরা কি জানি কারা এই বাউল সম্প্রদায়? কি তাদের ধর্মবিশ্বাস ও জীবনাচরণ?
৯৭ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও
মূল্যবোধের সাথে লালন ফকির বা বাউল সম্প্রদায়ের আচার-আচরণ, বিশ্বাস ও
মূল্যবোধ আসলে কতটুকু সম্পর্কিত?
সর্বোপরি যারা বাউল সংস্কৃতিকে বাঙ্গালীর
সংস্কৃতি বলে ১২ কোটি মুসলিমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে তাদের এসব কর্মকান্ডের উদ্দেশ্যই বা কি?
বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে যারা পড়াশোনা করেছেন তাদের কাছে প্রয়াত লেখক আহমদ শরীফের “বাউল তত্ত্ব” এবং লালন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডক্টর
আনোয়ারুল করিমের “বাংলাদেশের বাউল-
সমাজ, সাহিত্য ও সংগীত” নামের বই দুটো খুবই পরিচিত। বাউল শব্দটির উৎস ও এই সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে ডক্টর আনোয়ারুল করিম তার বাংলাদেশের বাউল বইতে যা লিখেছেন তার সারাংশ হল, "প্রাচীন
প্যালেস্টাইন এর রাসসামরায় বা’আল নামের
একজন প্রজনন দেবতার উপাসনা করা হতো। তৌরাত, ইঞ্জিল(বাইবেল), কোরান মজিদসহ সকল ধর্মগ্রন্থেই এই দেবতাকে তীব্র
নিন্দা করা হয়েছে এবং তার উপাসনা থেকে সকলকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত বা’আল প্রজনন-দেবতা হওয়ায় মৈথুন বা যৌনাচার এই ধর্মের অঙ্গীভূত হয়ে পড়ে। এই বা’আল ধর্ম এক্সময় এ উপমদেশীয় অঞ্চলেও ব্যাপকভাবে প্রভাব
ফেলে। পরবর্তীতে এ অঞ্চলে ইসলামের
সুফীবাদী মতবাদের প্রচার-প্রসার ঘটার পর সম্ভবত ইসলাম ও পৌত্তলিকতা উভয়
মতবাদের সংমিশ্রণে একটি নতুন লোকধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল যার উপরিভাগে ছিল
মুসলিম সূফীবাদের প্রাধান্য, অভ্যন্তরে ছিল
তন্ত্র ও যোগনির্ভর দেহজ সাধনা। তাই তার
ধারণা মতে কালক্রমে এই বা’আল লোকধর্মই
পরবর্তীতে বাউল লোকধর্মে পরিণত
হয়েছে এবং লোকনিরুক্তি অনুসারে বাউল
শব্দটি বা’আল>বাওল>বাউল এভাবে পরিবর্তিত হয়ে এসেছে।"
(বাংলাদেশ বাউল পৃষ্ঠা ১৩৩-১৪৫)
ডা.আহমদ শরীফ তার “বাউলতত্ত্ব” বইটিতে বাউল ধর্মমত সম্পর্কে বলেন, “ব্রাহ্মণ্য, শৈব ও বৌদ্ধ সহজিয়া মতের সমবায়ে গড়ে উঠেছে একটি মিশ্রমত যার নাম নাথপন্থ। …
দেহতাত্ত্বিক সাধনাই এদের লক্ষ্য। (নাথপ্নথ
এবং সহজিয়া) এ দুটো সম্প্রদায়ের লোক
একসময় ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়, কিন্তু পুরনো বিশ্বাস-সংস্কার বর্জন করা সম্ভব হয়নি বলেই ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মের
আওতায় থেকেও এরা পুরনো প্রথায় ধর্ম
সাধনা করে চলে, তার ফলেই হিন্দু-মুসলমানের মিলিত বাউল মতের উদ্ভব।
তাই হিন্দু গুরুর মুসলিম সাগরেদ বা মুসলিম গুরুর হিন্দু সাগরেদ গ্রহণে কোন বাধা নেই। তারা ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও শরিয়তী ইসলামের বেড়া ভেঙে নিজের মনের মত করে পথ তৈরি করে নিয়েছে। এজন্য তারা বলে, “কালী কৃষ্ণ গড খোদা/কোন নামে নাহি বাধা মন কালী কৃষ্ণ গড খোদা বলো রে।”
(বাউলতত্ত্ব পৃঃ ৫৩-৫৪)।
সাধারণ জনারণ্যে বাউলরা নাড়ার ফকির নামে পরিচিত। ‘নাড়া’ শব্দটির অর্থ হল
শাখাহীন অর্থাৎ এদের কোন সন্তান হয়না।
তারা নিজেদের হিন্দু মুসলমান কোনকিছু বলেই পরিচয় দেয়না। লালন শাহ ছিলেন বাউলদের গুরু। লালনকে বাউলরা দেবতা জ্ঞানে পূজা করে। তাই তার ‘ওরসে’ তাদের
আগমন এবং ভক্তি অর্পণ বাউলদের ধর্মের অঙ্গ।"
(বাংলাদেশ বাউল পৃঃ ১৪)
লালন শাহের অনুসারীদের একটি অংশ ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একজন মুসলমান
অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “আমরা বাউল। আমাদের ধর্ম আলাদা।
আমরা না-মুসলমান, না-হিন্দু। আমাদের
নবী সাঁইজি লালন শাহ। তাঁর গান আমাদের ধর্মীয় শ্লোক। সাঁইজির মাজার আমাদের তীর্থভূমি।।…
আমাদের গুরুই আমাদের
রাসুল। …ডক্টর সাহেব [অর্থাৎ উক্ত মুসলিম অধ্যাপক] আমাদের তীর্থভূমিতে ঢুকে আমাদের ধর্মীয় কাজে বাধা দেন।
কোরান তেলাওয়াত করেন, ইসলামের কথা বলেন… এ সবই আমাদের তীর্থভূমিতে আপত্তিকর। আমরা আলাদা একটি জাতি,
আমাদের কালেমাও আলাদা – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু লালন রাসুলুল্লাহ।“
(দ্রঃ সুধীর চক্রবর্তী, ব্রাত্য লোকায়ত লালন, ২য় সংস্করণ, আগস্ট ১৯৯৮ পৃঃ ৪-৯৫)
বাউল সাধনায় গুরুশ্রেষ্ঠকে ‘সাঁই’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সাধনসঙ্গিনীকেও গুরু
নামে অভিহিত করা হয়। মূলতঃ সাধনসঙ্গিনীর সক্রিয় সাহায্য ব্যতীত সাধনায় সিদ্ধী লাভ করা যায় না। তাই তাকে ‘চেতন গুরু’ বলা হয়। বাউলরা বিশ্বাস করে গুরুর
কোন মৃত্যু নেই। তিনি কেবল দেহরক্ষা করতে পারেন। তিনি চিরঞ্জীবী। বাউলরা মন্দিরে কিংবা মসজিদে যায়না। জুম্মার নামায, ঈদ
এবং রোযাও পালন করেনা। তারা তাদের
সঙ্গিনীকে জায়নামাজ নামে অভিহিত করে।
বাউলরা মৃতদেহকে পোড়ায়না। এদের জানাজাও হয়না।
হিন্দু মুসলমান নামের সব বাউলদের মধ্যেই এই রীতি। এরা সামাজিক বিবাহ বন্ধনকেও অস্বীকার করে। নারী-পুরুষের একত্রে অবাধ
মেলামেশা এবং বসবাসকে দর্শন হিসেবে অনুসরণ করে।"
(বাংলাদেশ বাউল পৃঃ ১৫-১৭)
বাউল সাধনা মূলত একটি আধ্যাত্বসাধনা,
তবে যৌনাচার এই সাধনার অপরিহার্য অঙ্গ। ড. আহমদ শরীফের ভাষায় " কামাচার
বা মিথুনাত্বক যোগসাধনাই বাউল পদ্ধতি।
বাউল সাধনায় পরকীয়া প্রেম এবং গাঁজা সেবন প্রচলিত। বাউলরা বিশ্বাস করে যে,
কুমারী মেয়ের রজঃপান করলে শরীরে রোগ
