NOTICE:- ------------------ ----------------- ---------------------------

হজরত মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ:)


(উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে পথিকৃৎ)


❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋❋

ইমরান বিন বদরী

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম
আম্মা বা’দ।
 
যুগে যুগে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা নিয়ে যেসব মনীষী পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন,যাঁরা অন্যায় ও অসত্যের কাছে কোনোদিন মাথা নত করেননি, ইসলাম ও মানুষের কল্যাণে সারা জীবন যারা পরিশ্রম করে গেছেন, তাঁদের অন্যতম হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

আমাদের মহানবী বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী ইমামুল মুরসালীন, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওছাল্লাম বলেছিলেন, ’আমি তোমাদের জন্য রেখে যাচ্ছি ২টি জিনিস, যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবেনা, আর তা হলো আল্লাহর কোরআন এবং আমার সুন্নাহ।’ ১৪০০ বছর আগের সেই বাণী আজ আমাদের কাছে পৌঁছার পিছনে অনেকেরই অবদান রয়েছে, যাঁদের অন্যতম আল্লাহ পাকের প্রিয় বান্দাগণ, যাঁদেরকে আমরা ওলিআল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু বলে থাকি। 
এখন প্রশ্ন: ওলি কারা ?

উত্তর দেয়ার আগে এটা বলা দরকার যে আজকাল আমাদের সমাজে অনেকের মূর্খতাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের কারণে ওলির সংজ্ঞা-ই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এরা কি আসলে ওলি? পাঠক, আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যদি আপনার জানা থাকে ওলির সংজ্ঞা। আসলে ওলিবৃন্দ তাঁদের ইহকালীন জীবনে বিপথগামী মানুষকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম-এর সুন্নতের রজ্জু আঁকড়ে ধরে সঠিক পথে থাকার দিশারী হিসেবেই কাজ করেন। বন্ধুরা, সত্যের অন্বেষণ করাটাই যেন হয় আমাদের কাজ।

**ওলি (وليّ) শব্দের অর্থ, আল্লাহর প্রিয়পাত্র/অভিভাবক বা বন্ধু। আরবী ভাষায় “আউলিয়া” শব্দটি “ওলি'র বহুবচন। তাঁরাই আল্লাহর প্রিয়পাত্র হন যারা সত্যিকারভাবে আল্লাহকে ভয় করে জীবন পরিচালনা করেন, সৎ আমল করেন, তাঁর আদেশগুলো বাস্তবায়ন করেন এবং নিষেধকৃত বিষয়গুলো থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখেন এবং কোরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখেন।


❋আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ওলি সম্পর্কে ইরশাদ করেন,


أَلا إِنَّ أَوْلِيَاء اللّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ


মনে রেখো যারা আল্লাহর (ওলি) বন্ধু, তাদের না কোনো ভয়-ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে।


الَّذِينَ آمَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ


যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং ভয় করছে।


لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ لاَ تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ


তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা। (সুরা ইউনুছ আয়াত :৬২-৬৪)


❋পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলেন,


إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ


তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ, যাঁরা নামায কায়েম করেন, যাকাত দেন এবং বিনম্র।


وَمَن يَتَوَلَّ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ فَإِنَّ حِزْبَ اللّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ


আর যারা আল্লাহ তাঁর রসূল এবং বিশ্বাসীদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী। ( সূরা মায়িদা,আয়াত ৫৫-৫৬)


❋আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে আরো বলেন,


وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ


আর আল্লাহ পরহেযগারদের বন্ধু। (সূরা জাসিয়া:১৯)


❋আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে আরো বলেছেন -


وَاللّهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِينَ


আর আল্লাহ হচ্ছেন মুমিনদের বন্ধু। (সূরা আলে ইমরান ৬৮)


❋আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে আরো বলেছেন -


اللّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُواْ يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوُرِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ أَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ


যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। (সূরা বাকারা ২৫৭)


❋আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লাম বলেন, যে বান্দার চেহরা দেখলে আল্লাহর কথা মনে পড়ে খোদার ভয় আসে সেই ওলি।


