হযরত উমর (রা:)
ইবনে সা’আদ ও ইবনে আবি শায়বা হযরত আবু আল-আশহাব (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি (মদীনার সন্নিকটে) মুযায়না অঞ্চলের এক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (দ:) হযরত উমর (রা:)-কে কোনো নির্দিষ্ট জামা পরতে দেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন: “এটা কি নতুন, না ইতোমধ্যেই ধোয়া হয়েছে?” হযরত উমর (রা:) উত্তর দেন: “এটা ইতোমধ্যেই ধোয়া হয়েছে।” এমতাবস্থায় মহানবী (দ:) বলেন, “ওহে উমর! নতুন কাপড়-চোপড় পরো, অনিন্দনীয় জীবন যাপন করো, আর শাহাদাত বরণ করো!” এটি মুরসাল হাদীস। [নোট-১: ইবনে আবি শায়বা (৮:৪৫৩, ১০:৪০২) ও ইবনে সা’আদ (৩:৩২৯) কর্তৃক দুর্বল মুরসাল সনদে বর্ণিত, কেননা হযরত আবু আল-আশহাব জা’ফর ইবনে হায়্যান আল-উতারিদী (রা:) ওই সাহাবীর সাক্ষাত পান নি; তবে আল-দুলাবী (১:১০৯) আল-বুসিরী (রহ:)-এর ‘মিসবাহ আল-যুজাজা’ (৪:৮২) বইয়ের ভাষ্যমতে আল-যুহরীর সূত্রে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের মুত্তাসিল সনদে এটি বর্ণনা করেছেন; এঁদের সবগুলোই আল-বুখারী ও মুসলিম ব্যবহার করেছেন যা আল-হায়তামী (৯:৭৩-৭৪)-এর ভাষ্য দ্বারা সমর্থিত; এই হাদীস বর্ণনা করেছেন হযরত ইবনে উমর (রা:) থেকে ইমাম আহমদ তাঁর ’মুসনাদ’ (আরনাওত সংস্করণের ৯:৪৪০-৪৪২ #৫৬২০) এবং ফযায়েলে সাহাবা (১:২৫৫ #৩২২-৩২৩) গ্রন্থগুলোতে, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান (আরনাওত সংস্করণের ১৫:৩২০-৩২২ #৬৮৯৭), আল-বাযযার (যাওয়াইদ #২৫০৪), আবু এয়ালা তাঁর ’মুসনাদ’ পুস্তকে (#৫৫৪৫), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ (১২:২৮৩ #১৩১২৭) এবং আদ্ দু’আ (পৃষ্ঠা ১৪৩ #৩৯৯) কেতাব দুটোতে, ইবনে আল-সুন্নী ও আল-নাসাঈ নিজেদের ‘আমল আল-এয়াওম ওয়াল-লাইলা’ বইগুলোতে (যথাক্রমে #২৬৯ এবং ১:২৭৫ #৩১১), আবু নুয়াইম তাঁর ‘আখবার আসবাহান’ (১:১৩৯), আল-আযদী নিজ জামে’ পুস্তকে (১১:২২৩), আবদ্ ইবনে হুমায়দ স্বরচিত ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ২৩৮ #৭২৩), ইবনে আবদ্ আল-বারর নিজ ‘আল-এস্তিয়াব’ কেতাবে (৩:১১৫৭), আল-বাগাবী তাঁর ‘শরহে সুন্নাহ’ পুস্তকে (১২:৫০ #৩১১২), এবং আল-বায়হাকী নিজ ‘শুয়াব’ গ্রন্থে; এঁদের সবাই বর্ণনা করেছেন হযরত আবদুর রাযযাকের (#২০৩৮২) মাধ্যমে যাঁর সম্পর্কে কোনো কোনো ইমাম বলেছেন যে আল-যুহরীর মাধ্যমে এই হাদীস বর্ণনায় তাঁর ভ্রান্তি ছিল, যা ইবনে রাজাব নিজ ‘শরহে এলাল আল-তিরমিযী’ পুস্তকে (২:৫৮৫) ব্যাখ্যা করেছেন। এর ফলশ্রুতিতে আল-বুখারী এটাকে আত্ তিরমিযীর ‘এলাল’ (পৃষ্ঠা ৩৭৩) পুস্তকে ‘লা শাইয়’ তথা অনির্ভরযোগ্য বলেন; ইবনে আদি নিজ ’আল-কামিল’ কেতাবে (৫:১৯৪৮) ‘মুনকার’ বলেন; আল-নাসাঈ স্বরচিত ‘আমল আল-এয়াওম ওয়াল-লায়লা’ যেখানে এয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল-কাত্তান (রহ:)-এর উদ্ধৃতি রয়েছে। দেখুন আল-বায়হাকী প্রণীত ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ (৬:৮৫ #১০১৪৩) এবং ইবনে আবি হাতিম (যিনি ‘বাতিল’ বলেছেন) কৃত ’আল-এলাল’ (১:৪৯০)। আত্ তাবারানী (রহ:) আল-যুহরীর পরিবর্তে আল-সাওরীর সূত্রে আরেকটি সনদে এই হাদীস বর্ণনা করেন নিজ ‘আল-দোয়া’ পুস্তকে (#৪০০)। দেখুন -- আল-হায়তামী, মাওয়ারিদ আল-যামান (১:৫৩৬ #২৩৮১) এবং হযরত জাবের (রা:)-এর সূত্রে একটি দুর্বল সনদে আল-বাযযার এটি বর্ণনা করেন নিজ ‘মুসনাদ’ বইয়ে (যাওয়াইদ #২৫০৩)। সংক্ষেপে, ইবনে হিব্বান এটাকে মৌলিক তথা নির্ভরযোগ্য বিবেচনা করেন; আর ইবনে হাজর তাঁর ‘নাতাইজ আল-আফকার’ (১:১৩৭-১৩৮) গ্রন্থে সিদ্ধান্ত নেন যে এটা কমপক্ষে ‘হাসান’ (বিশুদ্ধ), যেমনিভাবে ইবনে হিব্বানের ’আল-আরনাওত’ সংস্করণও তাই মনে করে।]
ইমাম বুখারী ও মুসলিম রওয়ায়াত করেন যে হযরত উমর ইবনে আল-খাত্তাব (রা:) একদিন জিজ্ঞেস করেন: “তোমাদের মধ্যে কে কে স্মরণ করতে পারো রাসূলে পাক (দ:) সেই ফিতনা সম্পর্কে কী বলেছিলেন যা সাগরের ঢেউয়ের মতো উত্তাল হবে?” হযরত হুযায়ফা (রা:) বলেন, “এয়া আমিরাল মোমেনীন, আপনার এ সম্পর্কে চিন্তা করা লাগবে না। কেননা, আপনার এবং ওই ফিতনার মাঝে একটি দরজা আছে যা বন্ধ।” আতঃপর হযরত উমর (রা:) বলেন, “ওই দরজা কি খোলা হবে, না ভেঙ্গে ফেলা হবে?” হযরত হুযায়ফা (রা:) উত্তর দেন: “ভাঙ্গা হবে।” এমতাবস্থায় হযরত উমর (রা:) জবাব দেন: “দরজা খুলে দেয়ার চেয়ে ওটাই বেশি যথাযথ।” পরবর্তীকালে হযরত হুযায়ফা (রা:)-কে জিজ্ঞেস করা হয় ওই দরজা বা ফটক কে, আর তিনি উত্তর দেন, “ওই ফটক-ই হযরত উমর (রা:)।” তাঁকে মানুষেরা আবারো জিজ্ঞেস করে, “তিনি কি এটা জানতেন?” উত্তরে হযরত হুযায়ফা (রা:) বলেন, “হাঁ, অবশ্যঅবশ্যই দিনের আগে যেমন রাত অতিক্রান্ত হয়, (তেমনি) আমিও তাঁর সাথে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কখা বলছিলাম।” [নোট-২: হযরত আবু ওয়াইল শাকীক ইবনে সালামা থেকে ইমাম বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেন এটি।]
আত্ তাবারানী হযরত ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (দ:) একটি প্রাচীর ঘেরা বাগানে অবস্থান করছিলেন, যখন হযরত আবু বকর (রা:) তাতে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করেন। হুযূর পাক (দ:) এরশাদ করেন, “তাকে প্রবেশের অনুমতি দাও এবং বেহেশতপ্রাপ্তির সুসংবাদও প্রদান করো।” এরপর হযরত উমর ফারুক (রা:) ওই বাগানে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, “তাকে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে বেহেশত ও শাহাদাতের সুসংবাদ প্রদান করো।” অতঃপর হযরত উসমান (রা:) অনুরূপ অনুমতি চাওয়ার পর তিনি আবার এরশাদ ফরমান, “তাকেও প্রবেশের অনুমতি দিয়ে বেহেশত ও শাহাদাতের সুসংবাদ প্রদান করো।” [নোট-১১: হযরত ইবনে উমর (রা:) থেকে দুর্বল সনদে আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (১২:৩২৭); আল-হায়তামী (৯:৭৩)।]
আল-বাযযার, আত্ তাবারানী ও আবু নুয়াইম হযরত উসমান ইবনে মাযউন (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে হযরত উমর (রা:) প্রসঙ্গে বলতে শুনেছি, ‘এটা গালক্কু আল-ফিতনা (বিবাদ-বিসম্বাদের বজ্র)। এই ব্যক্তি (অর্থাৎ, হযরত উমর) যতোক্ষণ তোমাদের মাঝে জীবিত থাকবেন, ততোক্ষণ তোমাদের এবং ফিতনার মাঝখানে একটি দরজা শক্তভাবে বন্ধ থাকবে’।” [নোট-৩: এই হাদীস বর্ণনা করেছেন আত্ তাবারানী তাঁর ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (৯:৩৮ #৮৩২১), আল-বাযযার, আল-ওয়াসিতী নিজ ‘তারিখে ওয়াসিত’ বইয়ে (পৃষ্ঠা ২৪৪-৪৫), এবং দুর্বল সনদে ইবনে কানী’ তাঁর ‘মু’জাম আল-সাহাবা’ কেতাবে (২:২৫৮ #৭৭৪); দেখুন - আল-হায়তামী (৯:৭২); তবে এই রওয়ায়াতের বিশুদ্ধতা সমর্থিত হয়েছে আত্ তাবারানীর ‘আল-আওসাত’ পুস্তকে বিধৃত বর্ণনায়, যেখানে ইবনে হাজর (রহ:)-এর ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে (১৯৫৯ সংস্করণের ৬:৬০৬) উদ্ধৃত তাঁরই মতানুযায়ী নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের সূত্রে হযরত আবু যর গিফারী (রা:) হযরত উমর (রা:)-কে ‘ক্কুফল আল-ফিতনা’ তথা ’বিবাদের জন্যে তালা’ বলেছেন; আল-হায়তামী (৯:৭৩) অবশ্য এর ব্যতিক্রমস্বরূপ সন্দেহ করেন যে হযরত হাসান বসরী (রা:) ও হযরত আবু যর (রা:)-এর মধ্যে কোনো বর্ণনাকারীর ছেদ পড়েছে। একই বর্ণনা হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে আদ্ দায়লামী নিজ ’আল-ফেরদৌস’ কেতাবে (১:৪৩৮ #১৭৮৫) উদ্ধৃত করেছেন।]
আত্ তাবারানী হযরত আবু যর (রা:) হতে আরও বর্ণনা করেন যে নবী পাক (দ:) বলেন: “তোমাদেরকে কোনো ফিতনা-ই ছুঁতে পারবে না যতোক্ষণ এই ব্যক্তি (উমর ফারুক) তোমাদের মাঝে আছেন।” [নোট-৪: ক্কুফল বর্ণনার একই সনদে আত্ তাবারানী এটি বর্ণনা করেছেন তাঁর ‘আল-আওসাত’ পুস্তকে (২:২৬৭-২৬৮ #১৯৪৫)।]
