লা-মাযহাবী
সালাফীরা ৮ রাকায়াত তারাবীহর কথা বলে থাকে। অথচ তাদের এ বক্তব্যের পিছনে
কোন দুর্বল দলীলও নেই। আসুন আমরা লা-মাযহাবীদের কথিত ৮ রাকায়াত তারাবীহের
পক্ষে মনগড়া দলিলসমূহ খন্ডন করি :
সালাফীদের প্রথম দলিল :
عن أبي سلمة بن عبد الرحمن أنه أخبره : أنه سأل عائشة رضي الله عنها كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ؟ فقالت ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي ثلاثا . قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر ؟ . فقال يا عائشة إن عيني تنامان ولا ينام قلبي (صحيح البخارى- أبواب التهجد، باب قيام النبي صلى الله عليه و سلم بالليل في رمضان وغي
অর্থ: হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি হযরক আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কাছে জানতে চান নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা ! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না।
দলীল-
√ সহীহ বুখারী-১ম খন্ড ১৫৪ পৃষ্ঠা- তাহাজ্জুদ অধ্যায়।
আসুন আমরা লা-মাযহাবীদের উক্ত দলীলের স্বরূপ উন্মোচন করি-
(১)এই হাদিসে ইযতিরাব তথা অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা থাকায় এ দিয়ে দলিল দেয়া ঠিক নয়। আল্লামা কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-আমি হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর এই বর্ণনাটি অনেক আহলে ইলমদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি অনেকেই এতে অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
দলীল-
√ ফাতহুল বারী শরুহুল বুখারী-৩য় খন্ড ১৭ পৃষ্ঠা।
(২) মূলত এই হাদিসটি তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট। এতে তারাবীহের কথা বর্ণিত নয়। নিম্নে এ ব্যাপারে কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করা হল।
“হাদিসে মূলত তাহাজ্জুদের বর্ণনা এসেছে” একথার দলিল-
১. হাদিসের শব্দ ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره
অর্থ- হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযান ও রামাযান ছাড়া অন্য সময় বাড়াননা।"
এটাই বুঝাচ্ছে যে, প্রশ্নটি করা হয়েছিল রামাযান ছাড়া অন্য সময়ে যে নামায নবীজী পড়তেন তা রামযানে বাড়িয়ে দিতেন কিনা? এই প্রশ্নটি এজন্য করা হয়েছে যেহেতো বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানে আগের তুলনায় অনেক নামায পড়তেন ও ইবাদত করতেন, তাই এই প্রশ্নটি করাটা ছিল স্বাভাবিক। আর রামযান ছাড়া কি তারাবীহ আছে? যে রামাযানের আগেই তারাবীহ আর বিতর মিলিয়ে ১৩ রাকাত নবীজী পড়তেন? নাকি ওটা তাহাজ্জুদ? তাহাজ্জুদ হওয়াটাই কি সঙ্গত নয়? সুতরাং এটাই স্পষ্ট বুঝা যায় তারাবীহ নয় প্রশ্ন করা হয়েছে তাহাজ্জুদ নিয়ে যে, নবীজী তাহাজ্জুদের নামায রামাযান ছাড়া যে ক’রাকাত পড়তেন তা থেকে রামাযানে বাড়িয়ে পড়তেন কিনা? এর জবাবে হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন-১৩ রাকাত থেকে বাড়াতেননা তাহাজ্জুদ নামায।
২. এই হাদিসের শেষাংশে এই শব্দ আছে যে قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر ؟
অর্থ: তারপর হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন-হে আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম !আপনি কি বিতর পড়ার আগে ঘুমান?"
এই বিষয়টি তারাবীহ এর ক্ষেত্রে কল্পনাতীত যে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবীহ নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়েন আর সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুগন বিতর পড়ার জন্য হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য অপেক্ষমাণ থাকেন। বরং এটি তাহাজ্জুদ এর ক্ষেত্রে হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত নয়কি?