❋হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লাম আরো বলেন,


ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ، ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗَﺎﻝَ ﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَﻯ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻴًّﺎ ﻓَﻘَﺪْ
ﺁﺫَﻧْﺘُﻪُ ﺑِﺎﻟْﺤَﺮْﺏِ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﻘَﺮَّﺏَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻋَﺒْﺪِﻱ ﺑِﺸَﻲْﺀٍ ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻤَّﺎ
ﺍﻓْﺘَﺮَﺿْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺰَﺍﻝُ ﻋَﺒْﺪِﻱ ﻳَﺘَﻘَﺮَّﺏُ ﺇِﻟَﻲَّ ﺑِﺎﻟﻨَّﻮَﺍﻓِﻞِ ﺣَﺘَّﻰ
ﺃُﺣِﺒَّﻪُ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺃَﺣْﺒَﺒْﺘُﻪُ ﻛُﻨْﺖُ ﺳَﻤْﻌَﻪُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺴْﻤَﻊُ ﺑِﻪِ ﻭَﺑَﺼَﺮَﻩُ ﺍﻟَّﺬِﻱ
ﻳُﺒْﺼِﺮُ ﺑِﻪِ ﻭَﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻳَﺒْﻄِﺶُ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﺭِﺟْﻠَﻪُ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻳَﻤْﺸِﻲ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﺇِﻥْ
ﺳَﺄَﻟَﻨِﻲ ﻟَﺄُﻋْﻄِﻴَﻨَّﻪُﻭَﻟَﺌِﻦْ ﺍﺳْﺘَﻌَﺎﺫَﻧِﻲ ﻟَﺄُﻋِﻴﺬَﻧَّﻪُ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﺮَﺩَّﺩْﺕُ ﻋَﻦْ
ﺷَﻲْﺀٍ ﺃَﻧَﺎ ﻓَﺎﻋِﻠُﻪُ ﺗَﺮَﺩُّﺩِﻱ ﻋَﻦْ ﻧَﻔْﺲِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﻳَﻜْﺮَﻩُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕَ ﻭَﺃَﻧَﺎ
ﺃَﻛْﺮَﻩُ ﻣَﺴَﺎﺀَﺗَﻪُ

 .
হজরত আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার ওলির (বন্ধু) সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে। আমার বান্দা নফল কাজের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে।  অবশেষে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালোবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে, আমি তাকে তা দেই। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি যা করার ইচ্ছা করি, সে ব্যাপারে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগি না, কেবল মুমিনের আত্মার ব্যাপার ছাড়া। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে, আর আমি তার মন্দকে অপছন্দ করি। (সহিহ বুখারী৬৫০২)

❋ শেখ সাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, 'মনুষ্যত্ব গোশত, চর্বি ও চর্ম (দেহ) নয়; মনুষ্যত্ব বন্ধু (আল্লাহর) তুষ্টি ছাড়া অন্য কিছু নয়।

✍ সম্মানিত বন্ধুরা,


এ থেকে আমরা বুঝতে পারি মুমিনরাই আল্লাহর ওলি। যারা ঈমান আনবে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে
এবং আল্লাহর অনুগত থেকে নিষিদ্ধ সকল প্রকার হারাম কাজ বর্জন করে তাকওয়া অবলম্বন করবে, আর কোরআন ও সুন্নাহ মত চলবে, তারাই ওলি। আসলে যারা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্রতী থাকেন, তাঁরাই (মোমিন মুত্তাকীরাই) ওলি আল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু।


❋এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,


يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ


হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরের পরিচিত হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত, যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। (সূরা হুজুরাত১৩)

✽ পরিচিতি ✽


হজরত মইনুদ্দিন চিশতী (উর্দু معین الدین چشتی) হলেন চিশতীয়া ধারার ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক। তিনি গরিবে নওয়াজ (غریب نواز) নামেও পরিচিত। তিনি ভারতে চিশতী ধারার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক সিলসিলাকে ব্যাপকভাবে পরিচিত করেন। পরবর্তীতে তার অনুসারীরা, যেমন, বখতিয়ার কাকী, নিজামুদ্দিন আউলিয়াসহ আরো অনেকে ভারতের ইতিহাসে সুফি ধারাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।
আত্ম্যাতিক সিদ্ধপুরুষ মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) ১১৪১ সালে ৫৩৬ বা ৫৩৭ হিজরি সালে ইরানের খুরাশান (অধুনিক আফগানিস্তানে) সিস্তান প্রদেশের চিশ্ত শহরের উপকণ্ঠে সানজর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খাজা গিয়াসুদ্দিন হাসান, মাতার নাম উম্মুল ওয়ারা। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। পিতার তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করেন। শৈশবে কুরআন হিফজ-ও করেন। জ্ঞানার্জনের জন্য প্রথমে সমরকন্দ ও পরে বোখারা গমন করেন। বোখারায় তিনি মাওলানা শরফুদ্দিন ও মাওলানা হাসান উদ্দিনের মতো জগদ্বিখ্যাত আলেমদের কাছে এলমে শরিয়তের জ্ঞান অর্জন করেন। পিতার উত্তরাধিকার হিসাবে একটি ছোট আঙ্গুরের বাগান থেকে জীবিকা অর্জন করা শুরু করেন। এ বাগানে একদিন কাজ করার সময়ে সুফি ইব্রাহিম কান্দুজি নামের একজন আল্লাহওয়ালা বুজুর্গের সংস্পর্শে এসে তার জীবনের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। তিনি একজন মানবসেবক ও আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন। কোরআন ও হাদিসের গভীর জ্ঞান অর্জন করার পর তিনি আত্মশুদ্ধির জ্ঞান অর্জনের জন্য হক্কানি পীর-মাশায়েখদের সন্ধানে সিরিয়া, হামাদান, কিরমান, তাবরিজ, বোখারা, সমরখন্দ, আস্তারাবাদ, হিরাত, বালখ প্রভৃতি স্থান সফর করেন। অবশেষে বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। সেখানে চিস্তিয়া তরীকার অপর প্রসিদ্ধ ছুফি সাধক হজরত ওসমান হারুনি চিশতি (রহ.)-এর কাছে বায়াত হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে মনোনিবেশ করেন এবং একজন পরিপূর্ণ মোমিন হিসেবে নিজেকে বিকশিত করেন। মানুষকে সত্য ও সুন্দরের এবং ইসলামের শান্তি বাণীর সন্ধান দেওয়াই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত। ৫৮৩ হিজরীতে তিনি পবিত্র হজ্ব ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ যান। তিনি আরব থেকে ইরাক, ইরান ও আফগানিস্তান হয়ে ভারতের আজমিরে বসতি স্থাপন করেন।

