====================
সংকলনঃ মুহাম্মদ মহিউদ্দীন
[الحمد لله رب العلمين - والصلاه والسلام على رسوله الكريم]
স্রষ্টার সৃষ্টিজগতের মাঝে তাঁর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন, আমাদের আক্বা, সাইয়্যেদুল মুরসালিন, খাতামুন নাবিয়্যিন হুজুর পুরনূর হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ صلى الله عليه واله وسلم। পৃথিবী নামক ধরায় ইসলামকে পরিপূর্ণতা দান করতে তিনি প্রকাশিত হন শেষ নবী হিসেবে সকল নবীগণের শেষে। তাঁর অসংখ্য অগণিত মু’জিযার সমারোহ ঘটেছিল সেদিন পৃথিবীর বুঁকে। যা কিনা তাঁর প্রতি খোদা তায়ালা’র প্রদত্ত নবুওয়তেরই প্রমাণ বহন করে। এমন এমন সব মু’জিযা’র ধারক এবং বাহক ছিলেন তিনি, যা কিনা পূর্ববর্তী কোন আম্বিয়ায়ে আলাইহিমুস সালামকে দান করা হয়নি। এমন অজস্র মু’জিযার মধ্যে অন্যতম মু’জিযা ছিল, নবীজী صلى الله عليه واله وسلم’র কোন ছায়া ছিল না। যমীনে যখন হাটতেন, সূর্য বা চন্দ্র যা কিছুই হোক না কেন, কোন কিছুতেই তাঁর ছায়া পড়তো না। কারণ তিনি ছিলেন ‘নূর’। আর নূরের তো কোন ছায়া থাকে না। এ যেন কুর’আনের সেই আয়াতেরই বাস্তব প্রতিফলন, যেখানে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন,
অর্থাৎ নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা নূর এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে। (সূরা মায়িদা আয়াত- ১৫)
এ বিষয়ে আরো পরিস্কার হতে আমারা এখন প্রামাণ্য আকারে জানার চেষ্টা করবো। যাতে উল্লেখ থাকবে হাদীস শরীফ সহ আইয়াম্মায়ে কিরামের উক্তি সর্বশেষে থাকবে এ বিষয়ে বিরোধীগণের মুরুব্বীদের উক্তি।
আল্লামা নাসাফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘তাফসীরে মাদারীক’ গ্রন্থে খলিফাতুর রাসূল হযরত ওসমান رضى الله عنه হতে বর্ণনা করেন,
قال عثمان رضى الله عنه ان الله مااوقع ظلك على الارض لئلا يضع انسان قد مه على ذلك الظل
অনুবাদঃ হযরত উসমান رضى الله عنه হুজুর صلى الله عليه وسلم এর খেদমতে আরজ করলেন, আল্লাহ তা’আলা আপনার ছায়া যমীনে ফেলেননি যাতে কোন মানুষ তার উপর পা রাখতে না পারে।[১]
যুগবরেণ্য ইমাম সায়্যিদিনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক ও মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ ইবনে জাওযী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনে আব্বাস رضى الله عنه থেকে বর্ণনা করেন,
لم يكن للنبى صلى الله عليه وسلم ظل ولم يقم مع الشمس قط الاغلب ضوئه ضوء الشمس ولم يقم مع سراج قط الاغلب ضوئه ضوء السراج
অনুবাদঃ হুজুর صلى الله عليه وسلم-এর ছায়া ছিল না। তিনি যখনই সূর্যের মুখোমুখি দন্ডায়মান হতেন তাঁর নূর সূর্যের আলোর উপর প্রবল থাকত এবং প্রদীপের আলোতে দন্ডায়মান হলে তাঁর নূরের জ্যোতি ওটার দীপ্তিতে ম্লান করে দিত।[২]
তাবেয়ী হযরত যাক্ওয়ান رضى الله عنه বলেন,
انًّ رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرى له ظل فى شمس ولا قمر
অনুবাদঃ হুজুর صلى الله عليه وسلم -এর ছায়া না সূর্যালোকে দেখো যেতো না চন্দ্রালোকে।[৩]
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাব ‘খাসায়েসে কোবরায়’ হুজুর صلى الله عليه وسلم -এর ছায়া ছিল না এই বিষয়ে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন এবং এই যাক্ওয়ানের হাদীস বর্ণনা করতঃ বলেন,
قال ابن سبع من خصائصه صلى الله عليه وسلم انّ ظله كان لا يقع على الارض وانه كان نورا فكان اذا مضى فى الشمس او القمر لاينظر له ظل
অনুবাদঃ ইবনে সাবা বলেছেন, এটা হুজুর صلى الله عليه وسلم -এর বৈশিষ্ট্যাবলীর অন্তর্গত যে, হুজুর صلى الله عليه وسلم -এর ছায়া যমীনে পড়তো না এবং তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নূর। তিনি যখন সূর্যালোক কিংবা চন্দ্রালোকে চলতেন, তাঁর ছায়া দেখা যেতো না।[৪]