৩. মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি। বরং তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ বিন নসর মারওয়াজী তার কিতাব “কিয়ামুল লাইল” এর “عدد الركعات التى يقوم بها الامام للناس فى رمضان”(রামযানে ইমাম কত রাকাত তারাবীহ পড়বে) অধ্যায়ে অনেক হাদিস আনলেও হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি সহীহ হওয়া সত্বেও তিনি আনেননি। সাথে এদিকে কোন ইশারাও করেননি।
৪. মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার অধ্যায়ের পরিবর্তে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার প্রণিত বুখারী শরীফে এই হাদিসটি নিম্ন বর্ণিত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন-
(ক) বিতর অধ্যায়-(১/১৩৫)
(খ) নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রাতে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতা রামযানে ও রামযান ছাড়া-(১/১৫৪)
(গ) রামযানে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতার ফযীলত অধ্যায়-(১/২৬৯)
(ঘ) নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু’চোখ ঘুমায় অন্তর ঘুমায়না-(১/৫০৩)
প্রথম অধ্যায়ে বিতরের রাকাত সংখ্যা আর দ্বিতীয় অধ্যায়ে তাহাজ্জুদ রামাযানে বেশি পড়তেন কিনা তা জানা আর তৃতীয় অধ্যায়ে রামাযানে বেশি বেশি নামাযের ফযীলত আর চতুর্থ অধ্যায়ে নবীজী ঘুমালে যে তার অযু ভাঙ্গেনা তার কারণ বর্ণনা জন্য হাদিস আনা হয়েছে। তারাবীহের রাকাত সংখ্যা বুঝানোর জন্য কোথায় এসেছে এই হাদিস???
৫. আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এই হাদিসের ব্যাক্ষায় বলেন-আর আমার কাছে এটি প্রকাশিত হয়েছে যে, ১১ রাকাতের থেকে না বাড়ানোর রহস্য এটি যে, নিশ্চয় তাহাজ্জুদ ও বিতরের নামায রাতের নামাযের সাথে খাস। আর দিনের ফরয যোহর ৪ রাকাত আর আসর সেটাও ৪ রাকাত আর মাগরীব হল ৩ রাকাত যা দিনের বিতর। সুতরাং সাযুজ্যতা হল-রাতের নামায দিনের নামাযরের মতই সংখ্যার দিক থেকে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে। আর ১৩ রাকাতের ক্ষেত্রে সাযুজ্যতা হল-ফযরের নামায মিলানোর মাধ্যমে কেননা এটি দিনের নামাযই তার পরবর্তী নামাযের জন্য।
দলীল-
ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী-৩/১৭
সালাফীদের দ্বিতীয় দলিল :
عن جابر بن عبد الله قال : صلى بنا رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ثمان ركعات والوتر فلما كان من القابلة اجتمعنا في المسجد ورجونا أن يخرج إلينا فلم نزل في المسجد حتى أصبحنا فدخلنا على رسول الله صلى الله عليه و سلم فقلنا له : يا رسول الله رجونا أن تخرج إلينا فتصل بنا فقال : كرهت أن يكتب عليكم الوتر (قيام الليل-90)
অর্থ: হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- হযরত রাসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সাথে রামযানে ৮ রাকাত নামায ও বিতর নামায পড়লেন, তারপর যখন পরদিন হল আমরা মসজিদে একত্রিত হলাম এবং আকাংখা করলাম নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আসবেন। আমরা মসজিদে অবস্থান করতে লাগলাম। প্রভাত হয়ে গেল। তখন আমরা গেলাম নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে। উনাকে বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আকাংখী ছিলাম আপনি আমাদের কাছে যাবেন এবং আমাদের নিয়ে নামায পড়বেন, তখন তিনি বললেন-আমি এটি পছন্দ করছিলামনা যে, তোমাদের উপর বিতর ফরয হয়ে যাক।
দলীল-
√কিয়ামুল লাইল-৯০
উক্ত দলীলের জবাব :
