-----------------=======----------------
--> মাজার শরীফ একটি পবিত্র স্থান। মাজার শরীফ কবর নয়। মাজার শরীফ এবং কবরের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান রয়েছে। মৃত মানুষের জন্য কবর। জীবিতের জন্য নয়। অথচ সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাথে যিনি ফানা তথা নির্বাণপ্রাপ্ত হয়েছেন ইসলাম তাঁকে সর্বসময়ে জীবিত বলে ঘোষণা করেছে। সুতরাং যিনি সর্বসময়ে জীবিত তাঁর আস্তানাকে কবর না বলে মাজার বলা হয়। আসুন কুরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করি।
আল- কোরআনে স্বয়ং মহান আল্লাহ্ বলেছেন, ‘যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদের তোমরা মৃত ভেবো না, বরং তাঁরা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে জীবিকা-প্রাপ্ত।’ (সুরা আলে ইমরান-১৬৯)।
অন্য একটি আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেছেন : ‘যারা আল্লাহ্ তাঁর প্রেরিত পুরুষের আনুগত্য করবে তারা সেই সব ব্যক্তির সঙ্গে থাকবে নবীগণ, সত্যবাদিগণ, শহীদগণ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য হতে যাদের তিনি নিয়ামত দিয়েছেন। তারা কতই না উত্তম সঙ্গী!’ (সুরা নিসা-৬৯)
রওজা আরবী শব্দ। মাজার ফার্সি ভাষা। যার আভিধানিক অর্থ "দর্শনময় স্থান"। কিন্তু আধ্যাত্বিক ভাবে কি দর্শন সেটা বুঝে নিতে হবে।
প্রশ্ন: তাহলে কবরে কোন লোক মৃত?
উত্তর: যারা জন্ম চক্রের মধ্যে পড়ে গেছে তাদের কে কবরে মৃত লোক বলা হয়।
প্রমাণ: "যারা মন্দ কর্ম করে পাপ তাদের কে ঘিরে ফেলে, তখন তারা হয় আগুনের বাসিন্দা, তাতে তারা থাকবে দীর্ঘ্কাল। আর যারা ঈমান আনবে ও সৎকর্ম কর্ম করবে তারা হবে বেহেশতের বাসিন্দা, তাতে তারা থাকবে চিরকাল।"- সুরা বাকারা-৮১/৮২।
এখানে যারা আগুনের বাসিন্দা ও থাকবে "দীর্ঘকাল" তারাই কবরে মৃত লোক।
ওলি আরবী শব্দ যার অর্থ অভিভাবক বা, বন্ধু। আরবীতে আরও একটি বহুল ব্যবহৃত
শব্দ রয়েছে যেটিও আমাদের দেশে খুব পরিচিত তা হল আউলিয়া। আল্লাহ্তা’লা
বলেন, “ওয়াল্লাহু ওয়ালীউল মু’মিনীন”- আর আল্লাহ্ মু’মিনদের অভিভাবক। ___
সূরা আলে ইমরান ৩:৬৮।
“ওয়াল্লাহু ওয়ালীউল মুত্তাকীন”- আর আল্লাহ্ মুত্তাকীদের বন্ধু। ___ সূরা জাসিয়া ৪৫:১৯।
মানুষ যখন আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনেন তখন আল্লাহ্তা’লা মু’মিনদের অভিভাবকত্ব গ্রহন করেন অর্থাৎ মু’মিনদের অভিভাবক হয়ে যান। এই বান্দাই যখন আল্লাহ্র বন্দেগীতে নিবেদিত প্রাণ হয়ে তাকওয়ার অধিকারী হন তখন আল্লাহ্তা’লা তার বন্ধু হয়ে যান।
“যাহারা ঈমান আনে আল্লাহ্ তাহাদের অভিভাবক, তিনি তাহাদিগকে অন্ধকার হইতে বাহির করিয়া আলোকে লইয়া যান”। ___ সূরা বাকারা ২:২৫৭।
তাহলে আল্লাহ্তা’লা তাঁর বান্দাদেরকে বন্ধু হিসাবে কখন গ্রহন করেন? আল্লাহ্তা’লা বলেন, “জেনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহ্র বন্ধুদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে”। ___ সূরা ইউনুস ১০:৬২-৬৩।
এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে আল্লাহ্তা’লা তাঁর আওলিয়া বা বন্ধুদের প্রসংঙ্গে বলছেন, যে তাঁর যারা বন্ধু তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। কারা তাঁর সেই বন্ধু? আল্লাহ্তা’লা বলছেন যারা ঈমান আনবে এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে বা তাকওয়ার অধিকারী হবে তারাই হবে তাঁর বন্ধু।