প্রতিরোধক তৈরী হয়। তাই বাউলদের মধ্যে রজঃপান একটি সাধারণ ঘটনা। এছাড়া, তারা রোগমুক্তির জন্য স্বীয় মূত্র ও স্তনদুগ্ধ পান করে। সর্বরোগ থেকে মুক্তির জন্য তারা মল, মুত্র, রজঃ ও বীর্য মিশ্রণে প্রেমভাজা নামক একপ্রকার পদার্থ তৈরি করে তা ভক্ষণ করে। একজন বাউলের একাধিক সেবাদাসী থাকে। এদের অধিকাংশই কমবয়সী মেয়ে।"
(বাংলাদেশ বাউল পৃ ৩৫০, ৩৮২)
এদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকায়, অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলিমও ধর্মবিবর্জিত বিকৃত
যৌনাচারী মুসলিম নামধারী বাউলদেরকে সূফী- সাধকের মর্যাদায় বসিয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ) মূলতঃ বিকৃত যৌনাচারে অভ্যস্ত ভেকধারী এসব বাউলরা তাদের বিকৃত ও কুৎসিত জীবনাচারণকে লোকচক্ষুর
অন্তরালে রাখার জন্য বিভিন্ন গানে মোকাম,
মঞ্জিল, আল্লাহ, রাসূল, আনল হক, আদম-হাওয়া, মুহাম্মদ- খাদিজাসহ বিভিন্ন আরবী পরিভাষা, আরবী হরফ ও বাংলা শব্দ প্রতীকরূপে ইচ্ছাকৃতভাবেই ব্যবহার করেছে।
এদেশে বহুল প্রচলিত একটি লালন সঙ্গীত হলো, “বাড়ির পাশে আরশি নগর/সেথা এক পড়শী বসত করে, আমি একদিনও না দেখিলাম তারে” এই গানটিকে আমাদের
সমাজে খুবই উচ্চমার্গের আধ্যাতিক গান
মনে করা হলেও, এটি মূলত একটি নিছক যৌনাচারমূলক গান, যাতে আরশিনগর,
পড়শী শব্দগুলো প্রতীক হিসেবে ব্যবহার
করা হয়েছে তাদের বিকৃত জীবনাচারকে গোপন রাখার উদ্দেশ্যে।"
(বাংলাদেশ বাউল পৃঃ ৩৬৮-৩৬৯)
বাউল সাধকরা বস্তুতঃ নিরাকার আল্লাহকে সাকারত্ব প্রদান করে তাদের অনুসারীদের
পৌত্তলিকতার পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
এরা সাধারণ মানুষের সারল্য, অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কারণে তাদের বিভ্রান্ত করেছে এবং এইসব বিকৃত সাধনাসম্বলিত লোকধর্ম
আসলে আমাদের সমাজ জীবনকে ধ্বংশের
দিকে ঠেলে দিয়েছে। সমাজ জীবনে বাউল
লোকধর্মের এই ভয়ঙ্কর প্রভাব লক্ষ্য করে বাংলা ১৩৩৩ সালে হাজী মৌলোভী রেয়াজউদ্দীন আহমদ “বাউল ধ্বংশ ফতওয়া”
নামে বাউলবিরধী একটি বই লেখেন।
যেখানে তিনি এই বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ইসলাম, ইসলামী আকিদাহ যা এদেশের আপামর মুসলিমের অন্তর্নিহিত বিশ্বাসের সাথে বাউল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাসের দূরতম সম্পর্ক নেই এবং তা পুরোপুরি শাংঘর্ষিক। শুধু তাই নয়, বিশ্বাসে পৌত্তলিক,
আচার-আচরণে ভয়ঙ্কর কুসংস্কারাচ্ছন্ন, বিকৃত জীবানাচারণ ও অবাধ যৌনাচারে অভ্যস্ত বাউল সম্প্রদায় কোনভাবেই এদেশের মানুষের কৃষ্টি- কালচার বা আত্বপরিচিতির বন্ধনমূল হতে পারেনা।
আমরা কিন্তু জানি না। তারচেয়ে বড় কথা আমরা জানি না লালন আসলে কে?
লালন ছিলেন বাউল সম্প্রদায়ের গুরু।
আমরা কি জানি কারা এই বাউল সম্প্রদায়? কি তাদের ধর্মবিশ্বাস ও জীবনাচরণ?
৯৭ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও
মূল্যবোধের সাথে লালন ফকির বা বাউল সম্প্রদায়ের আচার-আচরণ, বিশ্বাস ও
মূল্যবোধ আসলে কতটুকু সম্পর্কিত?
সর্বোপরি যারা বাউল সংস্কৃতিকে বাঙ্গালীর
সংস্কৃতি বলে ১২ কোটি মুসলিমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে তাদের এসব কর্মকান্ডের উদ্দেশ্যই বা কি?
বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে যারা পড়াশোনা করেছেন তাদের কাছে প্রয়াত লেখক আহমদ শরীফের “বাউল তত্ত্ব” এবং লালন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডক্টর
আনোয়ারুল করিমের “বাংলাদেশের বাউল-
সমাজ, সাহিত্য ও সংগীত” নামের বই দুটো খুবই পরিচিত। বাউল শব্দটির উৎস ও এই সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে ডক্টর আনোয়ারুল করিম তার বাংলাদেশের বাউল বইতে যা লিখেছেন তার সারাংশ হল, "প্রাচীন
প্যালেস্টাইন এর রাসসামরায় বা’আল নামের
একজন প্রজনন দেবতার উপাসনা করা হতো। তৌরাত, ইঞ্জিল(বাইবেল), কোরান মজিদসহ সকল ধর্মগ্রন্থেই এই দেবতাকে তীব্র
নিন্দা করা হয়েছে এবং তার উপাসনা থেকে সকলকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত বা’আল প্রজনন-দেবতা হওয়ায় মৈথুন বা যৌনাচার এই ধর্মের অঙ্গীভূত হয়ে পড়ে। এই বা’আল ধর্ম এক্সময় এ উপমদেশীয় অঞ্চলেও ব্যাপকভাবে প্রভাব
ফেলে। পরবর্তীতে এ অঞ্চলে ইসলামের
সুফীবাদী মতবাদের প্রচার-প্রসার ঘটার পর সম্ভবত ইসলাম ও পৌত্তলিকতা উভয়
মতবাদের সংমিশ্রণে একটি নতুন লোকধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল যার উপরিভাগে ছিল
মুসলিম সূফীবাদের প্রাধান্য, অভ্যন্তরে ছিল
তন্ত্র ও যোগনির্ভর দেহজ সাধনা। তাই তার
ধারণা মতে কালক্রমে এই বা’আল লোকধর্মই
পরবর্তীতে বাউল লোকধর্মে পরিণত
হয়েছে এবং লোকনিরুক্তি অনুসারে বাউল
শব্দটি বা’আল>বাওল>বাউল এভাবে পরিবর্তিত হয়ে এসেছে।"
(বাংলাদেশ বাউল পৃষ্ঠা ১৩৩-১৪৫)
ডা.আহমদ শরীফ তার “বাউলতত্ত্ব” বইটিতে বাউল ধর্মমত সম্পর্কে বলেন, “ব্রাহ্মণ্য, শৈব ও বৌদ্ধ সহজিয়া মতের সমবায়ে গড়ে উঠেছে একটি মিশ্রমত যার নাম নাথপন্থ। …
দেহতাত্ত্বিক সাধনাই এদের লক্ষ্য। (নাথপ্নথ
এবং সহজিয়া) এ দুটো সম্প্রদায়ের লোক
একসময় ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়, কিন্তু পুরনো বিশ্বাস-সংস্কার বর্জন করা সম্ভব হয়নি বলেই ইসলাম ও বৈষ্ণব ধর্মের
আওতায় থেকেও এরা পুরনো প্রথায় ধর্ম
সাধনা করে চলে, তার ফলেই হিন্দু-মুসলমানের মিলিত বাউল মতের উদ্ভব।
তাই হিন্দু গুরুর মুসলিম সাগরেদ বা মুসলিম গুরুর হিন্দু সাগরেদ গ্রহণে কোন বাধা নেই। তারা ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও শরিয়তী ইসলামের বেড়া ভেঙে নিজের মনের মত করে পথ তৈরি করে নিয়েছে। এজন্য তারা বলে, “কালী কৃষ্ণ গড খোদা/কোন নামে নাহি বাধা মন কালী কৃষ্ণ গড খোদা বলো রে।”
(বাউলতত্ত্ব পৃঃ ৫৩-৫৪)।
সাধারণ জনারণ্যে বাউলরা নাড়ার ফকির নামে পরিচিত। ‘নাড়া’ শব্দটির অর্থ হল
শাখাহীন অর্থাৎ এদের কোন সন্তান হয়না।
তারা নিজেদের হিন্দু মুসলমান কোনকিছু বলেই পরিচয় দেয়না। লালন শাহ ছিলেন বাউলদের গুরু। লালনকে বাউলরা দেবতা জ্ঞানে পূজা করে। তাই তার ‘ওরসে’ তাদের
আগমন এবং ভক্তি অর্পণ বাউলদের ধর্মের অঙ্গ।"
(বাংলাদেশ বাউল পৃঃ ১৪)
লালন শাহের অনুসারীদের একটি অংশ ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একজন মুসলমান
অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “আমরা বাউল। আমাদের ধর্ম আলাদা।
আমরা না-মুসলমান, না-হিন্দু। আমাদের
নবী সাঁইজি লালন শাহ। তাঁর গান আমাদের ধর্মীয় শ্লোক। সাঁইজির মাজার আমাদের তীর্থভূমি।।…
আমাদের গুরুই আমাদের
রাসুল। …ডক্টর সাহেব [অর্থাৎ উক্ত মুসলিম অধ্যাপক] আমাদের তীর্থভূমিতে ঢুকে আমাদের ধর্মীয় কাজে বাধা দেন।
কোরান তেলাওয়াত করেন, ইসলামের কথা বলেন… এ সবই আমাদের তীর্থভূমিতে আপত্তিকর। আমরা আলাদা একটি জাতি,
আমাদের কালেমাও আলাদা – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু লালন রাসুলুল্লাহ।“
(দ্রঃ সুধীর চক্রবর্তী, ব্রাত্য লোকায়ত লালন, ২য় সংস্করণ, আগস্ট ১৯৯৮ পৃঃ ৪-৯৫)
বাউল সাধনায় গুরুশ্রেষ্ঠকে ‘সাঁই’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সাধনসঙ্গিনীকেও গুরু
নামে অভিহিত করা হয়। মূলতঃ সাধনসঙ্গিনীর সক্রিয় সাহায্য ব্যতীত সাধনায় সিদ্ধী লাভ করা যায় না। তাই তাকে ‘চেতন গুরু’ বলা হয়। বাউলরা বিশ্বাস করে গুরুর
কোন মৃত্যু নেই। তিনি কেবল দেহরক্ষা করতে পারেন। তিনি চিরঞ্জীবী। বাউলরা মন্দিরে কিংবা মসজিদে যায়না। জুম্মার নামায, ঈদ
এবং রোযাও পালন করেনা। তারা তাদের
সঙ্গিনীকে জায়নামাজ নামে অভিহিত করে।
বাউলরা মৃতদেহকে পোড়ায়না। এদের জানাজাও হয়না।
হিন্দু মুসলমান নামের সব বাউলদের মধ্যেই এই রীতি। এরা সামাজিক বিবাহ বন্ধনকেও অস্বীকার করে। নারী-পুরুষের একত্রে অবাধ
মেলামেশা এবং বসবাসকে দর্শন হিসেবে অনুসরণ করে।"
(বাংলাদেশ বাউল পৃঃ ১৫-১৭)
বাউল সাধনা মূলত একটি আধ্যাত্বসাধনা,
তবে যৌনাচার এই সাধনার অপরিহার্য অঙ্গ। ড. আহমদ শরীফের ভাষায় " কামাচার
বা মিথুনাত্বক যোগসাধনাই বাউল পদ্ধতি।
বাউল সাধনায় পরকীয়া প্রেম এবং গাঁজা সেবন প্রচলিত। বাউলরা বিশ্বাস করে যে,