এই হাদিসটি নিয়ে কথিত আহলে হাদিসরা সবচে’ বেশি খুশি হতে দেখা যায়। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল এই হাদিসটি দুর্বল। শুধু একজন নয় এই হাদিসের তিনজন রাবীর ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেন তারা গ্রহণযোগ্য নয়। দেখুন মুহাদ্দিসীনে কিরাম কি বলে এই হাদিসের বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে।
"ইবনে হুমাইদ রাজী "
১. হাফেজ জাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তিনি দুর্বল
২. ইয়াকুব বিন শি’বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তিনি অনেক অগ্রহণীয় হাদিস বর্ণনা করেন।
৩. ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-এতে আপত্তি আছে।
৪. আবু জুরআ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তিনি মিথ্যাবাদী।
৫. ইসহাক কু’সজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি মিথ্যাবাদী।
৬. সালেহ জাযরাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-প্রত্যেক বিষয়ে সে হাদিস বর্ণনা করে। আল্লাহর উপর অধিক অপবাদ আরোপকারী আমি তাকে ছাড়া কাউকে দেখিনি। সে লোকদের হাদিস পরিবর্তন করে ফেলে।
৭. আল্লামা ইবনে খারাশ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-আল্লাহর কসম সে মিথ্যাবাদী
৮. ইমাম নাসায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-সে গ্রহণযোগ্য নয়।
দলীল-
√মিযানুল ই’তিদাল-৩/৪৯-৫০
"ইয়াকুব বিন আব্দুল্লাহ আশআরী"
ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন-সে শক্তিশালী নয়
দলীল-
√ মিযানুল ই’তিদাল-৩/৩২৪
"ঈসা বিন জারিয়া"
১. আল্লামা ইয়াহইয়া বিন মায়ীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তার কাছে অগ্রহণীয় হাদিস আছে।
২. ইমাম নাসায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়।
৩. ইমাম নাসায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তার হাদিস পরিত্যাজ্য।
৪. আবু দাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়।
৫. আল্লামা জাহাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তিনি দুর্বলদের মাঝে শামীল
দলীল-
√ মিযানুল ই’তিদাল-২/৩১১।
এছাড়া এ হাদিসটি “বুলুগুল মারাম” কিতাবে হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকেই বর্ণিত কিন্তু সেখানে রাকাত সংখ্যার কথা উল্লেখ নেই।
দলীল-
√ বুলুগুল মারাম-৪২-৪৩
এছাড়াও এ হাদিসে আরেকটি সমস্যা আছে, তাহল-এই হাদিসে বিতর ফরয হবার আশংকার কথা বলা হয়েছে অথচ অন্য সহীহ হাদিসে তারাবীহ ফরয হয়ে যাবার আশংকা উল্লেখে করা হয়েছে।
দলীল-
√ মিযানুল ই’তিদাল-২/৪২-৪৩
প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম এই হাদিস দিয়ে হুকুম প্রমাণিত করার ভার। এরকম দুর্বল হাদিস দিয়ে এরকম মতবিরোধপূর্ণ বিষয় কি প্রমাণিত হয়?
সালাফীদের তৃতীয় দলিল :
و حدثني عن مالك عن محمد بن يوسف عن السائب بن يزيد أنه قال أمر عمر بن الخطاب أبي بن كعب وتميما الداري أن يقوما للناس بإحدى عشرة ركعة ( موطأ مالك-98)
অর্থ: মুহাম্মদ বিন ইউসুফ সায়েব বিন ইয়াজীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওবাই বিন কাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তামীমে দারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে মানুষের সাথে ১১ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
দলীল-
√ মুয়াত্তা মালিক-৯৮।
উক্ত দলীলের জবাব :
এই হাদিস দিয়েও দলিল দেয়া ঠিক নয়। কারণ-
১. হাদিসটির শব্দে পরস্পর বিরোধীতা রয়েছে। যেমন এই হাদিসের সূত্রের একজন বর্ণনাকারী মুহাম্মদ বিন ইউসুফ তার সাগরীদ ৫ জন। তার মধ্যে ৩জন ১১ রাকাত আর ১জন ১৩ রাকাত ও ১জন ২১ রাকাতের বর্ণনা নকল করেন। এছাড়া যারা ১১রাকাতের কথা বর্ণনা তাদের বর্ণনার শব্দেও রয়েছে বিস্তর ফারাক। যথা-