ইমাম কাযী আয়ায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
وما ذكر من انه كان لا ظل لشخصه فى شمس ولا قمر لانه كان نورا وان الذباب كان لايقع على جسده ولا ثيابه
অনুবাদঃ তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের প্রমাণাদির মধ্যে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁর শরীর মোবারকের ছায়া হতো না, না সূর্যালোকে না চন্দ্রালোকে। কারণ তিনি ছিলেন নূর । তাঁর শরীর ও পোষাকে মাছি বসত না।[৫]
আল্লামা ইমাম শিহাবুদ্দিন খিফাজী মিশরী তাঁর ব্যাখ্যায় বলেন,
হুজুর صلى الله عليه وسلم এর ছায়া মুবারক তাঁর মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে যমীনে ফেলা হয়নি। অথচ আশ্চর্য সমস্ত মানুষ তাঁর ছায়ায় বিশ্রাম করছে! অতঃপর বলেন, কুরআনুল কারীমের উক্তি মতে তিনি উজ্জ্বল নূর এবং নূরের কোন ছায়া থাকে না।[৬]
আল্লামা ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ কুস্তোলানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
لم يكن له صلى الله عليه وسلم ظل فى شمس ولا قمر
অনুবাদঃ বিশ্বকুল সরদার হুজুর صلى الله عليه وسلم’র ছায়া না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে ।[৭]
ইমাম মুহাম্মদ জুরকানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
لم يكن له صلى الله عليه وسلم ظل فى شمس ولا قمر لانه كان نورا
অনুবাদঃ হুজুর صلى الله عليه وسلم-এর ছায়া না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে। কারণ তিনি ছিলেন নূর।[৮]
আল্লামা হুসাইন ইবনে মুহা্ম্মদ দিয়ারেবকরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
لم يقع ظله على الارض ولا رائ له ظل فى شمس ولا قمر
অনুবাদঃ হুজুর صلى الله عليه وسلم’র ছায়া যমীনে পরতো না, না সূর্যালোকে দেখা যেত না চন্দ্রালোকে।[৯]
ইমাম ইবনে হাজার মাক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ومما يؤيد انه صلى الله عليه وسلم ضاء نورا انه كان اذا مشى فى الشمس و القمر لا يظهر له ظل لانه لا يظهر الا الكثيف وهو صلى الله عليه وسلم قد خلصه الله من سائر الكثا فات الجسمانية وسيره نورا صرفا لا يظهر له ظل اصلا
অনুবাদঃ হুজুর صلى الله عليه وسلم সম্পূর্ণ নূর হওয়ার সমর্থন এ থেকে হয় যে, সূযালোকে কিংবা চন্দ্রালোকে তাঁর ছাঁয়া হতো না। কারণ ছাঁয়া তো হয় জড় দেহের আর হুজুর صلى الله عليه وسلم কে আল্লাহ তা’আলা সকল শারীরিক জড়তা থেকে নিখুঁত করতঃ সম্পূর্ণ নূরে পরিপূর্ণ করেছিলেন। অতএব হুজুর صلى الله عليه وسلم -এর কোন ছাঁয়া ছিল না।[১০]
ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
হুজুর صلى الله عليه وسلم ’র ছায়া ছিল না। কারণ ইহ জগতে প্রত্যেক ব্যক্তির ছায়া তাঁর চেয়েও সূক্ষ্মতর হয়। যেহেতু صلى الله عليه وسلم অপেক্ষা সূক্ষ্মতম কোন বস্তু জগতে নাই, অতএব হুজুরের হুজুরের ছায়া কিরুপে হতে পারে ? [১১]
শায়খুল মুহাদ্দেসীন হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দীসে দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ونہ بود مراں حضرت صلی اللہ علیہ و سلم راسایہ نہ در آفتاب ونہ در قمر
অনুবাদঃ হুজুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم’র ছায়া না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে। [১২]
এতক্ষন তো আমরা এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরাম,আসলাফে কিরাম এবং আইয়াম্মায়ে মুসলিমাহ এর উক্তি সহ জানলাম। অতীব পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমান সমাজে নব্য আবির্ভূত হওয়া কিছু বিদ’আতী সম্প্রদায় দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট এই বিষয়টিকে অস্বীকার করে আসছে। তাই এবার জানবো এ বিষয়কে অস্বীকারকারীদের মুরুব্বীদের উক্তি।