কুমারী মেয়ের রজঃপান করলে শরীরে রোগ
প্রতিরোধক তৈরী হয়। তাই বাউলদের মধ্যে রজঃপান একটি সাধারণ ঘটনা। এছাড়া, তারা রোগমুক্তির জন্য স্বীয় মূত্র ও স্তনদুগ্ধ পান করে। সর্বরোগ থেকে মুক্তির জন্য তারা মল, মুত্র, রজঃ ও বীর্য মিশ্রণে প্রেমভাজা নামক একপ্রকার পদার্থ তৈরি করে তা ভক্ষণ করে। একজন বাউলের একাধিক সেবাদাসী থাকে। এদের অধিকাংশই কমবয়সী মেয়ে।"
(বাংলাদেশ বাউল পৃ ৩৫০, ৩৮২)
এদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকায়, অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলিমও ধর্মবিবর্জিত বিকৃত
যৌনাচারী মুসলিম নামধারী বাউলদেরকে সূফী- সাধকের মর্যাদায় বসিয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ) মূলতঃ বিকৃত যৌনাচারে অভ্যস্ত ভেকধারী এসব বাউলরা তাদের বিকৃত ও কুৎসিত জীবনাচারণকে লোকচক্ষুর
অন্তরালে রাখার জন্য বিভিন্ন গানে মোকাম,
মঞ্জিল, আল্লাহ, রাসূল, আনল হক, আদম-হাওয়া, মুহাম্মদ- খাদিজাসহ বিভিন্ন আরবী পরিভাষা, আরবী হরফ ও বাংলা শব্দ প্রতীকরূপে ইচ্ছাকৃতভাবেই ব্যবহার করেছে।
এদেশে বহুল প্রচলিত একটি লালন সঙ্গীত হলো, “বাড়ির পাশে আরশি নগর/সেথা এক পড়শী বসত করে, আমি একদিনও না দেখিলাম তারে” এই গানটিকে আমাদের
সমাজে খুবই উচ্চমার্গের আধ্যাতিক গান
মনে করা হলেও, এটি মূলত একটি নিছক যৌনাচারমূলক গান, যাতে আরশিনগর,
পড়শী শব্দগুলো প্রতীক হিসেবে ব্যবহার
করা হয়েছে তাদের বিকৃত জীবনাচারকে গোপন রাখার উদ্দেশ্যে।"
(বাংলাদেশ বাউল পৃঃ ৩৬৮-৩৬৯)
বাউল সাধকরা বস্তুতঃ নিরাকার আল্লাহকে সাকারত্ব প্রদান করে তাদের অনুসারীদের
পৌত্তলিকতার পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
এরা সাধারণ মানুষের সারল্য, অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কারণে তাদের বিভ্রান্ত করেছে এবং এইসব বিকৃত সাধনাসম্বলিত লোকধর্ম
আসলে আমাদের সমাজ জীবনকে ধ্বংশের
দিকে ঠেলে দিয়েছে। সমাজ জীবনে বাউল
লোকধর্মের এই ভয়ঙ্কর প্রভাব লক্ষ্য করে বাংলা ১৩৩৩ সালে হাজী মৌলোভী রেয়াজউদ্দীন আহমদ “বাউল ধ্বংশ ফতওয়া”
নামে বাউলবিরধী একটি বই লেখেন।
যেখানে তিনি এই বাউল সম্প্রদায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ইসলাম, ইসলামী আকিদাহ যা এদেশের আপামর মুসলিমের অন্তর্নিহিত বিশ্বাসের সাথে বাউল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাসের দূরতম সম্পর্ক নেই এবং তা পুরোপুরি শাংঘর্ষিক। শুধু তাই নয়, বিশ্বাসে পৌত্তলিক,
আচার-আচরণে ভয়ঙ্কর কুসংস্কারাচ্ছন্ন, বিকৃত জীবানাচারণ ও অবাধ যৌনাচারে অভ্যস্ত বাউল সম্প্রদায় কোনভাবেই এদেশের মানুষের কৃষ্টি- কালচার বা আত্বপরিচিতির বন্ধনমূল হতে পারেনা।