আল্লাহ্তা’লা আরও বলেন, “তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী”। ___ সূরা হুজুরাত ৪৯:১৩।
তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিকে মুত্তাকী বলা হয়। আবার এই মুত্তাকীদের মধ্যে যিনি অধিক মুত্তাকী তিনি আবার আল্লাহ্তা’লার কাছে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। এই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিটিই আল্লাহ্র বন্ধু যে আল্লাহর সাথে লয় বা একাকার হয়ে যান, সে কথাটিই আল্লাহ্তা’লা সূরা ইউনুসের ৬৩নং এবং সূরা হুজুরাতের ১৩নং আয়াতে বলেছেন।
.------------------------------------
মাজার আল্লাহর পাগলদের ঘর। এখানে বিচিত্র ধরনের আল্লাহর আশেক আসবে এবং বিচিত্রভাবে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করবে।
গোলাপ সহ সকল ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক।ফুল নিজের জন্য নয়, সে অন্য সকলের জন্য তার সু-গন্ধ ছড়িয়ে নিজে আনন্দ পায়। বিচিত্র ধরনের ফুল এবং একেক ফুলের একেক রকম রূপ ও সুগন্ধীর বৈচিত্রতার বিকাশের নাম হয় ফুলের বাগান। এই বহু ফুলের বিভিন্ন রূপ এবং বিভিন্ন গন্ধ একেরই আদর্শ প্রচার করে। বৈচিত্র্যর মধ্যে একত্বের তথা তৌহিদের সৌন্দর্য যে বুঝতে পারে নি তারই বা দোষ কিসের? পৃথিবীর আনুমানিক চারশো কোটি মানুষ, প্রত্যেকের *আমি* বলার মাঝে এক মহা- আমির দর্শন লুকিয়ে আছে।
..চারশো কোটির মহা-আমি পৃথিবীটাতে বিভিন্ন ভূখন্ডে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দেশ নাম ধারণ করে বিভিন্ন ভাষায়, আকৃতির আঙ্গিক বিকাশের বিভিন্ন রূপের কানি- দিয়ে কী এক অপরূপ ডানা মেলে রেখেছে! এই চারশো কোটি মানুষের মহা-আমির মধ্য হতেই আমাদের মতো মানুষের মুখের শব্দেই আমরা তথা মানবজাতি পেয়েছি আল্লাহর কথা।
মানুষ মোহাম্মদ (আ.), মানুষ ইসা (আ.), মানুষ মুসা (আ.), মানুষ দাউদ (আ.), মানুষ ইব্রাহিম (আ.) - এ রকমভাবে কয়েক লক্ষ আমাদের মানুষের মুখে কেন আল্লাহর কথা পেলাম? কেন মানুষের ঠোঁটকেই আল্লাহ্ একমাত্র কথা বলার মাধ্যম অবলম্বন করে নিলেন? কেন মানুষের চেহারা (ইমেইজ)-কেই আল্লাহর চেহারা বলে ঘোষণা করা হলো? মানুষই আল্লাহর রহস্য এবং আল্লাহর মানুষের রহস্য বলে কেন আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হলো? আল্লাহকে যারা দেখেন তারা মানবের আকারেই দেখে থাকেন বলে কেন বলা হলো? মানুষের মধ্যে যিনি আল্লাহর সাথে ফানা হয়ে যান তথা আপন আমিত্ব তথা অহংবোধ সম্পূর্ণ বর্জন করে তাঁর হয়ে যান তাকে আল্লাহর চেহারা তথা ওয়াজহুল্লাহ তথা বান্দা নেওয়াজ বলে কেন ঘোষণা করা হলো?
দেহ যদি রুহ তথা আত্মা না হয় তবে রুহ তথা আত্মার আকার আছে কি? আত্মা দেহ হতে বিদায় গ্রহণ করলে দেহের নাম লাশ দেওয়া হয় কেন? দেহের আকার ধরে নিলাম সাড়ে তিন হাত, কিন্তু আত্মার আকার কী? আত্মার যদি কোনো আকার না থাকে তবে আত্মা কি নিরাকার? তবে কি মানুষও নিরাকার? আল্লাহ যে নিরাকার এটা অতি সাধারণ মানুষওজানে, কিন্তু মানুষেরও যে কোনো আকারই নেই এ কথা কয়জন বুঝতে পারে?
দেহ যদি আত্মার পোশাক হয় তবে পোশাকটাই কি আত্মা বলবো? কাপড় যেমন দেহের পোশাক তাই বলে কি কাপড়ের পোশাককে দেহ বলে চালিয়ে দেব? আত্মার বিজ্ঞানী হজরত মঈনুদ্দিন চিশতি আল হোসাইনি আল হাসানি তাঁর পবিত্র মকতুবাতে খাজা-নামক পুস্তকে ঘোষণা করলেন, চুঁজুমলা ফানা গাশতে বতু হে চুনামুন্দা খাহে কে আনালৱাহে বগুখাহে কে হু আলৱাহ -অর্থাৎ যদি তুমি সম্পুর্ণ আল্লাহর মধ্যে ফানা হয়ে যেতে পার তখন ইচ্ছা হয় বলো তুমি আল্লাহ না হয়
আমি আল্লাহ। একই কথা। আত্মার বিজ্ঞানী হজরত বু আলি শাহ্ কলন্দর তাঁর দিওয়ান-এ ঘোষণা করলেন, বা শাকলে শায়খে দিদাম মোস্তফারা, না দিদাম মোস্তফারা বালকে খোদারা - অর্থাৎ আপন পীরের আকৃতিতে নবী মোস্তফাকে দেখলাম এবং উহা নবী মোস্তফা নন বরং স্বয়ং আল্লাহকে দেখলাম’ বলে কেন ঘোষণা করলেন? এ রকম হাজার হাজার আত্মার বিজ্ঞানীদের আত্মাকে জানবার বিজ্ঞানময় ফর্মুলা আমরা পেয়ে আসছি। এত কিছু পাবার পরও আমরা বিভিন্ন গোত্রের বিভিন্ন প্রকার ধর্মের সাইনবোর্ড কাঁধে নিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করছি, কিন্তু সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে সত্য সন্ধানের দৃঢ় মনোবল নিয়ে কয়জন এগিয়ে এসেছি? কুসংস্কার, সংকীর্ণতা, গন্ডিতে আবদ্ধ থাকা, নিজ নিজ বাপ-দাদার ধারা প্রকাশে গর্ববোধ করি, কিন্তু নিরপেক্ষ মনোবল নিয়ে সত্যের সন্ধান কি করতে পেরেছি?
আল্লাহ তো সর্ববিষয়েই ক্ষমতাবান বলে অনেকবার ঘোষণা করেছেন। তবে আল্লাহর কথা কেন আকাশে মেঘের গর্জন করার মতো শব্দ করে আমাদেরকে জানিয়ে দিলেন না? না হয় বিজলি চমকানোর মতো আলোর বিচিত্র রেখা দিয়ে আল্লাহর কথা কেন লিখে দিলেন না? না হয় বরফের টুকরো শিলার পতনের মতো তাঁর লিখিত বাণী কেন পৃথিবীতে নিক্ষেপ করে আমাদেরকে জানালেন না? হেলিকপ্টার আকাশে উড়ে বিজ্ঞাপন ফেলার মতো ফেরেস্তাদের দিয়ে কেন ফেলে দিলেন না?
কেন আল্লাহর সাথে লয় প্রাপ্ত যুগে যুগে নবী, রাসূল, অলী, আউলিয়ার মুখেই আল্লাহর বানী শুনতে পাই?
মানুষের ঠোঁটেই যদি আল্লাহর কথা পেয়ে থাকি, এবং তাই আমরা পেয়ে আসছি, তা হলে কি নিঃসন্দেহে বলতে পারি না যে, মানুষই আল্লাহর গুপ্ত রহস্য?