বিরোধীগণদের মুরুব্বী আশরাফ আলী থানবী বলেছে,
یہ بات مشھور ہے کہ حضور صلی اللہ علیہ و سلم کے سایہ نہیں تھا (اسلئے کہ) ہمارے حضور صلی اللہ علیہ و سلم سرتا پا نور تھے۔
অনুবাদঃ এ কথা প্রসিদ্ধ যে, হুজুর পাক صلى الله عليه وسلم’র কোন ছায়া ছিল না। (আর তা এজন্য যে) আমাদের প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم আপাদমস্তক নূর ছিলেন।[১৩]
বিরোধীদের অন্য মুরব্বী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী বলেছে,
وحق تعالی ان جناب سلامہ علیہ رانور فرمود و بہ تواتر ثابت شد کہ اں حضرت عالی سایہ نہ داشتند ظاھر است کہ بجز نور ھمہ اجسام ظل می دارند
অনুবাদঃ আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নূর ফরমায়েছেন। আর সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, তাঁর ( صلى الله عليه وسلم) ছায়া ছিল না এবং প্রকাশমান যে, নূর ব্যতীত সমুদয় জড় দেহের ছায়া থাকে। [১৪]
আশা রাখছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে সত্যান্বেষী মহল উপকৃত হবেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সত্য বুঝার এবং তাতে অনড় থাকার তাওফিক দিন। আমিন,বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালিন صلى الله عليه وسلم।
তথ্যসূত্রঃ
———————————
১। তাফসীরে মাদারিক,পৃষ্ঠা-৩২১
২। জুরকানি আলাল মাওয়াহিব,খন্ড৪ পৃষ্ঠা-২২০,শরহে শামায়িল লিল্ মুনাদী,খন্ড ১ পৃষ্ঠা-৪৭
৩। তিরমিযী ফি নাওয়াদিরিল উসূল, যুরকানী আলাল মাওয়অহিব,খন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২৪০
৪। যুরকানী আলাল মাওয়াহিব,খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-২০২,খাসায়েসে কোবরা খন্ড-১ পৃষ্ঠা-৬৮
৫। শিফা শরীফ ,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-২৪২
৬। নাসীমুর রিয়ায
৭। জুরকানী আলাল মাওয়াহিব খন্ড-৪ পৃষ্ঠা-২২০
৮। জুরকানী খন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২২০
৯। কিতাবুল খামীস ফি আহওয়ালী আনফাসে নাফীস
১০। আফযালুল কুরা
১১। মাকতুবাত শরীফ
১২। মাদারিজুন্নবুয়ত,পৃষ্ঠা-২৬
১৩। শুকরুন নে’মাতি বিযিকরির রাহমাতির রাহমাতি
১৪। ইমদাদুস সলুক, পৃষ্ঠা-৮৫
(শেয়ার করুন) পোস্টটি http://www.rawshandalil.com/ কপি করা
RawshanDalil.com - রওশন দলীল
অর্থাৎ নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা নূর এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে। (সূরা মায়িদা আয়াত- ১৫)
এ বিষয়ে আরো পরিস্কার হতে আমারা এখন প্রামাণ্য আকারে জানার চেষ্টা করবো। যাতে উল্লেখ থাকবে হাদীস শরীফ সহ আইয়াম্মায়ে কিরামের উক্তি সর্বশেষে থাকবে এ বিষয়ে বিরোধীগণের মুরুব্বীদের উক্তি।
আল্লামা নাসাফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘তাফসীরে মাদারীক’ গ্রন্থে খলিফাতুর রাসূল হযরত ওসমান رضى الله عنه হতে বর্ণনা করেন,
قال عثمان رضى الله عنه ان الله مااوقع ظلك على الارض لئلا يضع انسان قد مه على ذلك الظل
অনুবাদঃ হযরত উসমান رضى الله عنه হুজুর صلى الله عليه وسلم এর খেদমতে আরজ করলেন, আল্লাহ তা’আলা আপনার ছায়া যমীনে ফেলেননি যাতে কোন মানুষ তার উপর পা রাখতে না পারে।[১]
যুগবরেণ্য ইমাম সায়্যিদিনা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক ও মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ ইবনে জাওযী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনে আব্বাস رضى الله عنه থেকে বর্ণনা করেন,
لم يكن للنبى صلى الله عليه وسلم ظل ولم يقم مع الشمس قط الاغلب ضوئه ضوء الشمس ولم يقم مع سراج قط الاغلب ضوئه ضوء السراج
অনুবাদঃ হুজুর صلى الله عليه وسلم-এর ছায়া ছিল না। তিনি যখনই সূর্যের মুখোমুখি দন্ডায়মান হতেন তাঁর নূর সূর্যের আলোর উপর প্রবল থাকত এবং প্রদীপের আলোতে দন্ডায়মান হলে তাঁর নূরের জ্যোতি ওটার দীপ্তিতে ম্লান করে দিত।[২]
তাবেয়ী হযরত যাক্ওয়ান رضى الله عنه বলেন,
انًّ رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرى له ظل فى شمس ولا قمر
অনুবাদঃ হুজুর صلى الله عليه وسلم -এর ছায়া না সূর্যালোকে দেখো যেতো না চন্দ্রালোকে।[৩]
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাব ‘খাসায়েসে কোবরায়’ হুজুর صلى الله عليه وسلم -এর ছায়া ছিল না এই বিষয়ে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন এবং এই যাক্ওয়ানের হাদীস বর্ণনা করতঃ বলেন,
قال ابن سبع من خصائصه صلى الله عليه وسلم انّ ظله كان لا يقع على الارض وانه كان نورا فكان اذا مضى فى الشمس او القمر لاينظر له ظل
অনুবাদঃ ইবনে সাবা বলেছেন, এটা হুজুর صلى الله عليه وسلم -এর বৈশিষ্ট্যাবলীর অন্তর্গত যে, হুজুর صلى الله عليه وسلم -এর ছায়া যমীনে পড়তো না এবং তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নূর। তিনি যখন সূর্যালোক কিংবা চন্দ্রালোকে চলতেন, তাঁর ছায়া দেখা যেতো না।[৪]
ইমাম কাযী আয়ায রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
وما ذكر من انه كان لا ظل لشخصه فى شمس ولا قمر لانه كان نورا وان الذباب كان لايقع على جسده ولا ثيابه
অনুবাদঃ তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের প্রমাণাদির মধ্যে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁর শরীর মোবারকের ছায়া হতো না, না সূর্যালোকে না চন্দ্রালোকে। কারণ তিনি ছিলেন নূর । তাঁর শরীর ও পোষাকে মাছি বসত না।[৫]
আল্লামা ইমাম শিহাবুদ্দিন খিফাজী মিশরী তাঁর ব্যাখ্যায় বলেন,
হুজুর صلى الله عليه وسلم এর ছায়া মুবারক তাঁর মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে যমীনে ফেলা হয়নি। অথচ আশ্চর্য সমস্ত মানুষ তাঁর ছায়ায় বিশ্রাম করছে! অতঃপর বলেন, কুরআনুল কারীমের উক্তি মতে তিনি উজ্জ্বল নূর এবং নূরের কোন ছায়া থাকে না।[৬]
আল্লামা ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ কুস্তোলানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
لم يكن له صلى الله عليه وسلم ظل فى شمس ولا قمر
অনুবাদঃ বিশ্বকুল সরদার হুজুর صلى الله عليه وسلم’র ছায়া না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে ।[৭]
ইমাম মুহাম্মদ জুরকানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
لم يكن له صلى الله عليه وسلم ظل فى شمس ولا قمر لانه كان نورا
অনুবাদঃ হুজুর صلى الله عليه وسلم-এর ছায়া না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে। কারণ তিনি ছিলেন নূর।[৮]
আল্লামা হুসাইন ইবনে মুহা্ম্মদ দিয়ারেবকরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
لم يقع ظله على الارض ولا رائ له ظل فى شمس ولا قمر
অনুবাদঃ হুজুর صلى الله عليه وسلم’র ছায়া যমীনে পরতো না, না সূর্যালোকে দেখা যেত না চন্দ্রালোকে।[৯]
ইমাম ইবনে হাজার মাক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ومما يؤيد انه صلى الله عليه وسلم ضاء نورا انه كان اذا مشى فى الشمس و القمر لا يظهر له ظل لانه لا يظهر الا الكثيف وهو صلى الله عليه وسلم قد خلصه الله من سائر الكثا فات الجسمانية وسيره نورا صرفا لا يظهر له ظل اصلا
অনুবাদঃ হুজুর صلى الله عليه وسلم সম্পূর্ণ নূর হওয়ার সমর্থন এ থেকে হয় যে, সূযালোকে কিংবা চন্দ্রালোকে তাঁর ছাঁয়া হতো না। কারণ ছাঁয়া তো হয় জড় দেহের আর হুজুর صلى الله عليه وسلم কে আল্লাহ তা’আলা সকল শারীরিক জড়তা থেকে নিখুঁত করতঃ সম্পূর্ণ নূরে পরিপূর্ণ করেছিলেন। অতএব হুজুর صلى الله عليه وسلم -এর কোন ছাঁয়া ছিল না।[১০]
ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
হুজুর صلى الله عليه وسلم ’র ছায়া ছিল না। কারণ ইহ জগতে প্রত্যেক ব্যক্তির ছায়া তাঁর চেয়েও সূক্ষ্মতর হয়। যেহেতু صلى الله عليه وسلم অপেক্ষা সূক্ষ্মতম কোন বস্তু জগতে নাই, অতএব হুজুরের হুজুরের ছায়া কিরুপে হতে পারে ? [১১]
শায়খুল মুহাদ্দেসীন হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দীসে দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ونہ بود مراں حضرت صلی اللہ علیہ و سلم راسایہ نہ در آفتاب ونہ در قمر
অনুবাদঃ হুজুর পুরনূর صلى الله عليه وسلم’র ছায়া না সূর্যালোকে ছিল, না চন্দ্রালোকে। [১২]
এতক্ষন তো আমরা এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরাম,আসলাফে কিরাম এবং আইয়াম্মায়ে মুসলিমাহ এর উক্তি সহ জানলাম। অতীব পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমান সমাজে নব্য আবির্ভূত হওয়া কিছু বিদ’আতী সম্প্রদায় দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট এই বিষয়টিকে অস্বীকার করে আসছে। তাই এবার জানবো এ বিষয়কে অস্বীকারকারীদের মুরুব্বীদের উক্তি।
বিরোধীগণদের মুরুব্বী আশরাফ আলী থানবী বলেছে,
یہ بات مشھور ہے کہ حضور صلی اللہ علیہ و سلم کے سایہ نہیں تھا (اسلئے کہ) ہمارے حضور صلی اللہ علیہ و سلم سرتا پا نور تھے۔
অনুবাদঃ এ কথা প্রসিদ্ধ যে, হুজুর পাক صلى الله عليه وسلم’র কোন ছায়া ছিল না। (আর তা এজন্য যে) আমাদের প্রিয় নবী صلى الله عليه وسلم আপাদমস্তক নূর ছিলেন।[১৩]
বিরোধীদের অন্য মুরব্বী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী বলেছে,
وحق تعالی ان جناب سلامہ علیہ رانور فرمود و بہ تواتر ثابت شد کہ اں حضرت عالی سایہ نہ داشتند ظاھر است کہ بجز نور ھمہ اجسام ظل می دارند
অনুবাদঃ আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নূর ফরমায়েছেন। আর সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, তাঁর ( صلى الله عليه وسلم) ছায়া ছিল না এবং প্রকাশমান যে, নূর ব্যতীত সমুদয় জড় দেহের ছায়া থাকে। [১৪]
আশা রাখছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে সত্যান্বেষী মহল উপকৃত হবেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সত্য বুঝার এবং তাতে অনড় থাকার তাওফিক দিন। আমিন,বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালিন صلى الله عليه وسلم।
তথ্যসূত্রঃ
———————————
১। তাফসীরে মাদারিক,পৃষ্ঠা-৩২১
২। জুরকানি আলাল মাওয়াহিব,খন্ড৪ পৃষ্ঠা-২২০,শরহে শামায়িল লিল্ মুনাদী,খন্ড ১ পৃষ্ঠা-৪৭
৩। তিরমিযী ফি নাওয়াদিরিল উসূল, যুরকানী আলাল মাওয়অহিব,খন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২৪০
৪। যুরকানী আলাল মাওয়াহিব,খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-২০২,খাসায়েসে কোবরা খন্ড-১ পৃষ্ঠা-৬৮
৫। শিফা শরীফ ,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-২৪২
৬। নাসীমুর রিয়ায
৭। জুরকানী আলাল মাওয়াহিব খন্ড-৪ পৃষ্ঠা-২২০
৮। জুরকানী খন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২২০
৯। কিতাবুল খামীস ফি আহওয়ালী আনফাসে নাফীস
১০। আফযালুল কুরা
১১। মাকতুবাত শরীফ
১২। মাদারিজুন্নবুয়ত,পৃষ্ঠা-২৬
১৩। শুকরুন নে’মাতি বিযিকরির রাহমাতির রাহমাতি
১৪। ইমদাদুস সলুক, পৃষ্ঠা-৮৫
(শেয়ার করুন) পোস্টটি http://www.rawshandalil.com/ কপি করা
RawshanDalil.com - রওশন দলীল