NOTICE:- ------------------ ----------------- ---------------------------

ইলমে গায়েবে

Zobair's photo.
আস-সালামু ’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহু …।
ইলমে গায়েবের মাসয়ালাটি খুবই সূক্ষ্ম, ঝুঁকিপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। বুঝলে পানির মতোই সহজ – নইলে, পাথরের
চেয়েও কঠিন ও মাকড়সার জালের চেয়েও জটিল মনে হবে এবং গোমরাহ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে! বহু আলেমকে দেখেছি, এ নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক করতে গিয়ে জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলেন। ফলে, নিজেরাতো গোমরাহ হনই – অনুসারীদেরও গোমরাহ করে ফেলেন; এমনকি অনেকে না বুঝে কুফরি মন্তব্য করে কাফেরের খাতায় পর্যন্ত নাম লিখিয়েছেন (মায়াজাল্লা)।



দেওবন্দীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি (৬৬৬টি) কিতাব লিখেও  ইলমে গায়েবের বিষয়টি না বুঝে, সায়্যিদুনা রাসূলে পাকের (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আযীমুশ শানে মারাত্মক ধৃষ্টতা করে বসেন এবং সুস্পষ্ট কুফরিতে নিমজ্জিত হন! তার চেয়েও বড় কথা, গোঁড়ামির কারণে সারাজীবনেও উনি সংশোধিত হন নি। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই এ অজ্ঞতা ও ভ্রান্তি উনার অনুসারীদের মাঝেও ব্যাপক ও মারাত্মকভাবে সংক্রামিত হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, সুন্নী ও ওয়াহাবীদের মাঝে সবচেয়ে বড় আকীদাগত মতভেদ বিরাজ করছে, এ ইলমে গায়েবের মাসয়ালা নিয়ে। কেননা, এর সাথে নবীজীর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজির-নাযির হওয়া, মীলাদ ও কিয়াম শরীফ এবং আওলিয়ায়ে কেরামের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম) দূর থেকে বা তাঁদের ইন্তেকালের পরেও জিন্দা-মুর্দা মুসলমানদেরকে সাহায্য করার বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ভাইসব! ইলমে গায়েবের আলোচনায় অংশ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং সেসবের উত্তর সম্পর্কে অবশ্যই পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।যেমন-
(১) ইলম বা জ্ঞান কতো প্রকার ও কী কী এবং প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞাইবা কী?
(২) ইন্দ্রিয় কাকে বলে এবং কতো প্রকার ও কী কী?
(৩) নাবা, নবুয়ত ও নবী শব্দের অর্থ ও মর্ম কী কী?
(৪) ইলমে গায়েবের ভান্ডারগুলো কী কী?
(৫) আলিমুল গায়েব শব্দের অর্থ কি এবং আল্লাহুতা’লা ছাড়া আর কেউ (গায়রুল্লাহ্) আলিমুল গায়েব হতে পারেন কিনা?
(৬) মহান আল্লাহপাক মহানবীকে (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইলমে গায়েব দান করেছেন কিনা এবং করে থাকলে, কতোটুকু ও কিভাবে দান করেছেন?
দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ আলেমেরই এ প্রশ্নগুলোর উত্তর সম্পর্কে সুস্পষ্ট, সঠিক ও সন্তোষজনক ধারণা নেই। ফলে, সুন্নী ও ওয়াহাবীদের মাঝে দূরত্ব দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। যাহোক, আমি এবার এগুলোর ব্যাপারে আলোকপাত করবো এবং এ বিষয়ে আমার প্রতিপক্ষের প্রতি চ্যালেঞ্জ থাকবে – গঠনমূলক যুক্তি দিয়ে আমার বক্তব্যগুলো খন্ডন করার!
প্রথম প্রশ্ন, ইলম বা জ্ঞান কতো প্রকার ও কী কী এবং প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞাইবা কী?
উত্তর হচ্ছে, ইলম বা জ্ঞান দু’ প্রকার। যথা- (১) ইলমে গায়েব বা অতীন্দ্রিয় জ্ঞান ও (২) ইলমে শাহাদাত বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান। আমাদের প্রাসঙ্গিক বিষয় হচ্ছে, ইলমে গায়েব; আর আনুষঙ্গিক বিষয় হলো, ইলমে শাহাদাত। ইলমে গায়েবের অর্থ কী? অনেকেই না বুঝে এর বাংলা অর্থ করেছে, অদৃশ্য জ্ঞান। ফলে, বাংলা ভাষা-ভাষীদের মাঝে ব্যাপক বিভ্রান্তি জন্ম নিয়েছে। মনে রাখতে হবে, গায়েবের সকল জ্ঞান অদৃশ্য হলেও সকল অদৃশ্য জ্ঞান গায়েব নয়। যেমন- আত্মা, আওয়াজ, গন্ধ, বাতাস, সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা, ঘৃণা, জ্ঞান, বুদ্ধি, আদর্শ, পরিকল্পনা, উদ্দেশ্য ইত্যাদি সবই অদৃশ্য, কিন্তু ইলমে গায়েবের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং গায়েবের একটি অর্থ অদৃশ্য হলেও ইলমে গায়েবের বাংলা অর্থ “অদৃশ্য জ্ঞান” মনে করা সঠিক নয়, বরং বিভ্রান্তিকর। এর সঠিক বাংলা অর্থ হচ্ছে, অতীন্দ্রিয় জ্ঞান; অর্থাৎ যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা ইন্দ্রিয়ের গোচরীভূত নয় – তা-ই হচ্ছে, ইলমে গায়েব। ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (’আলাইহির রাহমাহ) তাঁর তাফসীরে কবীরে, ইমাম নাসিরুদ্দীন বয়দ্ববী (’আলাইহির রাহমাহ) তাঁর তাফসীরে বয়দ্বভীতে, শাইখ ইসমাঈল হাক্কী আফেন্দী (’আলাইহির রাহমাহ) তাঁর তাফসীরে রূহুল বয়ানে ও কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী (’আলাইহির রাহমাহ) তাঁর তাফসীরে মাযহারীতে প্রমুখ মুফাসসির সূ্রা আল-বাকারার শুরুতে গায়েবের এ অর্থই লিখেছেন। সুতরাং এটিই গায়েবের সঠিক অর্থ। “ইলম” ও “গায়েব” শব্দ দু’টি একটি অপরটির সাথে আরবি ব্যাকরণের আল-ইদ্বাফার নিয়ম অনুসারে, “মুদ্বাফ” ও “মুদ্বাফু ইলাইহ” হিসেবে, অর্থাৎ عِلْمُ الْغَيْبِ “ইলমুল গাইব” আকারে কুরআন মজীদের একটিমাত্র জায়গায় রয়েছে (সূরা নাজম: ৩৫)।কখনো কখনো (মোট তিনবার) কুরআন মজীদেأَنبَاءِ الْغَيْبِ “আনবাউল গাইব” কথাটিও এসেছে (সূরা আলে ইমরান: ৪৪, সূরা হুদ: ৪৯ ও সূরা ইউসূফ: ১০২)। “আনবাউ” শব্দটি “নাবা” শব্দের বহুবচন – যার অর্থ হলো, খবর, বার্তা, সংবাদ ইত্যাদি। সুতরাং “আনবাউল গায়েব” মানে, অতীন্দ্রিয় সংবাদাদি। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, কুরআন করীমে এ বহুবচন বাচক “আনবাউ (খবরাদি)” শব্দটি “গায়েব” শব্দের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে (মুদ্বাফ হিসেবে) ব্যবহৃত হলেও গায়েবের বিপরীত “শাহাদাত” শব্দের সাথেও কখনো ব্যবহৃত হয় নি। সুতরাং আল-কুরআনে “আনবাউ” শব্দটি গায়েব বা অতীন্দ্রিয় বিষয়ের সাথেই সম্পৃক্ত; শাহাদাত বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। আর ইলমে গায়েবের বিপরীত হচ্ছে, ইলমে শাহাদাত। এর অর্থ হচ্ছে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বা ইন্দ্রিয়বদ্ধ জ্ঞান, অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জিত হয় – তা-ই হচ্ছে, শাহাদাতের ইলম।

দ্বিতীয় প্রশ্ন, ইন্দ্রিয় কাকে বলে এবং কতো প্রকার ও কী কী?
উত্তর হচ্ছে, যেসব অঙ্গ বা শক্তি দিয়ে পদার্থের বা বাইরের বিষয়ের উপলব্ধি বা জ্ঞান জন্মে এবং কাজ করা যায় – ওসব অঙ্গ বা শক্তির প্রতিটিকে ইন্দ্রিয় বলে। মানুষের ইন্দ্রিয় মোট চোদ্দটি। যথা- চোখ, কান, নাক, জিহ্বা ও ত্বক (চামড়া) – এ পাঁচটিকে জ্ঞানেন্দ্রিয়; বাক (কথা), হাত, পা, পায়ু (মলদ্বার) ও উপস্থ (লিঙ্গ বা যোনি) – এ পাঁচটিকে কর্মেন্দ্রিয় এবং মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার ও চিত্ত – এ চারটিকে অন্তরিন্দ্রিয় বলা হয় (সূত্র: ব্যবহারিক বাংলা অভিধান – বাংলা একাডেমী)।সুতরাং ঐ চোদ্দটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যেসব জ্ঞান অর্জিত হয় – তা কখনোই গায়েবের ইলম নয়, বরং ওগুলো সবই ইলমে শাহাদাত বা ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান। আর ঐ চোদ্দটি ইন্দ্রিয় ছাড়া যেসব জ্ঞান আমরা লাভ করেছি বা করি – সেগুলোই হচ্ছে, গায়েবের ইলম। যেমন- আল্লাহুতা’লার অস্তিত্ব ও পরিচিতি, আত্মার স্বরূপ, আরশ, কুরসি, লওহ, কলম, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ, হুর, ফেরেশতা ও জ্বীনের অস্তিত্ব ও পরিচিতি, হাশর-নশর, মিজান, মাকামে মাহমুদা, সিদরাতুল মুন্তাহা, আলমে আরওয়াহ্ বা আত্মার জগতের বিবরণ, আলমে বারঝাখ বা কবরের জগতের বর্ণনা, আখেরাতের জীবনের বিবরণ, বায়তুল মা’মুর, তাকদীর, পুনরুত্থান, পুলসিরাত, ভবিষ্যতের বর্ণনা ইত্যাদি সংক্রান্ত সকল জ্ঞানই ইলমে গায়েব বা অতীন্দ্রিয় জ্ঞান। কেননা, মানুষের চোদ্দটি ইন্দ্রিয় দিয়ে কোনভাবেই এগুলোর নাগাল পাওয়া যায় না। আধুনিক বিজ্ঞানও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি দিয়ে এসব জ্ঞানের কোন সন্ধান পায় নি; বরং আম্বিয়ায়ে কেরাম (’আলাইহিমুস্ সালাম) আমাদেরকে এসব অতীন্দ্রিয় বিষয় জানিয়েছেন। তাই, ওহীও ইলমে গায়েবের অংশ (সূরা আলে ইমরান: ৪৪ ও সূরা হুদ: ৪৯)।কেননা, ওহীর জ্ঞানও ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে হাসিল করা যায় না; যদি যেত – তাহলে, যে কেউ তার ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে নবী হতে পারতো।
তৃতীয় প্রশ, নাবা, নবুয়ত ও নবী শব্দের অর্থ ও মর্ম কী কী?
উত্তর হচ্ছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত আরবী-বাংলা অভিধানের দ্বিতীয় খন্ডের ৯০৪ নং পৃষ্ঠায় “নাবা” শব্দের বাংলা অর্থ লেখা হয়েছে, খবর, সংবাদ, তথ্য, রিপোর্ট। ৯০৭ নং পৃষ্ঠায় “নবুয়ত” শব্দের বাংলা অর্থ লেখা হয়েছে, “আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশী অনুপ্রেরণার মাধ্যমে অদৃশ্য বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া, আল্লাহতা’লা এবং তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা, নবীর পদ। প্রকাশ থাকে যে, ইহা নাবা থেকে নির্গত।” পরের (৯০৮ নং) পৃষ্ঠায় “নবী” শব্দের বাংলা অর্থ লেখা হয়েছে, “নবী, রাসূল, আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ, আল্লাহতা’লা এবং তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী সম্পর্কে তথ্য প্রদানকারী, আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশী অনুপ্রেরণার মাধ্যমে অদৃশ্য বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংবাদ দানকারী, উঁচু ভূমিকেও নবী বলা হয়।” সুতরাং “নবুয়ত” নিঃসন্দেহে ইলমে গায়েব বা অতীন্দ্রিয় জ্ঞানের অংশ এবং নবী শব্দের অর্থ, গায়েব বা অতীন্দ্রিয় বিষয়ের সংবাদদাতা। নবুয়ত যদি ইলমে গায়েবের অংশ না হয়ে ইলমে শাহাদাতের অংশ হতো – তাহলে, পিথাগোরাস, সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, আল-কিন্দী, আল-ফারাবী, ইবনে সীনা, ওমর খৈয়াম, রজার বেকন, রেনে ডেকার্টে, লাইবোনিজ, ভলটেয়ার, ইমানুয়েল কান্ট, হেগেল, হার্বার্ট স্পেন্সার, নীটসে, বার্গসো, বার্টান্ড রাসেল প্রমুখ দার্শনিকেরা কিংবা আর্কিমিডিস, জালিনুস, জাবির ইবনে হাইয়ান, আল-হাজেন, আল-বেরুনী, কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, নিউটন, এডিসন, জগদীশ চন্দ্র বসু, আইনস্টাইন, ওপেনহেইমার প্রমুখ বিজ্ঞানীরা নির্দ্বিধায় নবী হতে পারতেন। তদুপরি, ইংরেজিতে নবীকে Prophet বলা হয়। Prophet শব্দটি Prophecy বা Prophesy শব্দ থেকে এসেছে। Prophecy শব্দটি Noun বা বিশেষ্য – যা অর্থ হচ্ছে, ভবিষ্যদ্বাণী এবং Prophesy শব্দটি Verb বা ক্রিয়া – যার অর্থ হচ্ছে, ভবিষ্যদ্বাণী করা। তাই, Prophet শব্দের অর্থ হচ্ছে, ভবিষ্যদ্বক্তা। সুতরাং আম্বিয়ায়ে কেরাম (’আলাইহিমুস্ সালাম) হচ্ছেন, গায়েবের বা অতীন্দ্রিয় বিষয়ের সংবাদদাতা। কেননা, যে কোন সংবাদদাতাকে নবী বলা যায় না। উল্লিখিত দার্শনিক ও বিজ্ঞানীগণ আমাদেরকে অনেক নতুন নতুন সংবাদ, তথ্য বা জ্ঞানের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও তাঁরা কোনভাবেই নবী নন।
চতুর্থ প্রশ, ইলমে গায়েবের ভান্ডারগুলো কী কী?
উত্তর হচ্ছে, ইলমে গায়েবের দু’ রকমের ভান্ডার রয়েছে; যথা-
উৎস : উৎস হচ্ছেন, আল্লাহ সুবহানাহুতা’লা নিজেই। কেননা, তিনি হচ্ছেন, অতীন্দ্রিয় পরম সত্তা। তাই, তিনি ইলমে গায়েবের সার্বিক বা পরম ভান্ডার। তদুপরি, তাফসীরে ইবনে আব্বাসে সূরা আল-বাকারার শুরুতে গায়েবের অন্যতম তাফসীরে লেখা হয়েছে, “গায়েব অর্থ আল্লাহুতা’লা স্বয়ং।”
সূত্র : আর সূত্র হচ্ছে, মহান আল্লাহপাকের প্রদত্ত বিশেষ বিশেষ ভান্ডার; যেমন- (ক) সাহেবে কুরআন সায়্যিদুনা হুজুরে পুরনূর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম), (খ) লওহে মাহফুয, (গ) কুরআন মজীদ, (গ) হাদীছ শরীফ, (ঘ) অন্যান্য নবী (’আলাইহিমুস্ সালাম), (ঙ) অন্যান্য আসমানি কিতাব, (চ) আওলিয়ায়ে কেরাম (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম) ইত্যাদি।
ইলমে গায়েব ও ইলমে শাহাদাতের প্রধান ভান্ডার বা সবচেয়ে বড় সূত্র হচ্ছেন, সায়্যিদুনা রাসূলে পাক (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তাঁর সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন:
وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّـهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهُ لَهَمَّت طَّائِفَةٌ مِّنْهُمْ أَن يُضِلُّوكَ وَمَا يُضِلُّونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ ۖ وَمَا يَضُرُّونَكَ مِن شَيْءٍ ۚ وَأَنزَلَ اللَّـهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ ۚ وَكَانَ فَضْلُ اللَّـهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا ﴿١١٣﴾
(ওগো আমার পেয়ারা নবী!) আপনার প্রতি আল্লাহর ফযল (দয়া) ও রহমত (মেহেরবানী) রয়েছে বলেই, যারা আপনাকে গোমরাহ্ করতে চাচ্ছিলো – তারা বরং নিজেদেরকেই গোমরাহ করবে এবং ওরা আপনার কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। আর আল্লাহ্ আপনার প্রতি কিতাব ও হেকমত নাযিল করেছেন এবং আপনি যা জানতেন না – তা আপনাকে শিখিয়েছেন। কেননা, আপনার প্রতি আল্লাহর অপরিসীম করুণা রয়েছে (সূরা নিসা: ১১৩) । এখানে আল্লাহুতা’লা দ্ব্যর্থহীন ও শর্তহীনভাবে ইরশাদ করেছেন যে, “আপনি যা জানতেন না – (আল্লাহুতা’লা) তা আপনাকে শিখিয়েছেন।” এতে ইলমে গায়েব ও ইলমে শাহাদাত – উভয়ই শামিল রয়েছে। এ বিষয়ে ৬নং প্রশ্নের উত্তরে বিস্তারিত আলোচনা করবো, ইন শা আল্লাহুতা’লা।
তদুপরি, আল্লাহুতা’লা আরো ঘোষণা করেছেন:وَمَا هُوَ عَلَى الْغَيْبِ بِضَنِينٍ ﴿٢٤﴾আর তিনি (নবী) গায়েবের ব্যাপারে কৃপণ নন (সূরা তাকভীর: ২৪)।
সুতরাং যদি নবীজীর (’আলাইহিস্ সলাতু ওয়াস সালাম) কাছে গায়েবের এলেম না থাকতো – তাহলে, এমন কথা মহান আল্লাহপাক কখনোই বলতেন না। সর্বোপরি, নবীজীকে (’আলাইহিস্ সলাতু ওয়াস সালাম) ইলমে গায়েবের সৃষ্ট উৎসও বলা যেতে পারে। এ বিষয়েও ৬নং প্রশ্নের উত্তরে বিস্তারিত আলোকপাত করবো, ইন শা আল্লাহুতা’লা।
ইলমে গায়েবের অন্যতম ভান্ডার বা সূত্র হচ্ছে, লওহে মাহফুয। কেননা,
প্রথমত, কুরআন শরীফ লওহে মাহফুযেও সংরক্ষিত রয়েছে (সূরা বুরূজ: ২১-২২)
দ্বিতীয়ত, মাফাতিহুল গায়েব বা গায়েবের চাবিগুচ্ছের খবর লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ রয়েছে (সূরা আন’য়াম: ৫৯)।
তৃতীয়ত, ছোট-বড় সব কিছুই লওহে মাহফুযে রয়েছে (সূরা ক্বামার: ৫৩ ও সূরা সাবা: ৩)।
চতুর্থত, প্রতিটি জিনিস লওহে মাহফুযে লিখিত ও সংরক্ষিত রয়েছে (সূরা ইয়াসীন: ১২)।
পঞ্চমত, মহান আল্লাহপাক যখন ফেরেশতাগণকে (’আলাইহিমুস সালাম) বলেছিলেন যে, তিনি পৃথিবীতে খলীফা বা প্রতিনিধি সৃষ্টি করবেন – তখন তাঁরা মানুষ জাতির নেতিবাচক দিকটি তুলে ধরে তাঁকে নিষেধ করেছিলেন (সূরা আল-বাকারাহ: ৩০)।মানুষ জাতির এ ভবিষ্যৎ কর্মফল সম্পর্কে ফেরেশতাগণ এ আংশিক ধারণা বা জ্ঞান লাভ করেছিলেন, লওহে মাহফুয থেকেই।
ষষ্ঠত, হাদীছ শরীফে রয়েছে যে, সায়্যিদুনা হায়াতুন্নবী (’আলাইহিস্ সলাতু ওয়াস সালাম) পৃথিবীতে তাশরীফ নিয়ে আসার আগে দুষ্ট জ্বীন বা শয়তানরা লওহে মাহফুযে উঁকিঝুঁকি মেরে ভবিষ্যতের জ্ঞান জেনে নিয়ে গণক ও জ্যোতিষদেরকে তা জানিয়ে দিতো। এভাবেই হযরত মূসার (’আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে ফেরাউনের গণকরা আগাম খবর পেয়েছিলো। অবশ্য নূর নবীজীর (’আলাইহিস্ সলাতু ওয়াস সালাম) দুনিয়াতে তাশরীফ আনার পরে, এ প্রক্রিয়া বা ধারা (শয়তানদের লওহে মাহফুযে উঁকিঝুঁকি মারা) বন্ধ হয়ে যায়।
ইলমে গায়েব ও ইলমে শাহাদাতের অন্যতম ভান্ডার বা প্রধানতম সূত্র হচ্ছে, কুরআন মজীদ।
প্রথমত, লওহে মাহফুযে যা কিছু লিপিবদ্ধ রয়েছে – আল-কুরআনেও তা লিপিবদ্ধ রয়েছে। মহান আল্লাহপাক শর্তহীন ও দ্ব্যর্থহীনভাবে ফরমান: مَّا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِن شَيْءٍ ۚআমি কিতাবে কোন কিছুই বাদ দেই নি (সূরা আন’য়াম: ৩৮) তাফসীরে ইবনে আব্বাসে এ আয়াতে কারীমার তাফসীরে লিখা আছে, “লওহে মাহফুযে আমি যা কিছু লিখে রেখেছি – তার কোন কিছুই বাদ দেই নি; সবই কুরআনে বর্ণনা করেছি।
দ্বিতীয়ত, পবিত্র কুরআনে প্রতিটি জিনিসেরই (ইলমে গায়েব ও ইলমে শাহাদাত) স্পষ্ট ও বিস্তারিত বিবরণ ও ব্যাখ্যা রয়েছে (সূরা ইউসূফ: ১১১ ও সূরা নাহল: ৮৯)।
ইলমে গায়েব ও ইলমে শাহাদাতের অন্যতম ভান্ডার বা সূত্র হচ্ছে, হাদীছ শরীফ।
প্রথমত, যেহেতু, সায়্যিদুনা নবী করীম (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইলমে গায়েব ও ইলমে শাহাদাতের প্রধান ভান্ডার বা সবচেয়ে বড় সূত্র – সেহেতু, তাঁর পবিত্র জবান, কাজ, অনুমোদন, আচরণ ও হাদীছে কুদসি নিঃসন্দেহে গায়েব ও শাহাদাতের জ্ঞান-ভান্ডার।
দ্বিতীয়ত, “নবী” অর্থ যেমনি গায়েবের খবরদাতা – ওহী বা প্রত্যাদেশও তেমনি গায়েবের বিষয় (সূরা আলে ইমরান: ৪৪ ও সূরা হুদ: ৪৯) – যা গায়েবের উৎস মহান আল্লাহপাকের তরফ থেকে আসা। আর কুরআন মজীদ ও হাদীছ শরীফ – উভয়ই ওহী। কুরআন শরীফ ওহীয়ে মাতলু বা তেলাওয়াৎযোগ্য ওহী এবং হাদীছ শরীফ ওহীয়ে গায়রে মাতলু বা অতেলাওয়াৎযোগ্য ওহী।
তৃতীয়ত, হাদীছ শরীফে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দিন-তারিখ, কিয়ামতের আলামত, হযরত ঈসা ও ইমাম মাহদীর (’আলাইহিমাস সালাম) আগমন, দাজ্জাল ও দাব্বাতুল আরদের আবির্ভাব, পশ্চিমে সূর্যোদয়, হযরত ইস্রাফীলের (’আলাইহিস সালাম) শিঙ্গায় ফুৎকার, ফেরেশতা, হুর, জ্বীন, শয়তান, বেহেশত, দোযখ, পুলসিরাত, শাফায়াত, আলমে বারঝাখ, হাশর-নশর ইত্যাদি সংক্রান্ত বহু ভবিষ্যৎবাণী ও বর্ণনা রয়েছে – যেগুলো সন্দেহাতীতভাবে ইলমে গায়েবের অন্তর্গত।
ইলমে গায়েবের অন্যতম ভান্ডার বা সূত্র হচ্ছেন, অন্যান্য নবী (’আলাইহিমুস সালাম).
প্রথমত, আল্লাহুতা’লা তাঁর মনোনীতি রাসূলগণকে (’আলাইহিমুস সালাম) গায়েব জানিয়েছেন (সূরা আলে ইমরান: ১৭৯ ও সূরা জ্বীন: ২৬-২৮)
দ্বিতীয়ত, “নবী” শব্দের অর্থই হচ্ছে, গায়েবের খবরদাতা।
তৃতীয়ত, যেহেতু প্রত্যেক নবী (’আলাইহিমুস সালাম) আমাদের প্রাণের চেয়েও প্রিয় নবীজীর (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি ঈমান আনতে এবং তাঁকে সাহায্য করতে মহান আল্লাহপাকের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ (সূরা আলে ইমরান: ৮‌১ ও ৮২) – সেহেতু, তাঁরা প্রত্যেকেই যাঁর যাঁর উম্মতকে মীলাদুন্নবীর (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) সুসংবাদ দিয়ে গেছেন বা ভবিষ্যৎবাণী (গায়েব) করে গেছেন।
চতুর্থত, আল্লাহুতা’লা হযরত আদমকে (’আলাইহিস সালাম) প্রতিটি জিনিসের (গায়েব ও শাহাদাতের) নাম শিখিয়েছেন (সূরা আল-বাকারাহ: ৩১).
পঞ্চমত, হাদীছ শরীফে রয়েছে, প্রত্যেক নবী (’আলাইহিমুস সালাম) যাঁর যাঁর উম্মতকে দজ্জালের ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন বা ভবিষ্যৎবাণী (গায়েব) করে গেছেন।
ষষ্ঠত, পবিত্র মেরাজের রজনীতে সায়্যিদুনা শাফীউল মুযনিবীন (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মহান আল্লাহপাকের তরফ থেকে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের তোহফা নিয়ে ফিরছিলেন – তখন, হযরত মূসা (’আলাইহিস সালাম) “উম্মতে মুহাম্মাদী এতো নামাজ আদায় করতে পারবে না” – মর্মে ভবিষ্যৎবাণী (গায়েব) করেছিলেন এবং তাঁকে বারবার নামাজ কমিয়ে আনতে অনুরোধ করেন।
সপ্তমত, আল্লাহুতা’লা হযরত খিজিরকে (’আলাইহিস সালাম) ইলমে লাদুন্নী দান করেছেন (সূরা আল-কাহাফ: ৬৫)।
তাফসীরে তাবারীতে হযরত ইবনে আব্বাসের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহু) সূত্রে, তাফসীরে বয়দ্বাভী, নাসাফী, খাঝিন ও তাফসীরে রূহুল বয়ানে এ আয়াতে কারীমার তাফসীরে লিখা হয়েছে যে, ইলমে লাদুন্নী মানে ইলমে গায়েব – যা আল্লাহুতা’লা হযরত খিজিরকে (’আলাইহিস সালাম) দান করেছেন।
ইলমে গায়েবের অন্যতম ভান্ডার বা সূত্র হচ্ছে, অন্যান্য আসমানি কিতাব।
প্রথমত, পবিত্র কুরআন আগেকার আসমানি কিতাবগুলোর সমর্থক (সূরা ইউনূস: ৩৭ ও সূরা ইউসূফ: ১১১)
দ্বিতীয়ত, আসমানি কিতাব মানেই হচ্ছে, ওহীর সম্ভার। আর ওহী মানেই হলো, গায়েবের বিষয় (সূরা আলে ইমরান: ৪৪ ও সূরা হুদ: ৪৯),
তৃতীয়ত, সেগুলোতে মহান আল্লাহপাকের পরিচিত, নবীজীর (’আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম) আগমনের ভবিষ্যৎবাণী, কবর ও পরকালের পুরস্কার ও শাস্তি, বেহেশত ও দোযখের বিবরণ, ফেরেশতাগণের কর্মকান্ড, কিয়ামত ও হাশর-নশরের বর্ণনা ইত্যাদি ছিলো।
ইলমে গায়েব ও ইলমে শাহাদাতের অন্যতম ভান্ডার বা সূত্র হচ্ছেন, আওলিয়ায়ে কেরাম (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম)।
প্রথমত, কুরআন শরীফে পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীনভাবেই রয়েছে যে, আল্লাহতা’লা তাঁর ওলীদেরকেও গায়েব জানিয়ে দেন বা দান করেন। যেমন- তিনি হযরত মরিয়মকে (’আলাইহাস্ সালাম) জানিয়েছেন (সূরা আলে ইমরান: ৪২, ৪৩, ৪৫-৪৭ ও সূরা মরিয়াম: ২৪-২৬)। অথচ তিনি নবী ছিলেন না, বরং ওলীয়া ছিলেন।
দ্বিতীয়ত, আওলিয়ায়ে কেরামের কারামত সত্য। আর এ কারামতকে চোদ্দ ইন্দ্রিয় দিয়ে প্রমাণ করা যায় না, বরং বিশ্বাস করতে হয়।
তৃতীয়ত, বহু ওলী কাশফ বা স্বজ্ঞার অধিকারী ছিলেন এবং তাঁরা ইলহাম লাভ করতেন। আর কাশফ ও ইলহামও অতীন্দ্রিয় জ্ঞান বা গায়েবের বিষয়। কেননা, এগুলোকে ইন্দ্রিয় দিয়ে প্রমাণ বা অনুধাবন করা যায় না।
চতুর্থত, বহু ওলী কাশফুল কুবুরও ছিলেন – যাঁরা কবরবাসীদের হাল-হাকীকত জানতে পারতেন। গাউছে পাক ও খাজা গরীবে নেওয়াজ প্রমুখের (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা ’আনহুম) বিশ্বস্ত জীবনীগুলো এর সাক্ষ্য বহন করছে; যেমন- বাহজাতুল আসরার, সিয়ারুল আকতাব, আনিসুল আরওয়াহ, সিররুল আরিফীন, খাজিনাতুল আসফিয়া ইত্যাদি।
পঞ্চম প্রশ, আলিমুল গায়েব শব্দের অর্থ কি এবং আল্লাহুতা’লা ছাড়া আর কেউ (গায়রুল্লাহ্) আলিমুল গায়েব হতে পারেন কিনা?
উত্তর হচ্ছে, আলিমুল গায়েব শব্দের অর্থ হলো, গায়েবজান্তা এবং অন্য কেউ (গায়রুল্লাহ্) আলিমুল গায়েব হতে পারেন। যারা বলে, আল্লাহুতা’লা ছাড়া অন্য কেউ আলিমুল গায়েব হতে পারেন না – তারা “আলিমুল গায়েব” শব্দের অর্থ, মর্ম ও তাৎপর্য বোঝেন নি, বরং তারা আলিমুল গায়েবকে মালিকুল গায়েব হিসেবেই ভুল বুঝেছেন; যদিও মহান আল্লাহপাক সন্দেহাতীতভাবে মালিকুল গায়েব ও মালিকুশ শাহাদাত। কিন্তু তাই বলে, আলিমুল গায়েবের অর্থ কখনোই মালিকুল গায়েব নয়, বরং এর অর্থ হচ্ছে, গায়েবের আলেম কিংবা গায়েবজান্তা বা গায়েবজ্ঞাতা তথা অতীন্দ্রিয় জ্ঞানের অধিকারী। সুতরাং যিনি গায়েবের খবর জানেন – তিনিই আলিমুল গায়েব। যেমন- আল্লাহুতা’লা ফরমান: وَاللَّـهُ الْغَنِيُّ وَأَنتُمُ الْفُقَرَاءُ ۚ
আর আল্লাহ্ ধনী এবং তোমরা (বান্দারা) ফকীর (সূরা মুহাম্মাদ: ৩৮). কিন্তু তার পরেও ধন-সম্পদের অধিকারী বান্দাকে নির্দ্বিধায় ধনী বলা যায়। সুতরাং গণী তথা ধনী শব্দটি যেমনি আল্লাহুতা’লার একক কোন গুণ নয়, বরং বান্দাও ধনী হতে পারে – তেমনি, বান্দা আলিমুল গায়েবও হতে পারে। আরেকটু পরিষ্কার ও সহজ করে বলছি: ধনী হওয়ার জন্যে যেমনি আসমান-জমীনের সকল ধন-ঐশ্বর্যের মালিক হওয়ার দরকার নেই, বরং নেসাব পরিমাণ তথা আংশিক সম্পদের মালিক হলেই চলে – তেমনি, আলিমুল গায়েব হওয়ার জন্যেও সকল গায়েব জানার দরকার নেই, বরং আংশিক জানলেই যথেষ্ট।
যারা আরবি ব্যাকরণ ভালোভাবে জানেন – তারা লক্ষ্য করুন, কালামুল্লাহ শরীফে মহান আল্লাহপাকের আযীমুশ্ শানে “আলিমুল গায়েব” কথাটি মোট ১৩ (তেরো) বার এবং “আল্লামুল গুয়ূব” কথাটি মোট চারবার (সূরা আল-মায়েদা: ১০৯ ও ১১৬, সূরা তাওবা: ৭৮ ও সূরা সাবা: ৪৮) ব্যবহৃত হয়েছে। এবার আসুন, প্রাসঙ্গিক শব্দগুলো নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করি। “আলিম” শব্দটির আক্ষরিক বা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, জ্ঞানী বা জান্তা। এটি একটি ইসমু ফায়েল বা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য – যা ধর্মীয় জ্ঞানে অভিজ্ঞ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও অহরহ ব্যবহৃত হয়। আর “আল্লামু” শব্দটি আলিম শব্দের ইসমু মুবালাগাহ (Hyperbole) – যার আভিধানিক অর্থ হলো, মহাজ্ঞানী। তেমনি, “গায়েব” শব্দটি মুফরাদ বা ওয়াহিদ, অর্থাৎ একবচনবাচক একটি শব্দ। এর বহুবচন হচ্ছে, “গুয়ূব”।
সুতরাং আলিমুল গায়েব-এর আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে, গায়েবজান্তা; আর আল্লামুল গুয়ূব-এর আভিধানিক অর্থ হলো, সকল গায়েব সম্পর্কে মহাজ্ঞানী; অর্থাৎ “আলিমুল গায়েব” কথাটি সাধারণ অর্থ বোঝাচ্ছে; আর “আল্লামুল গুয়ূব” কথাটি ব্যাপক অর্থ বোঝাচ্ছে! কিন্তু কালামে পাকে আল্লাহ্ সুবহানাহুতা’লার আযীমুশ্ শানে এ দু’ রকম কথাই ব্যবহারের উদ্দেশ্য কী – যেখানে একটি দিয়ে সাধারণ এলেমদার আর আরেকটি দিয়ে বেশি এলেমদার বোঝাচ্ছে? আরো স্পষ্ট করে বললে, মহান আল্লাহপাকের জন্যে যদি শুধু আলিমুল গায়েব হওয়াই যথেষ্ট হতো – তাহলে, এর চেয়েও ব্যাপক অর্থবোধক কথা “আল্লামুল গুয়ূব” কথাটি তাঁর নিজের শানে কুরআন মজীদে ব্যবহার করার হেতু কী? আল্লাহুতা’লার জ্ঞান বাড়ে-কমে নাকি (মায়াজাল্লা)? এর উদ্দেশ্য বা হেতু একটিই। আর তা হচ্ছে, বান্দার ক্ষেত্রে আলিমুল গায়েব শব্দটি ব্যবহার করা জায়েজ বলেই মহান আল্লাহপাক মাঝে মাঝে আলিমুল গায়েবের চেয়েও ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ (আল্লামুল গুয়ূব) নিজের জন্যে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু গোমরাহ ওয়াহাবী সম্প্রদায় আলিমুল গায়েব ও আল্লামুল গুয়ূবের পার্থক্য ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে অক্ষম! এ পর্যায়ে আমার বক্তব্য খুবই পরিষ্কার, অর্থাৎ “আল্লামুল গুয়ূব” মহান আল্লাহপাকের একক বৈশিষ্ট্য বা সিফাত; কিন্তু আলিমুল গায়েব তাঁর সৃষ্টির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে পারে। আর তাই, আম্বিয়ায়ে কেরাম (’আলাইহিমুস সালাম) ও বড় বড় অলী-আল্লাহগণও আলেমুল গায়েব বা গায়েবজান্তা। এটিই আমার আকীদাহ।
ষষ্ঠ প্রশ, আল্লাহপাক মহানবীকে (সল্লাল্লাহুতা’লা ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইলমে গায়েব দান করেছেন কিনা এবং করে থাকলে, কতোটুকু ও কিভাবে দান করেছেন?
বাকি অংশ এখানে দেখুন প্লিজ!!
https://zobair92.wordpress.com