একদিন হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা:) শাম (সিরিয়া) দেশে মানুষের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছিলেন; এমতাবস্থায় এক লোক তাঁকে বলে, “ফিতনা আবির্ভূত হয়েছে!” হযরত খালেদ (রা:) উত্তর দেন, “যতোদিন ইবনে আল-খাত্তাব জীবিত আছেন, ততোদিন নয়। তা শুধু তাঁর সময়ের পরেই হবে।” [নোট-৫: ইমাম আহমদ, আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ কেতাবে (৪:১১৬ #৩৮৪১), নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ তাঁর ‘আল-ফিতান’ গ্রন্থে (১:৪৫, ১:২৮১ #৮১৯) বর্ণনা করেছেন; এঁদের সবাই সনদের মধ্যে কায়স ইবনে খালেদ আল-বাজালী নামের এক অপরিচিত তাবেঈর সূত্রে এটি বর্ণনা করেন। তবে এই নিষ্কলুষ তাবেঈ গ্রহণযোগ্য বিধায় ইবনে হাজর তাঁর ’ফাতহুল বারী’ বইয়ে (১৯৫৯ সংস্করণের ১৩:১৫) এই এসনাদকে ‘হাসান’ (নির্ভরযোগ্য) হিসেবে চিহ্নিত করেন। দেখুন আল-হায়তামী (৭:৩০৭-৩০৮) এবং আল-মোবারকপুরী প্রণীত ‘তোহফাত আল-আহওয়াযী’ (৬:৩৬৮)।] হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা:) নিজ মতামত এভাবে ব্যক্ত করার কথা না; অতএব, দৃশ্যতঃ তিনি মহানবী (দ:) থেকে এটা শুনেছিলেন, নতুবা এমন কারো কাছ থেকে শুনেছিলেন যিনি স্বয়ং মহানবী (দ:) থেকে শুনেছিলেন।
হযরত উসমান (রা:)
আত্
তাবারানী
হযরত
যায়দ
ইবনে
সাবেত
(রা:)
থেকে
বর্ণনা
করেন,
যিনি
বলেন
যে
মহানবী
(দ:)-কে তিনি বলতে শুনেছেন:
“উসমান
আমার
পাশ
দিয়ে
যাচ্ছিল
যখন
একজন
ফেরেশতা
আমার
সাথে
ছিল। ওই ফেরেশতা
বল্লো,
‘ইনি
একজন
শহীদ;
তাঁর
লোকেরা
তাঁকে
হত্যা
করবে। সত্যি,
তিনি
(মহত্ত্বে)
আমাদেরকে
(অর্থাৎ,
ফেরেশতাকুলকে)
লজ্জায়
ফেলে
দিয়েছেন’।” [নোট-৬:
হযরত
যায়দ
(রা:)
থেকে
আত্
তাবারানী
তাঁর
‘আল-কবীর’
পুস্তকে
(৫:১৫৯)
বর্ণনা
করেছেন;
তবে
যে
সনদ
তিনি
পেশ
করেছেন,
আল-হায়তামী
(৯:৮২)-এর
ভাষ্যানুযায়ী
তাতে
রাবী
(বর্ণনাকারী)
মোহাম্মদ
ইবনে
ইসমাঈল
আল-ওয়াসাউইসী
একজন
জাল
হাদীস
পরিবেশক।]
আল-বায়হাকী হযরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে একটি বর্ণনা, যেটিকে আল-হাকিম বিশুদ্ধ বলেছেন, তা রওয়ায়াত করেন, যা’তে হযরত উসমান (রা:) যখন তাঁর ঘরে অবরুদ্ধ ছিলেন তখন হযরত আবু হোরায়রা (রা:) বলেন: “আমি মহানবী (দ:)-কে বলতে শুনেছি: ‘একটি ফিতনা-ফাসাদ (ভবিষ্যতে) হবে।’ আমরা বল্লাম, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আমরা তখন কী করবো বলে আপনি হুকুম দেন?’ তিনি হযরত উসমান (রা:)-এর দিকে ইঙ্গিত করে উত্তর দিলেন, ‘(তোমাদের) খলীফা ও তার বন্ধুদের সাথে থাকবে’।” [নোট-৭: হযরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে এটি বর্ণনা করেছেন আল-হাকিম (৩:৯৯=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৫; ৪:৪৩৪=৪:৪৮০) এবং আয্ যাহাবী একে বিশুদ্ধ বলেছেন; এটি আরও বর্ণনা করেন ইবনে আবি শায়বা (১০:৩৬৩ #৩২০৪৯), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আওসাত’গ্রন্থে (৯:১৭৫ #৯৪৫৭), ইবনে আবি আসিম তাঁর ‘আস্ সুন্নাহ’ বইয়ে (২:৫৮৭ #১২৭৮) এবং বায়হাকী স্বরচিত ‘আল-এ’তেকাদ’ কেতাবে (পৃষ্ঠা ৩৬৮)।]
ইবনে মাজাহ, আল-হাকিম বিশুদ্ধ হিসেবে, আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম হযরত আয়েশাহ (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (দ:) হযরত উসমান (রা:)-কে ডেকে একান্তে আলাপ করেন, যার দরুণ তাঁর চেহারায় পরিবর্তন আসে। (পরবর্তীকালে) ঘরে অবরুদ্ধ হবার দিন আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করি, ‘আপনি কি এর বিরুদ্ধে লড়বেন না?’ খলীফা বল্লেন, ‘না! রাসূলে পাক (দ:) আমার কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছেন (যেন আমার শাহাদাতের সময় আমি না লড়ি); আমি ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি) ওয়াফা (পূরণ) করবো’।” [নোট-৮: হযরত উসমান (রা:)-এর মুক্ত করে দেয়া গোলাম হযরত আবু সাহলা (রা:) থেকে বর্ণনা করেন আত্ তিরমিযী (হাসান সহীহ গরিব), ইমাম আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’ ও ’ফযাইলে সাহাবা’ পুস্তকে (১:৪৯৪), ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৬), ইবনে সা’আদ (৩:৬৬), আবু এয়ালা নিজ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (৮:২৩৪), এবং সহীহ সনদে আল-বাযযার (২:৬০)।]
ইবনে আদি ও ইবনে আসাকির হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: “মহানবী (দ:) বলেন, ’ওহে উসমান! আমার (বেসালের) পরে তোমার কাছে খেলাফতের ভার ন্যস্ত করা হবে, কিন্তু মোনাফেকরা চাইবে যেন তুমি তা ত্যাগ করো। তুমি ত্যাগ করো না, বরং রোযা রেখো যাতে তুমি আমার সাথে (ওই রোযা) ভাঙ্গতে পারো’।” [নোট-৯: হযরত আনাস (রা:) থেকে ইবনে আসাকির নিজ ‘তারিখে দামেশক’ (৩৯:২৯০), ইবনে আদি তাঁর ‘আল-কামিল’ (৩:২৭); এবং আয্ যাহাবী স্বরচিত ’মিযান’ গ্রন্থে (২:৪২৪) যা’তে দুর্বল সনদ আবু আল-রাহহাল খালেদ ইবনে মোহাম্মদ আল-আনসারী, যিনি এর একমাত্র বর্ণনাকারীও।]
আল-হাকিম বিশুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করে হযরত মুররাহ ইবনে কাআব (রা:) থেকে বর্ণনা করেন এবং ইবনে মাজাহ-ও তাঁর থেকে রওয়ায়াত করেন, তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে একটি পরীক্ষার কথা বলতে শুনেছি যখন এক ব্যক্তি তাঁর জুব্বা পরে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এরশাদ করেন, ‘এই ব্যক্তি ওই সময় সঠিক পথ অনুসরণ করবে।’ আমি ওই ব্যক্তিকে দেখতে গেলাম এবং দেখলাম তিনি হযরত উসমান (রা:)।” [নোট-১০: হযরত কা‘আব ইবনে মুররা আল-বাহযী (রা:) থেকে আত্ তাবারানী (হাসান সহীহ), দুর্বল সনদে ইবনে মাজাহ, বেশ কিছু বিশুদ্ধ সনদে ইমাম আহমদ তাঁর ’মুসনাদ’ ও ‘ফযায়েলে সাহাবা’ কেতাবে (১:৪৫০), আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৯, ৪:৪৭৯ সহীহ), তিনটি সনদে ইবনে আবি শায়বা (৬:৩৬০ #৩২০২৫-৩২০২৬, ৭:৪৪২ #৩৭০৯০), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (১৯:১৬১-১৬২ #৩৫৯, #৩৬২, ২০:৩১৫ #৭৫০), এবং নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ স্বরচিত ‘আল-ফিতান’ পুস্তকে (১:১৭৪ #৪৬১)।]
আল-হাকিম হযরত আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন যে মহানবী (দ:) তাঁদেরকে বলেছিলেন হযরত উসমান (রা:)-এর রক্তের ফোঁটা কুরআন মজীদের “হে মাহবুব! অদূর ভবিষ্যতে আল্লাহই তাদের দিক থেকে আপনার জন্যে যথেষ্ট হবেন” (২:১৩৭) আয়াতটির ওপর পড়বে; আর তাই ঘটেছিল। [নোট-১১: হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে আল-হাকিম বর্ণিত (৩:১০৩=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১১০), আল-যুবায়র ইবনে আবদিল্লাহর দাদী হতে আত্ তাবারী নিজ ‘তারিখ’ কেতাবে (২:৬৭১), ‘উমরা বিনতে আবদ্ আল-রহমান হতে ইবনে আবি হাতিম তাঁর ‘আল-জারহ ওয়াল তা’দিল’পুস্তকে (৪:১৭৯ #৭৮০), এবং ওয়াসসাব হতে ইবনে সাআদ (৩:৭২)।]
মুহাদ্দীস আল-সিলাফী হযরত হুযায়ফা (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
“ফিতনার আরম্ভ হযরত উসমান (রা:)-কে শহীদ করার মাধ্যমে এবং শেষ হবে
মসীহ-বিরোধী (অর্থাৎ, দাজ্জাল)-এর আবির্ভাব দ্বারা। [নোট-১২: হযরত হুযায়ফা
(রা:) থেকে দু’টি বর্ণনানুক্রমে ইবনে আবি শায়বা (৭:২৬৪ #৩৫৯১৯-৩৫৯২০)।] সেই
মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! হযরত উসমান (রা:)-এর হত্যাকারীদের
প্রতি কেউই এক সরষে দানা পরিমাণ মহব্বত অন্তরে লালন করে মৃত্যুবরণ করবে
না; তবে হ্যাঁ, সে দাজ্জালের দেখা যদি তার জীবনে পায়, তাহলে সে তাকে অনুসরণ
করবে, নতুবা সে তার কবরে দাজ্জালকে বিশ্বাস করবে।” এটা স্পষ্ট যে হযরত
হুযায়ফা (রা:) মহানবী (দ:)-এর কাছ থেকে এ কথা শুনেছিলেন, কেননা এ ধরনের কথা
মতামতের ভিত্তিতে বলা যায় না।আল-বায়হাকী হযরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে একটি বর্ণনা, যেটিকে আল-হাকিম বিশুদ্ধ বলেছেন, তা রওয়ায়াত করেন, যা’তে হযরত উসমান (রা:) যখন তাঁর ঘরে অবরুদ্ধ ছিলেন তখন হযরত আবু হোরায়রা (রা:) বলেন: “আমি মহানবী (দ:)-কে বলতে শুনেছি: ‘একটি ফিতনা-ফাসাদ (ভবিষ্যতে) হবে।’ আমরা বল্লাম, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আমরা তখন কী করবো বলে আপনি হুকুম দেন?’ তিনি হযরত উসমান (রা:)-এর দিকে ইঙ্গিত করে উত্তর দিলেন, ‘(তোমাদের) খলীফা ও তার বন্ধুদের সাথে থাকবে’।” [নোট-৭: হযরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে এটি বর্ণনা করেছেন আল-হাকিম (৩:৯৯=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৫; ৪:৪৩৪=৪:৪৮০) এবং আয্ যাহাবী একে বিশুদ্ধ বলেছেন; এটি আরও বর্ণনা করেন ইবনে আবি শায়বা (১০:৩৬৩ #৩২০৪৯), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আওসাত’গ্রন্থে (৯:১৭৫ #৯৪৫৭), ইবনে আবি আসিম তাঁর ‘আস্ সুন্নাহ’ বইয়ে (২:৫৮৭ #১২৭৮) এবং বায়হাকী স্বরচিত ‘আল-এ’তেকাদ’ কেতাবে (পৃষ্ঠা ৩৬৮)।]
ইবনে মাজাহ, আল-হাকিম বিশুদ্ধ হিসেবে, আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম হযরত আয়েশাহ (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (দ:) হযরত উসমান (রা:)-কে ডেকে একান্তে আলাপ করেন, যার দরুণ তাঁর চেহারায় পরিবর্তন আসে। (পরবর্তীকালে) ঘরে অবরুদ্ধ হবার দিন আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করি, ‘আপনি কি এর বিরুদ্ধে লড়বেন না?’ খলীফা বল্লেন, ‘না! রাসূলে পাক (দ:) আমার কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছেন (যেন আমার শাহাদাতের সময় আমি না লড়ি); আমি ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি) ওয়াফা (পূরণ) করবো’।” [নোট-৮: হযরত উসমান (রা:)-এর মুক্ত করে দেয়া গোলাম হযরত আবু সাহলা (রা:) থেকে বর্ণনা করেন আত্ তিরমিযী (হাসান সহীহ গরিব), ইমাম আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’ ও ’ফযাইলে সাহাবা’ পুস্তকে (১:৪৯৪), ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৬), ইবনে সা’আদ (৩:৬৬), আবু এয়ালা নিজ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (৮:২৩৪), এবং সহীহ সনদে আল-বাযযার (২:৬০)।]
ইবনে আদি ও ইবনে আসাকির হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: “মহানবী (দ:) বলেন, ’ওহে উসমান! আমার (বেসালের) পরে তোমার কাছে খেলাফতের ভার ন্যস্ত করা হবে, কিন্তু মোনাফেকরা চাইবে যেন তুমি তা ত্যাগ করো। তুমি ত্যাগ করো না, বরং রোযা রেখো যাতে তুমি আমার সাথে (ওই রোযা) ভাঙ্গতে পারো’।” [নোট-৯: হযরত আনাস (রা:) থেকে ইবনে আসাকির নিজ ‘তারিখে দামেশক’ (৩৯:২৯০), ইবনে আদি তাঁর ‘আল-কামিল’ (৩:২৭); এবং আয্ যাহাবী স্বরচিত ’মিযান’ গ্রন্থে (২:৪২৪) যা’তে দুর্বল সনদ আবু আল-রাহহাল খালেদ ইবনে মোহাম্মদ আল-আনসারী, যিনি এর একমাত্র বর্ণনাকারীও।]
আল-হাকিম বিশুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করে হযরত মুররাহ ইবনে কাআব (রা:) থেকে বর্ণনা করেন এবং ইবনে মাজাহ-ও তাঁর থেকে রওয়ায়াত করেন, তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে একটি পরীক্ষার কথা বলতে শুনেছি যখন এক ব্যক্তি তাঁর জুব্বা পরে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এরশাদ করেন, ‘এই ব্যক্তি ওই সময় সঠিক পথ অনুসরণ করবে।’ আমি ওই ব্যক্তিকে দেখতে গেলাম এবং দেখলাম তিনি হযরত উসমান (রা:)।” [নোট-১০: হযরত কা‘আব ইবনে মুররা আল-বাহযী (রা:) থেকে আত্ তাবারানী (হাসান সহীহ), দুর্বল সনদে ইবনে মাজাহ, বেশ কিছু বিশুদ্ধ সনদে ইমাম আহমদ তাঁর ’মুসনাদ’ ও ‘ফযায়েলে সাহাবা’ কেতাবে (১:৪৫০), আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৯, ৪:৪৭৯ সহীহ), তিনটি সনদে ইবনে আবি শায়বা (৬:৩৬০ #৩২০২৫-৩২০২৬, ৭:৪৪২ #৩৭০৯০), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (১৯:১৬১-১৬২ #৩৫৯, #৩৬২, ২০:৩১৫ #৭৫০), এবং নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ স্বরচিত ‘আল-ফিতান’ পুস্তকে (১:১৭৪ #৪৬১)।]
আল-হাকিম হযরত আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন যে মহানবী (দ:) তাঁদেরকে বলেছিলেন হযরত উসমান (রা:)-এর রক্তের ফোঁটা কুরআন মজীদের “হে মাহবুব! অদূর ভবিষ্যতে আল্লাহই তাদের দিক থেকে আপনার জন্যে যথেষ্ট হবেন” (২:১৩৭) আয়াতটির ওপর পড়বে; আর তাই ঘটেছিল। [নোট-১১: হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে আল-হাকিম বর্ণিত (৩:১০৩=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১১০), আল-যুবায়র ইবনে আবদিল্লাহর দাদী হতে আত্ তাবারী নিজ ‘তারিখ’ কেতাবে (২:৬৭১), ‘উমরা বিনতে আবদ্ আল-রহমান হতে ইবনে আবি হাতিম তাঁর ‘আল-জারহ ওয়াল তা’দিল’পুস্তকে (৪:১৭৯ #৭৮০), এবং ওয়াসসাব হতে ইবনে সাআদ (৩:৭২)।]
আত্ তাবারানী সহীহ সনদে হযরত (আবু) মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “আমরা কোনো জ্বেহাদে মহানবী (দ:)-এর সাথে ছিলাম যখন মুসলমানদের খাদ্য সংকট দেখা দেয়। আমি তাঁদের মুখমন্ডলে হতাশার ছাপ দেখতে পাই, আর এর বিপরীতে মোনাফেকদের চেহারায় দেখি আনন্দ। এই পরিস্থিতি দেখে রাসূলুল্লাহ (দ:) বলেন, ‘আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি, আল্লাহ তোমাদের জন্যে খাবার ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত সূর্য অস্তমিত হবে না।’ হযরত উসমান (রা:) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ:)-এর ইচ্ছা নিশ্চিত জেনে চৌদ্দটি সওয়ার-ভর্তি খাবার এনে ওর মধ্যে নয়টি মহানবী (দ:)-এর খেদমতে পেশ করেন। মুসলমানদের চেহারায় খুশির ভাব ফুটে ওঠে, পক্ষান্তরে মোনাফেকদের মুখ ভার হয়ে যায়। আমি দেখতে পাই মহানবী (দ:) (দোয়ায়) হাত তোলেন যতোক্ষণ না তাঁর বগলের সাদা অংশ দেখা যায়; তিনি হযরত উসমান (রা:)-এর জন্যে এমন দোয়া করেন, যা আমি ইতিপূর্বে আর কারো জন্যেই তাঁকে করতে দেখি নি।” [নোট-১৩: হযরত ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে নয়, বরং হযরত আবু মাসউদ (রা:) থেকে ইমাম আহমদ তাঁর ‘ফযায়েলে সাহাবা’ কেতাবে (১:২৩৪ #২৮৭), এবং আত্ তাবারানী দুর্বল সনদে সাঈদ ইবনে মোহাম্মদ আল-ওয়াররাক হতে নিজ ‘আল-কবীর’(১৭:২৪৯-২৫০ #৬৯৪) ও ‘আল-আওসাত’ (৭:১৯৫-১৯৬ #৭২৫৫) গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত; যদিও আল-হায়তামী (৯:৮৫-৯৬=৯:১১৩-১১৫ #১৪৫২৩, #১৪৫৬০) ইমাম তাবারানী (রহ:)-এর সনদকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।]
আল-বায়হাকী হযরত উরওয়া (রা:) থেকে রওয়ায়াত করেন যে মহানবী (দ:) যখন হুদায়বিযায় উপস্থিত হন, তখন তিনি হযরত উসমান (রা:)-কে কুরাইশদের কাছে পাঠান এ কথা বলে, “তাদেরকে বলো, আমরা যুদ্ধ করতে আসি নি, শুধু ওমরাহ হজ্জ্ব ও ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে এসেছি।” তিনি আরও আদেশ করেন যেন হযরত উসমান (রা:) মক্কাবাসী ঈমানদার নর-নারীদেরকে আসন্ন বিজয়ের খোশ-খবরী দেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় সেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে তাঁদের ধর্ম-বিশ্বাস যে আর উপহাসের বিষয় হবে না, তাও জানাতে। হযরত উসমান (রা:) কুরাইশদের কাছে হুযূর পাক (দ:)-এর বার্তা পৌঁছে দেন, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং যুদ্ধ করার ঘোষণা দেয়। এমতাবস্থায় রাসূলে খোদা (দ:) সকল মুসলমানকে সমবেত করেন এবং আনুগত্যের শপথ নেন। এই সময় কেউ একজন উচ্চস্বরে বলেন, ”দেখো, নিশ্চয় জিবরীল আমীন এখানে মহানবী (দ:)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়েছেন।” মুসলমানগণও তখন নবী পাক (দ:)-কে ছেড়ে না যাবার অঙ্গীকার করেন। আল্লাহর মহিমায় এতে মূর্তি পূজারীরা ভয় পেয়ে যায় এবং এর দরুণ তারা ইতিপূর্বে যতো মুসলমানকে বন্দি করেছিল, তাঁদের সবাইকে ছেড়ে দেয়, আর সন্ধি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। হযরত উসমান (রা:)-এর প্রত্যাবর্তনের আগে হোদায়বিয়ায় অবস্থানকালে মুসলমানগণ বলাবলি করতে থাকেন যে তিনি কাবায় পৌঁছে তওয়াফ করেছেন; এমতাবস্থায় হুযূর পূর নূর (দ:) বলেন, “আমরা অবরুদ্ধ থাকাকালীন আমি মনে করি না উসমান (কাবাকে) তওয়াফ করবে।” তিনি ফিরে এলে পরে মানুষেরা তাঁকে বলেন, “আপনি কাবার তাওয়াফ করেছেন।” হযরত উসমান (রা:) উত্তর দেন: “এই চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দাও! সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! মহানবী (দ:)-কে হুদায়বিয়ায় রেখে আমি ওখানে এক বছরের জন্যে বসতি স্থাপন করলেও মহানবী (দ:)-এর আগে আমি কাবাকে তাওয়াফ করতাম না। কুরাইশ গোত্র আমাকে তা করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, কিন্তু আমি তা ফিরিয়ে দেই।” অতঃপর মুসলমানগণ বলেন, “রাসূলুল্লাহ (দ:)-ই আমাদের মাঝে আল্লাহকে সবচেয়ে ভাল জানেন এবং তিনি-ই সর্বোত্তম মতের অধিকারী।” [নোট-১৪: হযরত ‘উরওয়া (রা:) থেকে এটি বর্ণনা করেন ইবনে আসাকির নিজ ‘তারিখে দিমাশ্ক’ গ্রন্থে (৩৯:৭৬-৭৮), আল-বায়হাকী তাঁর ‘আস্ সুনান আল-কুবরা’ পুস্তকে (৯:২১৮-২২১), এবং ইবনে আবি শায়বা; এ ছাড়া আংশিকভাবে ইবনে সা’আদ (২:৯৭)। দেখুন - ইবনে কাসীরের তাফসীর (৪:১৮৭), কানয (#৩০১৫২), এবং ‘আওন আল-মা’বুদ (৭:২৮৯)।]
হযরত আলী (ক:)
হযরত আবু রাফি’ (রা:)-এর স্ত্রী হযরত সালমা (রা:) থেকে আত্ তাবারানী বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: “আমি (এখনো) নিজেকে মহানবী (দ:)-এর হুযূরে (উপস্থিতিতে) দেখতে পাচ্ছি যখন তিনি বলেন, ‘বেহেশতী এক ব্যক্তি এক্ষণে তোমাদের সামনে উপস্থিত হবে।’ আর দেখো! আমি কারো পদশব্দ শুনতে পাই, অতঃপর হযরত আলী (ক:) (মজলিশে) হাজির হন।” [নোট-১৫: হযরত রাফি’ (রা:)-এর স্ত্রী হযরত সালমা (রা:) থেকে আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’পুস্তকে (২৪:৩০১)। দেখুন আল-হায়তামী (৯:১৫৬-১৫৭ #১৪৬৯৩)।]
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে আল-হাকিম ও আল-বায়হাকী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “আমরা একবার রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর সাথে ছিলাম; এমন সময় তাঁর স্যান্ডেলের ফিতা ছিঁড়ে যায়। হযরত আলী (ক:) তা সারাতে পেছনে পড়ে থাকেন। এমতাবস্থায় নবী পাক (দ:) কিছু দূর হাঁটার পর এরশাদ ফরমান, ‘সত্য হলো, তোমাদের মাঝে কেউ একজন কুরআন মজীদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ (তাফসীর) নিয়ে জেহাদ (কঠিন সাধনা, সংগ্রাম) করবে, যেমনিভাবে আমি সংগ্রাম করেছি এর নাযেল (অবতীর্ণ) হওয়া নিয়ে।’ হযরত আবু বকর (রা:) জিজ্ঞেস করেন, ‘সেই ব্যক্তি কি আমি?’ হুযূর পূর নূর (দ:) উত্তরে ’না’ বলেন। অতঃপর হযরত উমর (রা:) জিজ্ঞেস করেন, ‘তাহলে কি আমি?’ রাসূলে করীম (দ:) এরশাদ ফরমান, ‘না, ওই স্যান্ডেল মেরামতকারী (খাসিফ আন-না’আল)।’ [নোট-১৬: হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা:) হতে সহীহ সনদে ইমাম আহমদ বর্ণিত, যা বিবৃত করেছেন আল-হায়তামী (৯:১৩৩); ‘আল-আরনাওত’ (১৫:৩৮৫ #৬৯৩৭)-এর বর্ণনানুযায়ী সহীহ সনদে ইবনে হিব্বান-ও; এটাকে সহীহ বলেছেন আল-হাকিম (৩:১২২), আর আয্ যাহাবী নিজ ‘তালখিস আল-’এলাল আল-মুতানাহিয়া কেতাবে (পৃষ্ঠা ১৮) বলেন: “এই হাদীসের সনদ ভাল।” এই হাদীস আরও বর্ণনা করেছেন আল-বাগাবী তাঁর ‘শারহ আল-সুন্নাহ’ গ্রন্থে (১০:২৩৩), আবু এয়ালা স্বরচিত ‘মুসনাদ’ বইয়ে (#১০৮৬), সাঈদ ইবনে মনসুর তাঁর ‘সুনান’ পুস্তকে, ইবনে আবি শায়বা (১২:৬৪), আবু নুয়াইম নিজ ‘হিলইয়া’ কেতাবে, এবং আল-বায়হাকী তাঁর ‘দালাইল আন্ নুবুওয়া’ গ্রন্থে (৬:৪৩৫) ও ‘শুয়াবুল ঈমান’ পুস্তকে।]
আবু ইয়ালা ও আল-হাকিম নির্ভরযোগ্য রওয়ায়াত হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন যে মহানবী (দ:) হযরত আলী (ক:)-কে বলেন: “বাস্তবিকই তুমি আমার (বেসালের) পরে কঠিন সংগ্রাম/সাধনায় লিপ্ত হবে।” তিনি জিজ্ঞেস করেন, “আমার ধর্মকে নিরাপদে রেখে?” বিশ্বনবী (দ:) এরশাদ করেন, “হ্যাঁ।” [নোট-১৭: হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে আল-হাকিম (৩:১৪০=৩:১৫১) এবং ‘মুরসাল’ হিসেবে ইবনে আবি শায়বা (৬:৩৭২ #৩২১১৭)।]
হযরত আলী (ক:) থেকে আত্ তাবারানী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “হযূর পূর নূর (দ:) আমার কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছেন যে আমাকে বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক/ধোকাবাজ ও ধর্মচ্যুত (আল-নাকিসীন ওয়াল-ক্কাসিতীন ওয়াল-মারিক্কীন)-দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। [নোট-১৮: হযরত আলী (ক:) হতে হযরত আলী ইবনে রাবেয়া (রা:) এবং তাঁর কাছ থেকে আল-বাযযার, আর আবু ইয়ালা (১:৩৯৭ #৫১৯)-এর সনদে রয়েছেন আল-রাবী’ ইবনে সাহল যিনি দুর্বল। দেখুন - ইবনে হাজর রচিত ‘লিসান আল-মিযান’ (২:৪৪৬ #১৮২৭); তবে ইবনে হাজর এর অর্থকে সত্য হিসেবে বিবেচনা করেন। একে হযরত আম্মার ইবনে এয়াসের (রা:)-এর বর্ণিত বলেও উদ্ধৃত করেন আবু এয়ালা (৩:১৯৪ #১৬২৩)।]
আল-হুমায়দী, আল-হাকিম এবং অন্যান্য হাদীসবেত্তা হযরত আবুল আসওয়াদ (আল-দুয়ালী) রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “হযরত আলী (ক:) রেকাবে (অশ্বে পা রাখার স্থানে) পা রাখামাত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা:) এসে তাঁকে বলেন, ‘ইরাকবাসীদের কাছে যাবেন না! যদি যান, তাহলে তরবারির আঘাতসমূহ আপনার ওপর পড়বে।’ হযরত আলী (ক:) উত্তর দেন, ‘আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আপনার এ কথা বলার আগে মহানবী (দ:)-ও একই কথা বলেছেন’।” [নোট-১৯: হযরত আলী (ক:) হতে হযরত আবুল আসওয়াদ (রা:) হতে আল-হুমায়দী তাঁর ’মুসনাদ’ গ্রন্থে (১:৩০ #৫৩), আল-বাযযার (২:২৯৫-২৯৬ #৭১৮), আবু ইয়ালা (১:৩৮১ #৪৯১), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আহাদ’ পুস্তকে (১:১৪৪ #১৭২), ইবনে হিব্বান (১৫:১২৭ #৬৭৩৩), এবং আল-হাকিম (৩:১৪০=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৫১); এঁদের সবার এসনাদে শিয়াপন্থী আবদুল মালিক ইবনে আ’য়ান থাকায় আয্ যাহাবী এটাকে দুর্বল বলেছেন, তবে একে শক্তিশালী বিবেচনা করেছেন আল-হায়তামী (৯:১৩৮) এবং ’হাসান’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন আল-আরনাওত; অপর দিকে জিয়া আল-মাকদেসী একে বিশুদ্ধ রওয়ায়াত বলে মত প্রকাশ করেন তাঁর প্রণীত ‘আল-মুখতারা’ গ্রন্থে (২:১২৮-১২৯ #৪৯৮)।]
আবু নুয়াইম হযরত আলী (ক:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (দ:) আমাকে বল্লেন, ‘(ভবিষ্যতে) অনেক ফিতনা-ফাসাদ হবে এবং তোমার লোকেরা তোমার সাথে দ্বিমত পোষণ করবে।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি আমাকে (ওই সময়) কী করার নির্দেশ দেন?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘কেতাব (কুরআন মজীদ) অনুযায়ী শাসন করো’।” [নোট-২০: হযরত আলী (ক:) হতে দুর্বল বর্ণনাকারী শিয়াপন্থী আল-হারিস ইবনে আব্দিল্লাহ আল-আ’ওয়ার বর্ণিত এবং আত্ তাবারানী কৃত ‘আল-আওসাত’ গ্রন্থে (২:২৯-৩০ #১১৩২) ও আল-সগীর পুস্তকে (২:১৭৪ #৯৭৮) উদ্ধৃত যার মধ্যে শেষোক্ত কেতাবের এসনাদে রয়েছেন আতা’ ইবনে মুসলিম আল-খাফফাফ যিনি আল-উকায়লী প্রণীত আল-দু’আফা বইয়ের (৩:৪০৫ #১১৪৩) ভাষ্যানুযায়ী দুর্বল রাবী।] আল-বায়হাকী হযরত আলী (ক:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “(হযরত) ফাতেমা (রা:)-এর পাণি গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয় মহানবী (দ:)-এর কাছে (কিন্তু তিনি তা নাকচ করেন); এমতাবস্থায় আমার এক দাসী (যাকে পরবর্তীকালে মুক্ত করা হয়) আমাকে বলে, ‘আপনি কি শুনেছেন হযরত ফাতেমা (রা:)-এর বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল? তাহলে এ ব্যাপারে (পাণি গ্রহণের প্রস্তাব নিয়ে) মহানবী (দ:)-এর সাথে দেখা করায় আপনাকে বাধা দিচ্ছে কী?’ আমি নবী পাক (দ:)-এর সাথে দেখা করতে গেলাম, আর তাঁর চেহারা মোবারক ওই সময় সৌম্য ভাবময় ছিল। আমি তাঁর সামনে দাঁড়াতেই ভয়ে স্থির হয়ে গেলাম। আল্লাহর শপথ, আমি একটি কথাও বলতে পারলাম না। রাসূলুল্লাহ (দ:) ফরমালেন, ‘কী কারণে তোমার এখানে আসা, বলো?’ আমি চুপ রইলাম। অতঃপর তিনি বল্লেন, ‘হয়তো তুমি ফাতেমার পাণি গ্রহণের প্রস্তাব নিয়ে এসেছ?’ আমি বল্লাম, জ্বি।” [নোট-২১: হযরত আলী (ক:) থেকে বর্ণনা করেছেন আল-বায়হাকী তাঁর ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ কেতাবে (৭:২৩৪ #১৪১২৯) এবং আল-দুলাবী নিজ ‘আল-যুররিয়্যা আল-তাহেরা’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৬৪), যা ’কানয’ গ্রন্থে (#৩৭৭৫৪) বিবৃত হয়েছে।]
আল-হাকিম নির্ভরযোগ্য রওয়ায়াত হিসেবে এবং আবু নুয়াইম হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসের (রা:) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলে করীম (দ:) হযরত আলী (ক:)-কে বলেন: “মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী হলো সে-ই, যে ব্যক্তি তোমার এখানে (কপালের পাশে দেখিয়ে বলেন) আঘাত করবে, যতোক্ষণ না রক্তে এটা (দাড়ি দেখিয়ে বলেন) ভিজে যায়।” [নোট-২২: এই রওয়ায়াত এসেছে - (১) হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসের (রা:) হতে বিশুদ্ধ সনদে, যা বিবৃত হয়েছে ইমাম সৈয়ুতী কৃত ‘তারিখ আল-খুলাফা’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ১৭৩), ইমাম আহমদ প্রণীত ’মুসনাদ’ কেতাবে, আন-নাসাঈ লিখিত ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ পুস্তকে (৫:১৫৩ #৮৫৩৮), আবু নুয়াইমের রচিত ‘দালাইল আন-নুবুওয়া’ বইয়ে (পৃষ্ঠা ৫৫২-৫৫৩ #৪৯০), এবং আল-হাকিম (৩:১৪০-১৪১), আর এ ছাড়াও সনদের মধ্যে একজন বর্ণনাকারীর অনুপস্থিতিতে হযরত আম্মার (রা:) হতে তাবেঈ আল-বাযযার (৪:২৫৪ #১৪২৪); (২) হযরত জাবের ইবনে সামুরা (রা:) হতে আবু নুয়াইম নিজ ‘দালাইল’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৫৫৩ #৪৯১) - দেখুন আস-সৈয়ুতীর ‘খাসাইসুল কুবরা’ (২:৪২০); (৩) হযরত আলী (ক:) হতে শিয়াপন্থী সালাবা ইবনে ইয়াযিদ আল-হিম্মানী রওয়ায়াতকৃত এবং লিপিবদ্ধ রয়েছে ইবনে সা’আদ (৩:৩৪), ইবনে আবি হাতিম, আবু নুয়াইম কৃত ’দালাইল’ (পৃষ্ঠা ৫৫২ #৪৮৯), ইবনে আবদিল বারর প্রণীত ‘আল-এস্তিয়াব’ (৩:৬০), এবং আল-নুয়াইরী লিখিত ‘নিহায়াত আল-আরব’ (২০:২১১); (৪) হযরত আলী (ক:) হতে সুহাইব, যা লিপিবদ্ধ আছে আত্ তাবারানীর ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (৮:৩৮-৩৯ #৭৩১১), ইবনে আবদিল বারর-এর ’আল-এস্তিয়াব’ পুস্তকে (৩:১১২৫), ইবনে আসাকির, আল-রুয়ানী, ইবনে মারদুইয়াহ, এবং আবু ইয়ালা (১:৩৭৭ #৪৮৫)। দেখুন - ’কানয’ (#৩৬৫৬৩, #৩৬৫৭৭-৮, #৩৬৫৮৭), ইবনুল জাওযীর ‘সিফাতুস্ সাফওয়া’ (১:৩৩২), এবং আল-হায়তামী (৯:১৩৬); (৫) হযরত আলী (ক:) হতে হাইয়ান আল-আসাদী, যা লিপিবদ্ধ আছে আল-হাকিমে (৩:১৪২); এবং (৬) মওকুফ বর্ণনা - হযরত আলী (ক:) হতে যায়দ ইবনে ওয়াহব, যা লিপিবদ্ধ করেছেন আল-হাকিম (৩:১৪৩) ও ইবনে আবি আসিম নিজ ‘আল-যুহদ’ কেতাবে (পৃষ্ঠা ১৩২)। আল-তালিদী এই বর্ণনা তাঁর ‘তাহযিব আল-খাসাইস’ পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেন নি।]
আবু নুয়াইম অনুরূপ বর্ণনা করেছেন জাবের ইবনে সামুরা ও সুহাইব থেকে। আল-হাকিম রওয়ায়াত করেন হযরত আনাস (রা:)-এর কথা, তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর সাথে অসুস্থ হযরত আলী (ক:)-কে দেখতে যাই, যিনি শয্যাশায়ী ছিলেন; এই সময় হযরত আবু বকর (রা:) ও হযরত উমর (রা:)-ও তাঁকে দেখতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের একজন অপরজনকে বলছিলেন, “আমার মনে হয় না তিনি বাঁচবেন।” এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (দ:) এরশাদ ফরমান: “নিশ্চয় সে শাহাদাত ছাড়া মারা যাবে না এবং তার অন্তর যতোক্ষণ না তিক্ত হবে ততোক্ষণ সে মৃত্যুবরণ করবে না।” [নোট-২৩: আল-হাকিম (৩:১৩৯=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৫৫); অবশ্য এই বর্ণনাকে আয্ যাহাবী ‘সম্পূর্ণ ত্রুটিযুক্ত’ (ওয়াহিন) বলেছেন।]
আল-হাকিম বর্ণনা করেন হযরত সাওর ইবনে মিজযা’আ (রা:) থেকে, তিনি বলেন: “উটের (যুদ্ধের) দিবসে আমি হযরত তালহা (রা:)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, আর ওই সময় তিনি (মাটিতে শায়িত অবস্থায়) প্রায় ইন্তেকাল করার পর্যায়ে ছিলেন। তিনি আমাকে বল্লেন, ‘তুমি কোন্ পক্ষ?’ আমি উত্তর দিলাম, ‘ঈমানদারদের খলীফার বন্ধুদের দলে।’ তিনি বল্লেন, ‘তোমার হাত বাড়িয়ে দাও যাতে আমি তোমার কাছে আনুগত্যের শপথ নিতে পারি।’ আমি আমার হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং তিনি আমার প্রতি আনুগত্যের শপথ নিলেন। এর পরপরই তিনি ইন্তেকাল করলেন, আর আমিও হযরত আলী (ক:)-এর কাছে ফেরত গিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বল্লাম। তিনি বল্লেন, ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ! রাসূলুল্লাহ (দ:) সত্য বলেছিলেন এই মর্মে যে আল্লাহতা’লা তালহাকে আমার প্রতি দৃঢ় আনুগত্যের শপথ গ্রহণ ছাড়া বেহেশতে নেবেন না’।” [নোট-২৪: আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৩:৪২১); তবে ইবনে হাজর তাঁর ’আল-আতরাফ’ (এতরাফ আল-মুসনাদ আল-মু’তালী বি আতরাফ আল-মুসনাদ আল-হাম্বলী) পুস্তকে এটাকে ‘অত্যন্ত দুর্বল সনদ’ বলেছেন যা বিবৃত হয়েছে ‘কানয’পুস্তকে (#৩১৬৪৬)।]
আল-বায়হাকী রওয়ায়াত করেন ইবনে এসহাকের মাধ্যমে, তিনি বলেন: “এয়াযিদ ইবনে সুফিয়ান আমার কাছে বর্ণনা করেন মোহাম্মদ ইবনে কাআব হতে এই মর্মে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধিতে রাসূলে করীম (দ:)-এর কাতেব বা লেখক ছিলেন হযরত আলী (ক:); হুযূর পাক (দ:) তাঁকে বলেন, ‘লেখো, এগুলো মোহাম্মদ ইবনে আবদিল্লাহ (দ:) ও সোহায়ল ইবনে উমরের মধ্যকার সন্ধির শর্তাবলী।’ হযরত আলী এটা লিখতে রাজি হলেন না। তিনি ’আল্লাহর প্রেরিত রাসূল’ বাক্যটি ছাড়া এই সন্ধিপত্র লিখতে সম্মত ছিলেন না। এমতাবস্থায় নবী পাক (দ:) তাঁকে বলেন, ‘এটা লেখো, কেননা নিশ্চয় তুমি অনুরূপ কিছু ভোগ করবে এবং অন্যায় আচরণের শিকার হবে’।” [নোট-২৫: আল-বায়হাকীর ‘দালাইল’ গ্রন্থে উদ্ধৃত যা ‘মাগাযী’পুস্তকে ইবনে এসহাকের বর্ণনার অনুসরণে লিপিবদ্ধ; দেখুন - আস্ সৈয়ুতী কৃত ‘খাসাইসে কুবরা’ (১:১৮৮), ’সীরাতে হালাবিয়্যা’ (২:৭০৭), এবং আল-খুযাঈ প্রণীত ‘তাখরিজাত আল-দেলালাত’ (১৯৯৫ সংস্করণের ১৭৮ পৃষ্ঠা=১৯৮৫ সংস্করণের ১৮৮ পৃষ্ঠা)।] আর এটাই ঘটেছিল সিফফিন যুদ্ধের পরে হযরত আলী (ক:) ও হযরত মোআবিয়া (রা:)-এর মধ্যকার সন্ধির সময়। ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ তাঁর ’মুসনাদ’ গ্রন্থের পরিশিষ্টে এবং এর পাশাপাশি আল-বাযযার, আবু এয়ালা ও আল-হাকিম হযরত আলী (ক:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “মহানবী (দ:) আমাকে বলেন, ‘তোমার সাথে হযরত ঈসা (আ:)-এর এক সাদৃশ্য আছে; ইহুদীরা তাঁকে এতো ঘৃণা করেছিল যে তারা তাঁর মাকে অপবাদ দিয়েছিল; আর খৃষ্টানরা এতো ভালোবেসেছে যে তারা তাঁকে এমন মর্যাদার আসনে আসীন করেছে যা তাঁর নয়’।” [নোট-২৬: আবু মরইয়াম এবং আবু আল-বখতারী কিংবা আবদুল্লাহ ইবনে সালামা - এই দু’জনের কোনো একজন থেকে আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ নিজ ‘আল-সুন্নাহ’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ২৩৩-২৩৪ #১২৬৬-১২৬৮), আল-হারিস ইবনে আব্দিল্লাহ হতে ইবনে আব্দিল বারর তাঁর ‘আল-এস্তিয়াব’ কেতাবে (৩:৩৭), আল-নুওয়াইরী স্বরচিত ‘নিহায়াত আল-আরব’ পুস্তকে (২০:৫) এবং আবু আল-হাদিদ কৃত ‘শরহে নাজহ আল-বালাগা’ (১:৩৭২)।] হযরত আলী (ক:) বলেন: “আমার ব্যাপারে (আকিদাগত কারণে) দুই ধরনের লোক ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে - আমার প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণকারী যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটায়; দ্বিতীয়ত যারা অতি ভক্তিসহ আমার মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করে।” [নোট-২৭: এটা বর্ণনা করেছেন হযরত আলী (ক:) হতে আবু এয়ালা তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (১:৪০৬ #৫৩৪) এবং ইমাম আহমদও দুইটি দুর্বল সনদে নিজ ‘মুসনাদ’ কেতাবে - যাকে চিরাচরিত উদারতায় ‘হাসান’ বলেছেন শায়খ আহমদ শাকির (২:১৬৭-১৬৮ #১৩৭৭-১৩৭৮); আল-হাকিম (৩:১২৩)-ও এর সনদকে সহীহ বলেছেন, তবে আয্ যাহাবী এর দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত করেন এতে আল-হাকাম ইবনে আব্দিল মালিক থাকার কারণে; একই মত পোষণ করেন ইবনুল জাওযী নিজ ‘আল-এলাল আল-মুতানাহিয়া’ পুস্তকে (১:২২৭ #৩৫৭)। আল-হায়তামী স্বরচিত ‘মজমাউল যাওয়াইদ’ গ্রন্থে (৯:১৩৩) একই কারণে ওপরের সকল এসনাদের দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত করেন, তবে তিনি উল্লেখ করেন যে আল-বাযযার এটা বর্ণনা করেছেন তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে। অনুরূপ দুর্বল সনদে এটা বর্ণনা করেন আল-বায়হাকী নিজ ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ পুস্তকে (৫:১৩৭ #৮৪৮৮) এবং ইমাম আহমদ তাঁর ‘ফযাইলে সাহাবা’ কেতাবে (২:৬৩৯ #১০৮৭, ২:৭১৩ #১২২১, ২:৭১৩ #১২২২)।]
আত্ তাবারানী ও আবু নুয়াইম হযরত জাবের ইবনে সামুরা (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (দ:) হযরত আলী (ক:)-কে বলেন, ‘তোমাকে নেতৃত্ব ও খেলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে; আর নিশ্চয় এটা (হযরত আলী ক:-এর দাড়ি মোবারক) ওর (সে’র মোবারকের) দ্বারা লাল রংয়ে রঙ্গীন হবে’।” [নোট-২৮: হযরত জাবের ইবনে সামুরা (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ (২:২৪৭ #২০৩৮) ও ’আল-আওসাত’ (৭:২১৮ #৭৩১৮) গ্রন্থগুলোতে; তবে আল-হায়তামী (৯:১৩৬) অভিমত পোষণ করেন যে উভয়ের সনদ খুবই দুর্বল। শেষাংশের জন্যে ’নোট-২২’ দেখুন।]
আল-বুখারী ও মুসলিম হযরত সালামা (ইবনে আমির) ইবনে আল-আকওয়া (রহ:)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (দ:) খায়বারে অবস্থানকালে হযরত আলী (ক:) চোখের পীড়ার কারণে সেখানে তাঁর সাথে যেতে পারেন নি। তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে পেছনে পড়ে থাকি এবং হুযূর পাক (দ:)-এর সাথে না যাই?’ তাই তিনি বেরিয়ে পড়েন এবং মহানবী (দ:)-এর সাথে গিয়ে যোগ দেন। খায়বারের যুদ্ধের আগের রাতে রাসূলে খোদা (দ:) বলেন, ‘আমি শপথ করে বলছি যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ:) ভালোবাসেন এমন কাউকে আগামীকাল আমি পতাকা প্রদান করবো, যার ওসীলায় আল্লাহ বিজয় দান করবেন।’ আর দেখো! অপ্রত্যাশিতভাবে হযরত আলী (ক:) আমাদের মাঝে আগমন করেন। সবাই বলেন, ‘এই তো আলী!’ এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (দ:) তাঁকে পতাকা হস্তান্তর করেন এবং আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে বিজয় মন্ঞ্জুর করেন।” [নোট-২৯: সর্ব-হযরত সালামা ইবনে আল-আকওয়া’ (রা:), সাহল ইবনে সা’আদ (রা:) ও আবু হোরায়রা (রা:) থেকে আল-বুখারী, মুসলিম ও ইমাম আহমদ]
(আল-বুখারী এবং) মুসলিম এটা হযরত সালামা ইবনে আল-আকওয়া’ [নোট-৩০: প্রকৃতপক্ষে সাহল ইবনে সা’আদ] হতে ভিন্ন শব্দ চয়নে বর্ণনা করেন, যা ওপরের বিবরণের সাথে যুক্ত: ”অতঃপর রাসূলে খোদা (দ:) হযরত আলী (ক:)-এর চোখে তাঁর পবিত্র থুথু মোবারক নিক্ষেপ করেন এবং তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।” আল-হারিস ও আবু নুয়াইম আরেকটি ভিন্ন বর্ণনায় হযরত সালামা (রা:)-কে উদ্ধৃত করেন: “এমতাবস্থায় হযরত আলী (ক:) পতাকা নিয়ে দুর্গের ঠিক নিচে (মাটিতে) পুঁতে দেন, যা দেখে জনৈক ইহুদী দুর্গের সর্বোচ্চ স্থান থেকে নিচে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আপনি কে?’ তিনি উত্তর দেন, ‘আলী।’ ইহুদী বলে, ‘মূসা (আ:)-এর প্রতি অবতীর্ণ ঐশী গ্রন্থের শপথ, আপনারা বিজয়ী হবেন (’উলুতুম)।’ আল্লাহতা’লা বিজয় দান না করা পর্যন্ত হযরত আলী (ক:) আর পিছু হটেন নি।” [নোট-৩১: হযরত সালামা হতে ইবনে হিশাম কৃত ‘সীরাহ’ (৪:৩০৫-৩০৬) এবং ইবনে হিব্বান প্রণীত ‘আল-সিক্কাত’ (২:১৩)।] আবু নুয়াইম বলেন, “এতে ইশারা রয়েছে যে ইহুদীরা তাদের (ঐশী) কেতাবের বদৌলতে আগাম জানে কাকে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পাঠানো হবে এবং বিজয় মন্ঞ্জুর করা হবে।” এই বর্ণনা সর্ব-হযরত ইবনে উমর (রা:), ইবনে আব্বাস (রা:), সা’আদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা:), আবু হোরায়ারা (রা:), আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা:), এমরান ইবনে হুসাইন (রা:), জাবের (রা:) এবং আবু লায়লা আল-আনসারী (রা:)-এর কাছ থেকেও এসেছে। সবগুলোই আবু নুয়াইম রওয়ায়াত করেছেন, আর তাতে মহানবী (দ:) কর্তৃক হযরত আলী (ক:)-এর চোখ মোবারকে পবিত্র থুথু নিক্ষেপ ও চোখ ভাল হয়ে যাওয়ার ঘটনা বিবৃত হয়েছে। [নোট-৩২: সম্ভবত আবু নুয়াইমের ‘মা’রেফাত আল-সাহাবা ওয়া ফাদলিহিম’ শীর্ষক পুস্তকে।]
হযরত বুরায়দা (রা:) থেকে আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম বর্ণনা করেন যে মহানবী (দ:) বলেন: “আমি শপথ করে বলছি, কাল আমি যার হাতে পতাকা দেবো সে আল্লাহকে ভালোবাসে এবং তাঁর রাসূল (দ:)-কেও, আর সে তা (নিজ) ক্ষমতাবলে নেবে।” এ কথা তিনি এমন সময় বলেন, যখন হযরত আলী (ক:) সেখানে ছিলেন না। কুরাইশ গোত্র পতাকার জন্যে প্রতিযোগিতা আরম্ভ করে; ঠিক তখনি হযরত আলী (ক:) চোখের পীড়া নিয়ে উটের পিঠে চড়ে সেখানে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ (দ:) তাঁকে বলেন, “কাছে এসো।” তিনি এলে তাঁর পবিত্র চোখে হুযূর পাক (দ:) নিজ থুথু মোবারক নিক্ষেপ করেন এবং তাঁর হাতে পতাকা দেন। হযরত আলী (ক:) বেসাল হওয়া অবধি আর কখনোই তাঁর পবিত্র চোখ পীড়িত হয় নি। [নোট-৩৩: এই বর্ণনা আত্ তাবারীর নিজ ‘তারিখ’ গ্রন্থে (২:১৩৭)।]
ইমাম আহমদ, আবু এয়ালা, আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম বর্ণনা করেন হযরত আলী (ক:) হতে, যিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (দ:) আমার দু’চোখে যে দিন খাইবারে থুথু নিক্ষেপ করেন, সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত ওতে আর কোনো রকম পীড়া বা জ্বালা-পোড়া অনুভব করি নি।” [নোট-৩৪: আত্ তাবারানী, সাঈদ ইবনে মানসুর, ইবনে আবি শায়বা এবং আত্ তাবারী যিনি এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন তিনিও বর্ণনা করেন; ইমাম আহমদ ও আবু এয়ালার বর্ণনায় শক্তিশালী ‘রাবী’দের এসনাদ বিদ্যমান বলে মত দিয়েছেন আল-হায়তামী ও ইবনে কাসীর নিজ ‘আল-বেদায়া’ পুস্তকে, এবং আল-বায়হাকী তাঁর ‘দালাইল’ কেতাবে; দেখুন - কানয (#৩৫৪৬৭-৩৫৪৬৮)। অপর এক বর্ণনায় হযরত আবু লায়লা (রা:) হযরত আলী (ক:)-কে জিজ্ঞেস করেন কেন তিনি গ্রীষ্মের বস্ত্র শীতে এবং শীতের বস্ত্র গ্রীষ্মে পরেন। তিনি উত্তরে বলেন, “খায়বরের দিবসে আমার চোখ দুটো যখন পীড়াগ্রস্ত ছিল, তখন হুযূর পাক (দ:) আমাকে তলব করেন। আমি তাঁকে বলি, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আমার চক্ষু পীড়া দেখা দিয়েছে।’ তিনি আমার চোখে ফুঁ দিয়ে দোয়া করেন, ‘এয়া আল্লাহ! তার (আলীর) কাছ থেকে ঠান্ডা ও গরম অপসারণ করুন।’ ওই দিন থেকে আমি আর শীত বা গরম অনুভব করি নি।” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি লায়লা (রা:) হতে দুর্বল সনদে ইমাম আহমদ ও ইবনে মাজাহ এটা বর্ণনা করেছেন।]
ইবনে এসহাক বর্ণনা করেন হযরত আম্মার ইবনে এয়াসের (রা:) হতে, যিনি বলেন: “আল-’উশায়রা সফরে আমি ও হযরত আলী (ক:) এক সাথে ছিলাম। যখন নবী পাক (দ:) সওয়ার থেকে অবতরণ করেন, তখন আমরা বনূ মিদলাজ গোত্রের মানুষদেরকে দেখি তাদের একটি ঝর্ণা ও খেজুর বাগানে (খামারের) কাজে ব্যস্ত। হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (ক:) আমাকে বলেন, ‘ওহে আবু আল-এয়াকযান! আমরা এই লোকদেরকে তাদের কাজে দেখতে গেলে কেমন হয়?’ আমি তাঁকে বলি, ‘আপনার যা মর্জি হয়।’ এমতাবস্থায় আমরা তাদের কাজ দেখতে যাই এবং বেশ কিছু সময় সেখানে অতিবাহিত করি। এরপর আমাদের (সম্ভবত সফরজনিত ক্লান্তির কারণে) ঘুম পায় এবং আমরা দু’জন কিছু দূরে নিম্নভূমিতে অবস্থিত একটি বালিয়াড়ি পেয়ে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ি। আল্লাহর শপথ! আমাদের আর কেউ ঘুম থেকে ওঠান নি স্বয়ং মহানবী (দ:) ছাড়া, যিনি তাঁর কদম মোবারক দ্বারা আমাদের (স্পর্শ করে) জাগান। আমরা বালি দ্বারা আবৃত হয়ে গিয়েছিলাম। ওই দিন মহানবী (দ:) হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (ক:)-কে বালি দ্বারা আবৃত দেখে বলেন, ‘ওহে আবু তোরাব (বালির মানুষ)! আমি কি তোমাকে সবচেয়ে বদমায়েশ দু’জন ব্যক্তি সম্পর্কে বলবো না?’ আমরা বল্লাম, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! অনুগ্রহ করে আমাদের বলুন।’ তিনি উত্তর দেন, ‘সামুদ গোত্রের সেই ফর্সা লোকটি যার দ্বারা মাদী উটের হাঁটুর পেছনের দিকের পেশিতন্তু কাটা পড়ে সেটা খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল; আর ওহে আলী, দ্বিতীয় লোকটি হবে তোমার এখানে আঘাতকারী।’ এ কথা বলার সময় তিনি হযরত আলী (ক:)-এর কপালের এক পাশে তাঁর পবিত্র হাত রাখেন এবং এরপর হযরত আলী (ক:)-এর দাড়ি মোবারকে হাত রেখে আরও বলেন, ‘যতোক্ষণ না এটা (রক্তে) ভিজে যায়’।” [নোট-৩৫: হযরত আম্মার (রা:) থেকে এটা বর্ণনা করেন ইবনে হিশাম (৩:১৪৪), ইমাম আহমদ নিজ ’মুসনাদ’ (৩০:২৫৬-২৬৭ #১৮৩২১, #১৮৩২৬ হাসান লি-গায়রিহ) ও ‘ফযায়েলে সাহাবা’ পুস্তকে (২:৬৮৭), আল-বাযযার (#১৪১৭), আল-বুখারী তাঁর ‘আল-তারিখ আল-সগীর’ কেতাবে (১:৭১), আত্ তাহাবী স্বরচিত ‘শরহ মুশকিল আল-আসার’ (#৮১১), আদ্ দুলাবী তাঁর ‘আল-আসমা’ওয়াল কুনা’ গ্রন্থে (২:১৬৩), আত্ তাবারী নিজ ‘তারিখ’ কেতাবে (২:১৪), আবু নুয়াইম তাঁর ‘হিলইয়া’ (১:১৪১) ও ‘মা’আরিফাত আস্ সাহাবা’ পুস্তকে (#৬৭৫), আল-হাকিম (৩:১৪১=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৫১), আল-বায়হাকী স্বরচিত ‘দালাইল আন্ নুবুওয়া’ গ্রন্থে (৩:১২-১৩), এবং অন্যান্যরা; দেখুন - আল-হায়তামী ৯:১৩৬)।] পরবর্তীকালে রাসূলুল্লাহ (দ:) যেভাবে বর্ণনা করেছিলেন, ঠিক সেভাবেই আল্লাহতা’লার ইচ্ছায় হযরত আলী (ক:)-এর শাহাদাত হয় শেষ জমানার সবচেয়ে বদমায়েশ লোক আবদুর রহমান ইবনে মুলজাম আল-মুরাদীর দ্বারা। আল-বায়হাকী হযরত আলী (ক:) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “ হুযূর পূর নূর (দ:) আমাকে বলেন, ‘আমার (বেসালের) পরে তোমার ঔরসে এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে যাকে আমি আমার নাম ও কুনইয়া (বংশীয় ধারার নাম) প্রদান করলাম’।” এটা তিনি মোহাম্মদ ইবনে আল-হানাফিয়্যার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন। [নোট-৩৬: অর্থাৎ, মোহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আবি তালেব। এটা বর্ণনা করেছেন ইবনে সা’আদ (৫:৯২), ইবনে আসাকির, এবং আল-বায়হাকী নিজ ‘দালাইল’ পুস্তকে; তবে ইবনে আল-জওযীর মতে এর সনদ দুর্বল; দেখুন - ‘কানযুল ‘উম্মাল’ (#৩৪৩৩০, #৩৭৮৫৪, #৩৭৮৫৮)।]
হযরত ফাতেমা (রা:)
মহানবী (দ:)-এর সীরাতে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:)-কে উদ্ধৃত করা হয়েছে, তিনি বলেন: “সূরা নসরের ’যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে’ - আয়াতটি নাযেল হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (দ:) হযরত মা ফাতেমা (রা:)-কে তলব করেন এবং তাঁকে বলেন, ’আমার জানাযা এইমাত্র ঘোষিত হয়েছে।’ এ কথা শুনে মা ফাতেমা (রা:) কান্নাকাটি করেন। এমতাবস্থায় হুযূর পূর নূর (দ:) তাঁকে বলেন, ’কেঁদো না, কেননা তুমি-ই সর্বপ্রথম আমাকে অনুসরণ করবে (পরলোকে)।’ এ কথা শুনে মা ফাতেমা (রা:) হাসেন। নবী পাক (দ:)-এর কতিপয় স্ত্রী তাঁকে এ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করেন, ’ওহে ফাতেমা (রা:)! আমরা তোমাকে প্রথমে কাঁদতে তার পর হাসতে দেখলাম কেন?’ তিনি উত্তর দেন, ’মহানবী (দ:) আমাকে বলেছিলেন যে তাঁর জানাযা এইমাত্র ঘোষিত হয়েছে, তাই আমি কেঁদেছিলাম। অতঃপর তিনি আমাকে বলেন যে আমি-ই তাঁকে সর্বপ্রথম অনুসরণ করবো (পরলোকে); এ কারণে আমি হেসেছি’।” [নোট-৩৭: বিশুদ্ধ সনদে হযরত আব্বাস (রা:) থেকে এটা বর্ণনা করেছেন আদ্ দারিমী, আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আওসাত’ কেতাবে (১:২৭১ #৮৮৩), এবং আংশিকভাবে আল-বুখারী ও ইমাম আহমদ; হযরত ইবনে উমর (রা:) থেকেও অনুরূপ বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন আল-বাযযার ও আল-বায়হাকী; দেখুন - ইবনে কাসীর কৃত তাফসীর (৪:৫৬২)।] নির্ভরযোগ্য রওয়ায়াতসমূহ অনুযায়ী মা ফাতেমা (রা:) এই ঘটনার ছয় মাস পরই বেসালপ্রাপ্ত হন।
ইমাম হাসান (রা:)
হযরত আবু বাকরাহ (রা:) থেকে আল-বুখারী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “মহানবী (দ:) হযরত হাসান (রা:) সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমার এই পুত্র (নাতি) মানুষদের সাইয়্যেদ (সরদার) এবং আল্লাহতা’লা হয়তো তার মাধ্যমে মুসলমানদের দুটো বড় দলকে আবার একতাবদ্ধ করবেন’।” [নোট-৩৮: হযরত আবু বাকরাহ (রা:) থেকে চারটি সনদে ইমাম বুখারী এটা বর্ণনা করেছেন; এছাড়া আত্ তিরমিযী (হাসান সহীহ), আন্ নাসাঈ, আবু দাউদের রওয়ায়াতের পাশাপাশি ইমাম আহমদও তাঁর নিজস্ব চারটি সনদে এটা বর্ণনা করেন।] হুযূর করীম (দ:) যেভাবে বলেছিলেন ঠিক হুবহু সেভাবেই ঘটনাটি ঘটে। হযরত আলী (ক:)-কে যখন শহীদ করা হয়, তখন মানুষেরা হযরত হাসান (রা:)-এর প্রতি আমৃত্যু আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেন। তাঁদের সংখ্যা চল্লিশ হাজারেরও বেশি ছিল এবং তাঁরা তাঁর পিতা হযরত আলী (ক:)-এর চেয়েও তাঁর প্রতি বেশি অনুগত ছিলেন। তিনি সাত মাস যাবত ইরাক, খুরাসান ও ট্রান্সঅক্সিয়ানা অঞ্চলের খলীফা ছিলেন; এরপর হযরত মোয়াবিয়া (রা:) তাঁর বিরুদ্ধে সৈন্য সমাবেশ করেন। আল-আম্বরে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হলে ইমাম হাসান (রা:) এবং হযরত মোয়াবিয়াও উপলব্ধি করেন যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ মুসলমানদের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটাবে। উভয় দলের মধ্যস্থতাকারীরা একটি শান্তি-চুক্তির পক্ষে কাজ করেন এবং তাতে উপণীত হন। এরই ফলে আল্লাহর ইচ্ছায় মুসলমানগণ ভ্রাতিঘাতী যুদ্ধ এড়াতে সক্ষম হন এবং আল্লাহতা’লা তাঁর প্রিয়নবী (দ:)-এর বাণী সত্যে পরিণত করেন - “আমার এই নাতি মানুষদের সাইয়্যেদ এবং তার মাধ্যমে হয়তো আল্লাহতা’লা মুসলমানদের দুটো বড় দলকে আবার একতাবদ্ধ করবেন।” [মহানবী (দ:) সেজদারত অবস্থায় শিশু হযরত হাসান (রা:) তাঁর পিঠে লাফিয়ে ওঠার বিশুদ্ধ রওয়ায়াতের অংশ এটা, যা আবু বাকরাহ (রা:) থেকে ইমাম আহমদ বর্ণিত (৩৪:৯৮-৯৯ #২০৪৪৮ হাদীস সহীহ); আর অন্যান্যদের বর্ণনায় হযরত হাসান বসরী (রা:)-এর কথা যুক্ত হয়েছে, তিনি বলেন: আল্লাহর শপথ, আল্লাহর শপথ, তাঁর শাসনের সময় এক শিস্তি বা আঙ্গুঠ পরিমাণ রক্তও ঝরে নি।” অপর এক বর্ণনার শব্দচয়ন ছিল: “এবং আল্লাহতা’লা হয়তো মুসলমানদের দুটো বড় দলকে একতাবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তাকে ব্যবহার করতে পারেন।” [নোট-৪০: কিছু মানুষ যখন হযরত হাসান (রা:)-কে শান্তি স্থাপনের কারণে কটাক্ষ করে বলেছিল ‘ওহে ঈমানদারদের জন্যে অপমানের পাত্র’, তখন তিনি তাদেরকে উত্তরে বলেন: “আগুনের চেয়ে অপমান শ্রেয়”; তিনি আরও বলেন, “আমি তাদেরকে অপমানিত করি নি, বরং রাজ্য বিস্তারের অভিপ্রায়ে তাদের রক্ত ঝরানোকে ঘৃণা করেছি।” এটা বর্ণনা করেছেন ইবনে আব্দিল বারর তাঁর ‘আল-এস্তিয়াব’ গ্রন্থে।]
ইমাম হুসাইন (রা:)
আল-হাকিম ও আল-বায়হাকী বর্ণনা করেন হযরত উম্মে আল-ফযল বিনতে আল-হারিস (রা:) হতে, তিনি বলেন: “একদিন আমি হযরত রাসূলে আকরাম (দ:)-কে দেখতে গেলাম, আমার কোলে ছিলেন ইমাম হুসাইন (রা:)। আমি মহানবী (দ:)-এর দিকে আবার ফিরে তাকাতেই দেখি তাঁর চোখ অশ্রু সজল। তিনি বল্লেন, ‘জিবরাইল আমীন এসে আমাকে বলেছেন যে আমার উম্মতের (কিছু লোক) আমার এই নাতিকে শহীদ করবে, আর তিনি ওর সমাধিস্থলের এক মুঠোভর্তি লাল মাটি নিয়ে এসেছেন’।” [নোট-৪১: হযরত উম্মে আল-ফযল থেকে বর্ণনা করেন আল-হাকিম (৩:১৭৬-১৭৭=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৯৪), যিনি আল-বুখারী ও মুসলিমের মানদন্ডে একে বিশুদ্ধ বলেছেন; তবে আয্ যাহাবী বলেন: “বরঞ্চ এটা যয়ীফ মুনক্কাতী, (কেননা) শাদ্দাদ হযরত উম্মে আল-ফযলের সাক্ষাৎ পাননি; অপর দিকে মোহাম্মদ ইবনে মুস’আব (আল-কিরকিসানী) দুর্বল (বর্ণনাকারী)।” তবে আয্ যাহাবী ‘সিয়্যার’ পুস্তকে (আরনাওত সংস্করণের ৩:২৮৯) অনুরূপ একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করে বলেন যে ওর এসনাদ ’হাসান’ (নির্ভরযোগ্য/বিশুদ্ধ)।]
ইবনে রুয়াহা, আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম হযরত উম্মে সালামা (রা:) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (দ:) একদিন ঘুমিয়ে পড়েন এবং ঘুম থেকে জেগে ওঠেন নিষ্ক্রিয় ভাব নিয়ে; তাঁর হাত ভর্তি ছিল এক মুঠো লাল মাটি দ্বারা যা তিনি এদিক-ওদিক নাড়াচাড়া করছিলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! এই মাটি কিসের?’ মহানবী (দ:) উত্তর দেন, ‘জিবরাইল আমীন আমাকে জানিয়েছেন যে এই বাচ্চা (ইমাম হুসাইন) ইরাক রাজ্যে শহীদ হবে, আর এই মাটি তার সমাধিস্থলের।’ [নোট-৪২: হযরত উম্মে সালামা (রা:) থেকে এটা বর্ণনা করেন ইবনে আবি আসিম তাঁর ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী’ কেতাবে (১:৩১০ #৪২৯), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ পুস্তকে (৩:১০৯, ২৩:৩০৮), এবং আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৪:৪৪০) মূসা ইবনে ইয়াকুব আল-জামি’-এর সূত্রে নির্ভরযোগ্য সনদে; অপর বর্ণনা এসেছে হযরত আয়েশা (রা:) হতে আত্ তাবারানী কৃত ’আল-কবীর’ গ্রন্থে (৩:১০৭ #২৮১৫)। হযরত আয়েশা (রা:) বা উম্মে সালামা (রা:) থেকে আরও বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’ ও ‘ফযায়েলে সাহাবা’ বইগুলোতে, তবে এক্ষেত্রে সনদ খুব দুর্বল।]
আবু নুয়াইম বর্ণনা করেন হযরত উম্মে সালামা থেকে, যিনি বলেন: “ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন আমার ঘরে খেলছিলেন, এমন সময় জিবরাইল আমীন অবতীর্ণ হন এবং বলেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! নিশ্চয় আপনার উম্মতের (কতিপয় লোক) আপনার এই নাতিকে (ইমাম হুসাইনের দিকে দেখিয়ে) শহীদ করবে।’ তিনি ইমামের সমাধিস্থলের কিছু মাটিও এনে দেন। হুযূর পাক (দ:) তা শুঁকেন এবং বলেন, ‘এতে কষ্ট ও ক্লেশ-যন্ত্রণার গন্ধ রয়েছে।’ অতঃপর আরও বলেন, ‘এই মাটি যখন রক্তে পরিণত হবে, তখন বুঝবে আমার নাতি শহীদ হয়েছে।’ অতএব আমি ওই মাটি একটি বয়ামে রেখে দেই।” [নোট-৪৩: এটা বর্ণনা করেন আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ পুস্তকে (৩:১০৮ #২৮১৭), আল-মিযযী তাঁর ‘তাহযিব আল-কামাল’ কেতাবে (৬:৪০৯), এবং ইবনে হাজর স্বরচিত ‘তাহযিব আত্ তাহযিব’ গ্রন্থে (২:৩০০-৩০১) যাঁর এসনাদে দুর্বল বা প্রত্যাখ্যাত রাফেযী শিয়া ’আমর ইবনে সাবিত ইবনে হুরমুয আল-বাকরী বিদ্যমান। দেখুন - আল-হায়তামী (৯:১৮৯)।]
ইবনে আসাকির বর্ণনা করেন মোহাম্মদ ইবনে ’আমর [নোট-৪৪: ইমাম নাবহানীর বইয়ে ‘উমর’ লেখা হয়েছে, যা ‘তারিখে দিমাশ্ক’ ও ‘কানযুল উম্মাল’ কেতাবগুলো থেকে সংশোধিত] ইবনে হাসান (রা:) হতে, তিনি বলেন: “আমরা ইমাম হুসাইন (রা:)-এর সাথে কারবালার (পাশে) নদীতে ছিলাম [নোট-৪৫: কুফা নগরীর চব্বিশ মাইল উত্তর পশ্চিমে] যখন তিনি শিমার ইবনে যি আল-জাওশানের দিকে তাকান এবং বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ:) সঠিক বলেছেন! রাসূলুল্লাহ (দ:) বলেন, “আমি দেখতে পাচ্ছি একটা ফোটা ফোটা দাগবিশিষ্ট কুকুর আমার ঘরের মানুষদের রক্তের ওপর লালা ঝরাচ্ছে”।’ শিমার কুষ্ঠরোগী ছিল।” [নোট-৪৬: এটা বর্ণনা করেন ইবনে আসাকির ‘তারিখে দিমাশ্ক’ গ্রন্থে (২৩:১৯০); দেখুন - ’কানয’ (#৩৭৭১৭) এবং আল-বেদায়া।]
ইবনে আল-সাকান, আল-বাগাবী ও আবু নুয়াইম বর্ণনা করেন হযরত আনাস ইবনে আল-হারিস (রা:) থেকে, তিনি বলেন: “আমি মহানবী (দ:)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয় আমার এই নাতি (হুসাইনকে ইশারা করে) কারবালা নামের এক জায়গায় শহীদ হবে। তোমাদের কেউ ওখানে তখন উপস্থিত থাকলে তাকে সাহায্য করো।’ অতঃপর হযরত আনাস ইবনে আল-হারিস (রা:) কারবালা যান এবং ইমাম হুসাইন (রা:)-এর সাথে শাহাদাত বরণ করেন।” [নোট-৪৭: হযরত সোহায়ম থেকে বর্ণিত, হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা:) থেকেও বর্ণিত আবু নুয়াইমের ‘দালাইল’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৫৫৪ #৪৯৩) এবং আল-বাগাবী ও ইবনে আল-সাকান তাঁদের সাহাবা-এ-কেরাম সংকলনে। দেখুন - ইবনে হাজর কৃত ’এসাবা’ (১:১২১), আল-বুখারী প্রণীত ‘আল-তারিখ আল-কবীর’ (২:৩০ #১৫৮৩); ‘আল-এস্তিয়াব’ (১:১১২); ‘আল-খাসাইস আল-কুবরা’ (২:৪৫১)।]
আত্ তাবারানী বর্ণনা করেন হযরত আয়েশা (রা:) থেকে এই মর্মে যে হযরত রাসূলে করীম (দ:) এরশাদ ফরমান: “জিবরাইল আমীন আমাকে বলেছেন আমার নাতি হুসাইন আমার (বেসালের) পরে আল-তাফফ রাজ্যে (সিরিয়া ও ইরাকের মাঝে) শহীদ হবে, আর তিনি আমাকে এই মাটি এনে দিয়ে বলেছেন যে এতে হুসাইনের সমাধিস্থল হবে।” [নোট-৪৮: হযরত আয়েশা (রা:) থেকে এটা বর্ণনা করেন আত্ তাবারানী তাঁর ‘আল-কবীর’ (৩:১০৭ #২৮১৪) ও ’আল-আওসাত’ (৬:২৪৯ #৬৩১৬) গ্রন্থগুলোতে, যার এসনাদ দুর্বল বলেছেন আল-হায়তামী (৮:২৮৮, ৯:১৮৮); দেখুন - আস্ সৈয়ুতী রচিত ‘যেয়াদাত আল-জামে’ আস্ সগীর’ (#১৪৭) এবং কানয (#৩৪২৯৯)। সামগ্রিকভাবে এটা হাসান (বিশুদ্ধ), কেননা এই বর্ণনা ও উম্মে সালামা (রা:)-এর বর্ণনা একে অপরকে সমর্থন দেয়।] ইমাম আহমদ ও ইবনে সা’আদ এটা হযরত আলী (ক:) থেকে বর্ণনা করেন নিম্নের প্রকাশভঙ্গিতে: “আমি অনুভব করি হুসাইন ফোরাত নদীর তীরে শহীদ হবে।” [নোট-৪৯: হযরত আলী (ক:) থেকে এটা বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ, আবু ইয়ালা (#৩৬৩), ইবনে আবি আসিম নিজ ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী’ পুস্তকে (১:৩০৮ #৪২৭), ইবনে আবি শায়বা (৭:৪৮৭ #৩৭৩৬৭), আল-বাযযার (৩:১০১ #৮৮৪), আত্ তাবারানী তাঁর ‘আল-কবীর’ কেতাবে (৩:১০৫ #২৮১১), আল-মিযযী নিজ ‘’তাহযিব আল-কামাল’ গ্রন্থে (৬:৪০৭), এবং ইবনে হাজর স্বরচিত ’তাহযিব আল-তাহযিব’ বইয়ে (২:৩০০); আল-আরনাওত কৃত ‘মুসনাদ’ (২:৭৭-৭৮ #৬৪৮) ও আল-মুনাওয়ী (১:২০৪-২০৫)-এর ভাষ্যানুযায়ী ওপরের সবার এসনাদ দুর্বল, তবে আল-হায়তামী (৯:১৮৭) ও আল-মাকদেসীর প্রণীত ‘আল-মুখতারা’ কেতাবে প্রদত্ত ভাষ্য এর বিপরীত। পক্ষান্তরে আয্ যাহাবী দ্বিতীয় আরেকটি সনদ পেশ করেছেন যা প্রথমটিকে সমর্থন যোগায়। এই বর্ণনায় আছে ইমাম হুসাইন (রা:)-এর অনুপস্থিতিতে তাঁকে হযরত আলী (ক:)-এর সম্ভাষণ: “সাবরান আবা আবদ-আল্লাহ!” দেখুন - ইবনে তাইমিয়া রচিত ‘মিনহাজ’ (কুরতুবা সংস্করণের ৩:৩৬৭-৩৬৮) এবং আয্ যাহাবী প্রণীত ‘সিয়্যার’ (রেসালা সংস্করণের ৩:২৮৮=ফিকর সংস্করণের ৪:৪০৭-৪০৮)।]
আল-বাগাবী তাঁর ‘মু’জাম’ পুস্তকে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা:) থেকে রওয়ায়াত করেন, তিনি বলেন: “বৃষ্টির ফেরেশতা (মিকাইল) মহানবী (দ:)-এর সাথে দেখা করার জন্যে মহান প্রভুর দরবারে আরয করেন এবং অনুমতি পান। তিনি দিনের এমন সময়ে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর ঘরে আসেন যখন তিনি সাধারণতঃ মা উম্মে সালামা (রা:)-এর সাথে থাকেন। হুযূর পূর নূর (দ:) বলেন, ‘উম্মে সালামা, দরজা বন্ধ রাখো এবং কাউকেই ঢুকতে দেবে না।’ তিনি দরজা বন্ধ করার জন্যে ওর কাছে যাওয়ামাত্র ইমাম হুসাইন (রা:) ছুটে এসে ঘরে প্রবেশ করেন এবং মহানবী (দ:)-এর কাছে যান, যিনি নাতিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান। এমতাবস্থায় ফেরেশতা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি তাঁকে খুব আদর করেন?’ রাসূলে পাক (দ:) জবাবে ’হ্যাঁ’ বলেন। ফেরেশতা বলেন, ‘নিশ্চয় আপনার উম্মতের কতিপয় লোক তাঁকে শহীদ করবে; আর আপনি যদি চান, তবে আমি আপনাকে দেখাতে পারি তাঁকে কোথায় শহীদ করা হবে।’ তিনি মহানবী (দ:)-কে সেই জায়গা প্রদর্শন করেন এবং সেখান থেকে কিছু লালচে মাটি এনে তাঁকে দেন। এই মাটি উম্মে সালামা (রা:) তাঁর চাদরের মধ্যে রাখেন।” সাবিত আল-বনানী (রহ:) যিনি এটা হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেছিলেন, তিনি বলেন, “আমাদের বিবেচনায় এই জায়গাটি ছিল কারবালা।” [নোট-৫০: হযরত আনাস (রা:) থেকে এটা বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ, আবু এয়ালা (৬:১২৯ #৩৪০২), আল-বাযযার (#২৬৪২), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (৩:১০৬ #২৮১৩), ইবনে হিব্বান (১৫:১৪২ #৬৭৪২ হাদীস হাসান), আবু নুয়াইম তাঁর ‘দালাইল’ কেতাবে (পৃষ্ঠা ৫৫৩ #৪৯২), আল-বায়হাকী স্বরচিত ‘দালাইল’ পুস্তকে (৬:৪৬৯), এবং আল-মিযযী নিজ ‘তাহযিব আল-কামাল’ গ্রন্থে (৬:৪০৮)। দেখুন - কানয (#৩৭৬৭২), আল-হায়তামী (৯:১৮৭-১৯০), আয্ যাহাবী নিজ ‘সিয়্যার’ কেতাবে (৩:২৮৮-২৮৯=ফিকর সংস্করণের ৪:৪০৮), এবং আস্ সৈয়ুতী কৃত ‘খাসাইস আল-কুবরা’ (২:৪৫০)।]
মোল্লা আল-মওসিলীর বর্ণনায় হযরত উম্মে সালামা (রা:) বলেন: “মহানবী (দ:) আমার কাছে এক মুঠো লাল মাটি হস্তান্তর করে বলেন, ‘সে (হুসাইন) যেখানে শহীদ হবে এটা সেই জায়গার মাটি। এটা যখন রক্তে পরিণত হবে, তখন জানবে যে তাকে শহীদ করা হয়েছে’।” হযরত উম্মে সালামা (রা:) বলেন, “ওই মাটি আমার কাছে থাকা একটি বয়ামে আমি রাখি, আর সেই ভয়াবহ দিনের আশংকায় থাকি যেদিন তা রক্তে পরিণত হবে।” [নোট-৫১: এই রওয়ায়াত করেছেন আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (৩:১০৮ #২৮১৭), আল-মিযযী তাঁর ‘তাহযিব আল-কামাল’ পুস্তকে (৬:৪০৯), এবং ইবনে হাজর স্বরচিত ‘তাহযিব আত্ তাহযিব’ কেতাবে (২:৩০০-৩০১) যা’তে রাফেযী শিয়া ‘আমর ইবনে সাবিত ইবনে হুরমুয আল-বাকরী সনদের মধ্যে আছে; এই লোক দুর্বল বা বর্জনীয়। দেখুন - আল-হায়তামী (৯:১৮৯)।] মহানবী (দ:) যেভাবে বলেছিলেন, ঠিক সেভাবেই ইমাম হুসাইন (রা:)-এর শাহাদাত হয় কুফা নগরীর কাছে ইরাকের কারবালায়, যে জায়গাটি আত্ তাফফ নামেও পরিচিত। এই হাদীসে তাঁর আরেকটি বিস্ময়কর মো’জেযা হলো এই যে, হযরত উম্মে সালামা (রা:) ইমাম হুসাইন (রা:)-এর শাহাদাতের পরও জীবিত থাকবেন তা এতে প্রকাশিত হয়েছিল; আর বাস্তবে তাই ঘটেছিল।
ওয়া সাল্লাল্লাহু আ’লা সাইয়্যেদিনা মুহাম্মাদিন ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামা তাসলিমা।