ক. ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এনেছেন ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি ওবাই বিন কাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তামীমে দারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে মানুষের সাথ ১১ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
খ. হযরত ইয়াহইয়া আল কাত্তান বর্ণনা করেন-ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওবাই বিন কাব ও তামিমে দারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমাকে এর কাছে লোকদের একত্র করেন আর তারা দু’জন ১১ রাকাত নামায পড়াতেন।
গ. আব্দুল আজীজ বিন মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় এসেছে-আমরা হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর আমলে ১১ রাকাত নামায পড়তাম।
বর্ণনাকারীর বর্ণনার ঠিক নেই, সাথে সাথে যারা এক কথা বলেছেন তাদের বক্তব্যটিও পরস্পর বিরোধী এমন বর্ণনা পরিত্যাজ্য।
দলীল-
√ ইলাউস সুনান-৭/৪৮
২. এই বর্ণনাটি হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরেকটি সহীহ ও শক্তিশালী বর্ণনার বিপরিত। হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ২০ রাকাত তারাবীহের কথা ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার মুয়াত্তার ৪০ নং পৃষ্ঠায় ও হাফেজ ইবনে হাজার ফাতহুল বারীর ৪ নং খন্ডের ২১৯ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন। সুতরাং বুঝা গেল এই বর্ণনাটি আমলযোগ্য নয়।
৩. ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেই এই বর্ণনাটি আমলযোগ্য মনে করেননি, তাই তিনি নিজে ৮ রাকাতের কথা বলেননা।
৪. যদি হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ১১ রাকাতের বর্ণনাটি সহীহ হত তাহলে পরবর্তীতে হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে এরকম বর্ণনা ও আমল প্রমাণিত হত, অথচ তাদের থেকে এরকম বর্ণনা প্রমাণিত নয়।
এসব কারনে উক্ত হাদীস শরীফও তারাবীর নামাজের দলীল ৮ রাকায়াত গ্রহনযোগ্য নয়।
অবশেষে একটি মজার বিষয়। লা-মাযহাবীরা ৮ রাকায়াত তারাবীহ সুন্নত মনে করে এবং তারা বিতর নামাজও পড়ে ১ রাকায়াত। যদি তাই হয়, ৮+১=৯ রাকায়াত হয়। কিন্তু তাদের ভাষ্যমতে বিতর সর মোট নামাজ ১১ রাকায়াত। তাহলে বাকি ২ রাকায়াত নামাজ কই গেলো ????
সালাফীদের প্রথম দলিল :
عن أبي سلمة بن عبد الرحمن أنه أخبره : أنه سأل عائشة رضي الله عنها كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ؟ فقالت ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي ثلاثا . قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر ؟ . فقال يا عائشة إن عيني تنامان ولا ينام قلبي (صحيح البخارى- أبواب التهجد، باب قيام النبي صلى الله عليه و سلم بالليل في رمضان وغي
অর্থ: হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি হযরক আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার কাছে জানতে চান নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা ! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না।
দলীল-
√ সহীহ বুখারী-১ম খন্ড ১৫৪ পৃষ্ঠা- তাহাজ্জুদ অধ্যায়।
আসুন আমরা লা-মাযহাবীদের উক্ত দলীলের স্বরূপ উন্মোচন করি-
(১)এই হাদিসে ইযতিরাব তথা অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা থাকায় এ দিয়ে দলিল দেয়া ঠিক নয়। আল্লামা কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-আমি হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর এই বর্ণনাটি অনেক আহলে ইলমদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি অনেকেই এতে অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন।
দলীল-
√ ফাতহুল বারী শরুহুল বুখারী-৩য় খন্ড ১৭ পৃষ্ঠা।