✽ ধর্ম প্রচার ✽


হজরত মঈনুদ্দিন চিশতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন পাক-ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে কিংবদন্তিতুল্য একজন ঐতিহাসিক ছুফি ব্যক্তিত্ব। তিনি নিজ পীর উসমান হারুনীর নির্দেশে ভারতে আগমন করে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং তাঁরই মাধ্যমে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ভারতবর্ষে আগমনে ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটে। একথা সত্য যে,তাঁর আগমনের বহু আগেই ইসলাম ও মুসলমানদের ভারতবর্ষে আগমন ঘটে এবং অনেক সুফী সাধক ইসলাম প্রচারে নিজেদের নিয়োজিত করেন। কিন্তু হজরত মঈনুদ্দিন চিশতি রহমাতুল্লাহি আলাইহির আগমনে ইসলাম প্রচারে এক বিপ্লব ঘটে এবং তা একটি সামাজিক বিপ্লবেও রূপান্তরিত হয়। সামাজিক নানা কুসংস্কার ও বদ কার্যকলাপ বিদূরিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় প্রচুর মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকা। তাঁর প্রচেষ্টায় লাখ লাখ পথহারা সত্যবিমুখ মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে তাঁর এ সাফল্যের মূলে ছিল সুদৃঢ় ঈমান, কঠোর সাধনা ও নেক আমল। এছাড়া পবিত্র কোরআন ও হাদিসের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক, তেজোদীপ্ত প্রভাব বিস্তারকারী আধ্যাত্মিক শক্তি, আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, নিঃস্বার্থ মানবসেবা, ইসলামি শিক্ষার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ও তরিকার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রভৃতি। পৃথ্বিরাজের শাসনামলেই আজমিরের বাইরেও বদায়ুন, বেনারস, কনৌজ, নাগুর ও বিহারে তিনি খানকা তৈরি করেছিলেন।


এই মহান সাধকের সময়ে আফগানিস্তানের অন্তর্গত ঘোর প্রদেশের শাসনকর্তা শাহাবুদ্দীন মুহাম্মদ ঘোরী ভারত আক্রমণ করেন। দিল্লীর সন্নিকটে উভয়ের মধ্যে চরম যুদ্ধ হয় এবং সেই যুদ্ধে দেড়শ ভারতীয় রাজন্যবর্গ পৃথ্বীরাজের পক্ষ অবলম্বন করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু তাঁদের সকল প্রতিরোধ চূর্ণ করে ঘোরী বিজয়ী হন এবং পৃথ্বীরাজকে জীবিত অবস্থায় বন্দী করা হয়। এভাবে এই মহান সাধকের দোআয় এই অত্যাচারী শাসকের হাত থেকে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ রেহাই পান।

✽ বেসাল শরীফ ✽


আল্লাহর এ আধ্যাত্মিক অলি ১২৩৬/১২৩৭ সালে ৬৩২/৬৩৩ হিজরীর ৫ রজব দিবাগত রাত, অর্থাৎ, ৬ রজব সূর্যোদয়ের সময় রাতের কোনো এক সময় পরিপূর্ণভাবে সত্যের আলো প্রজ্জ্বলিত করে দিয়ে সবার অজান্তেই বেসাল (পরলোকে খোদার সাথে মিলন)-প্রাপ্ত হন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তাঁর বড় ছেলে খাজা ফখরুদ্দীন চিশতী (রহঃ) তাঁর নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। ভারতের আজমির-সংলগ্ন তারাগড় পাহাড়ের পাদদেশে (আজমির শরীফে) তাঁর সমাধিস্থল অবস্থিত।



বস্তুতঃ গরিব নওয়াজ-ই উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলাম প্রচারক। নিখিল ভারতে ইসলামের ভিত্তিকে সুদৃঢ়ভাবে তিনি-ই স্থাপন করেছেন, আর তাঁরই দোয়ায় ভারতবর্ষে মুসলিম রাজত্বের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল।
No comments: