NOTICE:- ------------------ ----------------- ---------------------------

রাসূল (দ:)-প্রেম ও তাঁর আনুগত্য

মূল: ড: জি, এফ, হাদ্দাদ দামেশ্কী
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন


১। রাসূল প্রেম ও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন অবশ্য কর্তব্য

আল্লাহ্ তা’লার তাঁর রাসূল (দ:)-কে বলেছেন তিনি যেন তাঁর উম্মাতকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেন যে যারা আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি করে তাদের প্রতি রাসূসুল্লাহ (দ:)-কে ভালোবাসাও অবশ্য কর্তব্য হয়েছে। এরশাদ হয়েছে- “হে মাহবুব, আপনি বলে দিন: ওহে মানবকুল! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাকো তবে আমার অনুগত হও, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত - ৩১)। মহানবীকে ভালোবাসার এই অবশ্য কর্তব্য বিষয়টির মানে হলো তাঁকে মান্য করা, তাঁর স্মরণ (যিকর) করা, তাঁর আনুগত্য করা এবং তাঁকে নিয়ে গর্ব করা, যেমনিভাবে আল্লাহ্ তা’লা তাঁকে নিয়ে গর্ব করেছেন তাঁরই পবিত্র কেতাবে- “নিশ্চিয় আপনার চরিত্র মহা মর্যাদাময়” (সূরা ক্বলম, আয়াত-৪)।

মু'মিন মুসলমানদের ঈমানের পূর্ণতা রাসূল প্রেমের ওপর নির্ভরশীল। বোখারী ও মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত একটি সহীহ হাসীসে রাসূলে খোদা (দ:) এরশাদ ফরমান- “তোমাদের মধ্যে কেউ ঈমানদার মুসলমান হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তোমাদের পুত্র, পিতা ও সকল মানব জাতির চেয়ে তোমাদের কাছে প্রিয়ভাজন হই”। বোখারী শরীফে উদ্ধৃত অপর এক হাসীসে তিনি বলেন- “তোমাদের কেউই ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না আমি তোমাদের কাছে তোমাদের আপন সত্তার চেয়েও প্রিয় পাত্র হই।”

ঈমানের পূর্ণতা রাসূলপ্রেমের ওপর নির্ভরশীল। কেননা আল্লাহ্ তা’লা ও ফেরেশতাকুল নিরন্তর তাঁর সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত করছেন, যেমনি ভাবে কালামে পাকে ঘোষিত হয়েছে- “নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাবৃন্দ মহানবী (দ:)-এর প্রতি সালাত-সালাম তথা দুরূদ প্রেরণ করেন” (সূরা আহযাব, আয়াত-৫৬)। অতঃপর খোদায়ী আদেশ জারি হয়েছে একই আয়াতে করীমায়- “ওহে ঈমানদারবর্গ! তোমরাও পূর্ণ সম্মানসহ তাঁর প্রতি দুরূদ প্রেরণ কর” (সূরা আহযাব, আয়াত-৫৬)। এ আয়াতে প্রতিভাত হয় যে মো’মেন মুসলমান হবার বৈশিষ্ট্য মহানবী (দ:)-এর প্রতি দুরূদ-সালাম প্রেরণের ওপর নির্ভরশীল এবং এর দ্বারাই প্রকাশমান। হে আল্লাহ! বিশ্বনবী (দ:), তাঁর আহল তথা পরিবার সদস্যবৃন্দ ও আসহাবে কেরাম (সম্মানিত সঙ্গী)-বৃন্দের প্রতি শান্তি ও আশীর্বাদ বর্ষণ করুন, আমীন।

২। আল্লাহ্ তা’লা ফরমান: নবী (দ:)-এর প্রতি দুরূদ পড়


রাসূলে খোদা (দ:)-এর প্রতি দুরূদ পাঠাতে এবং তাঁর প্রশংসা করতে আমাদের উৎসাহ দেয়া হয়েছে নিচের আয়াতে কারীমায়, যা আমাদের প্রতি অবশ্য কর্তব্যও করা হয়েছে- “হে ঈমানদার মুসলমান সকল! তোমরা মহানবী (দ:)-এর প্রতি পূর্ণ সম্মানসহ সালাত-সালাম পাঠাও এবং তাঁর প্রশংসা করো” (সূরা আহযাব, আয়াত-৫৬)।

৩। আল্লাহ এরশাদ ফরমান: নবী (দ:)-এর শুভাগমনে খুশি উদযাপন করো!

এ বিশ্ব জগতে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর শুভাগমন উপলক্ষে আমাদের খুশি উদযাপন করতে আদেশ করা হয়েছে; এরশাদ হয়েছে- “হে রাসূল, বলুন: আ্ল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা (রহমত)-প্রাপ্তিতে মানব জাতির উচিৎ খুশি উদযাপন করা” (সূরা ইউনুস, আয়াত-৫৮)। এই আদেশ জারি করা হয়েছে এ কারণে যে খুশি উদযাপন দ্বারা আল্লাহর করুণার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়। আর আল্লাহ্ তা’লার সর্বশ্রেষ্ঠ করুণা মহানবী (দ:) ছাড়া কী হতে পারে? যেমন এরশাদ হয়েছে-

 “এবং আমি আপনাকে প্রেরণ করিনি কিন্তু বিশ্ব জগতের জন্যে রহমত করে (পাঠিয়েছি)” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত-১০৭)।

যেহেতু মহানবী (দ:)-কে সমগ্র মানবজাতির জন্যে রহমত করে পাঠানো হয়েছে, সেহেতু শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ই নয় বরং সমস্ত মানুষের প্রতি তাঁর সত্তা মোবারকের ওপর খুশি উদযাপন করা অবশ্য কর্তব্য করা হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বর্তমানকালে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা আল্লাহ্ তা’লার এই আদেশ অমান্য করে খুশি উদযাপনে বিরত থাকছে।

৪। নবী (দ:)-এর সীরাত সম্পর্কে জানা ও তাঁকে অনুকরণ-অনুসরণের বাধ্যবাধকতা

আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে প্রিয়নবী (দ:) সম্পর্কে জানতে, তাঁর পবিত্র জীবন, মো’জেযা তথা আলৌকিক ঘটনাবলী, বেলাদত (ধরাধামে শুভাগমন), আচার-ব্যবহার (আদব-কায়দা), ধর্মবিশ্বাস, নিদর্শনসমূহ (আয়াত ওয়া দালায়েল), নির্জন সাধনা, এবাদত-বন্দেগী ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে। এই জ্ঞান অর্জন করা কি প্রত্যেক মো’মেন মুসলমানের জন্যে ফরয (অবশ্য কর্তব্য) নয়? তাঁর পবিত্র জীবন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের চেয়ে আর কী শ্রেষ্ঠ হতে পারে? এ পন্থায় আল্লাহ্ আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট ও খুশি হবেন; কেননা এতে করে আমরা মহানবী (দ:)-কে আরও ভালভাবে জানতে পারবো এবং তাঁকে আমাদের জন্যে অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে পারবো, আর নিজেদের পরিশুদ্ধ করতেও পারবো; ফলশ্রুতিতে আমরা দু’জাহানের কামিয়াবীও অর্জন করতে সক্ষম হবো।

৫। আমাদের প্রিয়নবী কে?

রাসূলুল্লাহ (দ:) শারীরিকভাবে খুব লম্বাও নন, আবার বেঁটেও নন; বরং মধ্যম আকৃতির। চেহারার বর্ণ ধবধবে সাদাও নয়, আবার এমন কালো বা বাদামি রংও নয় যা কালোতে পরিণত হয়ে থাকে; তাঁর চেহারা মোবারক উজ্জ্বল যা চাঁদের মাসের ১৪ তারিখের রাতের পূর্ণ চন্দ্রের চেয়েও উজ্জ্বল দেখা যেতো। তাঁর চুল সোজাও নয়, আবার কোঁকড়াও নয়, বরং সামান্য কুঞ্চিত। চল্লিশ বছর বয়সে আল্লাহ তাঁকে নবুয়্যুত দান করেন। তিনি দশ বছর মক্কা মোকাররমায় ও আরও দশ বছর মদীনা মোনাওয়ারায় বসবাস করেন। ৬৩ বছর বয়সে তিনি বেসাল (আল্লাহর সাথে পরপারে মিলন)-প্রাপ্ত হন। ওই সময় তাঁর চুল ও দাড়ি মোবারক ২০টিরও বেশি পাকে নি, যা হযরত আনাস (রা:) বর্ণনা করেছেন।

৬। রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর আদেশ অমান্য করার বিপদ

মহানবী (দ:)-এর আদেশ অমান্য করা ও তাঁর সুন্নাহ পাল্টে ফেলা হলো পথভ্রষ্টতা ও বেদআত। এটাকে আল্লাহ তা’লা চরম শাস্তি দেবার ও এতে সমস্ত কিছু হারাবার ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন। তিনি এরশাদ ফরমান- “আর যে ব্যক্তি সঠিক পথ তাঁর সামনে সুস্পষ্ট হবার পরও রাসূল (দ:)-এর বিরোধিতা করে এবং মুসলমানদের পথ থেকে আলাদা পথে চলে, আমি তাকে তার অবস্থাতেই ছেড়ে দেবো এবং দোযখে প্রবেশ করাবো; এটি কতোই না মন্দ স্থান প্রত্যাবর্তনের” (সূরা নিসা, আয়াত-১১৫)!

রাসূলে খোদা (দ:) এরশাদ ফরমান- ”মান রাগেবা ‘আন সুন্নাতী, ফালাইসা মিন্নী”

অর্থ: যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত (রীতি-নীতি)-কে প্রত্যাখ্যান করে, সে আমার দলভুক্ত নয় (বোখারী ও মুসলিম)।

৭। অতিরিক্ত প্রামাণ্য দলিল

(১) মহানবী (দ:)-এর প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা

মুসলিম উলামায়ে কেরামের মাঝে এ মর্মে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে মহানবী (দ:), তাঁর পরিবার সদস্যবৃন্দ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের শান-মান বৃদ্ধি করা এবং তাঁদের উচ্চসিত প্রশংসা করা অবশ্য কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে যখনই স্মরণ করা হতো পূর্ববর্তী পুণ্যবান বুযূর্গানে দ্বীন ও আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীনবৃন্দ শ্রদ্ধাবনত হতেন; এই আচার তাঁরা অনুশীলন করতে সর্বদা।

হযরত জা’ফর ইবনে মোহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালেব (ইমাম জাফর সাদেক-রহ:) যখন মহানবী (দ:)-কে স্মরণ করা হতো তখনই ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যেতেন। ওযু ছাড়া ইমাম মালেক (রহ:) কখনো হাদীস বর্ণনা করতেন না। মহানবী (দ:)-কে স্মরণ করা হলে আবদুর রহমান ইবনে কাসেম ইবনে মোহাম্মদ ইবনে আবি বকর সিদ্দিক (রহ:) ভয়ে লাল বর্ণ ধারণ করতেন এবং তোতলাতেন।

প্রাথমিক যুগের সূফীবৃন্দের অন্যতম হযরত আমীর ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে যুবাইর ইবনে আওয়াল আল-আসাদী (রহ:) এতো কাঁদতেন যে চোখের পানিও শুকিয়ে যেতো। এ সকল বুযূর্গের সামনে কোনো হাদীস বর্ণনাকালে তাঁদের কণ্ঠস্বর তাঁরা নিচু করতেন। ইমাম মালেক (রহ:) বলেন, “বেসালের পর মহানবী (দ:)-এর হুরমাত (পবিত্রতা, শান) তেমনি আছে যেমনটি তাঁর হায়াতে জিন্দেগীর সময় ছিল অনতিক্রমনীয়”। গণিতবিদ আবু আব্বাস আহমদ ইবনে খতীব, যিনি ইবনে কুনফুয আল কুসানতিনী আল মালেকী (ইন্তেকাল ৮১০ হিজরী) নামেও সমধিক প্রসিদ্ধ, তিনি একটি বই লিখেছেন এ প্রসঙ্গে [ওয়াসিলাতুল ইসলাম বিন নবী আলাইহিস সালাত ওয়াস সালাম/ নবী (দ:)-এর মাধ্যমে ইসলাম, বৈরুত:দারুল গারব্ আল্ ইসলামী ১৪০৪ হিজরী/১৯৮৪ইং ১৪৫-১৪৬ পৃষ্ঠা]।

(২) সাহাবীদের প্রতি ভালোবাসাও ঈমানের লক্ষণ

সাহাবায়ে কেরামের প্রতি ভালোবাসাও ঈমানের লক্ষণ যা হাদীস শরীফে সমর্থিত হয়েছে। যেমন হযরত আবু হুরায়রা (রা:) সম্পর্কে রাসূলে খোদা (দ:) বলেছেন যে আল্লাহ পাক আবু হুরায়রা (রা:)-কে ঈমানদারদের কাছে প্রিয়পাত্র করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) তাঁর মায়ের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বর্ণনা দিয়েছেন যা নিচে উদ্ধৃত হলো:

একদিন আমি রাসূলুল্লাহ্ (দ:)-এর দরবারে কাঁদতে কাঁদতে হাজির হলাম এবং আরয করলাম: “ইয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আমি এ যাবত আমার মাকে ইসলাম ধর্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছি, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন। আজও আমি তাঁকে এ ব্যাপারে অনুরোধ করি; তিনি আপনার সম্পর্কে এমন কথা বলেন যা শুনতে আমি ঘৃণা করি। দয়া করে আল্লাহর কাছে আরয করুন যাতে আবু হুরায়রার মা হেদায়াত পান।” এর পরিপ্রেক্ষিতে মহানবী (দ:) দোয়া করলেন, “ইয়া আল্লাহ্! আবু হুরায়রার মাকে আপনি হেদায়াত দিন!” অতঃপর আমি হুজুর পূর নূর (দ:)-এর দোয়ার কারণে উৎফুল্ল চিত্তে ঘরে ফিললাম। ফিরে দেখি দরজা বন্ধ। আমার পায়ের শব্দ শুনে মা ভেতর থেকে আমাকে বল্লেন, “আবু হুরায়রা, এখন ঘরে প্রবেশ করো না।” আমি পানির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি ওযু করলেন এবং চাদর গায়ে দিলেন, আর মাথায় কাপড়ও পরলেন; অতঃপর তিনি দরজা খুলে বল্লেন: “আবু হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ (উপাস্য) নেই এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তাঁর হাবীব (প্রিয় বান্দা) ও প্রেরিত রাসূল!”

আমি তৎক্ষণাৎ খুশিতে কাঁদতে কাঁদতে রাসূলে পাক (দ:)-এর দরবারে আবার হাজির হলাম এবং আরয করলাম, “ইয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! সুসংবাদ! আল্লাহ তা’লা আপনার দোয়া কবুল করে আমার মাকে হেদায়াত দিয়েছেন।”  তিনি আল্লাহ তা’লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন, আর তাঁর প্রশংসাও করলেন। আমি আবার আরয করলাম: ’হে রাসূলে খোদা (দ:)! আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যাতে তিনি আমাকে ও আমার মাকে ঈমানদারদের প্রিয়পাত্র করে দেন এবং তাদেরকেও আমাদের কাছে প্রিয়ভাজন করেন!” অতঃপর হুজুর পূর নূর (দ:) দোয়া করেন, “ইয়া আল্লাহ, আপনি আপনার এই ছোট বান্দা (আবু হুরায়রা) ও তাঁর মাকে ঈমানদারদের কাছে প্রিয় করে দিন এবং তাদেরকেও এই দু’জনের কাছে প্রিয় করে দিন!”

আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, “কোনো ঈমানদার ব্যক্তিই অস্তিত্ব পাবার পর আমাকে না দেখা সত্ত্বেও আমার সম্পর্কে না শুনে ও আমাকে না ভালোবেসে পারেন না।” এ বর্ণনাটি মুসলিম ও ইমাম আহমদের এবং ইবনে হাজরেরও, তাঁর আল্ ইসাবা গ্রন্থে (৭:৩৪৫, ৭:৫১২)। এ ছাড়াও অন্যান্যরা এটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি অপর এক বিশুদ্ধ হাদীসের মতোই, যেখানে খলীফাতুল মো’মেনীন হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (ক:)-কে বিশ্বনবী (দ:) বলেছিলেন, ‘মো’মেন বান্দারা ছাড়া কেউই তোমাকে ভালোবাসে না, আর মোনাফেকরা ছাড়া কেউই তোমাকে ঘৃণা করে না।” (মুসলিম, নাসায়ী ও ইমাম আহমদ বর্ণিত হাদীস)।

(৩) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধির সমর্থনে আরেকটি হাদীস

কোনো এক ব্যক্তি হুজুর পাক (দ:)-কে জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! শেষ বিচার দিবস কখন হবে”? তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “তুমি এর জন্য কী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ”? ওই ব্যক্তি জবাব দিলেন, “কিছুই না; তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি।” অতঃপর মহানবী (দ:) এরশাদ ফরমালেন- “তুমি যাদের ভালোবাস, তাঁদের সাথে থাকবে।” এই হাদীসের রওয়ায়াতকারী হযরত আনাস (রা:) বলেন, ‘রাসূলে খোদা (দ:)-এর ওই কথা শুনে আমরা যতো খুশি হয়েছিলাম তাঁর চেয়ে বেশি খুশি আগে কখনো হই নি। অতএব, আমি হুজুর পূর নূর (দ:), হযরত আবু বকর (রা:) ও হযরত ওমর (রা:)-কে ভালোবাসি এবং আশা করি যে এর ফলে আমি তাঁদের সঙ্গে থাকবো, যদিও আমার আমল তাঁদের মতো নয়।”

(৪) আরও কিছু সমর্থনসূচক দলিল


বিশ্বনবী (দ:) এরশাদ ফরমান- “আমাকে ভালোবাসেন আমার এমন উম্মাতদের মধ্যে কিছু মানুষ আছেন যারা আমার পরে আসবেন এবং যারা নিজেদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের বিনিময়ে আমাকে দেখার জন্যে উদগ্রীব হবেন” (সহীহ মুসলিম, ‘জান্নাত ও এর আশীর্বাদ এবং জান্নাতী মানব সম্প্রদায়’ শীর্ষক অধ্যায়)।

একবার কেউ একজন রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর কাছে এসে আরয করলেন, “হে আল্লাহর নবী! আমি আপনাকে আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। আমি আপনাকে স্মরণ করি এবং আপনার কাছে এসে আপনাকে দেখার জন্যে অপেক্ষা করতে পারি না। আমি জানি আমি পরলোকবাসী হবো এবং আপনিও বেসালপ্রাপ্ত হবেন; এও জানি আপনি তখন বেহেশতে (নবীকুল সরদার হিসেবে) নবীদের সাথে উচ্চ মকামে অধিষ্ঠিত হবেন। তখন তো জান্নাতে আপনার দেখা পাবো না।” এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তা’লা আয়াত নাযেল করলেন- “এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও রাসূল (দ:)-এর হুকুম মান্য করে, তবে সে তাঁদের সঙ্গ লাভ করবে যাদের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন- অর্থাৎ নবীবৃন্দ, সত্যনিষ্ঠ বুযূর্গানে দ্বীন, শাহাদাৎপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও সৎ-কর্মপরায়ণ মানবকুল। এঁরা কতোই উত্তম সঙ্গী” (সূরা নিসা, ৬৯ আয়াত)!

মহানবী (দ:) ওই ব্যক্তিকে ডেকে উপরোক্ত আয়াতে করীমা তেলাওয়াত করে শুনালেন। এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন তাবারানী এবং মারদাওয়াইহ্ হযরত আয়েশা (রা:) ও হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে। এছাড়া ইমাম কাজী আয়াজ (রহ:) তাঁর প্রণীত ’শেফা শরীফ’ গ্রন্থে ও ইবনে কাসির তার তাফসীর পুস্তকে একটি বর্ণনা করেছেন। আল বাগাভীও এটি বর্ণনা করেছেন তাঁর তাফসীরে। হযরত ওমর (রা:) বর্ণিত অপর এক হাদীসেও বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে: এক ব্যক্তিকে মদ পানের কারণে মহানবী (দ:) প্রতিনিয়ত শাস্তি দিতেন; একবার তাঁকে ধরে আনা হলে তাঁকে আবারও প্রহারের শাস্তি দেয়া হয়। এমতাবস্থায় উপস্থিত কেউ একজন “আল্লাহর লা’নত পড়ুক তাঁর ওপর! তাঁকে কতো ঘন ঘনই না ধরে আনা হয়”-  এ কথাটি বলে উঠলে, রাসূলে পাক (দ:) তাঁকে বারণ করে বলেন, “ওকে লা’নত দেবে না; আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, ও আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে’ (আল্ বুখারী)।

[এ লেখাটি www.muzlimbuzz.sg/2012/01/30/the-importance-of-loving-the-prophet-following-his-example/ শীর্ষক ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত হয়েছে।]