(২) মূলত এই হাদিসটি তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট। এতে তারাবীহের কথা বর্ণিত নয়। নিম্নে এ ব্যাপারে কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করা হল।
“হাদিসে মূলত তাহাজ্জুদের বর্ণনা এসেছে” একথার দলিল-
১. হাদিসের শব্দ ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره
অর্থ- হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযান ও রামাযান ছাড়া অন্য সময় বাড়াননা।"
এটাই বুঝাচ্ছে যে, প্রশ্নটি করা হয়েছিল রামাযান ছাড়া অন্য সময়ে যে নামায নবীজী পড়তেন তা রামযানে বাড়িয়ে দিতেন কিনা? এই প্রশ্নটি এজন্য করা হয়েছে যেহেতো বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানে আগের তুলনায় অনেক নামায পড়তেন ও ইবাদত করতেন, তাই এই প্রশ্নটি করাটা ছিল স্বাভাবিক। আর রামযান ছাড়া কি তারাবীহ আছে? যে রামাযানের আগেই তারাবীহ আর বিতর মিলিয়ে ১৩ রাকাত নবীজী পড়তেন? নাকি ওটা তাহাজ্জুদ? তাহাজ্জুদ হওয়াটাই কি সঙ্গত নয়? সুতরাং এটাই স্পষ্ট বুঝা যায় তারাবীহ নয় প্রশ্ন করা হয়েছে তাহাজ্জুদ নিয়ে যে, নবীজী তাহাজ্জুদের নামায রামাযান ছাড়া যে ক’রাকাত পড়তেন তা থেকে রামাযানে বাড়িয়ে পড়তেন কিনা? এর জবাবে হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন-১৩ রাকাত থেকে বাড়াতেননা তাহাজ্জুদ নামায।
২. এই হাদিসের শেষাংশে এই শব্দ আছে যে قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر ؟
অর্থ: তারপর হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন-হে আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম !আপনি কি বিতর পড়ার আগে ঘুমান?"
এই বিষয়টি তারাবীহ এর ক্ষেত্রে কল্পনাতীত যে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারাবীহ নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়েন আর সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুগন বিতর পড়ার জন্য হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য অপেক্ষমাণ থাকেন। বরং এটি তাহাজ্জুদ এর ক্ষেত্রে হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত নয়কি?
৩. মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি। বরং তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ বিন নসর মারওয়াজী তার কিতাব “কিয়ামুল লাইল” এর “عدد الركعات التى يقوم بها الامام للناس فى رمضان”(রামযানে ইমাম কত রাকাত তারাবীহ পড়বে) অধ্যায়ে অনেক হাদিস আনলেও হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি সহীহ হওয়া সত্বেও তিনি আনেননি। সাথে এদিকে কোন ইশারাও করেননি।
৪. মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার অধ্যায়ের পরিবর্তে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার প্রণিত বুখারী শরীফে এই হাদিসটি নিম্ন বর্ণিত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন-
(ক) বিতর অধ্যায়-(১/১৩৫)
(খ) নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রাতে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতা রামযানে ও রামযান ছাড়া-(১/১৫৪)
(গ) রামযানে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতার ফযীলত অধ্যায়-(১/২৬৯)
(ঘ) নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দু’চোখ ঘুমায় অন্তর ঘুমায়না-(১/৫০৩)
প্রথম অধ্যায়ে বিতরের রাকাত সংখ্যা আর দ্বিতীয় অধ্যায়ে তাহাজ্জুদ রামাযানে বেশি পড়তেন কিনা তা জানা আর তৃতীয় অধ্যায়ে রামাযানে বেশি বেশি নামাযের ফযীলত আর চতুর্থ অধ্যায়ে নবীজী ঘুমালে যে তার অযু ভাঙ্গেনা তার কারণ বর্ণনা জন্য হাদিস আনা হয়েছে। তারাবীহের রাকাত সংখ্যা বুঝানোর জন্য কোথায় এসেছে এই হাদিস???
৫. আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এই হাদিসের ব্যাক্ষায় বলেন-আর আমার কাছে এটি প্রকাশিত হয়েছে যে, ১১ রাকাতের থেকে না বাড়ানোর রহস্য এটি যে, নিশ্চয় তাহাজ্জুদ ও বিতরের নামায রাতের নামাযের সাথে খাস। আর দিনের ফরয যোহর ৪ রাকাত আর আসর সেটাও ৪ রাকাত আর মাগরীব হল ৩ রাকাত যা দিনের বিতর। সুতরাং সাযুজ্যতা হল-রাতের নামায দিনের নামাযরের মতই সংখ্যার দিক থেকে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে। আর ১৩ রাকাতের ক্ষেত্রে সাযুজ্যতা হল-ফযরের নামায মিলানোর মাধ্যমে কেননা এটি দিনের নামাযই তার পরবর্তী নামাযের জন্য।
দলীল-
ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী-৩/১৭
সালাফীদের দ্বিতীয় দলিল :
عن جابر بن عبد الله قال : صلى بنا رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ثمان ركعات والوتر فلما كان من القابلة اجتمعنا في المسجد ورجونا أن يخرج إلينا فلم نزل في المسجد حتى أصبحنا فدخلنا على رسول الله صلى الله عليه و سلم فقلنا له : يا رسول الله رجونا أن تخرج إلينا فتصل بنا فقال : كرهت أن يكتب عليكم الوتر (قيام الليل-90)
অর্থ: হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- হযরত রাসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সাথে রামযানে ৮ রাকাত নামায ও বিতর নামায পড়লেন, তারপর যখন পরদিন হল আমরা মসজিদে একত্রিত হলাম এবং আকাংখা করলাম নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আসবেন। আমরা মসজিদে অবস্থান করতে লাগলাম। প্রভাত হয়ে গেল। তখন আমরা গেলাম নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে। উনাকে বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আকাংখী ছিলাম আপনি আমাদের কাছে যাবেন এবং আমাদের নিয়ে নামায পড়বেন, তখন তিনি বললেন-আমি এটি পছন্দ করছিলামনা যে, তোমাদের উপর বিতর ফরয হয়ে যাক।
দলীল-
√কিয়ামুল লাইল-৯০
উক্ত দলীলের জবাব :
এই হাদিসটি নিয়ে কথিত আহলে হাদিসরা সবচে’ বেশি খুশি হতে দেখা যায়। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল এই হাদিসটি দুর্বল। শুধু একজন নয় এই হাদিসের তিনজন রাবীর ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেন তারা গ্রহণযোগ্য নয়। দেখুন মুহাদ্দিসীনে কিরাম কি বলে এই হাদিসের বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে।
"ইবনে হুমাইদ রাজী "
১. হাফেজ জাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তিনি দুর্বল
২. ইয়াকুব বিন শি’বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তিনি অনেক অগ্রহণীয় হাদিস বর্ণনা করেন।
৩. ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-এতে আপত্তি আছে।
৪. আবু জুরআ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তিনি মিথ্যাবাদী।
৫. ইসহাক কু’সজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি মিথ্যাবাদী।
৬. সালেহ জাযরাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-প্রত্যেক বিষয়ে সে হাদিস বর্ণনা করে। আল্লাহর উপর অধিক অপবাদ আরোপকারী আমি তাকে ছাড়া কাউকে দেখিনি। সে লোকদের হাদিস পরিবর্তন করে ফেলে।
৭. আল্লামা ইবনে খারাশ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-আল্লাহর কসম সে মিথ্যাবাদী
৮. ইমাম নাসায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-সে গ্রহণযোগ্য নয়।
দলীল-
√মিযানুল ই’তিদাল-৩/৪৯-৫০
"ইয়াকুব বিন আব্দুল্লাহ আশআরী"
ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন-সে শক্তিশালী নয়
দলীল-
√ মিযানুল ই’তিদাল-৩/৩২৪
"ঈসা বিন জারিয়া"
১. আল্লামা ইয়াহইয়া বিন মায়ীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তার কাছে অগ্রহণীয় হাদিস আছে।
২. ইমাম নাসায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়।
৩. ইমাম নাসায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তার হাদিস পরিত্যাজ্য।
৪. আবু দাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়।
৫. আল্লামা জাহাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-তিনি দুর্বলদের মাঝে শামীল
দলীল-
√ মিযানুল ই’তিদাল-২/৩১১।
এছাড়া এ হাদিসটি “বুলুগুল মারাম” কিতাবে হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকেই বর্ণিত কিন্তু সেখানে রাকাত সংখ্যার কথা উল্লেখ নেই।
দলীল-
√ বুলুগুল মারাম-৪২-৪৩
এছাড়াও এ হাদিসে আরেকটি সমস্যা আছে, তাহল-এই হাদিসে বিতর ফরয হবার আশংকার কথা বলা হয়েছে অথচ অন্য সহীহ হাদিসে তারাবীহ ফরয হয়ে যাবার আশংকা উল্লেখে করা হয়েছে।
দলীল-
√ মিযানুল ই’তিদাল-২/৪২-৪৩
প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম এই হাদিস দিয়ে হুকুম প্রমাণিত করার ভার। এরকম দুর্বল হাদিস দিয়ে এরকম মতবিরোধপূর্ণ বিষয় কি প্রমাণিত হয়?
সালাফীদের তৃতীয় দলিল :
و حدثني عن مالك عن محمد بن يوسف عن السائب بن يزيد أنه قال أمر عمر بن الخطاب أبي بن كعب وتميما الداري أن يقوما للناس بإحدى عشرة ركعة ( موطأ مالك-98)
অর্থ: মুহাম্মদ বিন ইউসুফ সায়েব বিন ইয়াজীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওবাই বিন কাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তামীমে দারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে মানুষের সাথে ১১ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
দলীল-
√ মুয়াত্তা মালিক-৯৮।
উক্ত দলীলের জবাব :
এই হাদিস দিয়েও দলিল দেয়া ঠিক নয়। কারণ-
১. হাদিসটির শব্দে পরস্পর বিরোধীতা রয়েছে। যেমন এই হাদিসের সূত্রের একজন বর্ণনাকারী মুহাম্মদ বিন ইউসুফ তার সাগরীদ ৫ জন। তার মধ্যে ৩জন ১১ রাকাত আর ১জন ১৩ রাকাত ও ১জন ২১ রাকাতের বর্ণনা নকল করেন। এছাড়া যারা ১১রাকাতের কথা বর্ণনা তাদের বর্ণনার শব্দেও রয়েছে বিস্তর ফারাক। যথা-
ক. ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এনেছেন ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি ওবাই বিন কাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তামীমে দারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে মানুষের সাথ ১১ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
খ. হযরত ইয়াহইয়া আল কাত্তান বর্ণনা করেন-ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওবাই বিন কাব ও তামিমে দারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমাকে এর কাছে লোকদের একত্র করেন আর তারা দু’জন ১১ রাকাত নামায পড়াতেন।
গ. আব্দুল আজীজ বিন মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় এসেছে-আমরা হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর আমলে ১১ রাকাত নামায পড়তাম।
বর্ণনাকারীর বর্ণনার ঠিক নেই, সাথে সাথে যারা এক কথা বলেছেন তাদের বক্তব্যটিও পরস্পর বিরোধী এমন বর্ণনা পরিত্যাজ্য।
দলীল-
√ ইলাউস সুনান-৭/৪৮
২. এই বর্ণনাটি হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরেকটি সহীহ ও শক্তিশালী বর্ণনার বিপরিত। হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ২০ রাকাত তারাবীহের কথা ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার মুয়াত্তার ৪০ নং পৃষ্ঠায় ও হাফেজ ইবনে হাজার ফাতহুল বারীর ৪ নং খন্ডের ২১৯ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন। সুতরাং বুঝা গেল এই বর্ণনাটি আমলযোগ্য নয়।
৩. ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজেই এই বর্ণনাটি আমলযোগ্য মনে করেননি, তাই তিনি নিজে ৮ রাকাতের কথা বলেননা।
৪. যদি হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ১১ রাকাতের বর্ণনাটি সহীহ হত তাহলে পরবর্তীতে হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে এরকম বর্ণনা ও আমল প্রমাণিত হত, অথচ তাদের থেকে এরকম বর্ণনা প্রমাণিত নয়।
এসব কারনে উক্ত হাদীস শরীফও তারাবীর নামাজের দলীল ৮ রাকায়াত গ্রহনযোগ্য নয়।
অবশেষে একটি মজার বিষয়। লা-মাযহাবীরা ৮ রাকায়াত তারাবীহ সুন্নত মনে করে এবং তারা বিতর নামাজও পড়ে ১ রাকায়াত। যদি তাই হয়, ৮+১=৯ রাকায়াত হয়। কিন্তু তাদের ভাষ্যমতে বিতর সর মোট নামাজ ১১ রাকায়াত। তাহলে বাকি ২ রাকায়াত নামাজ কই গেলো ????