----------=====---------
“ওয়াল্লাহু ওয়ালীউল মুত্তাকীন”- আর আল্লাহ্ মুত্তাকীদের বন্ধু। ___ সূরা জাসিয়া ৪৫:১৯।
মানুষ যখন আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনেন তখন আল্লাহ্তা’লা মু’মিনদের অভিভাবকত্ব গ্রহন করেন অর্থাৎ মু’মিনদের অভিভাবক হয়ে যান। এই বান্দাই যখন আল্লাহ্র বন্দেগীতে নিবেদিত প্রাণ হয়ে তাকওয়ার অধিকারী হন তখন আল্লাহ্তা’লা তার বন্ধু হয়ে যান।
“যাহারা ঈমান আনে আল্লাহ্ তাহাদের অভিভাবক, তিনি তাহাদিগকে অন্ধকার হইতে বাহির করিয়া আলোকে লইয়া যান”। ___ সূরা বাকারা ২:২৫৭।
তাহলে আল্লাহ্তা’লা তাঁর বান্দাদেরকে বন্ধু হিসাবে কখন গ্রহন করেন? আল্লাহ্তা’লা বলেন, “জেনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহ্র বন্ধুদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে”। ___ সূরা ইউনুস ১০:৬২-৬৩।
এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে আল্লাহ্তা’লা তাঁর আওলিয়া বা বন্ধুদের প্রসংঙ্গে বলছেন, যে তাঁর যারা বন্ধু তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। কারা তাঁর সেই বন্ধু? আল্লাহ্তা’লা বলছেন যারা ঈমান আনবে এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে বা তাকওয়ার অধিকারী হবে তারাই হবে তাঁর বন্ধু।
আল্লাহ্তা’লা আরও বলেন, “তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী”। ___ সূরা হুজুরাত ৪৯:১৩।
তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিকে মুত্তাকী বলা হয়। আবার এই মুত্তাকীদের মধ্যে যিনি অধিক মুত্তাকী তিনি আবার আল্লাহ্তা’লার কাছে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। এই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিটিই আল্লাহ্র বন্ধু যে আল্লাহর সাথে লয় বা একাকার হয়ে যান, সে কথাটিই আল্লাহ্তা’লা সূরা ইউনুসের ৬৩নং এবং সূরা হুজুরাতের ১৩নং আয়াতে বলেছেন।
.------------------------------------
মাজার আল্লাহর পাগলদের ঘর। এখানে বিচিত্র ধরনের আল্লাহর আশেক আসবে এবং বিচিত্রভাবে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করবে।
গোলাপ সহ সকল ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক।ফুল নিজের জন্য নয়, সে অন্য সকলের জন্য তার সু-গন্ধ ছড়িয়ে নিজে আনন্দ পায়। বিচিত্র ধরনের ফুল এবং একেক ফুলের একেক রকম রূপ ও সুগন্ধীর বৈচিত্রতার বিকাশের নাম হয় ফুলের বাগান। এই বহু ফুলের বিভিন্ন রূপ এবং বিভিন্ন গন্ধ একেরই আদর্শ প্রচার করে। বৈচিত্র্যর মধ্যে একত্বের তথা তৌহিদের সৌন্দর্য যে বুঝতে পারে নি তারই বা দোষ কিসের? পৃথিবীর আনুমানিক চারশো কোটি মানুষ, প্রত্যেকের *আমি* বলার মাঝে এক মহা- আমির দর্শন লুকিয়ে আছে।
..চারশো কোটির মহা-আমি পৃথিবীটাতে বিভিন্ন ভূখন্ডে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দেশ নাম ধারণ করে বিভিন্ন ভাষায়, আকৃতির আঙ্গিক বিকাশের বিভিন্ন রূপের কানি- দিয়ে কী এক অপরূপ ডানা মেলে রেখেছে! এই চারশো কোটি মানুষের মহা-আমির মধ্য হতেই আমাদের মতো মানুষের মুখের শব্দেই আমরা তথা মানবজাতি পেয়েছি আল্লাহর কথা।
মানুষ মোহাম্মদ (আ.), মানুষ ইসা (আ.), মানুষ মুসা (আ.), মানুষ দাউদ (আ.), মানুষ ইব্রাহিম (আ.) - এ রকমভাবে কয়েক লক্ষ আমাদের মানুষের মুখে কেন আল্লাহর কথা পেলাম? কেন মানুষের ঠোঁটকেই আল্লাহ্ একমাত্র কথা বলার মাধ্যম অবলম্বন করে নিলেন? কেন মানুষের চেহারা (ইমেইজ)-কেই আল্লাহর চেহারা বলে ঘোষণা করা হলো? মানুষই আল্লাহর রহস্য এবং আল্লাহর মানুষের রহস্য বলে কেন আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হলো? আল্লাহকে যারা দেখেন তারা মানবের আকারেই দেখে থাকেন বলে কেন বলা হলো? মানুষের মধ্যে যিনি আল্লাহর সাথে ফানা হয়ে যান তথা আপন আমিত্ব তথা অহংবোধ সম্পূর্ণ বর্জন করে তাঁর হয়ে যান তাকে আল্লাহর চেহারা তথা ওয়াজহুল্লাহ তথা বান্দা নেওয়াজ বলে কেন ঘোষণা করা হলো?
দেহ যদি রুহ তথা আত্মা না হয় তবে রুহ তথা আত্মার আকার আছে কি? আত্মা দেহ হতে বিদায় গ্রহণ করলে দেহের নাম লাশ দেওয়া হয় কেন? দেহের আকার ধরে নিলাম সাড়ে তিন হাত, কিন্তু আত্মার আকার কী? আত্মার যদি কোনো আকার না থাকে তবে আত্মা কি নিরাকার? তবে কি মানুষও নিরাকার? আল্লাহ যে নিরাকার এটা অতি সাধারণ মানুষওজানে, কিন্তু মানুষেরও যে কোনো আকারই নেই এ কথা কয়জন বুঝতে পারে?
দেহ যদি আত্মার পোশাক হয় তবে পোশাকটাই কি আত্মা বলবো? কাপড় যেমন দেহের পোশাক তাই বলে কি কাপড়ের পোশাককে দেহ বলে চালিয়ে দেব? আত্মার বিজ্ঞানী হজরত মঈনুদ্দিন চিশতি আল হোসাইনি আল হাসানি তাঁর পবিত্র মকতুবাতে খাজা-নামক পুস্তকে ঘোষণা করলেন, চুঁজুমলা ফানা গাশতে বতু হে চুনামুন্দা খাহে কে আনালৱাহে বগুখাহে কে হু আলৱাহ -অর্থাৎ যদি তুমি সম্পুর্ণ আল্লাহর মধ্যে ফানা হয়ে যেতে পার তখন ইচ্ছা হয় বলো তুমি আল্লাহ না হয়
আমি আল্লাহ। একই কথা। আত্মার বিজ্ঞানী হজরত বু আলি শাহ্ কলন্দর তাঁর দিওয়ান-এ ঘোষণা করলেন, বা শাকলে শায়খে দিদাম মোস্তফারা, না দিদাম মোস্তফারা বালকে খোদারা - অর্থাৎ আপন পীরের আকৃতিতে নবী মোস্তফাকে দেখলাম এবং উহা নবী মোস্তফা নন বরং স্বয়ং আল্লাহকে দেখলাম’ বলে কেন ঘোষণা করলেন? এ রকম হাজার হাজার আত্মার বিজ্ঞানীদের আত্মাকে জানবার বিজ্ঞানময় ফর্মুলা আমরা পেয়ে আসছি। এত কিছু পাবার পরও আমরা বিভিন্ন গোত্রের বিভিন্ন প্রকার ধর্মের সাইনবোর্ড কাঁধে নিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করছি, কিন্তু সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে সত্য সন্ধানের দৃঢ় মনোবল নিয়ে কয়জন এগিয়ে এসেছি? কুসংস্কার, সংকীর্ণতা, গন্ডিতে আবদ্ধ থাকা, নিজ নিজ বাপ-দাদার ধারা প্রকাশে গর্ববোধ করি, কিন্তু নিরপেক্ষ মনোবল নিয়ে সত্যের সন্ধান কি করতে পেরেছি?
আল্লাহ তো সর্ববিষয়েই ক্ষমতাবান বলে অনেকবার ঘোষণা করেছেন। তবে আল্লাহর কথা কেন আকাশে মেঘের গর্জন করার মতো শব্দ করে আমাদেরকে জানিয়ে দিলেন না? না হয় বিজলি চমকানোর মতো আলোর বিচিত্র রেখা দিয়ে আল্লাহর কথা কেন লিখে দিলেন না? না হয় বরফের টুকরো শিলার পতনের মতো তাঁর লিখিত বাণী কেন পৃথিবীতে নিক্ষেপ করে আমাদেরকে জানালেন না? হেলিকপ্টার আকাশে উড়ে বিজ্ঞাপন ফেলার মতো ফেরেস্তাদের দিয়ে কেন ফেলে দিলেন না?
কেন আল্লাহর সাথে লয় প্রাপ্ত যুগে যুগে নবী, রাসূল, অলী, আউলিয়ার মুখেই আল্লাহর বানী শুনতে পাই?
মানুষের ঠোঁটেই যদি আল্লাহর কথা পেয়ে থাকি, এবং তাই আমরা পেয়ে আসছি, তা হলে কি নিঃসন্দেহে বলতে পারি না যে, মানুষই আল্লাহর গুপ্ত রহস্য?
----------=====---------